Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

নাস্তিক ভূতের উপাখ্যান

প্রেততত্ত্ব বা স্পিরিচুয়ালিজম নিয়ে লেখক পরশুরামের ব্যুৎপত্তি ছিল। সায়েব এবং হিন্দু ভূত নিয়ে তাঁর কথাবার্তা একেবারে একশো শতাংশ ঠিক। কিন্তু নাস্তিক ভূতেদের সম্বন্ধে তিনি সঠিক লিখে যাননি। নাস্তিক মরলে নাইট্রোজেন অক্সিজেন এই সমস্ত গ্যাসে পরিণত হয় এমন ধারণা ঠিক নয়। নাস্তিক মরলে গোড়াতে ভূতই হয়। ওঁরা ভূত-ভগবান-শয়তান ইত্যাদি কিছুতেই বিশ্বাস করেন না বলে ভূত সমাজে ওঁরা অদ্ভুত নামেই পরিচিত। অবশ্য চিরকাল তাঁদের অদ্ভুত হয়ে থাকতে হয় না, কিছুদিন পরে মৃত নাস্তিকেরা অ-পদার্থ মানে অ্যান্টিম্যাটার হয়ে যান। তখন তাঁদের নক্ষত্র-টক্ষত্র গেলার কাজে লাগানো হয়।

ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বর আমাকে পছন্দ করতেন না। বড় হতে হতে সে-বিশ্বাস ক্রমশ দৃঢ় হল আর ইস্কুল ছাড়ার আগেই পাক্কা নাস্তিক হয়ে গেলুম। কেন হব না বলুন? আমাদের পাড়ার পল্টু কোথা থেকে যেন একটা দুদিকেই হেড ছাপা এক টাকার কয়েন যোগাড় করেছিল। বেপাড়ায় ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গেলে সেই কয়েন নিয়ে যেত পল্টু। যেভাবেই টস হোক না কেন হেড পড়বেই। তাই টস জিতে প্রতিবারই পল্টু ব্যাটিং নিত। আমাদের ব্যাট হয়ে গেলে খেলার আগ্রহটাই চলে যেত। ফিল্ডিংয়ের খাটনি খাটার ঝক্কিটা আর নিতুম না আমরা। ওদের ব্যাটিং শুরু হলেই ফালতু ঝামেলা লাগিয়ে খেলা ভণ্ডুল করে দিতুম। ব্যাটিংয়ের সুখ না-পেয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাট আর উইকেট নিয়ে তাড়া করত। আমার সমস্ত বন্ধু চমৎকার দৌড়ে পগার পার হত কিন্তু নাদুসনুদুস আমি দৌড়তে না পেরে ধরা পড়তুম আর বারোয়ারি চিট্টা খেতুম। ভগবানকে মনেপ্রাণে ডাকতুম আমাকে একটু জোরে দৌড়বার ক্ষমতা দাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এই হল গোড়ার কথা।

তারপর গুলি খেলতে গিয়ে সব গুলি হেরে যাওয়া, প্রত্যেকবার পরীক্ষার সময় টুকতে গিয়ে ধরা পড়া— অবিচার আমার ওপরে কম হয়নি। গরম বা পুজোর ছুটিতে তখন ইস্কুল থেকে তিরিশ পাতা করে হাতের লেখা করতে দিত, রোজ একপাতা করে লিখতে হবে। ছুটিতে নানা ব্যস্ততায় সেসব করা হত না। প্রতিবার ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতুম, ইস্কুল খোলার দিন সকাল থেকে দিন তিনেকের জ্বর করে দিতে। তালে আর ইস্কুলে যেতে হয় না। দু-তিন দিন কেটে গেলে স্যারেরাও হাতের লেখার কথা ভুলে যান। পেট কামড়ানো আমাদের বাড়িতে অ্যালাও ছিল না। উল্টে জোর করে দু-গ্লাস জল খাইয়ে বাবা পেট আইঢাই করিয়ে দিতেন। কিন্তু কোনওদিন জ্বর হয়নি। হাতের লেখা না করার জন্যে প্রতিবার মাস্টারমশাইয়েরা আমাকে পিটিয়ে হাতের সুখ করেছেন।

সরস্বতী ঠাকুরেও একসময় আমার অগাধ ভক্তি ছিল। নারকেলে কুল আমি সরস্বতী পুজোর আগে কখনও খেতাম না, শুধু হজমিওয়ালার কাছ থেকে কুলের আচার খেতুম। একটু-আধটু খেয়েই অবশ্য অঞ্জলি দিতুম। ভক্তিতে কিন্তু আমার কোনও ঘাটতি ছিল না। অঞ্জলির সময়ে ঠাকুরমশাইয়ের মন্ত্রর স্পিডের সঙ্গে তাল মেলাতে পারতুম না, এ কথা সত্যি, কিন্তু ফুল আমি টিপ করে ঠাকুরের পায়েই ফেলতুম। ইচ্ছে করে কোনওদিন ফুল ঠাকুরমশাইয়ের টাকে ছুড়ে মারিনি। তবু সেভেন থেকে এইটে ওঠার সময় ওরা আমাকে ফেল করিয়ে দিল। পুরো ফেল। না, ‘প্রোমোটেড আন্ডার কনসিডারেশন’ নয়, ‘গার্জেন কল’-ও নয়, বাংলা ফেল। এগ্রিগেটে সাতাশি পাওয়া সত্ত্বেও ফেল। বাড়ি ফিরতে ছোটকাকা রেজাল্ট দেখে বাবাকে বললেন, ‘দেখ-মার, মানে চোখে পড়লেই মারতে হবে। এ ছাড়া এ ছেলে শুধরোবে না।’ বাবার দেখলুম সে-কথা ভারী পছন্দ হল। এর পরের তিনদিন বাবা অফিস যাওয়ার আগে আর অফিস থেকে ফিরে ‘কেন ফেল করেছিস?’ বলে আমাকে ঠ্যাঙাতেন। শেষে হাতফাত ফুলে যেতে ক্ষান্ত দিলেন। এরপর আর কারুর ভগবানে বিশ্বাস থাকে? আমিও নাস্তিক হয়ে গেলুম। অবশ্য বাড়িতে কিছু বলিনি। সেবছরই পৈতে হওয়ার কথা। পৈতে মানেই নিজের হাতঘড়ি, অনেকগুলো পেন সেট আর গল্পর বই। ভগবান সেখানেও আমায় বঞ্চিত করলেন। যে বইগুলো পেলুম সেগুলো হল, ‘দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান’, ‘রবীন্দ্র প্রসঙ্গে’, ‘নজরুল জয়ন্তী’ ইত্যাদি। তখন পাকাপাকিভাবে পৈতে ধোপার বাড়ি পাঠিয়ে নাস্তিক হলুম।

এরপর আর জীবনে ভগবানের চৌকাঠ মাড়াইনি। দরকারও পড়েনি। ব্যর্থ প্রেম, ল্যাংড়া চাকরি, দজ্জাল বউ আর অবাধ্য ছেলেপুলে নিয়ে পঞ্চান্ন বছর অবধি বেঁচে শেষমেষ করোনায় মরে গেলুম। আমার মৃত্যুর অব্যবহিত কারণ নিয়ে অবশ্য সরকারের কমিটি অন্যরকম রায় দিল। আমি নাকি হার্টফেল করেই মরেছি, করোনায় নয়। কিন্তু আমার দৃঢ়বিশ্বাস আমি করোনাতেই মরেছিলুম। আরে একদিন বাসে দেখি একটা লোক মাস্ক মুখ থেকে নামিয়ে বাদাম খাচ্ছে। আক্কেলটা ভাবুন একবার, এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে লোকটা বাদাম খাবে! খাবি তো খা, আবার মাস্ক নামিয়ে খাবে? কেন বাপু। কী ভয়ানক অন্যায় বলুন তো। এই তো তার আগের দিন পৃথিবীকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে আমরা ক্লাবের এজিএম করলুম একশোজন মিলে, সমস্ত করোনাবিধি মেনে। তাতে কারুর কিছু হয়েছে? ওইসব করা যায়, তা বলে খাবে? আমি নিশ্চিত ওই লোকটার থেকেই করোনা ছড়িয়েছে বাসসুদ্ধু লোকের মধ্যে। আর আমি ওই বাদামখোরের জন্যেই মরলুম। যাক সে-কথা। ২০২০-র মাঝামাঝি নাস্তিক আমি তো মরে অদ্ভুত হলুম।

নাস্তিকরা যেহেতু স্বর্গ মর্ত্য মানেন না, তাই আকাশ বা পাতালে নয় অদ্ভুতদের আশ্রয় হয় এই পৃথিবীতেই। মরার পরে আমার অনাত্মা সেখানে পৌঁছল। একটা বড় গেট। তার সামনে লেখা, বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। সামনে একটা ছোকড়া টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে। সে দেবদূতের মত উড়নিও পরে নেই আবার যমদূতের মত মোষেও চড়ে না। একেবারে গোবেচারা কাটিং। আমাকে দেখেই বলল, ব্লাসফেমি না এথেইজম? কিছুই না বুঝে আমি বোকা বোকা হাসলুম। লোকটা বলল, ‘আরে ঈশ্বরকে গালমন্দ করতেন, না শুধুই অবিশ্বাস?’ আমি বললুম, ‘একবার বাসের কন্ডাক্টরকে গালমন্দ করে গণধোলাই খাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সেই থেকে কাউকে গালমন্দ করি না।’

‘ও। পাতি এথেয়িস্ট। সেরকম বিপ্লবী কিছু নন। তবে তো এখানে বেশিক্ষণ থাকা হবে না।’ ছেলেটি বলল, ‘যান ভেতরে।’

ভেতরে গিয়ে সব কিছু ভাল করে জরিপ করলুম। একটা বড় মাঠ। সেখানে নানান কিসিমের অদ্ভুতরা বসে আছেন। দূরে একটা বাড়ি। সেখানে সাইনবোর্ড টাঙানো, অ-পদার্থ উৎপাদন কেন্দ্র, ইংরিজিতে লেখা ‘অ্যান্টিম্যাটার জেনেরেশান সেন্টার’। যা বুঝলুম ওখানেই অদ্ভুতদের একটা চোঙে ভরে আলোর গতিবেগের চেয়ে বেশি জোরে ঘোরানো হয় আর তাতেই তাঁরা নাস্তিক কণায় পরিণত হয়ে অ্যান্টিম্যাটার হয়ে যান। আর তখন তাঁদের বিভিন্ন ব্ল্যাকহোলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যাঁরা খুব কালাপাহাড় টাইপ তাঁদের অদ্ভুত করেই রাখা হয়। ঈশ্বরের অসিদ্ধির নানান প্রমাণ তাঁরা উদ্ভাবন করেন। তাই তাঁদের আর অ-পদার্থ হতে হয় না।

আমি সেই মাঠটিতে যেতেই একজন এসে চেপে ধরলেন। হাসি হাসি মুখ। একটু সরু গলা। বেশ জোর দিয়ে বললেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে এখানে ধরে রাখা হয়েছে।’ শুনে প্রশ্ন করলুম, কেন? উনি বললেন, ‘আমি তো নাস্তিক নই। আমি সংশয়ী। ঈশ্বর থাকতে পারেন, না-ও থাকতে পারেন— এই হল আমার মত। কিন্তু আমাকে এখানে এনে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন যদি ঈশ্বর থেকে থাকেন তবে তো আমি স্বর্গসুখ থেকে বঞ্চিত হলাম। এ অন্যায় নয়?’ আমি একটু তা না না না করে তাঁকে এড়িয়ে গেলুম।

একটু এগোতেই আমাকে আর একজন জিগেস করলেন, ‘খুব তো নাস্তিক সেজেছ। বলি বউ বাড়িতে সিঁদুর শাঁখাপলা পরত?’
আমি বললুম, ‘হ্যাঁ’।

শুনে তিনি তো খচে অ্যাটম বোম, ‘আপনারা হলেন ভণ্ড নাস্তিক। আমাদের মতন নিষ্ঠাবান হতে পারলেন না। জানেন আমার বউ সিঁদুর পরা ধরেছিল বলে তাকে আমি ডিভোর্স দিয়েছিলুম। ছেলে দেখেশুনে বিয়ে করেছিল বলে তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিলুম। আপনি একটা ওয়ার্থলেস।’

আমি ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে সরে পড়লুম।

তারপর একজন এসে আমার নাম জিগেস করলেন। বললুম।

শুনে তিনি চটে গেলেন, ‘বামুন কখনও নাস্তিক হতে পারে না। বামুনমাত্রেই ব্রাহ্মণ্যবাদী। মানবতার শত্রু। জনগণের দুশমন।’

এইসব বলে তিনি হাতা গোটাতে লাগলেন। মরেও ঠ্যাঙানি খাওয়ার বেইজ্জতির হাত থেকে বাঁচতে আমি পালালুম মাঠের উল্টোদিকে। বুঝলুম এঁরা বিপ্লবী নাস্তিক। এঁদের অ-পদার্থ করা হবে না। তা করা হবে আমার মতন পাতি নাস্তিকদের। এদিকটায় দেখি দুজন হরিহর আত্মা দাবা খেলছেন। একজন মরার আগে ছিলেন বিরাট শিল্পপতি ছিলেন আর একজন কারখানার মেশিনম্যান। দুজনেই নাস্তিক তো। তাই হলায়-গলায় ভাব।

আমি তখন অ-পদার্থ হওয়ার কল্পনায় মশগুল। খাই খাই বাই আমার আজন্ম। নক্ষত্র খাইনি কখনও। না জানি কত ভাল খেতে হবে ভেবে মনে ফুর্তি এল খুব। একটু পরে দুজন এসে আমার হাত পা পেট ধরে টেপাটেপি করতে আরম্ভ করল। খুব সুড়সুড়ি লাগল। তারপর একজন বলল, ‘না, এ একেবারে ন্যাদোস। অ্যান্টি ম্যাটার একে করা যাবে না। নক্ষত্র গিলে হজম করার বান্দা এ নয়।’

মনটা খারাপ হল। শেষে আমার জন্যে বরাদ্দ হল ছাপাখানার অদ্ভুতের কাজ। ছাপাখানায় ভূতেরাই কাজ করেন। ছাপায় ভুল করিয়ে দেন। কিন্তু ধর্মগ্রন্থে ছাপার ভুল করার কাজে ভূতেরা এলিজিবল নন। সে-কাজ নাস্তিকদের জন্যেই সংরক্ষিত। ক’দিন ধরে সেই কাজই করছি। গীতা প্রেসের বইগুলো যে সমস্ত ছাপাখানায় ছাপা হয় সেখানে ঘুরে ঘুরে ছাপায় ভুল করিয়ে দিচ্ছি। দিব্যি কাজ। তোফা আছি।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
brotee mukhopadhyay
brotee mukhopadhyay
2 years ago

চমৎকার।

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »