Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

জীবন জীবনের জন্য

২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। রাষ্ট্রসংঘের ২০০২ সালের সাধারণ সভায় ২০১০ সালকে ‘আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি পালিত হয়ে থাকে। অপূর্ব জীববৈচিত্র্য ভরা আমাদের এই পৃথিবী। কিন্তু স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের জন্য, তাদের অমানবিক ও অবিবেচকের মত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য হারাতে বসেছে জীববৈচিত্র্য। কিছুদিন আগেও বনে-বাদাড়ে যেসব পশুপাখি-বৃক্ষের প্রাচুর্য ছিল, এখন সেগুলোর ছিটেফোঁটাও নেই। প্রকৃতির অপার সৃষ্টি এই জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যই সারা বিশ্বে এই দিবসটি বিশেষভাবে পালিত হয়ে থাকে।

অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় তথা সুস্থতার সঙ্গে জীবনধারণের জন্যই প্রয়োজন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের। মানুষসহ সমগ্র প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের বেঁচে থাকার জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য একান্ত অপরিহার্য। আর এই ভারসাম্য বজায় রাখতে সঠিক সংখ্যায় সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বার্থে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আবশ্যক। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেঁচে থাকার জন্য জীববৈচিত্র্য প্রয়োজন। শুধু কয়েকটি আলোচিত প্রজাতি রক্ষা করলেই জীববৈচিত্র্য রক্ষা হয় না। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন সব প্রকারের জীব প্রজাতির ব্যাপারে সমান গুরুত্ব দেয়া।

আমেরিকান জীববিজ্ঞানী ই. এ. নরসে (E. A. Norse) এবং তাঁর সহযোগীদের সূত্র অনুযায়ী, জৈববৈচিত্র্য হল জল, স্থল সকল জায়গায় সকল পরিবেশে থাকা সকল ধরনের জীব এবং উদ্ভিদের বিচিত্রতা। পৃথিবীর ১০ বিলিয়ন ভাগের একভাগ অংশতেই ৫০ মিলিয়ন প্রজাতির বিভিন্ন জীব-জন্তু এবং উদ্ভিদের বসবাস। আমাদের দেশেও বৃক্ষ প্রজাতি এবং প্রাণিকুলের সবিশেষ বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু অত্যধিক জনসংখ্যার চাপে অনেক গাছপালা ও লতাগুল্ম এবং প্রাণিবৈচিত্র্য আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। কিছু কিছু আবার বিলুপ্ত হয়েও গিয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের অবৈধ উপায়ে গাছপালা ও বন্যপ্রাণী নিধন, নদ-নদী ও জলাশয় ভরাট জীববৈচিত্র্যকে চরম ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট কারণে সারা পৃথিবীতে এখন জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। আমাদের দেশের সুন্দরবন উপকূলের বিশাল এলাকায় জীববৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ দিকগুলো লক্ষ করা যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীর আবাসস্থল হচ্ছে সংকুচিত। পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্য বাঁচাতে এবং এর টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণ, দর্শন, দিকনির্দেশনা তৈরির উদ্যোগে ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের এবং চুক্তিতে দেড় শতাধিক দেশের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেন। আমাদের নিজের জন্য হলেও এই জীববৈচিত্র্যগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।

পরিবেশ বিজ্ঞানের অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জীববৈচিত্র্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানব সমাজের উপকারে আসে। বিশ্বকে সব রাষ্ট্রের মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে পরিবেশ-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রতিপালন আবশ্যক। দেশের কৃষি অগ্রযাত্রাকে সুষ্ঠুভাবে ত্বরান্বিত করতে জীববৈচিত্র্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভারত একটি বিপুল জনসংখ্যার দেশ। আমাদের এই বিপুল জনসংখ্যার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব আছে। সে হিসেবে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমাদের দেশের মানুষকে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সকল পেশার মানুষকে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সজাগ করতে হবে। আর তা না করতে পারলে এর ক্ষতিকর প্রভাব আমাদেরই বহন করতে হবে।

সমগ্র প্রাণিকুলকে বেঁচে থাকতে হলে একটা সার্কেলের প্রয়োজন। সেই সার্কেলটিই হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অর্থাৎ এক প্রজাতিকে টিকে থাকতে হলে অন্য প্রজাতির ওপর নির্ভরশীলতাই হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের মূল বিষয়। এ সার্কেলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানুষ। মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন খাদ্য ও ওষুধের, যা আহরিত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য থেকেই। যেমন সহজ উদাহরণটি হচ্ছে— মানুষ খায় হাঁস, হাঁস খায় মাছ, মাছ খায় কেঁচো ইত্যাদি। অর্থাৎ রিসাইকেল বলতে যা বোঝায় সেটিই জীববৈচিত্র্য। সুতরাং বলতে পারি, শুধু আমাদের দেশের জন্যই জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব আধিক্য নয়; সমগ্র বিশ্বেই রয়েছে এই জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা।

ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘পরিচয়’ শিরোনামে যে কবিতাটি পড়েছিলাম তার বিষয়বস্তু মোটামুটি এই রকম, উলঙ্গ ছোটভাইকে নদীর পাড়ে বসিয়ে এক গ্ৰামীণ মেয়ে নদীর জলে ঘটি মাজছে। ভাইয়ের অদূরে এক ছাগলছানা চরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ সেই ছাগলছানা বাচ্চা ছেলেটির কাছে এসে তার মুখের দিকে তাকিয়ে জোরে ডেকে উঠতেই ছেলেটি ভয় পেয়ে কেঁদে উঠছে। দিদি ছুটে এসে এক কোলে ভাইকে, আর অন্য কোলে ছাগলছানাকে তুলে নিতে কবির মন্তব্য— ‘‘পথশিশু, নরশিশু— দিদি মাঝে পড়ে, দোঁহারে বাঁধিয়া দিল পরিচয়-ডোরে।’’ এই কবিতার মধ্য দিয়ে মানবশিশু ও ছাগশিশুর মৈত্রীবন্ধনের যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা গ্ৰামবাংলার কোনও বিরল ঘটনা নয়। সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে গৃহপালিত জীবজন্তুর সম্পর্কের ভিত্তি শুধুই বস্তুগত চাহিদা নয়, ভালবাসারও বটে। জীববৈচিত্র্য প্রতি সচেতন হতে গেলে এই মৈত্রীর বন্ধনটা জরুরি।

চিত্র: গুগল
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »