
বিশেষ নিবন্ধ: সন্দীপ ঘোষ
লিঙ্গপুরাণে বেশ্যা লিঙ্গপুরাণে দুর্গাপুজোকে ‘চতুষ্কর্মময়ী’ বলা হয়েছে। চতুষ্কর্ম বলতে— মহাস্নান, ষোড়শোপচার পূজা, বলিদান এবং হোম। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে দেবীকে বহুবিধ উপাচারে স্নান করানো হয়।

লিঙ্গপুরাণে বেশ্যা লিঙ্গপুরাণে দুর্গাপুজোকে ‘চতুষ্কর্মময়ী’ বলা হয়েছে। চতুষ্কর্ম বলতে— মহাস্নান, ষোড়শোপচার পূজা, বলিদান এবং হোম। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে দেবীকে বহুবিধ উপাচারে স্নান করানো হয়।

১৯১০। চলচ্চিত্রের নামকরণের জন্য The Essanay Film Company একটা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে। যদিও Kinetoscope, Nickelette, Theatorium, Nickelshow নামগুলি এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানি ছাড়া Cinema নামটি এবং ১৯০৯ সাল থেকেই আমেরিকার কাগজপত্রে Movie শব্দটি চালু ছিল। তবু এডগার স্ট্রাকোশ নামক জনৈক সঙ্গীতজ্ঞ ‘Photoplay’ নাম দিয়ে প্রথম পুরস্কারের ২৫ ডলার জিতে নেন ঠিকই, তবে Movie-কে ছাপিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

স্টুডিওতে বসে এডওয়ার্ড এইচ. আমেট এক চমকপ্রদ কাজ করে ফেললেন, তৈরি করলেন ‘Battle of Santiago Bay’-র মত ছবি, স্টুডিওর ভিতরে জলের চৌবাচ্চায়। কাগজে ছাপা যুদ্ধজাহাজের ছবিকে ভিত্তি করে ও লেন্সের সমকোণের সঙ্গে সমতা রেখে যতদূর সম্ভব নিখুঁতভাবে তৈরি হল যুদ্ধজাহাজের মডেল। উইলিয়াম এইচ. হাওয়ার্ড এইসব যুদ্ধজাহাজকে বৈদ্যুতিক শক্তিমাধ্যমে চালনা করার কাজে সাহায্য করলেন অ্যামেটকে।

১৮৯৬ সালে ব্ল্যাক মারিয়া স্টুডিওতে যে সমস্ত শিল্পী কাজ করতেন, তাঁদের উপার্জন ছিল যাতায়াতের খরচ বাদে দশ থেকে পনেরো ডলার। ১৮৯৭-এর ১৭ মার্চ ল্যামডা কোম্পানির করবেট ও ফিৎসিমনস-এর মুষ্ঠিযুদ্ধের যে ছবি তোলে তা এগারো হাজার ফুটের। কোনও একটা ঘটনা তোলার জন্য এটাই পৃথিবীর দীর্ঘতম ছবি। এই ছবি তুলতে রেক্টর চারটে ক্যামেরা ব্যবহার করেন।

এডিসনের যন্ত্রের শক্তির উৎস ছিল বিদ্যুৎ আর ল্যুমিয়েরদের যন্ত্র ছিল কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাই ল্যুমিয়েরদের যন্ত্র ছিল অনেক সস্তা, ছোট এবং হালকা। ক্যামেরার গায়ে হাতলের মোচড়ে খাঁজকাটা দাঁতালো যন্ত্রাংশ একবারে টানতে পারত ৮ খানা ফ্রেম, অর্থাৎ দুবার হাতল ঘোরালেই কাজ শেষ। আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, এই যন্ত্র হাতে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়া যেত যত্রতত্র। ল্যুইয়ের তত্ত্বাবধানে এই যন্ত্র নির্মাণ করেছিলেন চার্লস মোয়াসঁ নামে এক যন্ত্রশিল্পী।

এডিসনের স্টুডিওর এক মেকানিক ফ্রেড অট ছিলেন ক্যামেরার সামনে প্রথম অভিনেতা। পৃথিবীর প্রথম চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবে ফ্রেড অট-এর নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর পেছনে একটা মজার গল্প আছে। অটের গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল একটা বিরাট সাদা কাপড়। কোমরে একটা বেল্ট আটকে সেটাকে ফুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দেখতে লাগছিল বেলুনের মত। অটকে বলা হয়েছিল বাঁদরের মত অঙ্গভঙ্গি করতে।

চিত্তবিনোদনের জন্য চিন, ভারত, জাপানে প্রথম ছায়ার খেলা দেখানো শুরু হয়। ছায়ার খেলার পাত্রপাত্রী প্রথমে তৈরি হত গাছের পাতা ও জন্তুজানোয়ারের চামড়া দিয়ে। এশিয়ার ছায়ার খেলা যখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রসার লাভ করে তখন তামা, দস্তা, পিতল আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। শুরু হল আরও নিখুঁত ও যান্ত্রিকভাবে খেলা দেখানো।

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।