Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ধর্মের রক্তচক্ষু এবং কোপার্নিকাসের তত্ত্ব

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ও বহুপঠিত কবিতা ‘রাস্তা কারও একার নয়’ আজ আবার মনে পড়ল। মনে পড়ল—

‘‘ধর্ম যখন বিজ্ঞানকে বলে ‘রাস্তা ছাড়ো!’ বিজ্ঞান কি রাস্তা ছেড়ে দেয়?
পোপের ভয়ে দেশান্তরী হয়েছিলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। সারাদিন
একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে পায়চারি করতেন গ্যালিলিও গ্যালিলেই;
তাঁকে পাহারা দেবার জন্য বসে থাকতো একজন ধর্মের পেয়াদা, যার
চোখের পাতা বাতাসেও নড়তো না।
বিজ্ঞান কি তখন থেমে ছিল? তীর্থের পাণ্ডাদের হই হই, তাদের লাল
চোখ কি পেরেছিল পৃথিবীকে বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে, সূর্যকে
তার চারদিকে ওঠবোস করাতে?’’

ধর্মের লাল চোখ বিজ্ঞানকে কখনওই থামাতে পারেনি বা নিজের রাস্তা থেকে বিজ্ঞানকে সরিয়ে দিতে পারেনি ঠিক-ই, কিন্তু বহু মাশুল গুনতে হয়েছিল তার জন্যে। প্রায় কয়েক শতাব্দীকাল পিছিয়ে গিয়েছিল বিজ্ঞানের অগ্রগতি। শুরুতে উদ্ধৃত কবিতার অংশটিতে বিজ্ঞানের ওপর ধর্মের সেই অমানুষিক অত্যাচারের কিছু প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এসেছে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। এসেছে জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলির কথা। যে গ্যালিলিও জন্মাবেন কোপার্নিকাসের জন্মের নব্বই বছর পরে। অত্যাচার ওখানেই থেমে থাকেনি। প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে ধর্মের ‘লাল চোখ’ কতটা সাংঘাতিক হতে পারে, তা আমরা আগেও পড়েছি। কোপার্নিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, জিওর্দানো ব্রুনো, সার্ভেটাস…। শতকের পর শতক ধরে ধর্মযাজকদের অত্যাচারে রক্তাক্ত হয়েছে বিজ্ঞান আর বিজ্ঞানী। আজ পাঁচ-ই মার্চ, বিজ্ঞান ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। কী হয়েছিল সে দিন? ৫ মার্চ, নিকষ কালো অন্ধকারের অক্ষরে লেখা কালো দিন। কেন না সেদিন সত্যের টুঁটি টিপে ধরেছিল ধর্ম। ভয়ানক লকলকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিল সত্যানুসন্ধানের অক্ষরগুলি! সেসব কথায় যাওয়ার আগে, ইতিহাসের পথ ধরে একটু পিছিয়ে যেতে হবে আমাদের।

পোল্যান্ডে কোপার্নিকাসের বাড়ি।

সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা দেড়-দু’হাজার বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত ছিল। গ্রিক গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ টলেমির জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৯০ সালে। গ্রিক পণ্ডিতদের ভ্রান্ত ধারণাকে বহন করে একই সুরে তিনিও বলেছিলেন— পৃথিবীই হল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। অ্যারিস্টটলের বিভিন্ন মডেলকে বাতিল করে নতুন একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন টলেমি। টলেমির প্রস্তাবিত সেই মডেলটি ভূকেন্দ্রিক ব্যবস্থা (জিওসেন্ট্রিক সিস্টেম) হিসেবে পরিচিত। টলেমির সেই মডেলের প্রস্তাবে মনে করা হত, মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে পৃথিবী এবং যাকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহগুলি।

তারপর ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এলেন নিকোলাস কোপার্নিকাস (Nicolaus Copernicus, ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৪৭৩-২৪ মে ১৫৪৩)। পোলান্ডের ছোট্ট একটি শহর টুরান, সেখানে কোপার্নিকাসের জন্ম। মাত্র দশ বছর বয়সে বাবাকে হারান কোপার্নিকাস। ধর্মযাজক কাকা সেসময় সংসারের হাল ধরলেন। বড় হয়ে পোলান্ডের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়া শুরু করলেন কোপার্নিকাস। ডাক্তারারির পাশাপাশি দর্শন, জ্যামিতি, ভূগোল এবং জ্যোতির্বিদ্যাও পড়েন তিনি। কেবল একটা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, পড়েছেন ভিয়েনা, রোম, ফেরারা, বোলোনা প্রভৃতি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তবে সব বিষয়ের মধ্যে তিনি বেশি পছন্দ করতেন পড়তে জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়। ডাক্তারি পড়তে পড়তে চলে আসেন ইতালির বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে। শুধু তাই নয়, ভাবলে আশ্চর্য লাগে আইনবিদ্যাতে তিনি ডক্টরেটও করেছিলেন। আইনবিদ্যার পরে আবার শেষ না-হওয়া ডাক্তারি পড়া সম্পূর্ণ করতে ‘পাদুয়া’-য় যান। কাকা সেইসময় চাইছিলেন ভাইপো এবার গির্জায় যোগ দিক। কোপার্নিকাস কাকাকে বোঝালেন যে, গির্জায় যোগ দেবেন বলেই তিনি ‘চিকিৎসাবিদ্যা’ পড়া শেষ করতে চান, যাতে করে তিনি মানুষের উপকারে আসতে পারেন। আইন এবং ডাক্তারির পাশাপাশি জ্যোতির্বিদ্যা চর্চাতে ছেদ পড়ল না।

মহামান্য পোপ থেকে সম্রাট, বুদ্ধিমান এবং সাধারণ মানুষ— সকলেই তখন এটাই জানতেন ও মানতেন যে পৃথিবী ঠায় নিজের জায়গায় স্থির হয়ে আছে। কোপার্নিকাসের ভাবনা তখন অন্য খাতে বইছে। তাই নিয়ে চলছে নিবিড় অধ্যয়ন আর হিসেব-নিকাশ। তাঁর গণনার ফলাফল আর ছবি এঁকে বার বার বোঝার পরে যা উঠে আসছে, তা তাঁর পূর্বসূরী টলেমির ভাবনার সঙ্গে একেবারেই মিলছিল না। একেবারেই আলাদা ছবি পাচ্ছিলেন কোপার্নিকাস। তিনি তখন ভাবছেন, কেন বিভিন্ন ঋতু একের পর এক আসছে যাচ্ছে, আবার ফিরে ফিরে আসছে! চাঁদ ও অপরাপর গ্রহের গতির হিসেব নির্ণয় করলেন তিনি। বারবার গণনায় একই ফলাফল পাচ্ছেন। শুধু আশ্চর্য-ই নয়, নিজের ফলাফল দেখে নিজেই চমকে উঠছেন কোপার্নিকাস। ভাবনায় পড়লেন, তাঁর পাওয়া এই ফলাফল সবাইকে জানালে তো তার ফল হবে মারাত্মক। ধর্ম, বিশ্বাস আর প্রয়োজনকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা এতদিনকার জ্যোতির্বিদ্যার সম্পূর্ণ বিপরীত যে তাঁর পাওয়া ফলাফল। এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে যে বাইবেলের কথা মিথ্যা হয়ে যাবে! ভাবছেন, নিজে গির্জার সঙ্গে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে সংযুক্ত থেকে কী করে বলবেন তাঁর পাওয়া বৈজ্ঞানিক সত্যের কথা?

কী ছিল কোপার্নিকাসের সেই ফলাফল? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও গাণিতিক প্রমাণসহ কোপার্নিকাস বলেছিলেন, ‘সূর্য স্থির আর পৃথিবী নিজের অক্ষের মধ্যে ঘুরে ঘুরে সূর্যের চারদিকে ঘোরে। অন্যান্য গ্রহগুলিও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে।’ সম্পূর্ণ নতুন একটি সৌর কাঠামোর কথা। কোপার্নিকাস আরও বললেন— পৃথিবী তার নিজের কক্ষপথে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় চব্বিশ ঘণ্টা।

টলেমির ‘ভূকেন্দ্রিক’ তথা ‘জিওসেন্ট্রিক সিস্টেম’-এর ভিত দারুণভাবে নড়ে উঠল কোপার্নিকাসের এই ‘সৌরকেন্দ্রিক’ জগতের কথায়। গাণিতিক ক্যালকুলেশন করে কোপার্নিকাস যা পেয়েছেন, তাতে টলেমির ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল সে কথাই প্রতিষ্ঠিত হল। পৃথিবীর অবস্থান এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রে নয়। কোপার্নিকাসের এই র‌্যাডিকল ভাবনা জ্যোতির্বিদ্যা-র জগতে প্রথম বিপ্লব নিয়ে আসে। তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলি আধুনিক গ্রহ নক্ষত্রদের অবস্থান, কক্ষপথ, আবর্তন এবং গতি সম্পর্কে পরবর্তী বিজ্ঞানীদের ধারণাকে অনেকখানি স্পষ্ট করে তোলে। আজ থেকে ৪৫০ বছরেরও বেশি আগে মারা গেছেন। তবু আজও কোপার্নিকাসকে আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার স্থপতি হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়।

ক্যালকুলেশন করে নিশ্চিত হয়েছেন, তাঁর ধারণায়।

রাতের পর রাত জেগে পর্যবেক্ষণ করেছেন আকাশের তারাদের সাম্রাজ্য! ক্যালকুলেশন করে নিশ্চিত হয়েছেন, তাঁর ধারণায়। তবে কোপার্নিকাস জানতেন যে, তাঁর ভাবনার কথা প্রকাশ্যে আসা মানেই, তাঁর কঠিন শাস্তি অনিবার্য। শাসকবর্গ আর ধর্মের পতাকার নিচে যাদের অবস্থান, তারা নিশ্চিত মেরে ফেলবে কোপার্নিকাসকে। ‘পৃথিবী ঘুরে চলেছে আর সূর্য স্থির’— বাইবেল-বিরোধী এরকম কথা মুখে আনলে চার্চ যে তাঁকে ছেড়ে দেবে না, পেতে হবে অনিবার্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি— এ কথা তিনি খুব ভাল করেই বুঝেছিলেন। পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে সবাই তো রোজই দেখতে পাচ্ছেন, আকাশে সূর্য আর চাঁদ এক দিক থেকে আর একদিকে সরে যাচ্ছে। কী করে তাঁদের মাথায় ঢোকাবেন ‘পৃথিবী ঘুরে চলেছে সূর্যের চারপাশে’, সেই পরম সত্যের কথা?

এই রকম জটিল এক পরিস্থিতির মধ্যে খুব গোপনে কোপার্নিকাস তাঁর তত্ত্বগুলি পাণ্ডুলিপি আকারে তৈরি করলেন। কিন্তু বই প্রকাশ করলেন না। তাঁর প্রস্তাবনা পাণ্ডুলিপি স্তরেই আরও তিরিশ বছর সযত্নে আগলে রাখলেন। তাঁর ধারণা সম্বন্ধে আরও নিশ্চিত হতে পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ ও ক্যালকুলেশনের কাজ চালিয়ে গেলেন তিনি এই সময়।

অবশেষে ১৫৪৩ সালে কোপার্নিকাসের বয়স তখন সত্তর বছর। অশক্ত শরীর। অধিকাংশ সময়ই রোগশয্যায় শায়িত থাকেন। অবশেষে বই হিসেবে প্রকাশ পেল কোপার্নিকাসের তৈরি করা সেই পাণ্ডুলিপি। তবে বই হিসেবে প্রকাশ হওয়ার কয়েক মাস আগেই মৃত্যু হয় কোপার্নিকাসের। যুগান্তকারী সেই বই, De Revolutionibus Orbium Coelestium Libri IV (1543)। ‘On the Revolutions of the Heavenly Spheres’ তিনি জীবিত অবস্থায় দেখে যেতে পারেননি। প্রকাশিত বইয়ের প্রথম কপিটি কোপার্নিকাসের কবরে মৃত্যুশয্যার পাশা রাখা হয়।

এখানে একটা কথা বলে রাখি। বইটি প্রকাশ করার সময় কোপার্নিকাস দারুণ একটি কৌশল অবলম্বন করেন। কী সেই কৌশল? তাঁর সেই বই তিনি উৎসর্গ করেছিলেন স্বয়ং মহামান্য তৃতীয় পোপ-কে। যাতে করে, বইটি চার্চের বিষ-নজরের বাইরে থাকতে পারে। তাছাড়া বইটির বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপনাও ছিল যথেষ্ট কঠিন। গণিতের ভাল জ্ঞান না থাকলে সকলের পক্ষে তা বুঝতে পারা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। সব মিলিয়ে কোপার্নিকাসের ‘সূর্য কেন্দ্রিক সিস্টেম’ তদানীন্তন বিজ্ঞানী মহলে তেমনভাবে সাড়া ফেলল না আর স্বাভাবিকভাবেই তা পাদ্রীদেরও নজরে এল না।

কোপার্নিকাস তখন মৃত্যুর পরপারে। কোপার্নিকাসের যুগান্তকারী বইটি প্রথম প্রকাশের ৭৩ বছর পরে, ১৬১৬ সালের ৫ মার্চ বইটি নিষিদ্ধ করে ক্যাথলিক চার্চ। পাদ্রীদের হুকুমে কোপার্নিকাসের সমস্ত বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সমস্ত চিহ্ন মুছে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তাঁর মৃত্যুর তিনশ বছর পরে প্রাগ-এ তাঁর বইয়ের মূল পাণ্ডুলিপিটির হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। আজ সেই অন্ধকার আর কলঙ্কিত সেই দিন। যেদিন ধর্মের অসুররা, বিজ্ঞানের রাস্তা আটকেই শুধু দাঁড়ায়নি, বিজ্ঞান আর সত্যের ওপর চরম আঘাত নিয়ে এসেছিল। রক্তাক্ত করেছিল সত্য আর বিজ্ঞানকে।

পুড়িয়ে দেওয়া বইয়ের পাতা।

বিয়ে করেননি কোপার্নিকাস। সারা জীবন তিনি বিজ্ঞান অনুসন্ধানে, চার্চ এবং সরকারের কাজে নিরলসভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। শুধু বিজ্ঞানীসত্তা-ই নয়, আর্ট বা শিল্পকলাতেও ছিল কোপার্নিকাসের গভীর অনুরাগ! চিত্রশিল্পের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় সংযোগ! চিত্রশিল্প চর্চার পাশাপাশি চর্চা করেছেন কবিতারও! অজস্র কবিতার অনুবাদ করেছেন কোপার্নিকাস।

মৃত্যুর পরে তাঁর সমাধির জায়গাটির খোঁজ পাওয়া যায়নি বহু শতাব্দী। হাল আমলে ২০০৫ সালে তাঁর সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১০ সালে তাঁকে আবার ওই স্থানে সমাধিস্থ করা হয়েছে। সেই সত্যনিষ্ঠ, সৃজনশীল, মহাপ্রাণ জ্যোতির্ময় পুরুষ, আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার স্থপতি নিকোলাস কোপার্নিকাসের প্রতি শ্রদ্ধা।

চিত্র: গুগল
4.6 12 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Anjana Ghosh
Anjana Ghosh
2 years ago

তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত নয়, অথচ বহু তথ্য সমৃদ্ধ সুন্দর এক উপস্থাপনা। ❤️❤️

সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
2 years ago
Reply to  Anjana Ghosh

পড়ে জানালেন বলে অনেক ধন্যবাদ জানাই

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »