Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

যে গান ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হয়ে উঠেছিল মানভূমের

মানভূমকে ভালবেসে অনেকে বলেন ‘গান-ভূম’। মানুষের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ যেমন গানে, তেমনই প্রতিবাদের ভাষাও ধ্বনিত হয় গানে। মানভূমের বাংলা ভাষা আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে আজও একটি দীর্ঘতম আন্দোলন। এর বীজতলা তৈরি হয়েছিল একটি গানকে আশ্রয় করে, মানভূমের টুসু গান। মাতৃভাষার মর্যাদার লক্ষ্যে, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি ভূখণ্ডের আন্দোলন— ভারতের মানুষ এই প্রথম দেখলেন। এক নতুন অভিজ্ঞতায় তারা জারিত হলেন। তৈরি হয়েছিল অন্য ভাষা আন্দোলনের পথরেখা। বাংলা-বিহার সংযুক্তির প্রতিবাদে, জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধিতায়, মাতৃভাষা বাংলার দাবি নিয়ে মানভূমবাসীরা এগিয়ে এসেছিলেন কলকাতার দিকে। ফলশ্রুতি— ১ নভেম্বর পুরুলিয়া জেলার জন্ম।

১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা-বিহার-ওড়িশার দেওয়ানি পেল। কর সংগ্রহের সুবিধার জন্য ছোটনাগপুরের জঙ্গল এলাকাকে তারা কয়েকটি খণ্ডে ভাগ করে। ১৮৩৩ সালে গঠিত মানভূম ছিল বিহারের ছোটনাগপুর ডিভিশনের অন্তর্গত। পুরুলিয়া তখন জেলা নয়। ১৮৩৮ সালে মানভূম জেলার সদর মহকুমা হয় পুরুলিয়া। ১৯০৫ সাল। লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ। ১৯১১ সালে অঞ্চল পুনর্বিন্যাসের সময় বিহার-ছোটনাগপুর এবং ওড়িশা নিয়ে গঠিত হল নতুন প্রদেশ। বিহার–ওড়িশার অন্তর্ভুক্ত হল মানভূম। বাংলা থেকে এই বিচ্ছিন্নতা মানভূমের বাঙালিরা মেনে নিতে পারেনি। তেমনই বিহারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সচ্চিদানন্দ সিংহ, দীপনারায়ণ সিংহ প্রমুখ প্রতিবাদে সোচ্চার হন। তাঁরা যৌথ বিবৃতিতে জানান, ‘The whole district of Manbhum and Pargana Dhalbhum District are Bengali Speaking and they should go to Bengal’. ১৯৩৫ সালে মানভূম জেলার ব্যারিস্টার পি আর দাস-এর নেতৃত্বে বাঙালিদের মধ্যে সমন্বয় এবং ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘মানভূম বাঙালি সমিতি’ গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলে মানভূমকে বিহারের অংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই কারণে ১৯৪৮ সালে সমস্ত বাঙালি অফিসারকে মানভূম থেকে বিহারের বিভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়। মানভূমে বাংলার উপরে হিন্দির আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা শুরু হয় ১৯১২ থেকে। একের পরে এক বাংলা স্কুল পরিণত হল হিন্দি স্কুলে। পোস্ট অফিস-সহ সমস্ত সরকারি দফতরে হিন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়। ফরমান আসে, আদালতের সওয়াল-জবাব, চিঠিপত্র, জমির দলিল সব হবে হিন্দিতে। এর বিরুদ্ধেই মানভূমের ভাষা আন্দোলন।

১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয় ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবিতে আন্দোলন। মানভূমের বাংলাভাষী মানুষজনকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে জেলা কংগ্রেসের শীর্ষনেতারা জাতীয় স্তরের নেতাদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে। কংগ্রেসে ভাঙন ধরে। ১৯৪৮ সালের ১৩ জুন পুঞ্চা থানার পাকবিড়রায় প্রায় দেড় হাজার কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতিতে মানভূম জেলা কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী, বীররাঘব আচারিয়া, বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত, ভজহরি মাহাতো, অতুলচন্দ্র ঘোষ, জগবন্ধু ভট্টাচার্য, সত্যকিঙ্কর মাহাতোর মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ গাঁধীবাদী নেতা। ১৪ জুন কংগ্রেস ভেঙে গঠিত হয় ‘লোকসেবক সংঘ’ নামে একটি পৃথক সংগঠন। সেই দলের সভাপতি হন অতুলচন্দ্র ঘোষ এবং সম্পাদক বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ এই আন্দোলন ছিল তীব্র। পুরুলিয়া কোর্টের আইনজীবী রজনীকান্ত সরকার, শরৎচন্দ্র সেন এবং গুণেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম কর্ণধার। আন্দোলনের বীজ বপন হয় ৩০ এপ্রিল, বান্দোয়ানের জিতান গ্রামে মানভূম জেলা কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে। সেখানে দীর্ঘ আলোচনার সারমর্ম একটাই, ‘মানভূম বাংলা ভাষাভাষী’।

১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে দেশের বিভিন্ন প্রদেশের ভাষা সংক্রান্ত বিরোধ দূর করার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন করেন। এই কমিশন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে জনমত সংগ্রহ করা শুরু করে। মানভূমের মানুষের মধ্যে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য লোকসেবক সংঘ টুসু গানের মাধ্যমে বিহার সরকারের অত্যাচারের কাহিনি প্রচার করতে থাকে। অরুণচন্দ্র ঘোষ প্রকাশ করেন ষোল পাতার গানের সংকলন ‘টুসু গানে মানভূম’। এই ছোট্ট পুস্তিকা প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দিল গোটা মানভূমে। অরুণচন্দ্রের লেখা এই টুসু গানটি তৎকালীন মানভূমবাসীর মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করল—

আমার ভাষা প্রাণের ভাষা রে/ (এ ভাই) মারবি তোরা কে তারে
এই ভাষাতেই কাজ চলছে/ সাত পুরুষের আমলে
এই ভাষাতেই মায়ের কোলে/ মুখ ফুটেছে মা বলে।
এই ভাষাতেই পরচা রেকর্ড/ এই ভাষাতেই চেক কাটা
এই ভাষাতেই দলিল নথি/ সাত পুরুষের হক পাটা।

টুসু গান আবহমানকালের যূথবদ্ধ সঙ্গীত। মানভূমবাসীদের প্রাণের আরাম। টুসুকে ঘিরেই নতুন জোয়ার এল এই আন্দোলনে। অথচ, দল বেঁধে গান গাইতে গেলেই সেটা হয়ে উঠল অপরাধ। টুসু গান নিষিদ্ধ করল বিহার সরকার। এর প্রতিবাদে মানভূমের শিকড়ের গান টুসুকে আঁকড়ে লোকসেবক সংঘের নেতৃত্বে অতুলচন্দ্র ঘোষ শুরু করলেন ‘টুসু সত্যাগ্রহ’। জেগে উঠল টুসু গানের ভিতর দিয়ে বাংলা ভাষার প্রতি আবেগের স্ফূরণ। ভজহরি মাহাতোর লেখা এই টুসু গান হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের গান, প্রতিবাদের ভাষা।

শুন বিহারি ভাই, তোরা রাখতে লারবি ডাঙ দেখাই
তোরা আপন তরে ভেদ বাড়ালি, বাংলা ভাষায় দিলি ছাই
ভাইকে ভুলে করলি বড় বাংলা-বিহার বুদ্ধিটাই
বাঙালি-বিহারি সবই এক ভারতের আপন ভাই
বাঙালিকে মারলি তবু বিষ ছড়ালি— হিন্দি চাই
বাংলা ভাষার পদবিতে ভাই কোন ভেদের কথা নাই।
এক ভারতে ভাইয়ে ভাইয়ে মাতৃভাষার রাজ্য চাই।

মহাত্মা গাঁধীর সত্যাগ্রহই ছিল এই আন্দোলনের অস্ত্র, কিন্তু ১৯৪৬-এর বিহার নিরাপত্তা আইনের ‘নামে’ অত্যাচার শুরু হল ভাষা আন্দোলনকারীদের উপরে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নেমে এল সেই সত্যাগ্রহের ওপরে। ঝালদা, পুরুলিয়া ও সাঁতুরির জনসভায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অনেকে আহত হলেন। যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে টুসু গান গেয়ে গ্রেফতার হলেন অসংখ্য মানুষ। কারাগারে অন্তরীণ করা হয় সত্যাগ্রহী লোকসেবক সংঘের কর্ণধার ‘মানভূম কেশরী’ অতুলচন্দ্র ঘোষ, তাঁর স্ত্রী লাবণ্যপ্রভা ঘোষ, সাংসদ ভজহরি মাহাতো, অরুণচন্দ্র ঘোষ, সাংবাদিক অশোক চৌধুরী এবং পাঁচটি দলের ৪০ জন সত্যাগ্রহীকে। বান্দোয়ানের মধুপুর গ্রামের লোকসেবক সংঘের অফিস তছনছ করল পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করল ‘টুসু গানে মানভূম’ বইটির ২৩০০ কপি। নির্মম অত্যাচার শুরু হয় মহিলা নেত্রী রেবতী ভট্টাচার্য, ভাবিনী মাহাতোর ওপরে। এত দমন-পীড়নেও কিন্তু আন্দোলন স্তিমিত হয়নি। নিভে যায়নি তার আগুন।

১৯৫৪ সালে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিংহয়ের তরফে বঙ্গ-বিহার যুক্ত প্রদেশ গঠন করার প্রস্তাব আসে। সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে লোকসেবক সংঘ। এবার শুধু মানভূম নয়, প্রতিবাদে সোচ্চার হলেন কলকাতার বাঙালি বিদ্বজ্জনেরাও। মানভূমে বাংলা ভাষার হৃত অধিকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে ১০ জন মহিলা-সহ ১০০৫ জনের সত্যাগ্রহী দল পাকবিড়রা থেকে পদযাত্রা শুরু করে কলকাতার উদ্দেশে। নেতৃত্বে অতুলচন্দ্র ঘোষ। এই পদযাত্রা ‘বঙ্গ সত্যাগ্রহ’ নামে খ্যাত। ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল থেকে ৬ মে, টানা ২১ দিন প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন সত্যাগ্রহীরা। কণ্ঠে ছিল ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি আর রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘বাংলা ভাষা প্রাণের ভাষা রে’ ইত্যাদি গান। অভ্যর্থনার জন্য মোড়ে মোড়ে কত তোরণ। জনতার পুষ্পস্তবকে সংবর্ধিত হচ্ছেন সত্যাগ্রহীরা। বাঁকুড়া, বেলিয়াতোড়, সোনামুখী, পাত্রসায়র, খণ্ডঘোষ, বর্ধমান, পাণ্ডুয়া, মগরা, চুঁচুড়া, চন্দননগর, হাওড়া ছুঁয়ে মে মাসের ৬ তারিখ প্রায় হাজার মানুষ পৌঁছন কলকাতায়। কলকাতায় পা রাখার পরমুহূর্তেই গ্রেফতার। ৭ মে ডালহৌসি স্কোয়ার থেকে ১৪৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয় ৯৫৬ জনকে। বাকিরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার ১২ দিন পরে মুক্তি।

এই সময়ে, কলকাতাতেও মানভূমের সংহতিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। অবস্থার গুরুত্ব বুঝে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রদ করা হল বাংলা-বিহার সংযুক্তির প্রস্তাব। দ্রুত পাশ হল বঙ্গ-বিহার ভূমি হস্তান্তর আইন। তারপর, সীমা কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে, সরকারি নানাস্তরের লাল ফিতের জটিলতা অতিক্রমের পর জন্ম নিল পুরুলিয়া জেলা। তারিখ ১ নভেম্বর, ১৯৫৬। ১৬টি থানা— এলাকা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত হল নতুন পুরুলিয়া জেলা। দীর্ঘ লড়াই-আন্দোলনের ফসল।

ভাষা সৈনিক পুরুলিয়ার বোরো থানার রাঙ্গামেট্যা গ্রামের নকুল মাহাতো এবং কেন্দা থানার পানিপাথর গ্রামের নারায়ণ মাহাতোর কথায়, ‘মানভূমের ভাষা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেউ শহিদ হননি। কিন্তু আন্দোলনে যোগ দিয়ে ঘরছাড়া হয়েছেন অনেকে। অনেককে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে, চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।’ মানভূম ভাষা আন্দোলন ব্যতিক্রমী, অনন্য আরও একটি কারণে। তা হল মানভূমের মহীয়সী নারীকুল। পুরুষদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে যারা স্বাধীনতা ও বঙ্গভাষার হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে বিপ্লবে-বিদ্রোহে সরব হয়েছিলেন।

পুরুলিয়ার বাংলায় অন্তর্ভুক্তি বাংলা ভাষা আন্দোলনের একটি অন্যতম মাইলফলক। মূলত টুসুর মতো লোকগানকে হাতিয়ার করে আন্দোলন পরিচালনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। আজ যখন এক ভিন্ন বাস্তবতায়, সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনে নিজের ঘরেও কোণঠাসা হচ্ছে বাংলা ভাষা, তখন এই আন্দোলনের আলো নতুন দিশা দেখাতে পারে আগামী প্রজন্মকে। নতুন বাঙালি প্রজন্ম বাংলা ভাষার সেই সবুজ ঘ্রাণ কতটুকু হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করবে তার ভার রইল কালের কাছে। শুধু এইসূত্রে স্মরণ করে নিই নরেন্দ্রনাথ দেব ও তাঁর স্ত্রী রাধারানি দেবীর সেই অবিস্মরণীয় কবিতাটি—

বহু মানে আজ মানভূমে মোর,/ এই শুভদিনে নিলাম বরি,
ধন্য হলেন জননী আবার/ হারানো তনয় বক্ষে ধরি।
জয় গৌরবে এসেছে ফিরিয়া/ সন্তান তার আপন গেহে,
ছিন্ন অঙ্গে দেশমাতৃকা/ দেখা দিল পুনঃ পূর্ণ দেহে।
জানি, জানি যাহা রয়ে গেল বাকি/ মাতৃভাষার ঐক্যতীরে
তোমাদের দৃঢ় সাধনার বলে/ একদা তাহাও আসিবে ফিরে।

চিত্রণ : চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
মোহাম্মদ কাজী মামুন
মোহাম্মদ কাজী মামুন
2 years ago

অসাধারণ সব তথ্যের সমাবেশ। বাংলা ভাষার জন্য যত আন্দোলন হয়েছে পৃথিবীতে, জানি না, আর কোন ভাষার জন্য হয়েছে কিনা। লেখিকাকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার মাতৃভাষার আরেকটি অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার জন্য, গৌরবের অনন্য এক পালককে ছুয়ে যাওয়ার জন্য।

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »