Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

চাতরায় নেতাজি: সমস্বরে ‘ইনক্লাব জিন্দাবাদ’, ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য ঋত্বিক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি ভারতের সকল সম্প্রদায়, সকল প্রদেশ, সামরিক বাহিনী ও অসামরিক জনগণের উপরে সমান সম্মোহনী প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশকে তিনি প্রকৃত অর্থে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। ভিনদেশে গিয়ে তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ে তোলার কাহিনি, সেই সাংগঠনিক ইতিবৃত্ত প্রায় অবিশ্বাস্য। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পদচারণার পাশাপাশি দেশের দূর প্রান্তে, প্রত্যন্তেও একদিন পদচিহ্ন পড়েছিল তাঁর। ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে সশস্ত্র সংগ্রামের লক্ষ্যে মহানিষ্ক্রমণের কয়েক মাস আগে নেতাজি ২৪ পরগনার এক অখ্যাত পল্লি, চাতরাতে উপস্থিত হয়েছিলেন, সংবর্ধিত হয়েছিলেন, এবং দৃপ্ত ভাষণে জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তাঁর সেই উপস্থিতি ও প্রদত্ত ভাষণ আজও অনেকের কাছে অজানা। দেশ স্বাধীন হওয়ার সাত বছর আগের এই প্রায় অপরিচিত, অথচ মূল্যবান স্থানীয় ইতিবৃত্তের ওপরে আলোকপাত করেছেন পলাশ মণ্ডল।

প্রথম পর্ব

১৯৪০ সালের ২৫ এপ্রিল দেশগৌরব সুভাষচন্দ্র বসু ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের চাতরাতে এসেছিলেন। বর্তমানে চাতরা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত। ‘চাতরা কংগ্রেস কমিটি’-র উদ্যোগেই এই ঐতিহাসিক জনসমাবেশটি আয়োজিত হয়েছিল। সেখানে সুভাষচন্দ্র বসুকে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল ভূতপূর্ব মন্ত্রী মৌলবি সৈয়দ নৌসের আলি সাহেবের। কিন্তু, বিশেষ কারণবশত তিনি সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাই, তাঁর পরিবর্তে শ্রীযুক্ত বিপিনবিহারী গাঙ্গুলিকে সভাপতির আসন অলংকৃত করতে হয়।

এবার একটু পিছনের দিকে ফিরে তাকানো যাক। চাতরার জনসভার বেশ কিছুদিন আগের কথা। ‘চাতরা কংগ্রেস কমিটি’ তাঁদের এক জরুরি অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বসুকে সংবর্ধনা-দানের এক প্রস্তাব গ্রহণ করে, এবং এই প্রস্তাবকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী ‘অভ্যর্থনা সমিতি’ গঠন করে। এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন শ্রীমোহিনীমোহন মিশ্র। সহ-সভাপতি জিতেন্দ্রনাথ রায়, ক্ষীরোদকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুনশি এবাদত আলি। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শ্রীযুক্ত পূর্ণচন্দ্র রায়। সহ-সম্পাদক প্রবোধচন্দ্র মিত্র এবং দুলালচন্দ্র মিশ্র। কোষাধ্যক্ষ হৃদয়নাথ মিশ্র। আর স্বেচ্ছাসেবক-বাহিনীর অধিনায়ক শ্রীযুক্ত নারায়ণকুমার মুখোপাধ্যায়।

ওই সময়ের একাধিক প্রচারপত্র আনন্দবাজার, বসুমতী প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এরকম একটি প্রচারপত্র নিম্নরূপ—

বন্দে মাতরম্।

সবিনয় নিবেদন,
আগামী ২৫ শে এপ্রিল, বৃহস্পতিবার বৈকাল ৫-৩০ ঘটিকার সময় চাতরা কংগ্রেস কমিটির উদ্যোগে দেশগৌরব শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসু মহাশয়কে অভিনন্দন দেওয়া হইবে।
এই উপলক্ষ্যে উক্ত সময়ে চাতরা হাই স্কুলের সম্মুখের মাঠে একটি সভা হইবে। সভায় ভূতপূর্ব মন্ত্রী মাননীয় সৈয়দ নৌসের আলি সাহেব সভাপতিত্ব করিবেন। আপনার উপস্থিতি প্রার্থনীয়।

নিবেদক—
শ্রীমোহিনীমোহন মিশ্র
শ্রীপূর্ণচন্দ্র রায়

দক্ষিণ চাতরা উচ্চবিদ্যালয়। এই স্কুলের মাঠেই আয়োজিত হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক জনসভা। চিত্র: চিরঞ্জিত দে

অবশেষে সেই বহুপ্রতীক্ষিত দিনটি এল। ২৫ এপ্রিল, ১৯৪০ সাল। দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসু চাতরাতে এলেন। তিনি ‘এলেন, দেখলেন, এবং জয় করলেন।’ সে-সময়ের পত্রপত্রিকায় এই জনসভার একটি সুন্দর ছবি ফুটে উঠেছে।

আনন্দবাজার পত্রিকায় আমরা দেখতে পাই—

“কলিকাতা হইতে প্রায় ৪০ মাইল দূরবর্তী, ২৪-পরগনা জিলার অন্তর্গত বসিরহাটের চাতরা ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের অধিবাসীবৃন্দ কর্তৃক শ্রীযুত সুভাষচন্দ্র বসুকে বৃহস্পতিবার সায়াহ্নে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করা হয়। সংবর্ধনা-সভায় ভূতপূর্ব মন্ত্রী মৌলবি নৌসের আলি সাহেবের সভাপতিত্ব করিবার কথা ছিল, কিন্তু, বিশেষ কার্যবশত তিনি উপস্থিত হইতে না পারায় শ্রীযুত বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। বহু মুসলমান সভায় যোগ দিয়াছিল। শ্ৰীযুত সুভাষচন্দ্র বসু সভায় উপস্থিত হইবামাত্র শঙ্খধ্বনি ও ‘সুভাষবাবু কি জয়’ ধ্বনির সহিত সমবেত জনতা তাঁহাকে বিরাটভাবে অভিনন্দিত করে। সংবর্ধনা কমিটির সেক্রেটারি শ্রীযুত পূর্ণচন্দ্র রায় চাতরা কংগ্রেস কমিটির পক্ষ হইতে শ্রীযুত বসুকে একখানি মানপত্র প্রদান করেন। …আরম্ভে ‘বন্দে মাতরম্’ সংগীতের পর শ্রীযুত বসুকে মাল্যভূষিত করা হয়।’’

বসুমতী পত্রিকায় দেখতে পাই—

‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ চাতরা (২৪ পরগনা) কংগ্রেস কমিটির সদস্যবৃন্দ দেশগৌরব সুভাষচন্দ্রকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করিবার জন্য এক জনসভার আয়োজন করেন। শ্রীযুত বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। দূরান্তরের পল্লি হইতে বিপুল সংখ্যায় জনসমাগম হইয়া সন্ধ্যার বহু পূর্বেই সভাক্ষেত্রটি পূর্ণ হইয়া যায়। সুভাষবাবুকে ব্যান্ডবাদ্য সহকারে স্বেচ্ছাসেবকগণ শোভাযাত্রা করিয়া সভাক্ষেত্রে আনয়ন করে। এক অপেক্ষমান জনতা সুভাষবাবুকে দেখিলে উল্লাসধ্বনিতে সভাস্থল মুখরিত করিয়া তোলে। তাহারা বহুক্ষণ ‘সুভাষবাবু কি জয়’, ‘ইনক্লাব জিন্দাবাদ’ ও ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি করিতে থাকে। মহিলাগণ শঙ্খধ্বনি করিয়া তাঁহাকে অভিনন্দিত করে।
দুইটি বালিকা ‘বন্দে মাতরম্’ সংগীতটি পরিবেশন করে।’’

Hindustan Standard পত্রিকায় দেখতে পাই—

”‘Swaraj could be achieved only through a struggle,— through sacrifices and sufferings and exertions of a people themselves’, observed Sj. Subhas Chandra Bose while addressing a huge gathering of village people at Chhatra in the sub-division of Basirhat, about forty miles from Calcutta, on Thursday evening.
People from surrounding villages attended the meeting, the audience including a large number of Muslims and women. Sj. Bipin Bihary Ganguli, Vice-President, Bengal Provincial Congress Committee, presided.
On arrival, Sj. Bose received a rousing ovation from the crowd and was taken in a procession to the meeting where he was presented with a guard of honour by students of the local English High School and was given an address of welcome on behalf of the Chhatra Congress Committee.”

সভার প্রারম্ভে স্থানীয় কংগ্রেসের বিশিষ্ট কর্মী শ্রীযুত প্রবোধচন্দ্র মিত্র বলেন— ‘সুভাষবাবুর আগমনে চাতরা ও পার্শ্ববর্তী গ্রাম-সমূহের অধিবাসীবৃন্দ গৌরবান্বিত। আমাদিগের সম্মুখে যে মহাসংকটক্ষণ উপস্থিত হইয়াছে, এই সময় একজন সুযোগ্য নেতার প্রয়োজন। ভারতের অবিসংবাদী নেতা দেশগৌরব সুভাষচন্দ্র এই সংকটক্ষণে আমাদের পরিচালিত করিতে পারেন। নানা প্রকার বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তিনি যে দুর্বার বিক্রমে অগ্রগতির পথে দেশকে চালিত করিতেছেন, তাহা দেশ ও জাতির পক্ষে খুবই শুভ লক্ষণ।’

চাতরা কংগ্রেস কমিটির সহকারী সম্পাদক শ্রীযুত সুবলচন্দ্র মিশ্র সুভাষবাবুর বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থীদিগের অপপ্রচার ও বিদ্বেষ মনোভাবের তীব্র নিন্দা করিয়া বক্তৃতা করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি কতিপয় সংবাদপত্রের হীন প্রচারেরও তীব্র ভাষায় নিন্দা করেন। তিনি আরও বলেন— ‘কিছুদিনের মধ্যেই দক্ষিণপন্থীগণ তাঁহাদিগের ভুল বুঝিতে পারিবেন। যত প্রকার অপপ্রচার ও অবিচার করা হউক না কেন, দেশগৌরবের নেতৃত্বে আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী।’

এবার অভিনন্দনপত্র পাঠ। অভিনন্দনপত্রটি রচনা করেছিলেন ‘অনুশীলন সমিতি’-র প্রখ্যাত বিপ্লবী ত্রিদিব চৌধুরি। চাতরা কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে অভিনন্দনপত্রটি পাঠ করে শোনান সংবর্ধনা কমিটির সেক্রেটারি শ্রীযুত পূর্ণচন্দ্র রায়। তারপর পূর্ণচন্দ্র রায় অভিনন্দনপত্রটি তুলে দেন দেশগৌরব সুভাষচন্দ্র বসুর করকমলে। অভিনন্দনপত্রটি নিম্নরূপ—

দেশগৌরব শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসুর করকমলে—

কমরেড!

এই নগণ্য পল্লিতে তোমার মতো দেশবরেণ্য নেতাকে পেয়ে আমরা ধন্য হয়েছি। আমাদের সাদর অভিনন্দন গ্রহণ কর।

গান্ধিবাদের কুহেলিকায় আচ্ছন্ন জাতীয় কংগ্রেস যখন ধীরে ধীরে নিয়মতান্ত্রিকতার পথে অগ্রসর হয়ে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য হাত বাড়াচ্ছিল, পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আমাদের বিরামহীন সংগ্রামের সম্ভাবনাকে যখন দক্ষিণপন্থী নেতারা আপসের মোহে আচ্ছন্ন করার ষড়যন্ত্র করছিল— সেই সময় একমাত্র তুমিই তুলে ধরলে সংগ্রামের ধ্বজা, যার ফলে সারা ভারতময় উঠল প্রবল আলোড়ন— হল অভূতপূর্ব আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার, কংগ্রেসের উচ্চতম কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্বাসন-দণ্ড তোমাকে কর্তব্য-পথ থেকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করতে পারেনি— শতসহস্র বাধার মধ্যেও তুমি অক্লান্ত উৎসাহে তোমার বিরাট কর্ম-প্রতিভাকে নিয়োগ করলে দেশব্যাপী একটা শক্তিশালী, সংগ্রামশীল দল গড়ে তোলার জন্য। তোমার বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থীদের হীন ষড়যন্ত্র আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে চলেছে। অগণিত জনসমাজ আজ বিদ্রোহী নেতাকে মুকুটহীন রাজার পদে অভিষিক্ত করেছে। কমরেড, তোমাকে অভিনন্দন জানাই।

বিপ্লবী কমরেড! স্বাধীনতা-সংগ্রামের নির্ভীক যোদ্ধা তুমি, দেশবাসীর মধ্যে জাগিয়েছ বৈপ্লবিক আদর্শের প্রেরণা। সারা ভারতের বিপ্লবী— মজুর, চাষি, ছাত্র এবং জনসাধারণকে তুমি সংগ্রামের জন্য আহ্বান করেছ— তাদের সম্মুখে তুলে ধরেছ সাম্যবাদ ও শ্রেণিহীন সমাজের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল চিত্র। তোমার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক চেতনা-সম্পন্ন বিপ্লবী ভারত আজ জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিপ্লবী নেতা হিসেবে তুমি জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কৃষ্টিগত-মুক্তিসংগ্রাম ও শতধা বিচ্ছিন্ন সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনকে বৈপ্লবিক কর্মধারায় অনুপ্রাণিত করে জাতীয় সংগ্রামের গতি পরিবর্তন করে দিয়েছ। পথের বাধাবিঘ্ন চূর্ণ করে আরদ্ধ সংগ্রামের সেনাপতি, তুমি— সবার আগে এগিয়ে এসেছ। আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের অভিনন্দন লও।

কমরেড! হিন্দু-মুসলমান মিলনের পথের বাধা তুমি ধীরে ধীরে কাটিয়ে দিচ্ছ। ভারতের মুক্তিসংগ্রামে দুটি মহান জাতি আজ এক হয়ে তোমার আহ্বানে সাড়া দেবে, এ আশা আমরা পোষণ করি।

কমরেড! বর্তমান জাতীয় সংগ্রামে দেশবাসীকে তুমি আহ্বান করেছ। আমরা জানি সে সংগ্রামের দাবি কত ব্যাপক, কত নির্মম, তবুও তোমার এ আহ্বান ব্যর্থ হবে না। তোমার মতো সেনাপতির কাছ থেকে যুদ্ধের কলাকৌশল শিখে আমরা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছি। তোমার নির্দেশে, তোমার দেওয়া পতাকা নিয়ে, জয়-লাভ না করা পর্যন্ত নির্ভয়ে আমরা এগিয়ে চলব।

প্রিয় কমরেড! তোমার সাধনা জয়যুক্ত হোক— বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে তুমি সংগ্রামে জয়-লাভ করবে, এই আমাদের কামনা।

বন্দে মাতরম্।

তোমার গুণমুগ্ধ
চাতরা কংগ্রেস কমিটির সভ্যবৃন্দ।

চাতরা— (২৪ পরগনা)
তারিখ, ১২ই বৈশাখ
পাবলিসিটি হাউস

>>> চলবে >>>

চিত্র : গুগল

চাতরায় নেতাজি: ‘হিন্দু-মুসলমান ভ্রাতৃবৃন্দ’ সম্ভাষণেই মোহিত জনতা

চাতরায় নেতাজি: সংবাদ শীর্ষক, ‘অহিংস সংগ্রামে আত্মনিয়োগের আহ্বান’

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু: ভারতভাগ্যবিধাতা

5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »