Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ডাইনোসরের যুগ থেকে পৃথিবী গ্রহের বাসিন্দা এই গাছ

নাম ওলেমি (Wollemi)। পাইন জাতীয় এই বৃক্ষটি পৃথিবীতে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। যখন ধরাধামে চরে বেড়াত ডাইনোসরেরা, তার আগে থেকেই তারা পৃথিবী গ্রহের বাসিন্দা। ওলেমি গাছের প্রাচীনতম জীবাশ্মটির বয়স ২ কোটি বছর বলে জানা গিয়েছে। মাত্র ৬০ হাজার বছর আগে ধরণিতে আসা আধুনিক মানুষের তাই ওলেমি গাছ নিয়ে বিস্ময়ের অন্ত নেই। গত বছরের গোড়ায় অস্ট্রেলিয়ায় সর্বগ্রাসী বনাগ্নির হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছে মানুষই। না হলে বিশ্ব থেকে‌ চিরতরে মুছে যেতে পারত আদিমতম তরু-প্রজাতিটি।

সর্বনাশের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে এই তথাকথিত ‘ডাইনোসর ট্রি’। গতবছর জানুয়ারিতে। ভয়ংকর দাবানল দুঃস্বপ্নের মত নেমে এসে অস্ট্রেলিয়ার নববর্ষ উদযাপনের আনন্দে জল ঢেলে দেয়। সেই সর্বনাশা আগুনে বাস্তুচ্যুত হয় লক্ষ লক্ষ বন্যপ্রাণ। ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সচেতন নাগরিক এবং অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা তৎপরতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন। তাতেই রক্ষা পেয়ে যায় অনেক রকম প্রাণী এবং গাছ, বিশেষত প্রাগৈতিহাসিক গাছের প্রজাতিটি। তারপর অস্ট্রেলিয়ান প্রশাসনের সেই ঘোষণা আশ্বস্ত করে গোটা বিশ্বকে, তারা সিডনির দক্ষিণাঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক ওলেমি গাছের অন্তিম বাসস্থানটি সাফল্যের সঙ্গে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছেন।

কিন্তু দুর্গম পর্বতমালা ব্লু মাউন্টেনস পেরিয়ে কীভাবে ওলেমি বৃক্ষের জঙ্গলকে বাঁচানো সম্ভব হয়? জানা যায়, সপ্তাহখানেকের চেষ্টায় দাবানলের লেলিহান আগুন আর দুর্গম পর্বতমালা ব্লু মাউন্টেনসের বাধা ডিঙিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০০টি ওলেমি পাইনের জঙ্গলে পৌঁছয় সাহসী দমকলকর্মীদের হেলিকপ্টারগুলি। তাতে ছিলেন বিশেষজ্ঞ অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। ওলেমি গাছবসতিতে পৌঁছেই গাছগুলিকে আর্দ্র রাখতে মরিয়া লড়াই শুরু হয় তাদের। তৈরি করা হয় জলসেচ ব্যবস্থা। বনাগ্নি যাতে ওলেমি জঙ্গলকে ছুঁতে না পারে, তার জন্য নিকটবর্তী জলাশয়ের সন্ধান চালানো হয় এবং সেখান থেকে পাম্পের মাধ্যমে প্রতিদিন জল ঢেলে ভিজিয়ে রাখা হয়। পাশাপাশি, অগ্নিনির্বাপক বিমান সুকৌশলে গ্যালন গ্যালন জল ঢেলে আগুন প্রশমনে সাহায্য করে।

ওলেমি পাইন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গাছের প্রজাতি-বিশেষ, যেহেতু এটি কেবল অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে। এই বৃক্ষ-প্রজাতির স্থানিকতাই এর বিপদ। প্রাণী বা গাছের ক্ষেত্রে স্থানিক তখনই বলা হয়, যখন কোনও প্রজাতিকে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। তো সেই স্থানিকতার কারণেই ওলেমি পাইন বনাঞ্চলের মধ্যে ক্ষুদ্র বৃক্ষসমষ্টি হয়ে রয়ে গিয়েছে। তাদের প্রাণশক্তি এতটাই যে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে ডাইনোসররা পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে গেলেও আশ্চর্যজনকভাবে ওলেমি গাছেরা টিকে রয়েছে। ওলেমি পাইন সেইসব প্রাণের মধ্যে অন্যতম, যাদের ‘জীবিত জীবাশ্ম’ বলা হয়। ১৯৯৪-তে এর অস্তিত্ব আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত ওলেমিকে পাওয়া গিয়েছে শুধু জীবাশ্ম আকারেই। দাবানলের গ্রাসে পড়ে সেই অস্তিত্বটুকুও লোপ পেতে বসেছিল। শেষমেশ মানুষের দৌলতে শেষরক্ষা হয়েছে।

অবশ্য সর্বগ্রাসী বনানলের হাত থেকে অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিকে বাঁচাতে পারেনি মানুষ। ন্যাশনাল পার্কস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের তরফে বলা হয়েছে, আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় ৫১০,০০০ হেক্টর বনভূমি। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর থেকে চলা দাবানলে মৃত্যু হয়েছে লক্ষ লক্ষ বন্যপ্রাণী এবং ২৮ জন মানুষের। পুড়ে খাঁক হয়েছে ২৬০০ বাড়ি এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের ১০.৩ মিলিয়ন হেক্টর জমি। ১ মিলিয়নে ১০ লক্ষ হলে, সংখ্যাটা হিসেব করুন! এবং ছাই হয়ে গিয়েছে জগতে ওলেমি গাছের একমাত্র ঠিকানা ওলেমি ন্যাশনাল পার্কের ৫,০০০ হেক্টর জমির ৯০ শতাংশ এলাকাও। এত বিপুল বিপর্যয়ের মধ্যেও নিতান্ত আশার খবর, ওলেমি গাছের রক্ষা পাওয়া। দুনিয়ার প্রাচীনতম বৃক্ষ-প্রজাতিকে রক্ষা করতে এই ওলেমি ন্যাশনাল পার্কের অবস্থান সাধারণের কাছে গোপন রাখা হয়েছে।

চিত্র : গুগল
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »