ভারতীয় সিনেমায় ইতিহাসে প্রথমবার এক অত্যাধুনিক ক্যামেরার ব্যবহার হয়েছে। জানলে অবাক হবেন, এই ক্যামেরার দাম এতটাই যে, এই ক্যামেরা কেনার সামর্থ্য পৃথিবীতে অনেকেরই নেই। এই ক্যামেরার নাম হচ্ছে ‘IMAX’। সারা পৃথিবীব্যাপী মাত্র ২৬টি ক্যামেরা রয়েছে আইম্যাক্সের। অত্যধিক দামের কারণে এই ক্যামেরা বিক্রি করা হয় না। দৈনিক বা সাপ্তাহিক হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। ভারতে ‘পাঠান’-ই প্রথম ছবি, যা আইম্যাক্স ক্যামেরা দিয়ে শুট হয়েছে। এর আগে ভারতীয় অন্য কোনও মুভিতে এই ক্যামেরা ব্যবহার হয়নি।
যেহেতু আইম্যাক্স ক্যামেরা সাধারণ্যে বিক্রি করা হয় না, তাই এর দামও জানায়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে এই ক্যামেরার ইন্সুরেন্স খরচ থেকে অনুমান করা যেতে পারে এই ক্যামেরার দাম। এই ক্যামেরা একবার ইন্সুরেন্স করাতে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই ক্যামেরার দাম কত হতে পারে। আপনি শুধুমাত্র এই ক্যামেরাগুলিকে প্রতিদিন প্রায় ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে ভাড়া নিতে পারেন, তবে এ শুধুমাত্র ক্যামেরা বডিটুকুর ভাড়া। সম্পূর্ণ ক্যামেরা প্যাকেজের মূল্য পৃথক।
চলুন, আইম্যাক্স ক্যামেরার সম্পর্কে আরও অবাক করা তথ্য জেনে নিই আজকের এই প্রতিবেদনে। আইম্যাক্স মূলত দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত আইম্যাক্স ক্যামেরা এবং দ্বিতীয়ত IMAX সিনেমা হল। ভারতে বহু আইম্যাক্স সিনেমা হল থাকলেও কোনও আইম্যাক্স ক্যামেরা নেই। ইউরোপিয়ান কান্ট্রি থেকে এই ক্যামেরা ভাড়া করে নিয়ে আসা হয় ভারতে। আর পাঠান-এর শুটিংয়ের জন্য প্রথম ভারতে আনা হয় আইম্যাক্স ক্যামেরা।
যেখানে সাধারণ ক্যামেরা 4K থেকে 8K-তে শুট করে, সেখানে আইম্যাক্স ক্যামেরা 18K-তে শুট করে। তাহলে বুঝতে পারছেন ছবির কোয়ালিটি কতটা সুন্দর হবে। যেখানে অন্যান্য ক্যামেরার ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে, সেখানে আইম্যাক্স ক্যামেরার ওজন হয়ে থাকে ১১০ কেজির ওপরে। এই ক্যামেরা সামলানোর জন্য বিশেষ ক্রেন অথবা বেশ কয়েকজন মানুষের প্রয়োজন হয়।
আপনি যদি একবার আইম্যাক্স ক্যামেরায় শুট করা কোনও মুভি আইম্যাক্স সিনেমা হলে বসে দেখেন, তাহলে আপনার অনুভব হবে সত্যিকারেই অভাবনীয়, মনে হবে আপনার সামনে সব ঘটনাগুলো ঘটছে। মনে করবেন আপনি মুভির মধ্যে নিজেই ঢুকে গিয়েছেন। আইম্যাক্স সিনেমা হলে মুভি দেখার পর আর কখনওই সাধারণ সিনেমা হলে মুভি দেখতে চাইবেন না।
আইম্যাক্স-এর অ্যাসপেক্ট রেশিও হল 1.43:1, অর্থাৎ আইম্যাক্স ক্যামেরা দিয়ে ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের শুটিং হয়। আর যখন সিনেমা হলে চালানো হয়, তখন এটাকে দেখতে অনেকটা চৌকো আকৃতির মনে হয়। আইমেক্স ক্যামেরায় 70mm-এ শুটিং করা হয়। আইম্যাক্স ক্যামেরা দিয়ে শুটিং হয়েছে হলিউড মুভি ‘Apollo 13’, যা ১৯৯৫ সালের রিলিজ হয়েছিল। এ ছাড়াও ‘Hubble’, ‘Mission: Impossible’, ‘Star Wars’, ‘The Avengers’ ইত্যাদি মুভিতেও এই আইম্যাক্সের জাদু দেখা গিয়েছে।