কুকুর পুষুন। কুকুর কেবল আপনার পরিবারকে নিরাপদে রাখে তাই নয়, কুকুরের সঙ্গলাভে আপনার হার্ট বা হৃদযন্ত্রও সুরক্ষিত থাকে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এবং আপনি হতে পারেন দীর্ঘ জীবনের অধিকারী। বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান সেকথাই বলছে। বেশ কয়েক বছরের বেশ কয়েকটি গবেষণা ও সমীক্ষার ফলাফলে এমনই আশাব্যঞ্জক তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে কমপক্ষে ৪০ লক্ষ মানুষের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সেইসব তথ্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করে এমনই সিদ্ধান্তে এসেছেন গবেষকরা।
কুকুরপ্রেমীরা জানেন যে, পোষ্যের সান্নিধ্য তাঁদের জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ এবং যতটুকু উষ্ণতা ও আদর তাঁরা তাঁদের পোষ্যটিকে দেন, তার কয়েকগুণ বেশি তাঁরা ফেরতও পান নিঃসন্দেহে। পোষ্য কুকুরের সঙ্গ ও তাদের শান্ত প্রভাব মানুষকে মানসিকভাবে খুশি এবং চনমনে রাখতে অতুলনীয়। তবে তাদের সঙ্গ যে হৃদযন্ত্রকেও চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে, একাধিক সমীক্ষায় তা উঠে এসেছে। বাড়িতে পোষ্য থাকা, বিশেষ করে একটি কুকুর থাকা, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে বলে প্রমাণ মিলেছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, বাড়িতে পোষ্য থাকলেই হৃদযন্ত্র গোলমাল করবে না বা উভয়ের (পোষ্য ও পোষিত) সম্পর্কের মধ্যেই কোনও স্পষ্ট কারণ এবং প্রভাব রয়েছে। এর মানে এই যে, পোষ্য রাখা হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর সামগ্রিক কৌশলের একটি যুক্তিসঙ্গত অংশ হতে পারে।
সমীক্ষা চলাকালীন গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, কুকুর যাদের পোষ্য হিসেবে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে গিয়েছে ২৪ শতাংশ। যাদের ইতিমধ্যে একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার ঝুঁকি কমেছে ৩১ শতাংশ। ৪ মিলিয়ন মানুষের ওপর চলা এই সমীক্ষার মাধ্যমে গবেষকরা আরও জেনেছেন, কুকুর পালন আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, উদ্বেগ এবং হতাশা কমাতে সাহায্য করে। কারণটাও বলেছেন তাঁরা। প্রধানতম কারণটি হচ্ছে, কুকুর সঙ্গী হিসেবে অসাধারণ। কুকুর-পালকরা সচরাচর পোষ্যদের নিয়ে হাঁটতে বের হন। তাতে করেও অন্তত আধঘণ্টা শারীরিক কসরতের কাজটি হয়ে যায়। তা স্বাভাবিক কারণেই ‘কার্ডিয়োভাসকুলার রিস্ক’ কমিয়ে দেয়। মানবশরীরে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
তাই গবেষকরা নিদান দিয়েছেন, বাড়িতে কুকুর পুষুন। তাদের সাহচর্য আপনাকে অকালমৃত্যু থেকে বাঁচাবে। শরীরের পাশাপাশি মন ভাল রাখার জন্য তার চেয়ে যোগ্য সাথি আর নেই। তবে মনে রাখতে হবে, কেবল হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর প্রাথমিক উদ্দেশ্যে পোষা প্রাণী গ্রহণ করা উচিত নয়। আপনি যদি আপনার জীবনে একটি পোষ্যকে জায়গা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত না থাকেন বা পোষ্যটির যথাযথ দেখভাল করতে অপারগ হন, তাহলে কুকুর পুষবেন না। কুকুর পুষলেই তো শুধু হবে না, তার জন্য উপযুক্ত যত্ন এবং প্রয়োজনীয় সক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে পোষ্যটিকে যথাযথ শারীরিক কসরত করাতে পারেন।
হাজার হাজার বছর আগে কুকুর মানুষের সংস্পর্শে এসেছে। পুরাণেও দেখা গিয়েছে, মহাপ্রস্থানে যুধিষ্ঠিরের সঙ্গী ছিল একটি কুকুর। মানুষের বিশ্বস্ত সহচর কুকুর মালিকের জন্য জীবন বাজি রাখতেও পিছপা হয় না। প্রভু বা মনিবের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। বিপদের দিনে সহচর মানুষ ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ বলে পালিয়ে গেলেও পোষ্য সারমেয়রা কোনওদিন পিঠ দেখায়নি। নিজের প্রাণ তুচ্ছ মেনেছে। ঝুঁকির কথা মাথায় না রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রতিপালককে বাঁচাতে। এমন অসংখ্য নমুনা ছড়িয়ে আছে আপনার নিজস্ব পরিসরেই। গোটা বিশ্বেই।
কুকুর সব সময় আমাদের ভালো বন্ধু। লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো🙏