উষ্ণতা
সারা রাত ধরে কোনও দিন ভিজেছ?
হ্যাঁ, জ্যোৎস্না রাতের কথা বলছি, আমার সাথে ভিজলে একটা আস্ত পূর্ণিমার চাঁদ দেব তোমায়।
একটা গোটা দিন ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করো! আমার সঙ্গে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ভিজলে একটা গোটা সমুদ্র উপহার দেব তোমায়!
গ্রীষ্মের প্রখর রোদে যদি হাঁটো, তোমার শরীরের ঘাম থেকে সব পাপ বেরিয়ে আসবে সোনা! আর তারপরেই ভর শ্রাবণের ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি তোমাকে নির্মল করে দেবে!
ভিজবে আমার সঙ্গে?
প্রচণ্ড শীতে আমরা একই লেপের তলায় থাকব—
দুজনের শরীরের উষ্ণতা ঘন ঘন নিশ্বাস হয়ে মাতাল করে দেবে আমাদের!
এসো আমরা একটা দিন ও রাতের জন্য পাখি হই।
বিশ্বাস করো তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে একটা চুমুও খাব না, তোমার ঠোঁটে!
*
রংহীন বসন্তে
বসন্তের চাঁদ তোমার বন্ধু!
অকালে কৃষ্ণচূড়া হয়ে ঝরে যেতে বসেছে।
বাসন্তী পূর্ণিমার সন্ধ্যায়
সে আর আদিবাসীদের সঙ্গে গানের তালে
গলা পর্যন্ত হাঁড়িয়া খেয়ে পা মেলাতে পারে না।
রংবাহারি আবির তার শরীরে লাগলে, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যায় দেহ!
মনের ভিতরের আবিরে কেউ যেন এক বালতি
জল ঢেলে দেয়!
জেনারেশন এর পর জেনারেশন গ্যাপ হয়েছে! বাসন্তী পূর্ণিমায় দাগ লেগেছে! নতুন প্রজন্ম এখন উদ্দাম নাচে, আবীর খেলে—
ভাঙা রেকর্ড বড় বক্সে,
এক ফাঁকে পোলাও— ফ্রায়েড রাইস—
তবু হাতের লাঠিকে ফেলে দিয়ে কোমর দোলাতে ইচ্ছে করে!
ঠিক তক্ষুনি শরীরের কোমর থেকে নীচ পর্যন্ত শক্ত হয়ে ওঠে, কোনও সাড় নেই! ঠিক তক্ষুনি ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বের হয়—
‘দোলযাত্রার একশো আটাশবার শালা’।
*
ঝর্নার গল্প
তন্বী হল সেই মেয়েটি
ঝর্না থেকে নেমে—
এ দুটো চোখ ধরা দিল
হঠাৎ করে থেমে।
বলল আমায় কী চাইছ?
ভালবাসার ‘ভাল’—
দিতেই পারি সাধ্যমত
তাতে কী আটকাল!
জানার কোনও অবকাশ নেই,
আমার বুকে বালি—
ঝর্না এসে ভাসিয়ে দেবে
জমাট বালি ‘খালি’।
শরীর থেকে আব্রু আমার খুলতে থাকি ধীরে
ঝর্না এখন আমার সাথে
দুষ্টু খেলা করে!
একদিন আমি পোশাকআশাক শুকাতে গিয়ে দেখি
ঝর্না সেদিন রাজপুত্রের প্রেমে পাগল এ কী!
হঠাৎ দেখি, ঝর্না আমার শুকিয়ে গেল বুকে—
তন্বী মেয়ে, তন্বী মেয়ে
তুমি কী আছ সুখে!
*
জীবনের বাঁকে
আমার প্রিয় চাঁদ কেড়ে নাও
অমাবস্যাই ভাল—
নিকষ কালো রাতে
কতদিন হাঁটিনি একা—
আলোর মাঝেই জগৎ আছে অন্ধকারের
অন্ধকার গলি আছে
অথচ নামগোত্রহীন,
আলোর রোশনাই
মলিন করেছে সব!
কেন যে কানা ছেলের নাম রেখেছ
পদ্মলোচন!
তাই বুঝি অন্ধকার জগতে
ঝকঝকে পৃথিবী
ঝলমলে আলো—
ডান দিকে সরস্বতী
বাঁ দিকে লক্ষ্মী
সরস্বতীর সঙ্গে শুয়ে
সুপারি কিনে লক্ষ্মীকে ঘরে আনে যারা
তাদের জন্য এই পূর্ণিমার চাঁদ
আমরা সব এলেবেলে ভাই
দিন আনি, দিন খাই
কোজাগরীর দিনে খেতে পাব কি না
হিসাব কষি—
বাড়িতে রুগণ বউ, অসুস্থ ছেলে!
বেতনটা পাওয়া যেত অফিসটা গেলে।
আমারও যে ক্ষয়রোগ
ক্ষয়ে যায় দিন,
অনেক হয়েছে ঋণ, চাঁদ দেখে—
আর নয়, চাঁদটাকে কেড়ে নাও!
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হেঁটে যাব
শাল অথবা পাইন বনের ভিতর দিয়ে,
তারারা অসহনীয় হলে
হাত দিয়ে ঢেকে নেব চোখ—
বলো যদি পাগলাটে লোক
ক্ষতি নেই—
সরীসৃপ ও শ্বাপদের ভিড়ে মিশে যাব!
খুঁজে নেব, ডেকে নেব, ডাক দেব
আয় আয় ডানপিটে ছেলে—
ফিরে যদি না আসি!
নির্জীব দেহ ফিরে পাবে ঠিকই!
আর যদি ছেলেটার দেখা হয়ে যায় আমারই সাথে!
পৃথিবীতে আমি শুধু রাজা
তোমরা সবাই প্রজা
মেনে নেবে আমাকে!
রাত যদি কেটে যায়
ভোরের সূর্য প্রথম কুর্নিশ করবে আমায়।
*
জাল
মানুষের জঙ্গলে মানুষ খুঁজি,
মানুষ পাওয়া কঠিন একথা বুঝি!
তোমাকে পাব বলে দুপা বাড়াই—
চোখের সামনে দেখি তোমাকে হারাই।
তবু হাঁটি দিশাহীন
অজানা এ পথে
উড়ে যাও দেখি আমি
তার সাথে রথে—
ফিরে যেতে গিয়ে দেখি
অজানা জঙ্গলে—
জড়িয়ে পড়েছি আমি
মাকড়সার জালে।