Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

তোমাদের সংগ্রামের দ্রুত নিষ্পত্তি হোক

আবার আমি চিরশ্রী বলছি—

এবারে প্রথমে প্রকাশ্যেই মেয়েদের জন্য, তাদের সঙ্গেই কথা বলতে চাই। তোমরা আত্মনির্ভর হও মা। তোমরা পবিত্র যজ্ঞ-অগ্নিসম্ভূতা, যাজ্ঞসেনী কৃষ্ণা, কেন তোমরা সাধারণ পশু-মানবের ইচ্ছার অধীন হবে?

এই পরিবেশে আমি তোমাদের একটা অতি আধুনিক, নিরাপদ ও ‘সম্পূর্ণ আইন-সম্মত’ আত্মরক্ষার অস্ত্র পাঠাতে চাই— সেটা হল, ‘পেপার স্প্রে গান’। দিল্লিতে এটা ‘খুলে আম’ বিক্রি করা হয়। ভারতে এটা সম্পূর্ণ ‘লিগ্যাল’। আমার মেয়েরা যখন স্কুল পাশ করে বিবিধ ‘চ্যালেঞ্জিং’ পড়ার জন্য বাড়ির বাইরে যায়, তখন তাদের হাতে আমি নিজে তুলে দিয়েছিলাম। এখন তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

তোমরা তো ইরানি বালিকা নও, ‘ফেলে দেওয়া’, ‘কুড়িয়ে নেওয়া’-টা তোমাদের অদৃষ্ট হতে পারে না। নিজের ভাগ্য এবং ভবিষ্যৎ তোমাদের নিজেদের হাতে রাখতে হবে বইকি, যাতে কোনও অশালীন হাত তোমাদের অমর্যাদা করতে গিয়ে শিহরিত হয়ে ওঠে, এমন ব্যবস্থাই নিতে হবে। এই আধুনিক আত্মরক্ষার অস্ত্রটি আমি তোমাদের কাছে পাঠাতে চাই। তোমাদের সংখ্যা আমার অজানা, তবু আন্দাজে পাঠালেই তোমরা সম্মিলিতভাবে ব্যবহার করতে পারবে। আর একবার আক্রমণকারীরা জানলেই আর সহজে তোমাদের সামনে আসতে ভীতই হবে। বাধ্যতামূলক সংযম যাকে বলে।

দ্বিতীয় কথা, এটার সদিচ্ছা তো আমার আছে, তবে কতটা কার্যকর করা যাবে, তাতে আমার সন্দেহ আছে। এতে ছেলে ও মেয়েরা যে আসন্ন শীতের শিশিরস্নাত ভোরে রোগাক্রান্ত হতে চলেছ, তাই ভাবছি। কিছু হালকা অথচ শক্ত কাঠের একটা অস্থায়ী নীচু মঞ্চ যদি গড়া যায়, তার দেওয়াল না থাকলেও মাথার ওপরে একটা ছাদ থাকবে, এটাই আমি চাই। তাহলে এই গৃহহীন, ধূলিলুণ্ঠিত ছেলেমেয়েরা একটা অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর বাসস্থান পায়। তোমাদের সংগ্রামের দ্রুত নিষ্পত্তি হোক, তাই চাই। কিন্তু সেই সঙ্গে বাস্তবিকতা মেনে একটা নিরাপদ ব্যবস্থার চিন্তাও আসছে মনে।

কলকাতা অস্থায়ী ধর্নামঞ্চ অনেক দেখেছে, তাদের আবার পেছনে সিঁড়িও থাকত। এখানে কোনও গোপনীয়তা থাকবে না, সব খোলাখুলি, মাটির কাছাকাছি। কেবল, মাটির ক্লেদ বর্জিত বলে তোমাদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর হবে। আশা করি এ বিষয়ে প্রতিপক্ষের কোনও প্রতিবাদ উঠবে না। কারণ, কে বলতে পারে ভবিষ্যতে তাদেরও হয়তো এই জাতীয় প্রয়োজন পড়ে যেতে পারে! ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে যে— নূতন বলে কিছু নেই, পুরাতনই নানা বেশে চক্রমণ করে!

আজ এই পর্যন্ত। এই আর্থিক দায়টা যদি তোমরা আমাকে নিতে দাও, তাহলে গৌরব বোধ করব। ধুলার জিনিস ধুলাতেই পড়ে থাকবে। যাবার সময়ে, খালি হাতে যাব, কীসের আর এই পিছটান? তোমরা ভাল থাকবে। থাকতেই হবে। মনে রেখো তোমরা অমৃতের সন্তান, তোমাদের ওপরে বিধাতার আশীর্বাদ বর্ষিত হচ্ছে।

সব শেষে, নতশিরে আমার ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি— কলকাতার জনগণ মূক, বধির বা কবন্ধ নন। কেবল তাঁরা ভীত, লজ্জিত ও সন্ত্রস্ত, আসন্ন ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি ফেলে সুপ্রভাতের প্রতীক্ষা করছেন। তাঁদের কাছে আমার ক্ষমা প্রার্থনা।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গাপুজো: অতীত দিনের স্মৃতি

মহালয়া দিয়ে হত পুজোর প্রকৃত সূচনা। শরতের ভোররাতে আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটির শ্রোতা অন্তহীন, এবং এখনও তা সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও অনুষ্ঠানটির শ্রোতা অগণিত। আমাদের শৈশবে বাড়ি বাড়ি রেডিও ছিল না, টিভি তো আসেইনি। বাড়ির পাশে মাঠে মাইক থাকত, আর প্রায় তিনশো গজ দূরের এক বাড়িতে মাউথপিস রাখা থাকত। সেখান থেকে ভেসে আসত মহালয়ার গান, ভাষ্য।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গাপূজা, মূর্তিপূজা: দেশে দেশে

আসলে বাঙালি নিরন্তর এক অনুসন্ধানী, ব্যতিক্রমী, অভিনব-চিন্তক, ক্রমবিকাশপ্রিয় ও অন্তিমে রহস্যময় জাতি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান আস্তিক নাস্তিকে মিলিত এই জাতি সঙ্ঘারাম আর মিনার, ধ্বজা ও ওংকার, জগমোহন-মিরহাব-স্তূপ-ভস্মাচ্ছাদিত এক জাতি, নিজ মুদ্রাদোষে নয়, মু্দ্রাগুণে আলাদা।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শারদোৎসব: বাংলাদেশে

দুর্গাপুজো কেবল ভক্তের জন্য-ই নয়, ভাল লাগাদের জন্যও। যে ভাল লাগা থেকে ভাই গিরীশচন্দ্র সেন কোরানশরীফ বাংলায় অনুবাদ করেন, অদ্বৈত আচার্য যবন হরিদাসের উচ্ছিষ্ট নিজহাতে পরিষ্কার করেন, স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম-তনয়াকে কুমারীপুজো করেন! দুর্গা বাঙালির কাছে, ধর্মনির্বিশেষে আগ্রহের, যেহেতু এই দেবী পরিবারসহ আসেন, আর সঙ্গে নিয়ে আসেন কাশফুল আর শিউলি। তাই তো সনাতন রামপ্রসাদ, খ্রিস্টান মাইকেল, ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথ এবং মুসলমান কাজী নজরুল দুর্গাকে নিয়ে কলম না ধরে পারেননি!

Read More »
কাজী তানভীর হোসেন

ধানমন্ডিতে পলাশী, ৫-ই আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কয়েকদিন ধরে যা ঘটেছিল, তা শুরু থেকেই গণআন্দোলনের চরিত্র হারিয়ে একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরিণত হয়েছিল। আজ আমরা কার্যক্রম দেখেই চিনে যাই ঘটনাটি কারা ঘটাচ্ছে। আগুন আর অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করার স্বভাব রয়েছে বিএনপি-জামাত ও রোহিঙ্গাদের। তারা যুক্তিবুদ্ধির তোয়াক্কা করে না।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিলাম, যাঁকে খুব সঙ্গত কারণেই ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ বলা হয়। পেয়েছি প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বার্থত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী। এবং জ্যোতি বসুর মতো সম্ভ্রান্ত, বিজ্ঞ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখর কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁদের সকলের চেয়ে অধিক ছিলেন বুদ্ধদেব। কেননা তাঁর মতো সংস্কৃতিমনা, দেশবিদেশের শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র নাটক সম্পর্কে সর্বদা অবহিত, এককথায় এক আধুনিক বিশ্বনাগরিক মানুষ পাইনি। এখানেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনন্যতা।

Read More »