Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রবীন্দ্রনাথের চোখে ‘সোশ্যালিজ্‌ম্‌’

রাশিয়ায় অবিভক্ত বলশেভিক পার্টির প্রতিষ্ঠার (১৮৯৮) ছ’বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সাধনা’ মাসিক পত্রিকায় সমাজতন্ত্র নিয়ে একটি ছোট অথচ বিশেষ প্রণিধানযোগ্য নিবন্ধ লেখেন, শিরোনাম ছিল ‘সোশ্যালিজ্‌ম্‌’। শুরুতেই লিখেছেন, “বিলাতি খবরের কাগজে দেখা যায় য়ুরোপে সোশ্যালিস্ট সম্প্রদায়ের উপদ্রব প্রতিদিন গুরুতর হইয়া উঠিতেছে। ইহাদের দ্বারা সেখানে আজ হউক বা দুই দিন পরে হউক, একটা প্রচণ্ড সামাজিক বিপ্লব ঘটা অসম্ভব নহে। অতএব সোশ্যালিজ্‌ম্‌ মতটা কী তাহা আলোচনা করিয়া দেখিতে কৌতূহল জন্মে।

সোশ্যালিস্টদিগের মধ্যে যে মতের সম্পূর্ণ ঐক্য আছে তাহা নহে; এই কারণে, তাহাদিগের সকল মতগুলির বিস্তারিত সমালোচনা সহজসাধ্য নহে। আমরা এ স্থলে কেবল বেল্‌ফট্‌ ব্যাক্স্‌ সাহেবের গ্রন্থ হইতে তাঁহার মত সংকলন করিয়া দিতেছি।

কিছুকাল পূর্বে ইংলণ্ডে যাঁহারা কোনো কোনো প্রচলিত নিয়ম সংশোধন করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন তাঁহাদিগকে ও তাঁহাদের বর্তমান মতাবলম্বীদিগকে “লিবারাল্‌’ কহিয়া থাকে।

এই লিবারাল্‌দিগের সহিত সোশ্যালিস্টদিগের কোথায় প্রভেদ ব্যাক্স্‌ সাহেব তাহারই আলোচনা করিয়াছেন।” [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘সোশ্যালিজ্‌ম্’, সাধনা, জ্যৈষ্ঠ ১২৯৯]

আর্নেস্ট বেলফোর্ট ব্যাক্স সম্ভবত প্রথম ১৮৮১ সালে মার্ক্সের জীবদ্দশায় Modern Thought পত্রিকায় ইংরেজিতে কার্ল মার্ক্স নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন, যাতে ‘ক্যাপিটাল’ ও মার্ক্স-এর অন্যান্য লেখা নিয়ে আলোচনা আছে। শিরোনাম ছিল ‘Leaders of Modern Thought: XXIII-Karl Marx’। মার্ক্সের অতি সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তাঁর অর্থশাস্ত্রগত চিন্তানীতি নিয়ে বিশদভাবে লেখেন। রবীন্দ্রনাথ সেই প্রবন্ধটি পড়েছিলেন কি না জানি না, কারণ তাঁর কোনও লেখায় মার্ক্সের উল্লেখ পাইনি, বা আমার চোখে পড়েনি। তবে মার্ক্সের নাম জানতেন না, তা নয়। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। মনে হয় ‘The ethics of socialism, Religion of Socialism’ লেখার মধ্যে অন্তত একটি লেখা পড়েছিলেন।

অন্য একটি লেখায় কবি বললেন, ‘‘এতকাল এই সোশ্যালিজ্‌ম্‌ মত প্রায় নাস্তিকতায় সহচর স্বরূপে ছিল। প্রায় সমস্ত সোশ্যালিষ্ট্ পত্রই নাস্তিকতার গোঁড়ামি প্রচার করিয়া আসিতেছেন। সম্প্রতি একটা পরিবর্ত্তন দেখা যাইতেছে। রোমান-ক্যাথলিক ধৰ্ম্মমণ্ডলী এই মতের প্রতি পক্ষপাত প্রকাশ করিতেছে।’’

এখনকার লিবারেশ্যন থিওলজির প্রসঙ্গ এসে যায়। তিনি লিখলেন, ‘‘ইহাতে সোশ্যালিজ্‌মের বল কত বাড়িয়া উঠিতেছে তাহা বলা বাহুল্য। রোমান্-ক্যাথলিক মণ্ডলীর অধিপতি স্বয়ং পোপ্ লিয়ো অল্পদিন হইল তীর্থযাত্রী একদল ফরাসী মজুরদের সম্বোধন করিয়া আপনার অনুকূল মত প্রকাশ করিয়াছেন।’’

সেই সময় আধুনিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা গড়ে ওঠেনি অধিকাংশ ন্যায়বাদী মানুষের চিত্তে। রবীন্দ্রনাথ তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। ‘ভারতী’-তে প্রকাশিত প্রবন্ধে তার প্রতিফলন ছিল। “ব্যাক্স্‌সাহেব বলেন, আদিমকালে সাধারণের মধ্যে ধনের বিভাগ ছিল, সভ্যতার প্রাদুর্ভাবে ক্রমে তাহার ব্যত্যয় হয়; ক্রমে সকলের স্বস্ব প্রধান হইবার বাসনা জন্মে, প্রধান হইতে চেষ্টা করিলেই স্বভাবত দুই বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বীদলের সৃষ্টি হয়। এইরূপে সামাজিক ঐক্য নষ্ট হইয়া পার্থক্যের জন্ম হইতে থাকে। পূর্বে কেবলমাত্র বহির্জাতির সহিত শত্রুতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, এখন প্রত্যেকে বড়ো হইতে চেষ্টা করিয়া ঘরের মধ্যে দলাদলি ঘটিতে থাকে। সভ্যতার স্বাভাবিক ফল এই। ইহার প্রধান লক্ষণ, সমাজের সহিত ব্যক্তির বিরোধ— প্রত্যেকের সমগ্রের অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা হস্তগত করিবার চেষ্টা।” আমরা যাঁরা মার্ক্সীয় ভাবনায় নিজেদের অভিমত গড়েছি, তাঁরা রুষ্ট হতে পারেন। কিন্তু তখন তো সমাজতন্ত্র চিন্তার অঙ্কুরোদগম হয়েছে মাত্র।

রবীন্দ্রনাথের চিত্তে তখনই সোশ্যালিজম সম্পর্কে বিপুল প্রত্যাশা জাগরিত হচ্ছিল। তা নাহলে লিখতেন না, “সোশ্যালিজ্‌ম সকলের মধ্যে ধনের সমবিভাগ করিয়া দিয়া পুনশ্চ সকলকে একতন্ত্রের মধ্যে বাঁধিতে চাহে এবং এই উপায়ে সকলকে যথাসম্ভব স্বাধীনতার অধিকারী করিতে চাহে, মানবসমাজে ঐক্য এবং স্বাধীনতার সামঞ্জস্য ইহার উদ্দেশ্য। সোশ্যালিস্টরা চাহে যে, এই পণ্যউৎপাদন ও বিতরণ কোনো বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির হস্তে না থাকিয়া সাধারণ সমাজের হস্তে পড়ে। তাহারা বলে, ধন উৎপাদন এবং বণ্টন সমস্ত সমাজের কাজ। সম্প্রতি কেবল সম্পত্তিবান ব্যক্তিদের মর্জি এবং স্বার্থের উপরে তাহার নির্ভর থাকাতে জনসাধারণ স্ব স্ব অবস্থার সম্পূর্ণ উন্নতির সম্ভাবনা হইতে বঞ্চিত হইতেছে।”

বাইশ বছর পরে ‘লোকহিত’ প্রবন্ধে (‘কালান্তর’) প্রতীচ্যে নিপীড়িত মানুষের সামাজিক ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষার কথা তাঁর চিন্তনকে কেমনভাবে প্রভাবিত করেছিল, তা ফুটে উঠেছে। “ও দেশে শ্রমজীবীর দল যতই গুমরিয়া গুমরিয়া উঠিতেছে ততই তাহাদিগকে ক্ষুধার অন্ন না দিয়া ঘুম পাড়াইবার গান গাওয়া হইতেছে; তাহাদিগকে অল্পস্বল্প এটা-ওটা দিয়া কোনোমতে ভুলাইয়া রাখিবার চেষ্টা। কেহ বলে ‘উহাদের বাসা একটু ভালো করিয়া দাও’, কেহ বলে “যাহাতে উহারা দুচামচ সুপ খাইয়া কাজে যাইতে পারে তাহার বন্দোবস্ত করো, কেহ বা তাহাদের বাড়িতে গিয়া মিষ্টমুখে কুশলজিজ্ঞাসা করে, শীতের দিনে কেহ বা আপন উদ্বৃত্ত গরম কাপড়টা তাহাদিগকে পাঠাইয়া দেয়। এমনি করিয়া ধনের প্রকাণ্ড জালের মধ্যে আটকা পড়িয়া লোকসাধারণ ছটফট্‌ করিয়া উঠিয়াছে।”

অনেকে ভাবেন রাশিয়ায় গিয়ে তাঁর সমাজতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ উদ্ভিদ্যমান হয়েছিল। এটা যে ঠিক নয়, তা আশা করি পাঠকেরা ভেবে দেখবেন। তাছাড়া রাশিয়া ভ্রমণের কয়েক বছর আগেই তো কবি ‘রক্তকরবী’ লেখেন, যার প্রায় এক ডজন খসড়া আছে। সেটা স্বাভাবিক, কারণ সেখানে তিনি আগ্রাসী পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার কুফল রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এ প্রসঙ্গে মার্ক্সের ‘বিযুক্তি’ (এলিয়েনেশ্যন) নিয়েও বলতে হবে। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা/ সমাজের স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট উপসর্গ ‘বিযুক্তি’ যা না অনুধাবন করলে মার্ক্সের ক্যাপিটাল অবোধ্য রয়ে যাবে। সেই সময় Economic and Philosophic Manuscripts of 1844 (যা প্যারিস পাণ্ডুলিপি নামেও পরিচিত) প্রকাশিত হয়নি, যদিও ‘ক্যাপিটাল’-এ বিযুক্তির কথা অনেকবার উল্লেখিত। যাই হোক, লেনিনের কোনও লেখায় বিযুক্তির ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ‘রক্তকরবী’ নাটকে দুই শ্রমিককে তুলে ধরে বলছেন, তাদের কোনও নাম নেই, একজন ৪৭-এর ফ, আরেকজন ৬৯-এর ঞ। এটাই তো বিযুক্তি। কত সহজভাবে বুঝিয়েছেন। লেনিনের মাথায় না এলেও রবীন্দ্রনাথ মার্ক্সের সমান্তরালে ‘বিযুক্তি’ শনাক্ত করতে পেরেছিলেন।

পরে রবীন্দ্রনাথ যে মার্ক্সের কথা জেনেছিলেন, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। সাধনা-র লেখা প্রকাশিত হবার ৩৭ বছর পরে প্রকাশিত সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর প্রথম বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন: ‘সাধারণ স্বত্ববাদীর ইশতাহার (১৯২৯)। ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির বঙ্গীয় রাজ্য কমিটির তরফে প্রকাশ করেছিলেন আব্দুল হালিম। সৌম্যেন্দ্রনাথ ও তাঁর প্রিয় বন্ধু আবদুল হালিম কবির স্নেহভাজন ছিলেন এবং প্রায়ই কবি-সকাশে যেতেন। কাজেই ওই অনুবাদকর্ম কবির নজরে যে এসেছিল, এ বিষয়ে সংশয় নেই।

আবদুল হালিম ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কতিপয় সদস্যের একজন। সৌম্যেন্দ্রনাথ ১৯২৯-এ কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের ষষ্ঠ কংগ্রেসে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে (নারায়ণ ছদ্মনামে) যোগ দেন। ফিরে এসে সিপিআইতে যোগ দেন ও তার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন, যদিও তার অল্পকাল পরে স্তালিনের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পার্টি ছেড়ে দেন।

একবার আবদুল হালিম ও সৌম্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে মিলে কবির সঙ্গে দেখা করেন সরোজ মুখোপাধ্যায়। নানা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেন প্রলেতারিয়েতের বাংলা প্রতিশব্দ কী হওয়া উচিত। যদিও সর্বহারা বলা হয়, ওই শব্দে প্রলেতারিয়েত ফুটে ওঠে না। সন্ন্যাসী বা ফকিরও তো সর্বহারা। তাদের কি প্রলেতারিয়েত বলা যায়। কবি বলেছিলেন, ‘আত্মশ্রমবঞ্চিত শ্রেণী’। এ কথা লিখেছেন প্রয়াত বাসব দাশগুপ্ত, যাঁর দাদারা আব্দুল হালিম, সরোজ মুখোপাধ্যায় প্রমুখের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ সভ্যতাকে ইতিবাচক দিক থেকে দেখলেও ব্রিটিশ উপনিবেশবাদকে ভারতবাসীর কাছে অভিশাপ হিসেবেই দেখেছিলেন, বিশেষত জীবনের শেষ দশকে। ব্যক্তিগত সচিব ড. অমিয় চক্রবর্তীকে একটি চিঠিতে (১৯৩৪) লিখেছিলেন, ইংরেজ এদেশে যা যা করেছে তা ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তি হিসেবেই করেছে। সাম্রাজ্য অটুট থাকবে; ধনতন্ত্র অটুট থাকবে, অথচ ভারতবর্ষে ইংরেজ অন্যরকম আচরণ করবে এটা কখনই সম্ভব নয়।

তাঁর চিন্তার উদ্বর্তনে আবহ সঙ্গীতের ভূমিকা নিয়েছিল সোশ্যালিজমের প্রতি আকর্ষণ, যার প্রধান শর্ত ছিল ব্যক্তিস্বাধীনতার অবাধ অধিকার। ‘রাশিয়ার চিঠি’-তে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভূত প্রশংসা করলেও টোটালিটারিয়ান ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন।

[এই লেখার উল্লেখিত তথ্যের বেশিরভাগ দিয়েছেন মার্ক্স-স্কলার প্রদীপ বকশি]

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »