Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

কলমের প্রতিবাদ কলম দিয়ে হোক

কথায় বলে, অসিকে অসি দিয়ে জব্দ করতে হয়। আর কলমকে কলম দিয়েই প্রতিবাদ করতে হয়। তাই বলে কলমকে চপার হামলা বা অসি দিয়ে নয়। গত ১২ আগস্ট আমেরিকার নিউ ইয়র্কে বুকার-জয়ী লেখক সলমন রুশদিকে মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় যে নৃশংস চপার হামলা করা হয়েছে, তা আবার একটি নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল। হামলাকারী মৌলবাদী গোষ্ঠীর ওই প্রতিনিধি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রুশদির শরীরে ১৪-১৫ বার চপারের কোপ দিয়েছে। অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থা থেকে কিছুটা বেরিয়ে এলেও তাঁর একটা চোখ কিন্তু চিরতরে খতম হয়ে গেছে।

সলমন রুশদির সঙ্গে আমার বহু বিষয়ের মিল না থাকতেই পারে। কিন্তু নিউইয়র্কে রুশদির ওপর যে হামলাটা হয়েছে, আমি তার তীব্র নিন্দা করি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি করছি। পাশাপাশি আমি একথাও বলতে চাই যে, আয়োজক সংস্থার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এত গাফিলতি কেন? রুশদি শুধু বিখ্যাত লেখকই নন, তিনি একজন বিতর্কিত লেখক। ১৯৮৮ সালে তাঁর বিতর্কিত গ্রন্থ ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত। ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা খোমেইনি তাঁর মাথার দাম ধার্য করেছিলেন। তারপর থেকে এই লেখকের নিরাপত্তা নিয়ে লাখ টাকার প্রশ্ন তো ছিলই। আরও দু-একবার তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছিল। তার পরও নিউ ইয়র্কের আয়োজক সংস্থা তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি কেন? মঞ্চে‌ সাক্ষাৎ করার নামে এতবড় হামলা? তাহলে কি বলা যাবে না, এর মধ্যে কোনও ষড়যন্ত্র ছিল?

প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার লেখক-শিল্পীরা পৃথিবীতে বারবার মৌলবাদী হামলার শিকার হয়েছেন। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার ও মুক্তচিন্তার মানুষ মৌলবাদী হামলায় খুন হয়েছেন। তসলিমা নাসরিন আজও সেদেশে‌ ঢুকতে পারেন না। এরকম অনেক ঘটনার কথা বলা যায়। এইরকম আমাদের বিখ্যাত শিল্পী মকবুল ফিদা হোসেনকে দেশ‌ ছাড়তে হয়েছে উগ্র মৌলবাদীদের জন্যই। বিদেশের মাটিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। একসময় এই মৌলবাদী শক্তির জন্যই শাবানা আজমি ‘ওয়াটার’ ছবির শ্যুটিং করতে পারেননি।

এই মৌলবাদীদের হামলায় প্রাণ গিয়েছে কালবুর্গী, নরেন্দ্র দাভালকার, গোবিন্দ পানসারে ও গৌরী লঙ্কেশের। এই মৌলবাদীদের শিকার হয় মুম্বাইয়ের ক্রিকেট পিচ। এই মৌলবাদীদের হুমকির শিকার হন গজলশিল্পী ওস্তাদ গোলাম আলী খান। কেন মৌলবাদীরা বারবার এটা করে? এর পিছনে কি রাজনীতির হাত রয়েছে? রাজনীতি কোথাও মৌলবাদীদের সঙ্গে হাত মিলায়? এই বিষয়গুলো ভাবাচ্ছে। রুশদি যে মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছেন, সেখানে নিরাপত্তার বেড়ি ভেদ করে একজন দুষ্কৃতী উঠে তাঁকে ১৪-১৫ বার চপারের কোপ মারল। বিষয়টা মনে হয় এত সহজ নয়। জালটা কিন্তু অনেক গভীরের।

যত দিন যাচ্ছে, পৃথিবীতে ধর্ম নামক বস্তুটি সাংঘাতিক স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে। তার মানে এই নয় যে, লেখক একটা মত প্রকাশ করবেন, আর তার জন্য‌ তাঁকে চপার হামলা? রুশদি বা তসলিমার সঙ্গে আমি অনেক বিষয়ে সহমত নাও হতে পারি। তাই বলে চপার হামলা? ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটি নিষিদ্ধ হয়েছিল ১৯৮৮ সালেই। সে সময় সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ‘প্রতিক্ষণ’ পত্রিকায় একটা আর্টিকেল‌ লিখেছিলেন লেখকের দায়বদ্ধতা নিয়ে। সেখানে তিনি দাবি করেন, একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, আবার তিনি ধর্মীয় গুরু। তাঁকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে বা লিখতে গেলে অনেক চিন্তাভাবনা করতে হয়। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ কত সুন্দর‌ কলম দিয়ে কলমের প্রতিবাদ করেন। তাই কলমকে কলম দিয়েই প্রতিবাদ করতে হয়। চপার দিয়ে নয়।

আরবি সাহিত্যের বিখ্যাত কবি ইমরুল কয়েশ। তিনি নাস্তিক ও নির্ধর্মবাদী। কিন্তু হজরত মহম্মদ (সা:) তাঁর কবিতা ভালবাসতেন। তিনি কিন্তু কোনওদিন কারও মাথার দাম ধার্য করেননি। হায়দরাবাদ প্রেস ক্লাবে মৌলবাদীরা যেভাবে তসলিমা নাসরিনকে হামলা করেছে, আমি সেসময় তার নিন্দা করেছিলাম। তসলিমা বা রুশদির অনেক কিছুই আমার পছন্দ নাও হতে পারে। তা বলে চপার হামলা? না মোটেই নয়। লেখককে মেরে ফেলা যায়, কিন্তু তাঁর সৃজনশীলতাকে কি মেরে ফেলা যায়? রুশদির ওপর এই হামলার বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ হোক।

চিত্র: গুগল
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »