Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বিস্মৃতপ্রায় কথাসাহিত্যিক সরোজকুমার রায়চৌধুরী

বাংলা সাহিত্যের কল্লোল যুগের অন্যতম কথাসাহিত্যিক সরোজকুমার রায়চৌধুরী (১৯০৩-১৯৭২) আজ বিস্মৃতপ্রায়।

১৯০১ সালের ২০ আগস্ট অর্থাৎ আজকের দিনটিতে তিনি মুর্শিদাবাদের সালার থানার মালিহাটি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মনোরঞ্জন রায়চৌধুরী। দাদা প্রদ্যুৎকুমার রায়চৌধুরী ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। সরোজকুমার সালার হাইস্কুল থেকে ১৯১৮ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করে বিহারের নামকরা হাজারিবাগ কলেজে ভর্তি হন। এখানেই তিনি সহপাঠী হিসাবে পান আর-এক সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়কে, যিনি ‘বনফুল’ ছদ্মনামে সবার কাছে জনপ্রিয়। হাজারিবাগ কলেজ থেকে আইএ পাশ করে তিনি ভর্তি হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। ১৯২১ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও কিরণশঙ্কর রায়চৌধুরীর সংস্পর্শে এসে স্বদেশপ্রেমে প্রভাবিত হন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার জাতীয় বিদ্যাপীঠ থেকে বিএ পাশ করেন।

সরোজ কুমার রায়চৌধুরীর সাহিত্যজীবন শুরু ‘বৈকালী’ পত্রিকায়। সাপ্তাহিক ‘আত্মশক্তি’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ‘রমানাথের ডায়েরি’ প্রথম প্রকাশিত হয়। আর নেতাজির অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে তিনি এই পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ‘কল্লোল’ ও ‘কালিকলম’ পত্রিকাতে তাঁর অনেক গল্প বের হয়েছে।

সরোজকুমার রায়চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয় দৈনিক ‘কৃষক’ ও ‘নবশক্তি’ পত্রিকার মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি বিখ্যাত ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-য় যোগ দেন। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি আনন্দবাজারে সাংবাদিকতা করেন। পরবর্তীতে তিনি সাপ্তাহিক ‘বর্তমান’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এছাড়াও দৈনিক বসুমতি, যুগান্তর সহ কলকাতার অজস্র পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। সরোজকুমার রায়চৌধুরীর ১৫টি উপন্যাস ও চারটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর জন্মভূমি মালিহাটিতে বৈষ্ণবদর্শনের একটা প্রভাব ছিল। দুই বিখ্যাত বৈষ্ণব পদকর্তা রোহিণী দাস ও রাধামোহন ঠাকুর এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সাহিত্যের মধ্যে গ্রাম-বাংলার সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবনের কথা যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনই রয়েছে গ্রামীণ বৈষ্ণবজীবনের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর উপন্যাসগুলি হল: ‘বন্ধনী’ (১৯৩১), ‘শৃঙ্খল’, ‘আকাশ ও মৃত্তিকা’ (১৯৪০), ‘পান্থনিবাস’ (১৯৩৫), ‘ঘরের ঠিকানা’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘গৃহকপোতী’, ‘সোমলতা’, ‘হংসবলাকা’ (১৯৩৭), ‘ক্ষুধা’, ‘কালোঘোড়া’ (১৯৪৬), ‘অনুষ্টুপ ছন্দ’ (১৯৫১), ‘তিমির বলয়’, ‘নাগরী’ (১৯৬১), ‘নীল আগুন’ ইত্যাদি। তাঁর গল্পগ্রন্থগুলি হল: ‘মনের গহনে’ (১৯৩৬), ‘দেহযমুনা’ (১৯৩৬), ‘রমণীর মন ও সন্ধ্যারাগ’ ইত্যাদি।

১৯৩১-১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তাঁর সব কিছুর সৃষ্টিকাল। ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘গৃহকোপতী’ ও ‘সোমলতা’ মিলে তাঁর যে ত্রয়ী (ট্রিলজি) উপন্যাস, তার মধ্যেই ফুটে উঠেছে গ্রামীণ বৈষ্ণবদের জীবনযাপনের চালচিত্র। কিন্তু তাঁকে যে উপন্যাসটি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয় সেটি হল ‘কালোঘোড়া’। অথচ সেই ‘কালোঘোড়া’-র স্রষ্টা আজ আমাদের কাছে বিস্মৃতপ্রায়। ১৯৭২ সালের ২০ মার্চ কলকাতায় এই মহান কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান হয়।

চিত্র: গুগল
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »