প্রাচীনকাল থেকে সাহিত্যে রূপকের ব্যবহার চলছে। ‘প্রথাগত’ রূপক ছাড়াও কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকার হামেশাই উপস্তিত করেন ‘ব্যক্তিগত’ রূপক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবার অনেক ‘ব্যক্তিগত’ রূপক হয়ে ওঠে ‘প্রথাগত’। অবশ্য দু-একটি বা আরও বেশি রূপক থাকলেই যে, একটি কবিতা-গল্প-উপন্যাস-নাটক-কে রূপক সাহিত্যর আওতায় ফেলা যাবে, এমন নয়। মহাকাব্যে রূপক মজুত থাকলেও সার্বিকভাবে তা কাহিনীর আক্ষরিক অর্থই তুলে ধরে। এর কারণ, মহাকাব্যে বাস্তব, লৌকিক ও প্রাকৃত চরিত্র বা ঘটনার পাশাপাশি অনায়াসে আসতে পারে অবাস্তব, অলৌকিক ও অতিপ্রাকৃত চরিত্র বা ঘটনা। উল্টোদিকে, নীতিমূলক গল্প বা অ্যালেগরি হলো জোড়া-অর্থর কারবারি। একথা সত্যি, রূপকের মধ্যে দিয়ে সেখানে লেখক নিজের বক্তব্য হাজির করেন; কিন্তু নীতিগল্প বা অ্যালেগরিতে অ-বাস্তব ও অতিপ্রাকৃত চরিত্র বা ঘটনা যে একেবারে থাকবে না, এমন কথা হলফ করে বলা যায় না।
আঠেরো শতকে বাস্তববাদের ভিত মজবুত হবার পর রূপক সাহিত্যর ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। কিন্তু খেয়াল রাখা দরকার, বাস্তববাদের কিছু শর্ত সর্বদা মানতে হয় লেখককে। তারমধ্যে প্রধান শর্ত হলো, অ-বাস্তব বা অতিপ্রাকৃত কোনো কিছু উপস্থিত করতে পারবেন না তিনি। এই প্রাথমিক শর্তটি না-মানলে অল্পবিস্তর সমস্যা দেখা দেয়। বাস্তববাদী কাঠামোয় অতি-বাস্তবকে মেনে নিতে অসুবিধে হয় পাঠক/ দর্শকের। তাই আক্ষরিক অর্থ ছাড়া অন্য কোনো অর্থ বোঝানোর জন্যে প্রতীকের আশ্রয় নেন লেখক। এক্ষেত্রে কোনও চরিত্র বা ঘটনা প্রতীকী হলেও একটি স্তরে সেটি বাস্তবের বলেই মনে হয়।
দুই
রবীন্দ্রনাথের মোট ন’টি নাটক রূপক নাট্যর পর্যায় পড়ে। মূলত রক্তকরবী (১৯২৬) নিয়ে এই নিবন্ধের আলোচনা।১ নাটকটির বাস্তববাদী কাঠামোর ভেতরে তিনটে অ-বাস্তববাদী চরিত্র (নন্দিনী, রঞ্জন আর রাজা) কি আদৌ কোনও সমস্যা তৈরি করেন? করলে, কেন ও কীভাবে তা হয়— সেটাই বোঝার চেষ্টা করব এখানে। আলোচনায় অন্যান্য নাটকগুলির কথাও এসে পড়বে স্বাভাবিকভাবে। রবীন্দ্রনাথ এই নাটকগুলি লিখতে লিখতেই আদর্শ রূপক নাটকের খোঁজ পেয়েছিলেন কি না— এ প্রশ্নর জবাবও পাওয়া যাবে একইসঙ্গে।
অনেকদিন আগে থেকেই রবীন্দ্রনাথ যে স্বভাববাদী নাটকের সীমাবদ্ধতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন। ১৯০২-এ বঙ্গদর্শন-এর একটি প্রবন্ধ তার স্পষ্ট প্রমাণ।২ এরপর নানা জায়গায় মাঝেমধ্যেই অ-স্বভাববাদী নাটকের প্রতি তিনি সমর্থন জানিয়েছেন, যদিও রবীন্দ্রনাথ নিজে এইধরনের নাটক লিখেছেন বেশ খানিক পর। বিদেশী থিয়েটারের অনুকরণ নয়, ভারতীয় লোকনাট্যর আঙ্গিকে অ-স্বভাববাদী নাটক লেখাই ছিল বরং রবীন্দ্রনাথের লক্ষ্য। রূপক নাটকগুলি সেই সাক্ষ্যই বহন করে। প্রথম রূপক নাটক, শারদোৎসব (১৯০৮)-এ অঙ্ক বিভাজন নেই, স্রেফ দৃশ্য বিভাজন আছে। রক্তকরবী-তে সেটিও তুলে দেওয়া হল। মজার ব্যাপার, একই সময় চিরকুমার-সভা উপন্যাসের নাট্যরূপ দিলেন তিনি। সেখানে আবার ফিরে এল অঙ্ক-দৃশ্য সমেত পুরোপুরি বিদেশী নাটকের ধাঁচ। একথা পরিষ্কার, বাস্তববাদকে এড়াতে চাইলেও তা যে হামেশাই ঢুকে পড়ছিল রবীন্দ্রনাথের লেখায়। এমনকি, বাস্তববাদের পিছুটান লক্ষ্য করা যায় রক্তকরবী-তেও। বাস্তববাদকে খারিজ করে অ-স্বভাববাদী আঙ্গিকে রূপক নাটকের যে-খোঁজ রবীন্দ্রনাথ করছিলেন, সে-দিক থেকে দেখলে রক্তকরবী-র স্থান হবে মধ্যবর্তী পর্যায়ে। এখানে পাশাপাশি দুটি ঘরানা— বাস্তববাদ ও রূপকসাহিত্য— বহাল থেকেছে। এমনকি, এই দুই ধারার মধ্যে সংঘাতও ঘটেছে নাটকে। তার ফলে যেসব সমস্যা তৈরি হয়েছে— সেসব নিয়েই আলোচনা করব এখন।
নন্দিনী যে রক্তমাংসর মানুষ নন, তিনি যে কোনও কিছুর প্রতীক— নাটকের গোড়াতেই নানাভাবে সে-কথা বুঝিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর সম্পর্কে অধ্যাপকের মন্তব্য:
অধ্যাপক। সকালে ফুলের বনে যে আলো আসে তাতে বিস্ময় নেই, কিন্তু পাকা দেয়ালের ফাটল দিয়ে যে আলো আসে সে আর-এক কথা। যক্ষপুরে তুমি সেই আচমকা আলো।…
তিনি আরও বলেন:
অধ্যাপক। আমরা নিরেট নিরবকাশ-গর্তের পতঙ্গ, ঘন কাজের মধ্যে সেঁধিয়ে আছি; তুমি ফাঁকা সময়ের আকাশে সন্ধ্যাতারাটি, তোমাকে দেখে আমাদের ডানা চঞ্চল হয়ে ওঠে।…
একই কথা রঞ্জনের সম্পর্কেও খাটে। তাঁর নামের সঙ্গে পরিচিত হবার সময়েই পাঠক/ দর্শক বুঝতে পারেন— নন্দিনীর মতো রঞ্জনও প্রতীকী চরিত্র, বাস্তব চরিত্র নয়।
নন্দিনী। আমার রঞ্জনকে এখানে আনলে এদের মরা পাঁজরের ভিতর প্রাণ নেচে উঠবে।
অধ্যাপক। একা নন্দিনীকে নিয়েই যক্ষপুরীর সর্দাররা হতবুদ্ধি হয়ে গেছে, রঞ্জনকে আনলে তাদের কী হবে।
নন্দিনী। ওরা জানে না ওরা কী অদ্ভুত। ওদের মাঝখানে বিধাতা যদি খুব একটা হাসি হেসে ওঠেন, তা হলেই ওদের চটকা ভেঙে যেতে পারে। রঞ্জন বিধাতার সেই হাসি।
অধ্যাপক। দেবতার হাসি সূর্যের আলো, তাতে বরফ গলে, কিন্তু পাথর টলে না। আমাদের সর্দারদের টলাতে গেলে গায়ের জোর চাই।
নন্দিনী। আমার রঞ্জনের জোর তোমাদের শঙ্খিনী নদীর মতো। ঐ নদীর মতোই সে যেমন হাসাতেও পারে তেমনি ভাঙতেও পারে।…
রাজা আগাগোড়াই রহস্যময়; কখনওই তাঁকে বাস্তব চরিত্র বলে মনে হয় না। তাঁর সম্বন্ধে নন্দিনীর মতও অনুরূপ।
নন্দিনী। কতবার বলেছি, তোমাকে মনে করি আশ্চর্য। প্রকাণ্ড হাতে প্রকাণ্ড জোর ফুলে ফুলে উঠছে, ঝড়ের আগেকার মেঘের মতো— দেখে আমার মন নাচে।
রাজা যখন নিজের কথা বলেন, ব্যাপারটি তখন আরও খোলসা হল।
নেপথ্যে। বুঝতে পারবে না। আমি প্রকাণ্ড মরুভূমি— তোমার মতো একটি ছোট্ট ঘাসের দিকে হাত বাড়িয়ে বলছি, আমি তপ্ত, আমি রিক্ত, আমি ক্লান্ত। তৃষ্ণার দাহে এই মরুটা কত উর্বরা ভূমিকে লেহন করে নিয়েছে, তাতে মরুর পরিসরই বাড়ছে, ঐ একটুখানি দুর্বল ঘাসের মধ্যে যে প্রাণ আছে তাকে আপন করতে পারছে না।
অথচ রক্তকরবী শুধু এই তিনটি চরিত্রকে নিয়ে লেখা নয়। নন্দিনী, রঞ্জন আর রাজা ছাড়া বাকি সব চরিত্র সরাসরি আমাদের চেনাজানা জগৎ থেকে উঠে আসেন। তাঁদের নির্দিষ্ট পেশারও উল্লেখ করেন নাট্যকার। চন্দ্রা, ফাগুলাল, বিশু, কিশোর, সর্দার, গোঁসাই— সকলেই আমাদের পরিচিত জগতের মানুষ। বলা চলে, এঁরা প্রতিনিধিমূলক (typical) চরিত্র। এছাড়া, রক্তকরবী-তে বাস্তববাদী ঘরানার কাঠামোও ব্যবহার করেছেন রবীন্দ্রনাথ। যক্ষপুরীর সোনার খনি, সেখানকার খোদাইকর ও তাঁদের জীবনযন্ত্রণা বারবারই সে-কথা মনে করিয়ে দেয়। ব্যাপারটি গোপাল হালদারেরও নজরে এসেছিল। বহুরূপীর প্রযোজনা দেখার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া:
জীবন্ত কালের জীবন্ত সমস্যা কবির মনে আলোড়িত হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই, যন্ত্র শিল্পের যুগে মানুষকে মানুষের শোষণ, সেই সমস্যা। এ সমস্যার একটি অনিবার্য পরিসমাপ্তি কবি মনে মনে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন; কিন্তু ‘রক্তকরবী’ লেখার কাল পর্যন্ত এই সমস্যার বাস্তব সমাধান তাঁর নিকট স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। তাই ‘রক্তকরবী’র সমস্যা দিকের চরিত্রগুলি বাস্তব, শুধু প্রাণ-সমৃদ্ধ নয়, জীবন্ত; কিন্তু ‘রক্তকরবী’র সমাধানের দিকের চরিত্রসমূহ ভাবাত্মক, ব্যক্তিত্ববান দেহী তারা ততটা নয়— যতটা তারা ভাব-বিগ্রহ। নাটকের এই অন্তর্বিরোধের মাঝখানে বাস্তবের দিক থেকে এগিয়ে এসেছে বিশু পাগলা, আর ভাব-বিগ্রহের দিক থেকে এগিয়ে এসেছে নন্দিনী; তারাই নাটকখানাকে একত্র সংযোজিত করেছে। তথাপি যে ‘রক্তকরবী’র অভিনয়ে কেউ সাহসী হতেন না তার কারণ নাটকের রাজা-রঞ্জন-নন্দিনী এসব নাট্যচরিত্র তাদের সেই চেষ্টাকে পরাহত করত। রাজা-রঞ্জন-নন্দিনীর অর্থটাই বড় ব্যক্তিত্ব তট স্পষ্ট নয়। আর মঞ্চে যে রূপায়িত হবে তাকে নাটকের এই বাস্তব পরিবেশে ব্যক্তিত্বশূন্য হলে চলে না।৩
বলা যেতে পারে: রক্তকরবী-তে বাস্তববাদের আধারে কয়েকটি রূপক চরিত্র নিয়ে আসেন রবীন্দ্রনাথ। আগেই বলেছি, বাস্তববাদ কিছু শর্ত আরোপ করে, যা থেকে রবীন্দ্রনাথও রেহাই পান না। সুতরাং নাটক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে নন্দিনীকে আবার একটি ‘সাধারণ’ চরিত্র হিসেবেও দেখানোর দরকার পড়ে। পুরোপুরি রূপক চরিত্রর হলে অন্যদের সঙ্গে তাঁর কথা বলা সম্ভব ছিল না। তাই ফাগুলালকে বলতে হল, নন্দিনীকে আগে থেকে চিনতেন বিশু (“বিশুর বিপদ আজ ঘটে নি, এখানে আসবার অনেক আগে থাকতেই নন্দিনীকে জানে”)। রাজা ছাড়া অন্য চরিত্রর সঙ্গে কথা বলার সময় নন্দিনীকে রক্তমাংসর মানুষের মতো করে হাজির করতে হয়। সর্দার, অধ্যাপক, গোঁসাই আর পালোয়ানের সঙ্গে যে-নন্দিনী কথা বলেন, তার সঙ্গে নাটকের প্রথম অংশর নন্দিনীর মিল খুবই কম। দু-একটি সংলাপের দিকে তাকালেই ব্যাপারটি বোঝা যাবে।
নন্দিনী। তোমার কিরকম বোধ হচ্ছে, পালোয়ান?
পালোয়ান। বোধ হচ্ছে ভিতরটা ফাঁপা হয়ে গেছে। এরা কোথাকার দানব, জাদু জানে, শুধু জোর নয়, একেবারে ভরসা পর্যন্ত শুষে নেয়।— যদি কোনো উপায়ে একবার— হে কল্যাণময় হরি, আঃ যদি একবার— তোমার দয়া হলে কী না হতে পারে। সর্দারের বুকে যদি একবার দাঁত বসাতে পারি।
নন্দিনী। অধ্যাপক, ওকে ধরো তুমি, দুজনে মিলে আমাদের বাসায় নিয়ে যাই।
অধ্যাপক। সাহস করি নে নন্দিনী। এখানকার নিয়মমত তাতে অপরাধ হবে।
নন্দিনী। মানুষটাকে মরতে দিলে অপরাধ হবে না?
নন্দিনী কখনও রূপক আবার কখনও বাস্তব চরিত্র হওয়ায় বাস্তববাদের সাধারণ শর্তগুলি পূরণ হয় না। তাই গোটা নাটকে চোখে পড়ে তাঁর চরিত্রে নানা অসঙ্গতি। রক্তকরবী-র প্রথম ও শেষ অংশের নন্দিনীর সঙ্গে নাটকের মাঝের অংশর নন্দিনীর বিস্তর ফারাক থেকে যায়।
একই ব্যাপার ঘটে রঞ্জনের বেলায়। রঞ্জন যে একজন ‘মানুষ’, তা সর্দার আর মোড়লের কথাবার্তা মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দেন নাট্যকার।
সর্দার। না, এ পাড়ায় রঞ্জনকে কিছুতে আসতে দেওয়া চলবে না।
মোড়ল। ওকে দূরে রাখব বলেই বজ্রগড়ের সুড়ঙ্গে কাজ করাতে নিয়ে গিয়েছিলুম।
সর্দার। তা কী হল।
মোড়ল। কিছুতেই পারা গেল না। সে বললে, ‘হুকুম মেনে কাজ করা আমার অভ্যেস নেই।‘
এমনকি, রঞ্জনকে রাজার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যেও রবীন্দ্রনাথকে মেনে নিতে হল বাস্তববাদের শর্ত।
সর্দার। শোনো, ওকে বাঁধতে হবে না, রাজার ঘরে পাঠিয়ে দাও।
ছোটো সর্দার। ও তো রাজার ডাক মানতেই চায় না।
সর্দার। ওকে বলো গে, রাজা ওর নন্দিনীকে সেবাদাসী করে রেখেছে।
এত কিছু সত্ত্বেও পাঠক/ দর্শক রঞ্জনকে বাস্তব চরিত্রর বদলে রূপক বলেই ঠাওরান। তাঁদের এই ধারণা আরও জোরদার হল নাটকের শেষে নন্দিনীর দুটি সংলাপের জন্যে।
নন্দিনী। নিঃশব্দ নয়। মৃত্যুর মধ্যে তার অপরাজিত কণ্ঠস্বর আমি যে শুনতে পাচ্ছি। রঞ্জন বেঁচে উঠবে— ও কখনো মরতে পারে না!
ফাগুলাল। হায় রে নন্দিনী, সুন্দরী আমার! এইজন্যই কি তুমি এতদিন অপেক্ষা করে ছিলে আমাদের এই অন্ধ নরকে।
নন্দিনী। ও আসবে বলে অপেক্ষা করে ছিলুম, ও তো এল। ও আবার আসার জন্যে প্রস্তুত হব, ও আবার আসবে।
নন্দিনীর মতো সমস্যা তৈরি করেন রঞ্জনও। বাস্তববাদ আর রূপক সাহিত্যের ধারার সংঘাতই এর জন্যে আদত দায়ী।
অবশ্য সবচেয়ে বেশি গোলমাল হয় রাজাকে নিয়ে। জালের আড়ালে থাকা রাজা নিঃসন্দেহে একটি রূপক চরিত্র। কিন্তু পাঠক/ দর্শক তাঁকে রূপক বলে মেনে নিতে পারেন না, বিশেষ করে নাটকের শেষে যখন তাঁর মনের পরিবর্তন হয়। রক্তকরবী-তে বাস্তববাদী কাঠামো থাকায় রাজার আচরণে কোনও আকস্মিক পরিবর্তন দেখানো যায় না। তাই আগে থেকে তার জমি তৈরি করতে হয় রবীন্দ্রনাথকে। ব্যাপারটি বোঝানোর জন্যে চিকিৎসক-সর্দারের কথোপকথন তুলে দেওয়া হল:
চিকিৎসক। দেখলুম। রাজা নিজের ‘পরে নিজে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। এ রোগ বাইরের নয়, মনের।
সর্দার। এর প্রতিকার কী?
চিকিৎসক। বড়ো রকমের ধাক্কা। হয় অন্য রাজ্যের সঙ্গে, নয় নিজের প্রজাদের মধ্যে উৎপাত বাধিয়ে তোলা।
সর্দার। অর্থাৎ আর-কারো ক্ষতি করতে না দিলে, উনি নিজের ক্ষতি করবেন।
চিকিৎসক। ওরা বড়োলোক, বড়ো-শিশু, খেলা করে। একটা খেলায় যখন বিরক্ত হয়, তখন আর-একটা খেলা না জুগিয়ে দিলে নিজের খেলনা ভাঙ্গে। কিন্তু প্রস্তুত থাকো সর্দার আর বড়ো দেরি নেই।
মনে হয়, রাজা যেন সর্দারদের হাতের পুতুল। তাঁরা রঞ্জনকে মারতে চেয়েছিলেন, রাজা করলেনও তা-ই। কিন্তু ‘আর-একটা খেলা’ পেয়েও নাটকের শেষে ‘নিজের খেলনা’ ভাঙতে চান তিনি। খুঁতখুঁতে পাঠক/ দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগে: যদি ‘রোগ’-এর ‘প্রতিকার’ না-ই হয়, তাহলে রাজা কেন রঞ্জন (যদিও তিনি নিজের নাম বলেননি) আর কিশোরকে মারলেন? রূপক হিসেবে রাজার ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই কি রঞ্জনকে সরানোর দরকার পড়ল? রক্তকরবী-তে এসব প্রশ্নর কোনও জুতসই উত্তর পাওয়া যায় না। ফলে পাঠক/ দর্শক অসুবিধেয় পড়েন। অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায় বিশুর কথাতেও। বিশু কেন যক্ষপুরীতে এসেছেন— এ প্রশ্নর জবাবে দুবার দুরকম কথা বলেন তিনি। চন্দ্রা আর ফাগুলালের কাছে বিশু স্বীকার করেন, তিনি যক্ষপুরীতে আসেন ‘চর’ হয়ে। নন্দিনীর সঙ্গে কথাবার্তায় আবার বেরিয়ে আসে অন্য কারণ।
নন্দিনী। সেই অচেনার ধার থেকে এখানে যক্ষপুরীর সুড়ঙ্গ খোদার কাজে কে তোমাকে আবার টেনে আনলে।
বিশু। একজন মেয়ে। হঠাৎ তীর খেয়ে উড়ন্ত পাখি যেমন মাটিতে পড়ে যায়, সে আমাকে তেমনি করে এই ধুলোর মধ্যে এনে ফেলেছে; আমি নিজেকে ভুলে ছিলাম।
নন্দিনী। তোমাকে সে কেমন করে ছুঁতে পারলে।
বিশু। তৃষ্ণার জল যখন আশার অতীত হয় মরিচীকা তখন সহজে ভোলায়। তার পরে দিকহারা নিজেকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। একদিন পশ্চিমের জানলা দিয়ে আমি দেখছিলুম মেঘের স্বর্ণপুরী, সে দেখছিল সর্দারের সোনার চূড়া। আমাকে কটাক্ষে বললে, ‘ঐখানে আমাকে নিয়ে যাও, দেখি কত বড়ো তোমার সামর্থ্য।‘ আমি স্পর্ধা করে বললুম, ‘যাব নিয়ে।‘ আনলুম তাকে সোনার চূড়ার নীচে। তখন আমার ঘোর ভাঙ্গল।
এছাড়া, আরও কিছু অসঙ্গতি শম্ভু মিত্রর নজরে এসেছে। সেগুলির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি।
নাটকটি একটি দৃশ্যে সম্পূর্ণ, কোনও ছেদ নেই। এবং সেই একই স্থানে রাজাও আছে, সর্দারও আছে, আবার মজুর বা তার স্ত্রী এসে তাদের নিজেদের কথাও বলাবলি করছে। তারপর কতক্ষণের কাহিনী তারও কোনও হদিশ পাওয়া যায় না। কিশোরের কাজে যাবার কথা হয়, কিন্তু ফাগুলাল এসে বলে তাদের সবার ছুটি। গগনবাবুর [গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর] আঁকা বিশু ও নন্দিনীর ছবিতে রাত্রির চেহারা। আরও অনেক পরে নন্দিনী বলে— “দেখতে দেখতে সিঁদুরে মেঘে আজকের গোধূলি রাঙা হয়ে উঠল।…’’
এসব রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই ভেবে বুঝে করেছেন। কিন্তু কী ভেবে করেছেন? আমরা ভাবলাম, এটা হচ্ছে যক্ষপুরীর একটা সমগ্র চেহারা। এটা ঠিক কোনও একটা বিশেষ দিনের চেহারা নয়। অনেক বিশেষ দিনের একটা একত্রিত চেহারা। যদি হুবহু বাস্তবের চেহারা দিতে হয় তাহলে একটা বিশেষ দিনের কাহিনী হিসেবেই বর্ণনা করতে হয়, এবং তাতেও অনেক সময়ে জোর ক’রে প্রয়োজনীয় ঘটনার অবতারণা করতে হয়। কিন্তু সেই জোর করার কোনও প্রয়োজন ঘটে না যদি অনেকগুলি বিশেষ ঘটনা একত্রিত ক’রে একটি নির্ব্বিশেষ দিনের বর্ণনা করা যায়।৪
রাজা জালের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলে পাঠক/ দর্শকের সমস্যা আরও বাড়ে। বেশিরভাগ সময় ‘নেপথ্যে’ থাকায় রূপক হিসেবে তাঁকে কল্পনা করা গেছিল সহজে। কিন্তু শেষে নিজের বিরুদ্ধে লড়াই করতে রাজা সরাসরি হাজির হন দর্শকের সামনে। পড়া আর দেখার সময় এই জায়গাটি দু’ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। একে তো রাজা কীসের প্রতীক তা নিয়ে মতান্তর থাকেই, তার ওপর তিনি যখন নিজের সঙ্গে লড়াই করেন তখন পাঠকের অসুবিধে আরও এক ধাপ বেড়ে যায়। অংশটি একেক জন ব্যাখ্যা করেন একেক ভাবে। সমস্যা হয় নাটকের প্রযোজনার ক্ষেত্রেও। একটি আগাগোড়া রূপক চরিত্রকে দর্শকের সামনে কীভাবে আনা হবে— তা নিয়ে পরিচালকেরও ভাবনার অন্ত থাকে না। বহুরূপী ১৯৫৪-য় রক্তকরবী মঞ্চস্থ করার সময় রাজাকে সশরীরে দেখাতে গিয়ে শম্ভু মিত্র ও তাঁর দলকে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল।
রাজার পোষাক নিয়ে আমরা আকাশ পাতাল চিন্তা করেছি। এ রাজাতো ঘোড়ায় চড়া মুকুটপরা রাজা নয় যে চিরাচরিত প্রথায় রাজা সাজাবো। কি পোষাক দিলে রাজার ঠিক চেহারাটা প্রকাশ করা যায় কিছুতে ঠিক করা যায় না।— এ রাজা বিজ্ঞানের প্রতিমূর্তি— কিন্তু এ রাজা আবার পূজায় যায়, ধ্বজা পূজা। অবশেষে বহু ভেবে চিন্তে এবং প্রায় কোনো কূল না পেয়ে গরদের ধুতি পরিয়ে এবং গায়ে চাদর দিয়ে রাজাকে প্রকাশ করলাম। প্রথম দুটি অভিনয় এই পোষাকেই হল। তারপরের অভিনয় থেকেই সুরু হোলো রাজার পোষাক বদল, একটার পর একটা।… রাজার রূপসজ্জার অবস্থাও তাই। প্রথম কিছুদিন রাজার গোঁফদাড়ী কিছুই ছিল না— পরে জমকালো গোঁফদাড়ী এলো নতুন পোষাকের সঙ্গে সঙ্গে। আবার কিছুদিন পরে দাড়ী গোঁফ ত্যাগ করা হোলো— এখনও সেই অবস্থাই চলেছে, রাজার মুখে দাড়ীগোঁফ নেই। তাছাড়া আগে মঞ্চের আলোয় রাজাকে স্পষ্ট দেখা যেতো। আজকাল রাজার মুখে কোনো আলো দেওয়া হয় না।৫
অনেকটা একইরকম সমস্যা দেখা দেয় নন্দিনীর পোশাক নিয়েও। প্রথমে পাকাধানের রঙের শাড়ি পরানো হয়েছিল তাঁকে; পরে ‘প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব’-এ যাওয়ার সময় নন্দলাল বসুর পরামর্শে নন্দিনীর শাড়ির রং দাঁড়ায় কাঁচাধানের মতো। নাটকের অন্য চরিত্রর পোশাক নিয়ে ভাবতে শম্ভু মিত্রর বেশি সময় লাগেনি।৬ তার কারণ সকলেই প্রতিনিধিমূলক বাস্তব চরিত্র। যদিও এ বিষয়ে (আর অন্যান্য বহু বিষয়) অনেকেই বহুরূপীর পরিকল্পনার সঙ্গে একমত হতে পারেন না।
তিন
আগেই বলেছি, রবীন্দ্রনাথের রূপক নাটকগুলিকে ক্রমশ বাস্তববাদ বর্জনের নিরিখে দেখলে, রক্তকরবী-র স্থান হবে মাঝখানে। আবার সেই প্রসঙ্গে ফেরা যাক। গোড়ার কথাগুলির পুনরাবৃত্তি ছাড়া তাই উপায় নেই।
অনেক গল্প-কবিতা-উপন্যাস-নাটকেরই দুটি অর্থ থাকে— একটি বাইরের, আর-একটি ভেতরের। কোনো-কোনো সময় ভেতরের অর্থ পরিষ্কার বোঝা না-গেলেও সেটি যে আছে— তা অনুভব করা যায় সহজে। কিন্তু দেখার ব্যাপার, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুটি অর্থ থাকে দুটি স্তরে। একটিতে থাকে কাহিনী, যেখানে নানা চরিত্র আসে, অনেক ঘটনা ঘটে আর শেষে কিছু সমীকরণের সমাধান হয়। সবকিছুই ব্যাখ্যা করা যায় বাস্তববাদের সাহায্যে। ভেতরের অর্থকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়েও পাঠক শুধু কাহিনিতে মজে থাকতে পারেন। সে-ক্ষেত্রে তিনি স্রেফ বাইরের অর্থর স্বাদ পান। কিন্তু ভেতরের অর্থটি বুঝলেই লেখকের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয়। কাহিনীর মধ্যে কিছু সংকেতকে চিনে নিয়ে সেই বক্তব্যর নাগাল পান বিচক্ষণ পাঠক। সাহিত্যর ইতিহাসে এমন বহু নজির আছে, তারমধ্যে একটি— জন মিডিল্টন সিঙ (১৮৭১-১৯০৯)-এর একাঙ্ক নাটক সমুদ্রের যাত্রী (১৯০৪)। সেখানে একে-একে সমুদ্রে গিয়ে মারা যায় মারিয়া-র সবক’টি ছেলে, বেঁচে থাকেন শুধু তিনি আর তাঁর দুই মেয়ে। মারিয়া-র কাহিনি পড়ে/ দেখে জল আসে অনেকেরই চোখে। কিন্তু মারিয়া-র গল্প বলা সিঙ-এর অভীষ্ট নয়। নিয়তির হাতে মানুষ যে অসহায়— সে-কথাই প্রচার করতে চেয়েছেন তিনি। নিয়তির প্রতীক হিসেবে সিঙ বেছে নেন সমুদ্রকে (যার উপস্থিতি সারাক্ষণ টের পাওয়া যায়)। রূপকটি না-চিনলে সমুদ্রের যাত্রী-র ভেতরের অর্থ পরিষ্কার হয় না ঠিকই, তবু মারিয়া-র করুণ কাহিনি (নাটকের বাইরের অর্থ) পাঠক/ দর্শকের মনে দাগ কাটে।
রবীন্দ্রনাথের অন্য রূপক নাটকে, বিশেষ করে ডাকঘর (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২) ও মুক্তধারা (১৯২২)-য় অর্থর দুটি স্তর আছে। ডাকঘর-এ রাজদূত আর রাজকবিরাজের আসার মধ্যে কিছুটা অবাস্তবতার আভাস পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু যেহেতু সেখানে সব ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে অমলের কল্পনা সেইহেতু পাঠক/ দর্শকের মনে স্বেচ্ছায় অবিশ্বাস রোধ (willing suspension of disbelief)-এর ব্যাপারটি এসে পড়ে অনায়াসে। তাছাড়া, শেষ অংশর রূপকটি না-ধরা গেলেও নাটকের কাহিনিটি কোনও সমস্যা তৈরি করে না।৭ তাই ডাকঘর ছোটদের এত প্রিয়। অচলায়তন ও মুক্তধারা-য় বাইরের অর্থ খুবই পরিষ্কার। বাস্তববাদের প্রাথমিক শর্তগুলি দুটি নাটকেই বজায় থেকেছে। চরিত্র (যেমন, পঞ্চক, মহাপঞ্চক আর দাদাঠাকুর অথবা অভিজিৎ, বিভূতি ও ধনঞ্জয় বৈরাগী) বা ঘটনা (যেমন, অচলায়তন ধূলিসাৎ করা অথবা মুক্তধারার বাঁধ ভেঙে চুরমার করা) প্রতীকী হলেও কখনওই অ-বাস্তব ঠেকে না। ভেতরের অর্থ না-বুঝলে অথবা তা নিয়ে তর্ক বাধলেও, বাইরের অর্থ নিয়ে সকলে একমত হন।
এদিক দিয়ে দেখলে ওপরের সবক’টি নাটকের সঙ্গে রক্তকরবী-র ফারাক অনেকটাই। সেখানে রূপক চরিত্রগুলি অ-বাস্তব হওয়ায় ধন্দে পড়েন পাঠক/ দর্শক। বাইরের অর্থর নাগাল পেতেও তাই খটকা লাগে। অন্য রূপক নাটকের মধ্যে রাজা (১৯১০)-ও বেশ খানিকটা একইরকম। বাস্তববাদী কাঠামোয় ফাঁদা নাটকটিতে রাজা ছাড়া সকলেই বাস্তব চরিত্র। পরে রবীন্দ্রনাথ রাজা-র একটি ‘অভিনয়যোগ্য সংস্করণ’ [অরূপরতন (১৯২০)] তৈরি করলেও কোনও সুরাহা হয়নি। আসল সমস্যাটি থেকেই গেছে।৮ রাজা-র সীমাবদ্ধতা তিনি কাটিয়ে ওঠেন অচলায়তন আর মুক্তধারা-য়। খেয়াল করতে হবে, অচলায়তন-এ দৃশ্য বিভাজন থাকলেও মুক্তধারা-য় নেই। বাস্তববাদী কাঠামো ব্যবহার করলেও রবীন্দ্রনাথ যে ক্রমশ সেই বাতিল করার কথা ভাবছিলেন— এ থেকেই তা অনুমান করা যায়। রাজা-র ক্ষেত্রে যে-সমস্যাটি ছিল পরে অবশ্য সেটি আবার ফিরে আসে রক্তকরবী-তে।
রবীন্দ্রনাথের অ-স্বভাববাদী রূপক নাটকের খোঁজ শেষ হল রথের রশি (১৯৩২) আর তাসের দেশ (১৯৩৩)-এ। অবশেষে তিনি বুঝতে পারলেন, বাস্তববাদী কাঠামো থাকলে তার কিছু শর্ত মানতেই হবে। সেইজন্যে তিনি অ-বাস্তববাদী প্রেক্ষাপট ব্যবহার করলেন এই দুটি নাটকে। রাজা বা রক্তকরবী-তে বাস্তববাদ আর রূপক সাহিত্যের ধারার যে-সংঘাত চোখে পড়ে রথের রশি বা তাসের দেশ-এ তা অদৃশ্য হয়ে গেল। রূপক চরিত্রগুলিকে রক্তমাংসর মানুষের মতো করে দেখানোর আর কোনও দায় থাকল না নাট্যকারের। বাস্তববাদ বজায় থাকল কি না, তা নিয়ে পাঠক/ দর্শক কেউ মাথা ঘামালেন না।
টীকা
১. রক্তকরবী-র সব উদ্ধৃতির জন্যে রবীন্দ্র-রচনাবলী, ষষ্ঠ খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ১৯৮৫ দ্র.।
২. ‘রঙ্গমঞ্চ’, রবীন্দ্ররচনাবলী, তৃতীয় খণ্ড, সুলভ সংস্করণ, বিশ্বভারতী, ১৩৯৩ ব., পৃ ৬৭৯-৮১ দ্র.। এছাড়া,’’অন্তর বাহির’ (১৩১৯ ব.), পথের সঞ্চয়, রবীন্দ্র রচনাবলী, জন্মশতবার্ষিক সংস্করণ, দশম খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ১৩৬৮ ব., পৃ. ৮৯৬-৯৭ দ্র.।
৩. গোপাল হালদার, “রক্তকরবী’র রূপায়ণ”, বহুরূপী, সংকলন ৪০, জয়ন্তী সংখ্যা ২, এপ্রিল ১৯৭৩, পৃ. ৬৬। প্রবন্ধটি আগে বেরিয়েছিল নতুন সাহিত্য, শ্রাবণ ১৩৬১ ব (১৯৫৪)-এ।
৪. শম্ভু মিত্র, ‘রক্তকরবী প্রসঙ্গে’, বহুরূপী, প্রথম সংখ্যা ১৯৫৫, পৃ. ২৪-২৫।
৫. অমর গাঙ্গুলী, ‘আমাদের রবীন্দ্র নাট্যাভিনয় প্রসঙ্গে’, বহুরূপী, দ্বাদশ ও রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী সংখ্যা, মে ১৯৬১, পৃ. ২৩-২৪।
৬. ঐ, পৃ. ২২ ও ২৯ দ্র.।
৭. ডাকঘর সম্বন্ধে টমসন-এর মতামত মনে রাখার মতো। Edward Thompson, Rabindranath Tagore: Poet and Dramatist, London: Oxford University Press, 1948 (first published 1926), pp. 213-15 দ্র.।
৮. টমসন-ও রাজা-র কিছু ‘দোষ’ উল্লেখ করেছেন। ঐ, pp. 211-12 দ্র.।