Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর কবিতাগুচ্ছ

স্থিরচিত্র

গোধূলির ম্লান রোদ ছবি আঁকে তোমাদের মুখে
পথের পাঁচালি যেন, সাদা কালো দুঃখী সুখী ছবি
যেরকম এঁকেছেন সত্যজিৎ রুপোলি পর্দায়
আলো আর অন্ধকার মিশে যায়, মিশে মিশে যায়
ডুবন্ত সূর্যের তেজে জ্বলে ওঠা বিষণ্ণ অসুখে
সন্ধ্যা নামে মন্দিরের বিরহী ঘণ্টার শব্দে, জলে
আবিরের ছড়াছড়ি, ঘাটে বসে একাকী মানবী
আলো আর ছায়াদের লুকোচুরি খেলা মুখে চলে
সারাদিন ঘোরাঘুরি, বাড়িতে অফিসে কত রূপ
দেখানো পোশাকে সাজে, কতশত মনোহারী কথা
বলে যাওয়া, জ্বেলে যাওয়া একগোছা গন্ধহীন ধূপ
শুধু এই গোধূলির কয়েক মিনিট নীরবতা
কেবল এটুকু প্রাপ্তি, জীবনের ধূ ধূ বালিয়াড়ি
এটুকু জলের জন্য প্রতীক্ষায়, মানুষের এই ঘরবাড়ি।

*

জোয়ার ভাটা

কবিতা আর লিখি না আমি, কবিতা আমি আর
সকাল কাটে বিকেল কাটে, রাত্রি নিঝুম ঝুম
অন্ধকারের সমুদ্রে দিই গভীর ডুবসাঁতার
এবার বোধহয় ঘুমিয়ে পড়া, এবার বোধহয় ঘুম

বান্ধবীদের শাড়ির ভাঁজে তখন আলোর ভেলা
সেই ভেলাতেই চড়ে করা জগৎ পারাপার
পদ্য নিয়ে খেলা তখন, শব্দ নিয়ে খেলা
কবিতা আর লিখি না আমি, কবিতা আমি আর

মৃগনাভির গন্ধে মাতাল সোনার হরিণ মন
সিগারেটের মাদক ধোঁয়ায় ঝাপসা নারীমুখ
অথচ সেই মুখেই তখন চুম্বক টান, সুখ
কবিতারই নেশায় মদির প্রথম সে চুম্বন

জীবন তখন শুধুই জোয়ার, ফসফরাসের জ্যোতি
আলোর স্রোতে ভাসত তখন এ বিশ্বসংসার
ভাটার টানে ভাসেন এখন আমার সরস্বতী
কবিতা আর লিখি না আমি, কবিতা আমি আর

*

অসংলগ্ন

কখনও
জিনিস কিনতে ছুটছি শপিং মলে
কখনও
উল্টোপাল্টা পদ্য লেখা চলে
কখনও
নদীর বুকে নৌকো দেখে আনন্দ লাভ
কখনও
অসংলগ্ন কথাবার্তা, মিথ্যে প্রলাপ
যখনই
ঘুমোই আমি, ঘুমিয়ে থাকে পাড়া
স্বপ্নে
মাতাল করেন ফিলমি নায়িকারা
কখনও
ঘুমের মধ্যে কাঁপতে থাকা, বরফজমা শীত
তখনই
স্বপ্নে করেন কটাক্ষপাত মাধুরী দীক্ষিত
কখনও
বুক কাঁপানো বিসর্জনে মায়ের ভাসান
পলকে
ট্রেনের উপর নাচতে থাকেন মালাইকা খান
সিনেমা
নিম্ন মধ্য উচ্চ মানের অনেক হল দেখা
আসলে
যতই দেখি, মূল কথাটা আমরা সবাই একা
তাহলে
কী আর হবে এসব দেখে, অবসাদেই থাকি
অধরাই
থাকবে জানি আকাঙ্ক্ষিত নীলকণ্ঠ পাখি
কেন যে
অর্থহীন এই জীবনটাকে জড়িয়ে থাকা স্নেহে
প্রতিদিন
বয়েস বাড়ছে, শিথিল স্নায়ু, জরার ছায়া দেহে
আজকাল
জীবন ভোগে স্বাদহীনতায়, ইচ্ছে করে মরি
বাঁচাতে
আসেন তখন অতীত এবং বর্তমানের পরী
হতাশা
নিয়েই বাঁচা, ব্যর্থতা আর পরাজয়ের গ্লানি
ভোলাতে
আসেন তখন কোয়েল পায়েল মিমি বা কৌশানী।

*

তৃষ্ণা

নদীর কাছে এলেই বুকে তৃষ্ণা সীমাহীন
নদী শুকোয় আগুনপারা রোদে
ঘরের জলে কঠিন তুষার, বরফজমা হিম
তৃষ্ণা বাড়ায় অতৃপ্তির শীতল জলস্রোতে

ছেলেবেলায় নদীর কাছে যেতাম প্রতিদিন
নদী বলে আর কেন আসিস না
তোমার কাছে নদী আমার অনেক হল ঋণ
শোধ না করার জন্য বুকে সারা জীবন তৃষ্ণা।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
3 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
2 years ago

কবি সুজিত বসু তাঁর কবিতা থেকে পাঠককূলকে প্রায় তিন দশক দূরে রেখেছিলেন। কয়েক বছর হলো আমরা আবার তাঁর কবিতা পড়ছি নিয়মিত, নানান পত্র-পত্রিকায়। উনি ক্রমাগত কবিতার গড়ন নিয়ে, শব্দ ব্যবহার দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে থাকেন। এই কবিতাগুচ্ছেও তেমন নাড়াচাড়া স্পষ্ট। কখনো কোনো মোনোটনি ঢুকতে দেননা তাঁর কবিতার শরীরী ভঙ্গিতে। তাই নিত্য নতুন কুহকের মধ্যে থেকে কবিকে, কবির সময়কে, ভাবনাকে খুঁজতে ভালবাসি আমরা, পাঠককূল।

Amitava Bhattacharya
Amitava Bhattacharya
2 years ago

Amitava Bhattacharya Kolkata Amar priyo kobi Sri Sujit Basur notun kobitaguchcho Trishna, Osoglogno, Stirchitro ebong Jowar Bhata pore khub valo legeche. Enar notun kobita gulor praksh korar jonyo VALAVASHHA ke ebong Kobike osongkho donyobad roilo. Kobir notun aro kobita r jonyo opekhshai thaklam.

Kishore Dutta
Kishore Dutta
2 years ago

আমার প্রিয় কবি সুজিত বসুর কবিতাগুচ্ছের ছন্দে আবেগে পরিপূর্ণ প্রতিটি কবিতা পড়ে খুবই আনন্দ পেলাম। কবির এই সুন্দর সুন্দর কবিতা পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আবারও bhalobhashake অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »