নীতিবিজ্ঞান যখন যুদ্ধ উন্মাদনার পিছনে আদর্শগত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এমনকি মনোগত বিষয়গুলির ভূমিকাকে বিশ্লেষণ করেছে তখন বাম তত্ত্ব সুচারুভাবে তুলে ধরেছে ধনতন্ত্রের প্রসার ও যুদ্ধের বিস্তারের অসাধু যোগসাজসকে।
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী সংঘের বিতর্কে (১৮৬৪-১৮৭৮) শ্রমিকনেতা সিজার দ্য পেঁপে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থান কী হবে সে প্রসঙ্গে বলেছেন, ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। সমকালীন সমাজে শুধুমাত্র রাজা বা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গের উচ্চাশাই নয়, সমাজ ও অর্থনীতির প্রধান যে ধারণা কাজ করছে তাও দায়ী। বাম আন্দোলন আরও দেখিয়েছে যুদ্ধের ফলাফল সবচেয়ে কোন শ্রেণীকে বেশি আঘাত করে। ১৮৬৮-র আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রতিনিধিবৃন্দ এক সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন— শ্রমজীবী জনগণ যুদ্ধের সার্বিক উচ্ছেদের জন্য সচেষ্ট হবেন— যেহেতু এই যুদ্ধের মূল্য চোকাতে হবে তাদেরকেই— হয় অর্থের বিনিময়ে নতুবা রক্তের মূল্যে— তারা যে পক্ষেই থাকুক না কেন, বিজয়ী অথবা বিজিত— শাসকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তকে তাদের মেনে নিতে হয়। সভ্যতার পথে শ্রম আন্দোলনের শিক্ষা এই বিশ্বাস সঞ্জাত যে, যে কোনও যুদ্ধকে ‘জনযুদ্ধ’ হিসাবে দেখা উচিত এমন এক সংঘাত যা তাদের বেঁচে থাকার ন্যূনতম রসদ থেকে বঞ্চিত করে।
সংঘবদ্ধভাবে যে কোনও যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ধর্মঘট পালনের মধ্য দিয়ে ও সেনায় বাধ্যতামূলক নিয়োগকে প্রতিহত করে। আন্তর্জাতিকতাবাদ এইভাবে ভবিষ্যৎ সমাজের দিশারী হয়ে দাঁড়ায়, যে সমাজ ধনতন্ত্রের অবসানে ও বুর্জোয়া গোষ্ঠীগুলির পারস্পরিক আকচা-আকচির মধ্যে দিয়ে যুদ্ধের মূল কারণগুলিকে বিনাশ করবে।
সমাজবাদের পূর্বসূরিদের অন্যতম ক্লদে হেনরি দ্য সেন্ট সাইমন যুদ্ধ ও সামাজিক সংঘাতের বিরুদ্ধে সমভাবে তাঁর উষ্মা ব্যক্ত করেন, কারণ তাঁর মতে শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে উভয়ই সমান অন্তরায়। কার্ল মার্কসের লেখাতে যুদ্ধের সময়ে বা যুদ্ধের বিরুদ্ধে এক্ষেত্রে অবস্থানটা ঠিক কী হবে সেরকম কোনও মতামত ব্যক্ত করেননি। যখন তিনি তাঁর মধ্যপন্থা বজায় রাখেন তখন তার একমাত্র ধ্রুব হয়ে দাঁড়াচ্ছে জারের রাশিয়া যা বিপ্লবের পথের কাঁটা ও শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির পথের একমাত্র বাধা। তিনি তাঁর ক্যাপিটাল গ্রন্থে যুক্তি সাজাচ্ছেন এই বলে যে, সংঘাতও এক অর্থনৈতিক বল যা নতুন সম্ভাবনায় জারিত। কিন্তু তিনি যুদ্ধকে ভাবেননি বিপ্লবের উত্তরণের সহজপথ হিসাবে এবং তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের এক বড় লক্ষ্যই ছিল আন্তর্জাতিক ঐক্যকে শ্রমিক শ্রেণীর কার্যাবলির মধ্য দিয়ে বাস্তবে রূপ দেওয়া। এঙ্গেলসও এরূপ মত প্রদর্শন করেছেন যে, যে কোনও যুদ্ধের সময় এক ধরনের বহিঃশত্রু লাগাতার প্রচারের মাধ্যমে শ্রেণিসংগ্রামকে খাটো করে দেখায় বা তাকে নষ্ট করার চেষ্টা করে যা শ্রমিক শ্রেণীর উচিত তার নিজের নিজের দেশের সংহতির মধ্যে দিয়ে প্রতিহত করা। শ্রমিক আন্দোলনের বিভিন্ন নেতার কাছে পাঠানো চিঠিতে এঙ্গেলস দেশপ্রেমের আদর্শগত শক্তি ও এক ধরনের পক্ষপাতমূলক শ্রেষ্ঠত্বের দাবি যে শ্রমিক বিপ্লবকে মন্দীভূত করে এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। মারণাস্ত্রের ফলাফল নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সমাজবাদের কাজটাই হবে মিলিটারিরাজ ও বর্তমান সেনাবাহিনীর বিলোপ।
যুদ্ধের প্রসঙ্গ এতটাই তাঁকে নাড়িয়েছিল যে, তিনি তাঁর শেষের দিকের একটি পুরো লেখাই এই বিষয়ে তৈরি করেন। ১৮৯৩ সালের এই লেখাতে (ক্যান ইউরোপ ডিজআর্ম) তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বিগত ২৫ বছর ধরে বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলি তার প্রতিপক্ষকে টপকে যেতে চেয়েছে সমরসজ্জায় ও যুদ্ধের প্রস্তুতিতে। যার ফলে মারণাস্ত্রের উৎপাদন বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে আর এই মহাদেশকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক অভূতপূর্ব বিনাশের যুদ্ধের সামনে। ১৮৪৮ সালের কমিউনিস্ট পার্টির ম্যানিফেস্টোতে লেখক হিসেবে তিনি বলেছেন ইউরোপ জুড়ে সেনাবাহিনীকে এমন এক চূড়ান্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, তার ফলে হয় অর্থনৈতিক ধ্বংস ডেকে আনবে অথবা মুছে যাওয়ার এক বৃহৎ যুদ্ধে সকলকে লিপ্ত করবে। এ প্রসঙ্গে এঙ্গেলস বলতে ভোলেননি যে, বর্তমান সেনাবাহিনীকে লালন-পালন করা হয় মূলত দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক স্বার্থে ও বিদেশি মিলিটারি সংঘাতের ক্ষেত্রে এবং এর ক্ষমতা বাড়িয়ে চলা হয় শ্রমিক আন্দোলনকে বাগে আনতে। যেহেতু বিবিধ করের মাধ্যমে সাধারণ মানুষই এসব যুদ্ধের খরচ দিয়ে চলে তাই সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণীর উচিত লড়াইয়ের মাধ্যমে ধাপে ধাপে মিলিটারির বাড়বাড়ন্তকে একেবারে ন্যূনতম স্তরে নামিয়ে আনা এবং নিরস্ত্রীকরণকে ‘শান্তির একমাত্র রক্ষাকবচ’ হিসেবে প্রতিপন্ন করা।
এর পরীক্ষা ও ধসে যাওয়া
খুব বেশিদিন কাটেনি তখন। আপাত শান্তির সময় এই বিতর্কটি সেই সময় এক রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে ওঠে যখন শ্রমিক শ্রেণীর লড়াইকে বাস্তবের মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে হল যেখানে তাদের প্রতিনিধিরা সর্বতোভাবে যুদ্ধের যে কোনও সহযোগকেই বাধা দিল। প্যারিস কমিউন-এর আগে ১৮৭০-এর ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান সংঘাতে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট উইলহেম ও বেবেল বিসমার্কের জার্মানির বিচ্ছিন্নতাকামী লক্ষ্যকে তীব্র ধিক্কার জানায়। যুদ্ধের জন্য অতিরিক্ত ব্যয়বরাদ্দের যে বিল, তার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কারণে তাদের দুজনকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে দুই বছরের কারাবাসে পাঠানো হয়। কিন্তু এটাই আবার সংকট-মুহূর্তে শ্রমিক শ্রেণীকে ভিন্ন পথ খুঁজতে সাহায্য করে।
যেহেতু ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলি আরও বেশি করে তাদের সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটাতে থাকে, তাই যুদ্ধ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনালে (১৮৮৯-১৯১৬) আরও গুরুত্ব পায়। সভার শুরুর দিকে এক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বিশ্ব শান্তির পক্ষে ‘শ্রমিক মুক্তির অন্যতম আবশ্যক শর্ত’ হিসাবে। বুর্জোয়া গোষ্ঠীর লোকদেখানো শান্তিকে উপহাস করে বলা হয় এ আসলে ‘বন্দুকের শান্তি’ এবং ১৮৯৫ সালে ফ্রেঞ্চ সোস্যালিস্ট পার্টির নেতা জাঁ জরা পার্লামেন্টে বলেন, ‘আপনাদের এই সংঘাতময় ও বিশৃংখল সমাজে এমনকি যখন আপনারাও শান্তির কথা বলেন, যখন হয়তো সংঘাত থিতিয়ে এসেছে তখনও এর অন্দরমহলে যুদ্ধ লুকিয়ে থাকে যেমনভাবে ঘুমন্ত মেঘের মধ্যে ঝড়ের সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে।’
সাম্রাজ্যবাদী জার্মানি আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগ্রাসী মনোভাব গ্রহণ করায় ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক সংগ্রামের আলোচনায় আরও বেশি বেশি করে মিলিটারি কার্যকলাপের ও সশস্ত্র সংঘাতের বিষয়গুলি জায়গা করে নিল। যুদ্ধকে আর বিপ্লবের নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে যাওয়া বা প্রচলিত ব্যবস্থার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার জায়গায় দেখার বাস্তবতা রইল না। এটা দেখা গেল যে, যুদ্ধ শ্রমিক শ্রেণীর কাছে নতুন বিপদের ঘণ্টা, ক্ষুধা, গৃহহীনতা ও কর্মহীনতার বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে। ধনাত্মক শক্তির কাছে যুদ্ধ নিয়ে এল গভীর ও গহীন ভয়।
শ্রমিক সংগ্রামের যে দীর্ঘ ঐতিহ্য অর্জিত হয়েছে এতদিনে তার মূল বিষয়গুলি সবই ১৯০৭-এর স্টুটগার্টের সভায় উঠে এল সিদ্ধান্ত আকারে। যেমন মিলিটারি বাজেটের বৃদ্ধি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া, বর্তমান মিলিটারির প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রকাশ, জনগণ বাহিনীর প্রতি সমর্থন দেওয়া ও আন্তর্জাতিক মত-বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন গঠনের প্রস্তাবে সায় দেওয়া। তবে যে কোনও যুদ্ধের বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া— পূর্বেকার এই প্রস্তাবটি অধিকাংশ প্রতিনিধি সমর্থন করেননি। রোজা লুক্সেমবার্গ, লেলিন ও মার্তভ-এর একটি খসড়া সংশোধনীসহ গৃহীত হয়— যদি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তাহলে সোশালিস্টরা যুদ্ধের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হস্তক্ষেপ করবে এবং যুদ্ধ সঞ্জাত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটকে সর্বশক্তি দিয়ে কাজে লাগাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে যাতে করে ধনতান্ত্রিক শ্রেণীর পতন ত্বরান্বিত হয়। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জার্মানি যদিও তাদের রাজনৈতিক পথবদল-এর কথা বলেনি কিন্তু তাদের প্রতিনিধিরা এই সংশোধনীর প্রতি সম্মতি জানান।
ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির বিশ্ববাজার ধরার প্রতিযোগিতা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংঘাতের আবহে বিশ্বের ছবিটা ক্রমশ হয়ে উঠল ভীতিজনক। জঁরের বই ‘দ্য নিউ আর্মি’ (১৯১১) এই সময়ের আরও একটি মূল বিষয়কে আলোচনার টেবিলে নিয়ে এল— আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মক যুদ্ধ, বিশেষ করে দ্বিতীয়টিকে নিয়ে যেখানে কোনও দেশের স্বাধীনতাই বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে। জঁরের মতে, সেনাবাহিনীর একমাত্র কাজ হবে দেশকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা অথবা সেই ক্ষমতালিপ্সুকে দূরে ঠেলা যারা আলাপ-আলোচনার দৌত্যকে অস্বীকার করছে। এই ধরনের সমস্ত মিলিটারি কার্যক্রমকে বৈধ বলে স্বীকার করতে হবে। লুক্সেমবার্গ-এর সমালোচনা করে বলেন যে, আধুনিক যুদ্ধকে ঠিক-বেঠিকের তত্ত্ব দিয়ে বিচার করা অথবা আক্রমণ ও রক্ষণের কাগুজে কচকচানি বলে চালানো মুশকিল। এটা ঠিক করা খুবই কঠিন কাজ কোন যুদ্ধ আক্রমণ আর কোনটা রক্ষণের কাজ বা যে রাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু করল তারা কি সেটা একতরফা করল নাকি বাধ্য হল। ফলে তিনি বললেন যে, এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য করার তত্ত্বকে খারিজ করাই ভাল। এছাড়াও তিনি ‘সশস্ত্র দেশ’ এই ধারণার পরিপন্থী ছিলেন এই যুক্তিতে যে, তা শুধু সামাজিকভাবে আরও আরও অস্ত্র বাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টাতেই ইন্ধন যোগাবে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনালের কর্মপদ্ধতি বিশ্ব শান্তির পক্ষে খুব বেশি দাগ কাটতে পারেনি। সমরাস্ত্রে সজ্জিতকরণ ও যুদ্ধের ক্রমপ্রস্তুতির বিরুদ্ধে এর অবস্থান হয়ে দাঁড়াল বিবর্ণ। এসপিডি-র মধ্যপন্থি ও আইনি শাখা জার্মানিতে যুদ্ধের বিজয়গাথার শরিক হতে ঝুঁকে পড়ল এই আশায় যে, অনেক স্বাধীনভাবে তারা তাদের রাজনৈতিক কাজকর্ম চালাতে পারবে। ধীরে ধীরে অধিকাংশ জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস, ফ্রেঞ্চ সোশালিস্ট, ব্রিটিশ লেবার পার্টি ও অধিকাংশ ইউরোপীয় সংস্কারপন্থী নেতৃবৃন্দ প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে সমর্থন করে বসল। কিন্তু এর ফলাফল ছিল ভয়াবহ। ‘উন্নয়নের লাভ’ এই তত্ত্বে ধনতান্ত্রিক নেতৃবৃন্দের একচেটিয়া অধিকার থাকা উচিত নয় এই ধারণা থেকে শ্রমিক আন্দোলনও জাতীয়তাবাদী আদর্শের খাদ্য হয়ে উঠল। যুদ্ধের বাস্তবতায় সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল-এর ভূমিকা বলার মত কোনও স্থান দখল করতে পারল না, এর মূল লক্ষ্য— শান্তির রক্ষক, সেখানেও সে ব্যর্থ হল।
১৯১৫-র জিম্বারওয়াল্ড কনফারেন্সে লেলিন ট্রটস্কি সহ অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দ মন্তব্য করলেন— দিনে দিনে যুদ্ধের খরচ আরও বাড়বে এবং সামাজিক উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে মানুষের সমস্ত উদ্যোগকে যুদ্ধের পিছনে লাগিয়ে দেবে। তাদের চোখে এটা ধরা পড়ল যে, যুদ্ধ আসলে আধুনিক গণতান্ত্রিকতার নগ্নরূপ, যাকে আর সংশোধনের জায়গায় আনা মুশকিল, শুধুমাত্র শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থেই নয় মানুষের সম্প্রদায়গত জায়গা থেকেও। এই সতর্কবার্তায় খুব বেশি মানুষ কান দেননি। তবুও ১৯১৬-র কিয়েনথেল কনফারেন্সে ইউরোপের শ্রমিকদের উদ্দেশে ঘোষণা করা হল, আপনার সরকার এবং সংবাদপত্র এটাই প্রচার করবে যে, মিলিটারিরাজ খতম করার জন্যই যুদ্ধ জরুরি। ওরা কিন্তু আপনাকে প্রতারণা করছে। যুদ্ধ কখনওই অন্য কোনও যুদ্ধকে শেষ করেনি। এটা আসলে মানুষের মধ্যেকার প্রতিহিংসার আগুনকে উস্কে দেয়। এইভাবে আপনাকে বলি দিয়ে এক চিরন্তন নরকের মধ্যে আটকে দেবে। ভবিষ্যতের মিলিটারি জমানাকে প্রতিহত করার একমাত্র উপায় হল সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ ও ধনতান্ত্রিক সম্পদকে উল্টে দেওয়া।
যুদ্ধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন রোজা লুক্সেমবার্গ ও লেলিন। রোজা ‘যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বললেন এটাই হওয়া উচিত শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক দিশার অভিমুখ। ‘দ্য ক্রাইসিস অফ স্যোশাল ডেমোক্রেসি’ বইতে রোজা একথা লিখলেও সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনালে তর্কের ঝড় উঠল কারণ বিভিন্ন দেশের শ্রমিক শ্রেণীর কর্মপদ্ধতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছানো গেল না। তারপর থেকে এটা স্বীকৃত হল যে, শ্রমিক ঐক্য উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে ও যুদ্ধের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংহত হবে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন লেখায় যেমন ‘সোশ্যালিজম অ্যান্ড ওয়ার’ ( ১৯১৫) লেলিন দুটো মৌল প্রশ্নকে তুলে ধরেন। প্রথমটি ‘ইতিহাসগত ভুল’— যখনই বুর্জোয়া ব্যবস্থা ‘জাতীয় মুক্তি’-র বিষয়টিকে একটি সভ্যতার সোপান বলে দেখাতে চেয়েছে তা আসলে লুন্ঠনের সংগ্রাম ও ঠিক করে নিয়েছে যে কোন দেশকে কব্জা করে শোষণ ও শাসন চালানো যাবে এবং ধনতান্ত্রিক অসাম্যকে বাড়িয়ে তোলা যাবে। আর দ্বিতীয়টি হল সংস্কারবাদীদের ওপর দ্বৈততার মুখোশ চাপিয়ে দেওয়া যারা পরোক্ষে যুদ্ধকেই সমর্থন করে বসে, যদিও সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনালে যুদ্ধকে তারা অপরাধ বলেই চিহ্নিত করেছে। ‘পিতৃভূমি রক্ষা করা’ এই দাবিকে সামনে রেখে কিছু বৃহৎ শক্তি আসলে অন্য দেশকে লুন্ঠন করে চলেছে। যুদ্ধ লড়া হয়েছে জাতিরাষ্ট্রের রক্ষাকবচ হিসেবে তা নয়, আসলে ‘নিজেদের সুবিধা, আধিপত্যবাদ, লুণ্ঠন ও হিংসা কে টিকিয়ে রাখতে’। লেলিন আত্মরক্ষার সংগ্রামকে মান্যতা দিয়েছিলেন— শোষিত ও পদদলিত মানুষের যুদ্ধ, যাদেরকে দাস বানিয়ে রেখেছে বৃহৎ শক্তিগুলি। যে তত্ত্ব সবচেয়ে আলোচিত— বিপ্লবীরা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে গণযুদ্ধে নিয়ে যাবে তা আসলে বোঝায় যে যারা দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক শান্তি চায় তারা নিজের দেশের সরকার ও বুর্জোয়া শ্রেণীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। লেলিন এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে, যেকোনও শ্রেণীসংগ্রামই যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপ্লবী চেতনার জন্ম দেবে।
বিভাজনের রেখা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনালে শুধু ফাটল ধরাল তাই নয় নৈরাজ্যবাদী আন্দোলনেও তার প্রভাব পড়ল। বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই একটি লেখায় ক্রপ্টকিন মন্তব্য করলেন, ‘যারাই মানব সভ্যতার অগ্রগতির ধারণা লালন-পালন করেন তাদেরকেই মাথার থেকে পশ্চিম ইউরোপে জার্মান আগ্রাসনের ব্যাপারটা মুছে ফেলতে হবে।’ অনেকের কাছেই ব্যাপারটা তার সারা জীবনের লড়াই আন্দোলনের আদর্শের পরিপন্থী বলে মনে হল— যুদ্ধের বিরুদ্ধে যে সাধারণ ধর্মঘট, যা শ্রমিক শ্রেণী তেমন কর্ণপাতই করেনি এমনকি ইউরোপীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে পিছু হটা যা জার্মানির বিজয়ের ফলে ঘটতে পারত। ক্রপ্টকিনের মতে, অহিংসবাদীরা যদি নিষ্ক্রিয় থাকে তাও পরোক্ষে আগ্রাসনবাদীদেরকে সাহায্য করে এবং যারা সমাজবিপ্লবের জন্য লড়াই করছে তাদের সামনে বাধার প্রাচীর আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
ইতালীয় নৈরাজ্যবাদী এরিকো মালাতেস্তা ক্রপ্টকিনের প্রত্যুত্তরে বলেন যে, যদিও তিনি ঘোষিত শান্তিবাদী নন এবং মুক্তিযুদ্ধের লড়াইতে তিনি বন্দুক হাতে তুলে নেওয়ার পক্ষে কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের পক্ষে নন যেমনভাবে বুর্জোয়া গোষ্ঠী বারে বারে প্রচার করতে চেয়েছে গণতন্ত্রের সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে সাধারণের মঙ্গলার্থে কিন্তু আসলে তা শাসক শ্রেণীর দ্বারা শ্রমিক শ্রেণীর শোষণেরই নামান্তর। তিনি বিষয়টি পুরোমাত্রায় অবহিত ছিলেন যে, জার্মানির বিজয় মিলিটারিরাজের সগর্ব উপস্থিতিকে তুলে ধরত যেমন, তেমনি মিত্রশক্তির বিজয় মানে রাশিয়া-ইংল্যান্ডের আধিপত্যর সূচনা।
‘আধিপত্যবাদীকে যেকোনও মূল্যে প্রতিহত করতে হবে যারা আমাদের মুক্তির আশাকে ভেঙেচুরে দেয়’, এই দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করলেন ক্রপ্টকিন ১৯১৬-তে। জার্মানির বিরুদ্ধে ত্রিশক্তির জয় বরং অনেক কম ক্ষতিকর ও বর্তমান স্বাধীনতার ক্ষেত্রগুলিও কম আঘাতপ্রাপ্ত হবে। অন্যদিকে ১৯১৫ সালে মালাতেস্তা ও তার সহ-স্বাক্ষরকারীবৃন্দ যুদ্ধের বিরুদ্ধে ম্যানিফেস্টোতে প্রচার করলেন আগ্রাসী ও রক্ষণশীল যুদ্ধের মধ্যে সীমারেখা টানা সম্ভব নয়। সভ্যতার কাছে কোনও পক্ষেরই কোনও দায় নেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ধনতান্ত্রিক সংঘাতের ফল যার মূল্য চোকাতে হয়েছে শ্রমিক শ্রেণীকে। মালাতেস্তা, গোল্ডম্যান, ফার্দিনান্দ নুৎয়েনহু প্রমুখ এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, বুর্জোয়া সরকারকে যে কোনও মূল্যে সমর্থন করাটা হবে অক্ষমনীয় ভুল। কোনও ‘কিন্তু’ বা ‘যদি’-র বাইরে বেরিয়ে তাদের স্লোগান ছিল ‘একজনও মানুষ বা একটিও পেনি সেনাবাহিনীর জন্য নয়।’
নারীবাদী আন্দোলনকারীদের মধ্যেও যুদ্ধের প্রতি অবস্থান কী হবে তা নিয়ে বিতর্ক ছিল। কাজের ক্ষেত্রেও যেগুলি এতদিন ধরে পুরুষের একচেটিয়া অধিকার ছিল সেখানে অনেক কম মজুরিতে মহিলাদের নিয়োগ ও অতিমাত্রায় শোষণ নারীবাদী আন্দোলনের পালে হাওয়া যুগিয়েছিল। কেউ কেউ তো আইন পরিবর্তন করে মহিলাদেরকেও সেনাবাহিনীতে নিয়োগের দাবি তুললেন। শত্রুর জুজু দেখিয়ে যুদ্ধের অছিলায় মৌলিক সামাজিক সংস্কারের কাজ থেকে সরকারের হাত গুটিয়ে নেওয়া— বিষয়টি অনেক মহিলা কমিউনিস্ট নেত্রীই সে সময় তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছিলেন। তারা দেখিয়েছিলেন মিলিটারিরাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন কতটা জরুরি ছিল, পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রকে প্রস্তুত করতে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল বিষয়সূচির মধ্যে যুদ্ধকে নস্যাৎ করার শপথও জায়গা করে নেয় এবং যুদ্ধের ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়ে নেওয়ার সরকারি প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলনের প্রচার কর্মসূচিতে উঠে আসে।
বামপক্ষে থাকার অর্থই হল যুদ্ধের বিপক্ষে থাকা
ঠান্ডাযুদ্ধের অবসানে অন্য দেশের ব্যাপারে নাক গলানো কমেনি বা মানুষেরা তাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকতর স্বাধীনতা পায়নি। নতুন বিশ্বব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি মূলত দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের নিরিখে যদি দেখি তাহলে গত ২৫ বছর ধরে আমেরিকা গণতন্ত্র ও মানবতার নামে (রাষ্ট্রসঙ্ঘের মত থাকুক বা না থাকুক) যত যুদ্ধ করেছে, তা আরও নতুন নতুন সংঘাত অনৈতিক বিধি নিষেধ ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও গণমাধ্যমের এক ধরনের একীকরণের পথ সুগম করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেখি যে অনেক রাজনৈতিক শক্তি যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস রাখত তারাও অনেক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। বার্লিন প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার পর ন্যাটো যে যুদ্ধে জড়িয়েছে সে কসোভো কী ইরাক ও আফগানিস্তানে, এই রাজনৈতিক শক্তি এই ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপে তাদের পাশে থেকেছে এবং ক্রমে ক্রমে ডান বিশ্বের সঙ্গে যে পার্থক্য ছিল তা মুছে ফেলেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ বাম বিশ্বকে আবার দ্বিধায় ফেলেছে, কীভাবে তারা প্রতিক্রিয়া জানাবে যখন একটা দেশেরই সার্বভৌমত্ব আক্রমণের মুখে পড়েছে। যেমন ভেনেজুয়েলার সরকার রাশিয়ার আক্রমণকে নিন্দা না করে ভুল করেছে এবং আমেরিকার সম্ভাব্য আক্রমণকে যখন নিন্দা করবে তখন তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। বিংশ শতাব্দীতে বাম শক্তিগুলির এটা শেখা উচিত ছিল যে, শত্রুর শত্রু-র সঙ্গে জোট সম্ভাব্য কিছু প্রতিযুক্তির সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় মূলত এমন একটি সময়ে যখন প্রগতিশীল শক্তি রাজনৈতিকভাবে দুর্বল, তত্ত্বগতভাবে দ্বিধান্বিত এবং গণ আন্দোলনের সাহায্য পাচ্ছে না।
‘দ্য সোশালিস্ট রেভলিউশন অ্যান্ড দ্য রাইট অফ নেশনস টু সেলফ ডিটারমিনেশন’ বইতে লেলিন যা বলেছেন তা স্মরণ করা যেতে পারে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কোনও দেশের মুক্তিসংগ্রামকে কোনও কোনও বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্য কোনও বৃহৎ শক্তি সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে এবং সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটাকে গুরুত্ব নাও দিতে পারে এবং কোনও জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করতে পারে। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ও ছলাকলাকে বাদ দিয়ে বলা যেতে পারে বামেরা ঐতিহাসিকভাবে কোনও দেশের আত্মনিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করে এসেছে। বামেরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ও কোনও দেশের কোনও বিশেষ অঞ্চলকে ছেঁটে ফেলার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে কারণ তারা জানে যে, এর ফলে দু’দেশের শ্রমিক শ্রেণী এক নাটকীয় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশের শ্রমিক শ্রেণী বুর্জোয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে ফেলে কারণ তারা মনে করে অপর দেশের শ্রমিক শ্রেণী তাদের শত্রু। ‘রেজাল্টস অফ দ্য ডিসকাশন অন সেল্ফ ডিটারমিনেশন’-এ (১৯১৬) লেনিন লিখছেন, যদি সমাজবিপ্লবকে পেট্রগ্রাড, বার্লিন ও ওয়ারশতে জয়ী হতে হয় তাহলে পোলিশ সরকারকে জোরপূর্বক কোনও অঞ্চলকে ধরে রাখার দাবি ছাড়তে হবে যেমন ধরুন পোলিশ সীমানার মধ্যে ইউক্রেনকে। তাহলে প্রশ্ন উঠবে পুতিনের নেতৃত্বে এর অন্যথা কেন হবে।
অপর পক্ষে অনেক বাম শক্তি নানা প্রলোভনের ফাঁদে পা গলিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই সমস্ত শত্রু শিবিরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে যুদ্ধে জড়িয়েছে (যেমন ফ্রান্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বামেরা এক রাজনৈতিক সন্ধিতে উপনীত হয় যে, তারা ফরাসি সরকারের বিরোধিতা করবে না)। এই ধরনের প্রবণতা আটলান্টিক কেন্দ্রিকতা ও শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্যকার পার্থক্যকে উত্তরোত্তর অস্পষ্ট করে তুলছে। ইতিহাস আমাদের দেখায় যে, প্রগতিশীল শক্তি যদি যুদ্ধের বিরোধিতা না করে তাহলে তাদের অস্তিত্বই প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে এবং বিরুদ্ধ পক্ষের বক্তব্যকেই মেনে নিতে বাধ্য হয়। যেমনটি ঘটেছে ইতালির কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত্রে। তারা যেমন ন্যাটোকে সমর্থন জানিয়েছিল কসোভো বা আফগানিস্তানে সেনা অভিযানে, যেমনটা আজকের স্পেনে যেখানে ইউনিদাস পদেমাস (বাম দলের জোট) পুরো পার্লামেন্টের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে ইউক্রেনকে অস্ত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে। এই ধরনের সুবিধাবাদী কার্যাবলি অনেকবারই গণ-বিচারের মুখে পড়েছে বা যথোচিত শাস্তি পেয়েছে। (সংক্ষেপিত)
মূল লেখা থেকে অনুবাদ: শুভঙ্কর সাহা