শুরুরও তো এক শুরু থাকে, যাকে প্রচলভাবে ‘সলতে পাকানো’ বলে অভিহিত করা চলে। তদ্রূপ শিল্প, ভাস্কর্য, সাহিত্য, সঙ্গীত ইত্যাদি থেকে সর্বতোভাবে নান্দনিকতা বা নন্দনতত্ত্বে পৌঁছতে খানিক মানুষের ইতিহাস বা বিবর্তন জানাও অতিশয় আবশ্যক। কোনও কিছুই তো হঠাৎ করে হয় না!
পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে, ছিল, ঊষালগ্নে মূলত ড্রিভেন বাই বেসিক ইনস্টিংক্ট। মৌলিক প্রবৃত্তি দ্বারা চালিত, শিকার আহার যৌনতা ব্যস্। আস্তে আস্তে মানুষ-ই একমাত্র প্রাণীকুল যাদের মধ্যে বোধের (Rationality) জন্ম হল। সেই সঙ্গে এক খোঁজ এবং ঠিক শিশুর মতো অসংখ্য প্রশ্ন আর প্রতর্ক অনন্তর। জীবন তাকে একই সঙ্গে শিল্পবোধ এবং বিশেষ জ্ঞানের প্রতি অপরিসীম কৌতূহলীও করে তুলল। প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানের উদ্ভব। তারই ফলস্বরূপ প্রয়োজনানুসারে hand axe stone age থেকে কৃষিকাজ, আগুনের ব্যবহার, প্রতিকূলতার সঙ্গে যুঝতে সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানবসভ্যতার উন্মেষ। আমরা সবাই অবগত।
এখনও তো বটেই ভাবলে আশ্চর্য-ই হতে হয় সেদিনের মানুষের জীবনযাপন কত সংকটময় ছিল। অসুখবিসুখে মানুষ দিশেহারা। কোনও কিছুই তার আয়ত্তাধীন নয়। প্রকৃতির যা কিছুই তাকে বিস্মিত করেছে ভেবেছে অতিপ্রাকৃতিক, শাশ্বত সত্য। এখান থেকেই ঈশ্বরের জন্ম। তাকে কেন্দ্র করে ধর্ম ইত্যাদি। যদিও এসমস্ত প্রতিবেদনের বিষয় নয়, এড়িয়ে গেলে অভীষ্টে পৌঁছনোও তো সম্ভব না।
শারীরবৃত্তীয়ভাবে আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) প্রায় ৩,০০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ বছর আগে আফ্রিকায় আবির্ভূত হয়েছিল এবং হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ায় একই সময়ে আবির্ভূত।
আবার এভোলিউশন তত্ত্বে মলিকিউলার বায়োলজির একটি শাখা genomic গবেষণায় প্রকাশ করেছে যে, আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানরা হল পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পরিচিত সভ্যতা, যার পূর্বপুরুষরা প্রায় ৭৫,০০০ বছর আগে প্রসারিত ড্রাইপিথেকাস। এদেরকে মানুষ এবং বনমানুষ উভয়ের পূর্বপুরুষ বলে মনে করা হয়।
তবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, হোমো ইরেক্টাস, সবচেয়ে প্রাচীন পরিচিত প্রজাতি যা মানুষের মতো দেহের অধিকারী। এর ধড়ের তুলনায় অপেক্ষাকৃত লম্বা পা এবং ছোট বাহু রয়েছে। সবচেয়ে বড়কথা erect posture সোজা হয়ে দাঁড়ানো, হাঁটাচলা। প্রথম পুরুষ/ মহিলা ‘নিয়ান্ডারথাল মানুষ’। আধুনিক মানুষ আফ্রিকার বাইরে যেতে শুরু করে প্রায় ৭০,০০০-১,০০,০০০ বছর আগে।
কিন্তু ২৮,০০০ বছর আগে, তাদের মধ্যে শেষটি জিব্রাল্টারে তাদের চূড়ান্ত হোল্ড-আউট থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, দৃশ্যত আফ্রিকা থেকে আগত আধুনিক মানুষের (হোমো স্যাপিয়েন্স) কাছে হেরে হারিয়ে গিয়েছিল Ramapithecus।
বিবর্তন এইরূপে, Australopithecus > Homo Erectus > Homo Sapiens Neanderthalensis > Homo Sapiens Sapiens (আধুনিক মানুষ)।
উপরোক্ত অংশটুকু বলার প্রয়োজন ছিল এই ছবিগুলিকে প্রতিস্থাপিত করবার জন্য। যা কিনা মানুষের শিল্পবোধ জাগরূকতার সামগ্রিক ঐতিহ্যের বুনিয়াদ— সে তার পারিপার্শ্বিকতায় যা কিছু দেখছে তাকেই নিজের মতো করে লিপিবদ্ধ করবার চেষ্টা করছে অনুকরণে। নান্দনিকতা বা শিল্পে নন্দনতত্ত্ব অনেক পরের বিষয়।
‘তুমি কি কেবল ছবি শুধু পটে লিখা।
ওই যে সুদূর নীহারিকা
যারা করে আছে ভিড়
আকাশের নীড়;
ওই যে যারা দিনরাত্রি…’


যদিও আস্তিকের বিবেচনায় নিরূপিত, হয়তো বা সঙ্গত কারণেই। এই যে প্রকৃতির ঘেরাটোপ, ঋতুরাজ, পাহাড় পর্বত সমুদ্র নদী কীটপতঙ্গ বৃক্ষরাজি মায় মানুষ সমস্তকিছু-ই শিল্প। আর শিল্পী স্বয়ং ঈশ্বর। দার্শনিক নিৎশে মনে করতেন, একজন ব্যক্তির সমগ্র জীবন যাপনকেই শিল্পের কাজ হিসাবে দেখা উচিত। বলবার অপেক্ষা রাখে না যেখানে ব্যক্তিটিই শিল্পী। অর্থাৎ কিনা Aesthetic expression বা নান্দনিক অভিব্যক্তি।
ঠিক এ ব্যাপারেই একটি ছোটগল্প বলবার লোভ সামলাতে পারছি না…
একজন অভিভাবক তার মেয়ের বিবাহের সম্বন্ধ হেতু সম্ভাব্য পাত্রের বাড়িতে গেলেন যোগাযোগে। সল্টলেকের বাড়িগুলো সাধারণত যেমন হয়ে থাকে আর কী। সুন্দর সুন্দর আর্কিটেকচার, চার-পাঁচ কাঠার বাড়ি, মেন গেটের দু’পাশে ছোট লনে মেক্সিকান ঘাসের সবুজ কার্পেট, বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি ফুল ফুটে আছে। বাড়ির ভেতরের আসবাবপত্র ও যথোপযুক্ত মনোময় রুচিসম্মত। কোথাও কিন্তু আতিশয্য নেই কোনওই। পাত্রের মা পাত্রীর ছবিটি দেখলেন, খুব সুন্দরভাবে ক্ষণিকের অতিথি আপ্যায়নের পরে পাত্রীর পিতাকে ছবিটি ফেরত দিলেন। মাত্র কিছুক্ষণের পরিচয় তবু অত্যন্ত মার্জিত কোমলস্বরে আপনজনের মতো বললেন, ‘আপনার মেয়ে তো শিক্ষিতা, দেখতে-শুনতেও বেশ ভাল। দাদা একটা কথা বলি, মেয়েকে ভাতের মাড়ের সঙ্গে সেদ্ধ আলুর ক্বাথ খাওয়াবেন, দেখবেন ওর চেহারাতেও বেশ লাবণ্য, শ্রী আসবে। আমরা পরে যোগাযোগ করব কেমন।’
অর্থাৎ পাত্রী খুব রোগা, তাঁদের হয়তো পছন্দ হয়নি। পাঠকের কাছে ঘটনাটি শুধু ভদ্রতা শিষ্টাচার মনে হবে কিন্তু আমার বক্তব্য এর থেকে আর-একটু এগিয়ে নিৎশের বক্তব্যানুযায়ী প্রথাগত শিল্পের ধারণা থেকে ব্যক্তির যাপন ও শিল্পময় হতে পারে আচার-ব্যবহারে। Aesthetic expression বা নান্দনিক অভিব্যক্তির নিদর্শন। যা কিনা শিল্পকে ছাপিয়ে গিয়ে নন্দনতত্ত্বে পৌঁছে যাওয়া। এক্ষেত্রে শুধু বাড়িঘরই শিল্পসম্মত নয়, ব্যক্তির মনটাও শৈল্পিক।
শিল্পের সংজ্ঞা সাধারণত তিনটি বিভাগে পড়ে: প্রতিনিধিত্ব বা representation, প্রকাশ বা expression এবং ফর্ম বা Fervidity। প্রতিনিধিত্ব বা মিমেসিস হিসাবে শিল্প। প্লেটো প্রথম ‘মিমেসিস’ (mimesis) হিসাবে শিল্পের ধারণাটি তৈরি করেছিলেন, যার গ্রিক অর্থ অনুলিপি বা অনুকরণ।

এই ছবিটি যে এঁকেছে তার বয়স পাঁচ বছর। বাবা-মায়ের সঙ্গে ট্রেন-ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় সে যেমনটা দেখেছে মন থেকে পোট্রে করেছে। রেললাইন, ট্রেনের দু’টি কামরার মধ্যেকার দূরত্ব, দরজা জানালা ইলেকট্রিক সংযোগকারী ট্রলি মায় ইস্টার্ন রেলওয়ের লোগো ER সব, হুবহু। উপরে দর্শিত প্রাচীন গুহা চিত্রকলা, স্কাল্পচারের মতোই এটাও প্লেটো বর্ণিত ‘মিমেসিস’ (mimesis)-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে রাখলাম।
সম্ভবত এজন্যই Damien Steven Hirst, English visual artist বলেছেন, ‘Art is childish and child like’।
আমরা শিল্পের বিভিন্ন Art form-এর আদিমতম এবং প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনাটা সেরে ফেলি। সামগ্রিকভাবে শিল্পকে যদি সাত রীতি, প্রণালীতে বেঁধে ফেলা যায় এবং তা যদি সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে ক্রমান্বয়ে… পেইন্টিং, ভাস্কর্য, সাহিত্যানুশীলন, স্থাপত্যবিদ্যা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, নাট্যকলা এই প্রকার।
তা পেইন্টিং, ভাস্কর্য-এর কথা ছুঁয়ে ফেলা গেছে এবার সাহিত্যানুশীলন বলতে গেলে নিচের ছবিটিতে এনহেদুয়ান্না বাঁদিকে আজ থেকে ৪ হাজার ২৭৪ বছর আগের, অর্থাৎ যিশুর জন্মের ২২৫৮ বছর আগের। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে পৃথিবীর প্রথম কবি এবং ডানদিকের জন ‘মা নিষাদ’, বাল্মীকি, খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর আদি কবি।

তাহলে এবার আসা যাক শিল্প আর শিল্পে নন্দনতত্ত্ব কি এক? এ বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা যাক। যেকোনও শিল্প নিজেই তো নান্দনিক। চারুকলা, ফাইন আর্টস কিংবা কান্তিবিদ্যা, সৌন্দর্যশাস্ত্র, বললেই সঠিক প্রকাশ হবে? ‘সৌন্দর্য এবং তার রসাস্বাদনে দার্শনিক অধ্যয়ন বলাই বোধহয় যুক্তিযুক্ত’। শিল্পের সঙ্গে দর্শন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, যা শিল্পের প্রকৃতি এবং সেই ধারণাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পের স্বতন্ত্র কাজগুলিকে ব্যাখ্যা বা মূল্যায়ন করা সম্ভব। শুধুই মুগ্ধতা নয়।
নান্দনিকতা বলতে আরও বোঝায় সৌন্দর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত আবেগ এবং মনের অধ্যয়ন। নান্দনিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিগত এবং ব্যক্তির জন্য অনন্য।
সৌন্দর্যবোধ এমন একটি গুণ যা একজন ব্যক্তির তার দৃষ্টি, শ্রবণ এমনকি অভীক্ষণ (taste) বা রসাস্বাদনের মাধ্যমে অনুভবের নির্যাস। নান্দনিকতা বা নন্দনতত্ত্ব দর্শনের একটি শাখা যেখানে সৌন্দর্য, শিল্প, সৌন্দর্যবোধ সূক্ষ্মদর্শিতা (sagacity) সৃষ্টি ও উপভোগ নিয়ে আলোচনা। আরও বৈজ্ঞানিকভাবে বললে, নন্দনতত্ত্ব মানুষের সংবেদনশীলতা ও আবেগের মূল্য এবং অনুভূতি ও স্বাদের বিচার বিবেচনাধীন। দর্শনের একটি শাখা যা সৌন্দর্যের উপলব্ধি সাধারণত প্রকৃতি দ্বারা সৃষ্ট চিত্রকলা, ভাস্কর্য। পরবর্তীতে তাকেই আধারিত মানুষের কর্মকাণ্ডে শিল্পকর্ম সাহিত্য গান সহ কোনও ধরনের শিল্প দ্বারা নিরূপিত উত্তরণ।
মানুষের জীবনযাপনে নন্দনতত্ত্ব শিল্পের বাইরেও বহুকাল আগে থেকেই পরিলক্ষিত। এমনকি শোকেও, হ্যাঁ। শহুরে নাগরিক মানুষ এখন বড়ই শিল্পিত, সৌকর্যময়। আপনজনের মৃত্যু তাঁদের ব্যথিত করে নিশ্চয়ই কিন্তু তার প্রকাশ ভীষণ নির্মোহ, একান্ত আপন, গোপন। কিন্তু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি আজও গ্রামেগঞ্জে নিকটজনের মৃত্যুর প্রকাশ শুধু উচ্চকিত নয়, বরঞ্চ একটি বিশেষ সুরে প্রকাশিত হয় সে কান্না। রুদালি ইত্যাদি ব্যতিরেকেও। আমার তো ভীষণই মনে হয় সঙ্গীতের সাত সুর রাগরাগিণী ধ্রুপদ ইত্যাদির উন্মীলন আদিমতম এই শোকসঙ্গীত-ই। প্রাচীন মানুষ সভ্যতার দিকে যত এগিয়ে গেছে জীবন-জীবিকায় মূলত কায়িক শ্রম থেকে উপশম (relief) পেতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গানকে আশ্রয় করেছে। কৃষক চাষাবাদ করতে করতে গেয়েছেন, মাছ ধরতে ধরতে গেয়েছেন জেলে, ছাদ পেটাতে পেটাতে, এমনকি টিউবওয়েল বসাতে গিয়ে নিজেদের উজ্জীবিত করতে অপশব্দের গান গেয়ে থাকেন শ্রমিক। যা কিনা মাটির গান বলে অভিহিত। লোকগীতি, পল্লিগীতি, ভাটিয়ালি, আউলবাউল, সারিগান। এসমস্ত-ই স্বতঃস্ফূর্ত শিল্প। পরে তা উচ্চাঙ্গসঙ্গীত, লঘুসঙ্গীত, আধুনিক, নিকট অতীতে তো আবার জীবনমুখী গান নামেও, ইত্যাদিতে পরিমার্জিত হতে হতে উত্তরণে নান্দনিকতায় নন্দনতত্ত্বে পৌঁছয়। নাচের ক্ষেত্রেও দেশে-বিদেশে ব্যালে, ফ্ল্যামেনকো, স্টেপ ডান্স, সালসা, ওয়ালট্জ, বেলি ডান্স… তা বাদে আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন ফরম্যাট, ফর্ম নিয়েও কথা বলা যায় বিস্তর। যেমন ঝুমুর, কুচিপুড়ি, বিহু, কথাকলি, মোহিনীয়াট্টম, ভরতনাট্যম, ওড়িশি, ভাংড়া আরও কত। প্রতিবেদন দীর্ঘায়িত হবার ভয়ে আর এগোচ্ছি না।
যে ফর্মে-ই হোক না কেন মূলত; আত্মবাদী (subjective) অভীষ্ট এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কিত (objective) আসলে শিল্প আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি সামাজিক বিবৃতি তৈরি করতে পারে। ততোধিক নান্দনিক (Aesthetic) সৌন্দর্যে সৌকর্যে যাপিত জীবন হয়ে ওঠে উপভোগ্য। শিল্প আবেগের গভীর উপলব্ধি করবার গেটওয়ে, প্রবেশপথ। আমাদের আত্ম-সচেতনতা বাড়ায়, নতুন ধারণা এবং অভিজ্ঞতার জন্য উন্মুক্ত হতে অধিক ফলপ্রদ তা অনায়াসেই বলা চলে।
শিল্প আমাদের উত্থান, উদ্দীপনা, প্রশান্তি, একাধারে বিনোদন এবং শিক্ষিত করতে পারে প্রতিদিনের ব্যবহারিক জীবনে যান্ত্রিকতার বাইরে। আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সবচেয়ে গভীর স্তরে, এটি আমাদেরকে দৈনন্দিন থেকে আত্মদর্শন এবং চিন্তার জগতে নিয়ে যায়, বিশ্বসংসারে মানুষের অবস্থানের বড় চিত্র দেখাতে।
একজন শিল্পী শিল্পের কাজের মধ্যে যে উপাদানগুলিকে সংগঠিত করার জন্য ব্যবহার করেন তা হল ব্যালেন্স, স্বরসংঘাত-উচ্চারণ, বিচরণ, অনুপাত, ছন্দ, ঐক্য এবং বৈচিত্র্য।
সৌন্দর্য বা নন্দনতত্ত্ব এমন একটি গুণ যা একজন ব্যক্তিকে তার দৃষ্টি, শ্রবণ এমনকি অভীক্ষণের মাধ্যমে স্বর্গীয় অনুভূতি অনুভবে আনন্দ প্রদানে সক্ষম। নান্দনিকতা দর্শনের একটি শাখা যা সৌন্দর্যের উপলব্ধি নিয়েই কাজ করে। সৌন্দর্য সাধারণত প্রকৃতি দ্বারা বা চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য সহ উপরোক্ত বিবিধ কোনও ধরনের শিল্প দ্বারা উদ্ভূত, সহজেই অনুমেয়। পরিশেষে…
আমাদের দেশের মহান শিল্পী রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, নন্দলাল বসু, যামিনী রায়, রামকিঙ্কর বেজ, হুসেন, রবি বর্মা বিদেশের লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, পিকাসো, ভ্যান গগ, মাইকেলেঞ্জেলো, বত্তিচেল্লি, গগ্যাঁ, অসংখ্য অসংখ্য। সম্মিলিতভাবে এঁরা সাগরের মতো। আমি সেখানে বালুতটে একটি বালুকণাও নেই। তবু নির্লজ্জের পরাকাষ্ঠা হয়ে শুধু আমার পক্ষে সহজতর হবে ভেবে নিজেরই একটি অপটু সৃষ্টিকে রাখলাম বোঝাতে যে…

[ক’দিন আমি, মাটি আর পাপক্ষয়ে অমেয় বিভূতি
তপে অবয়বী সংজ্ঞার ছায়া… সূর্যম্পশ্যা ভগবতী
জন্মপথে সরোজ, সহস্র শনি জন্মাক সূর্য প্রভায়
মোনাজাতে কৌটিল্য রাখি কুসুম কোমল দুপা’য়]
এই মৃৎশিল্পটি ততক্ষণই শুধু একটি শিল্পমাত্র যখন তা একটি নগ্ন নারীর আকৃতি। যে মুহূর্তে স্তনবৃন্ত শঙ্খের ব্যঞ্জনার সঙ্গে জন্মদ্বারে একটি পদ্মফুল রাখলাম সঙ্গে অভিহিত করতে চার পঙ্ক্তিতে অন্যমাত্রা পেল। আমার অতিক্ষুদ্র জ্ঞানে প্রতিবেদনে পূর্বোল্লিখিত ‘সৌন্দর্য বোধ আর দর্শনের সংমিশ্রণ-ই’ শিল্পের উত্তরণ নন্দনতত্ত্বে।
বাংলাদেশ থেকে পড়ছি। চমৎকার লেখা। মানবজীবনে নন্দনতত্ত্বের অবদান নিয়ে আরো লেখা পড়ছে চাই।