Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মণিপুর: যে মুলুকে প্রথম উড়েছিল তেরঙ্গা

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবসের প্রায় ৪০ মাস আগে প্রথমবার ভারতীয় ভূখণ্ডের যেখানে উড়েছিল স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা, তা হল ইম্ফলের নিকটে অবস্থিত মৈরাঙ। এই স্থানটি মণিপুর রাজ‍্যে অবস্থিত। ২০২২-এর ১৫ অগাস্ট দেশের স্বাধীনতা ৭৬ বছরে পা রেখেছে। এই আবহে নেতাজি ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের এক অন্যতম কর্মস্থল সেই মণিপুর ভ্রমণের পরিকল্পনা করে ফেলাই যায়। বলে রাখি, মণিপুর ভ্রমণের সেরা সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস।

উত্তর-পূর্ব ভারতের এক প্রান্তে অবস্থিত সবুজে সবুজ ক্ষুদ্র রাজ্য মণিপুর। এই রাজ্য যেন প্রকৃতির আশীর্বাদপ্রাপ্ত, তার অনন্য অনুপম সৌন্দর্যের জন্য। ‘আকাশতলে মেশা ধূম্র পাহাড়’ বেষ্টিত ডিম্বাকৃতি আকারের উপত্যকাগুলিকে দেখে মনে হয় যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক অসাধারণ শিল্পকর্ম। মণিপুরকে সৃষ্টি করতে প্রকৃতি পাহাড় ও বনাঞ্চলকে একত্রিত করেছেন। পর্যটন গন্তব্য হিসেবে মণিপুর এখনও প্রচারের ছটায় তেমনভাবে আসেনি। বিশ্বের মানুষ এখনও ঝাঁকে ঝাঁকে মণিপুর ভ্রমণ না করায় এই রাজ্যর অনেক দর্শনীয় স্থানে তাই এখনও নির্জনতার প্রশান্তি রয়েছে।

লোকটাক হ্রদ।

মণিপুরের উল্লেখ আছে মহাভারতেও। তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন মণিপুর রাজ্যে পরিভ্রমণে গিয়ে গন্ধর্ব রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিয়ে করেন। অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদার একমাত্র সন্তান বভ্রুবাহন মণিপুরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। মণিপুরে গন্ধর্বদের পরে আর্য-ক্ষত্রিয়দের শাসন শুরু হয়। অর্জুন-চিত্রাঙ্গদার সেই প্রেমকাহিনি নিয়ে নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সংস্কৃতিপ্রেমী অনেক বাঙালিরই মণিপুর রাজ্যের সঙ্গে পরিচিতি রবি ঠাকুরের চিত্রাঙ্গদার মাধ্যমে।

প্রাচীন ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, মনোরম প্রকৃতি, আবহাওয়া, সবুজ বনানী, মেঘলা পাহাড়, স্বচ্ছ জলের ঝরনা, সুগন্ধি চায়ের বাগান, জিভে জল আনা খাবার— সব কিছু মিলিয়ে পর্যটকদের পছন্দের পসরা মেলে আছে মণিপুর। চিত্রাঙ্গদার মণিপুর, সাবিত্রী হেইন্সামের মণিপুর, ইলম শর্মিলা চানুর মণিপুর, মেরি কমের মণিপুর! ভারতবাসী এই নামগুলোর সঙ্গে ভীষণভাবে পরিচিত। সেই সঙ্গে পাহাড়, গুহা, হ্রদ ও নদী— সব মিলিয়ে প্রকৃতির অক্লান্ত দানে ভরা মণিপুরকে একটি লুকানো মণি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

মৈরাঙ উপত্যকা।

মণিপুর ভ্রমণ শুরু করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল রাজধানী ইম্ফলকে মধ্যমণি করে। রাজধানী এবং প্রধান শহর হলেও ইম্ফলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কোনও তুলনা হয় না। রাজ্যের কেন্দ্রে অবস্থিত এই শহর ভারতের প্রাচীন নগরীগুলির মধ্যে একটি। রাজধানীর মধ্যে যে এত গাছপালা, গভীর জঙ্গল আর বিস্তীর্ণ তৃণভূমি থাকতে পারে তা ইম্ফলে না এলে বুঝতে পারা যায় না।

ইউম্পাল থেকে ইম্ফল নামটি এসেছে, যার অর্থ ‘অনেক গ্রামীণ জমি’। আবার কিছু ভৌগোলিকদের মতে, মণিপুরের দীর্ঘতম নদী ইম্ফল তুরেল-এর নামেই ইম্ফলের নাম হয়েছে। যাই হোক, ইম্ফলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল লোকটাক বা লোকতাক (Loktak) হ্রদ। এটি আসলে একটি স্বাদু জলের হ্রদ। তবে লোকটাক শুধু মণিপুরের নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের‌ও সর্ববৃহৎ মিষ্টি জলের হ্রদ৷ লোকটাক তার প্রকৃতিবৈশিষ্ট‍্যে বিশ্বের অন্যতম স্বতন্ত্র হ্রদ। লোকটাক শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল ‘Lok’ অর্থাৎ স্রোত/ ধারা এবং ‘Tak’ অর্থাৎ শেষ। সুতরাং লোকটাক শব্দের অর্থ হল, যেখানে একাধিক নদী এসে তাদের যাত্রা শেষ করে বা একত্রিত হয়।

লোকটাক হ্রদের শালুক।

ইম্ফল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই লোকটাক লেক। এই হ্রদের এক অংশে রয়েছে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ন্যাশনাল পার্ক কইবুল লামজা (Keibul Lamjao National Park)। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার লম্বা এবং ১৩ কিলোমিটার চওড়া এই হ্রদ বর্ষা ও শরৎকালে ভরে থাকে পদ্মফুলে। মণিপুর রাজ্যের মইরাং এলাকাতে অবস্থিত এই হ্রদকে তাই আজকাল গোলাপি হ্রদও বলা হয়। এই হ্রদ তার জীববৈচিত্র্যের জন্যও পরিচিত। নানা ধরনের জলজ প্রাণী, এবং বিরল কিছু পাখিও দেখা যায় এখানে। আর এই হ্রদের মধ্যেই যে ভাসমান পার্ক আছে, তা বিলুপ্তপ্রায়, মণিপুরী ‘brow-antlered deer’ সাঙ্গাই-এর বিচরণ ক্ষেত্র। এছাড়া ইন্ডিয়ান পাইথন ও নাচুনি হরিণও এখানে সংরক্ষণের আওতায় রয়েছে। ভাসমান দ্বীপের দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত সবুজ আর হলুদ লম্বা লম্বা ঘাসে ঘুরে বেড়ায় এই ‘নাচুনি হরিণ’। তাদের এই চঞ্চল গতিবিধি দূর থেকে অনুসরণ করা এক মনে রাখার মত অভিজ্ঞতা।

লোকটাক হ্রদের মধ্যে গড়ে ওঠা বড় তিনটি দ্বীপের একটি সেন্দ্রা। এটি মণিপুরের বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় পর্যটনক্ষেত্র। এই দ্বীপটিকে লোকটাক হ্রদের জলের মধ্যে থেকে উত্থিত এক পর্বতশৃঙ্গের মত দেখতে লাগে। নবদম্পতিরা বিবাহের পরে সেন্দ্রা দ্বীপের বাংলোতে মধুচন্দ্রিমা করতে আসেন, তাই একে ‘কাপল আইল্যান্ড’-ও বলে। এখানে রয়েছে পর্যটক বাংলো এবং ওয়াচ টাওয়ার। এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা যায় দিগন্তবিস্তৃত উজ্জ্বল সবুজ ভাসমান ঘাসজমি।

লোকটাক হ্রদে ‘ফামশাং’।

লোকটাক হ্রদের বুকে ভাসমান জৈবপদার্থ, গাছপালার ওপর তৈরি হয় ‘ফামদি’ ঘাস। স্থানীয় ভাষায় যার নাম ‘ফামশাং’। এই ফামশাং দিয়েই তৈরি লোকটাকের ভাসমান দ্বীপ। এসব ভাসমান দ্বীপ বা দ্বীপের বিভিন্ন অংশগুলোকে বলা হয় ফুমদি। এই ফুমদিগুলোর কিছু কিছু গোলাকার, আবার কিছু আয়তাকার। ফুমদিতে ছোট ছোট চালাঘর তৈরি করে জেলে জাতির মানুষরা বসবাস করেন। মৈরাঙ হয়ে লোকটাকের মধ্যে একটি সরু ভূখণ্ড প্রবেশ করেছে, যাতে গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম, নাম ‘থাঙ্গা’।

লোকটাকের দৃশ্যপট দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত বিচিত্রতায় লোকটাকের শোভা পরিবর্তিত হতে থাকে। লোকটাকের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হল নৌকা। প্রায় প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে একটি করে ডিঙি নৌকা বাঁধা থাকে। নৌকা ছাড়া এখানে জনজীবন প্রায় কল্পনাতীত। এখানে বসবাসকারী মৎস্যজীবী মানুষদের সন্তানসন্ততিদের পড়াশুনো করার জন্য এই ভাসমান দ্বীপেই প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তবে এ এক অন্যরকম জীবনব্যবস্থা, যেখানে স্থায়ী বসবাস বলে কিছু নেই। কোনও এক দমকা হাওয়া, ঘূর্ণিঝড় বা কালবৈশাখীতে ভেঙে যেতে পারে ঘরবাড়ি। লোকটাকের জনজীবনও এমন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত। তাদের ঘরবাড়িও সেভাবেই তৈরি করা। তবে লোকটাকের বিশেষ বিষয় হল, হ্রদের সীমানা নির্দিষ্ট হলেও লোকটাকের মধ্যে অবস্থিত ফুমদিগুলোর ওপর থাকা চালার ঘরবাড়িগুলোর অবস্থান মোটেও স্থায়ী নয়। জলের সঙ্গে ভেসে ভেসে বাড়িগুলো বিভিন্ন জায়গায় দিক পরিবর্তন করতে থাকে প্রতিনিয়ত।

সেন্দ্রা দ্বীপ।

শীতের সময় লোকটাকে বসে যেন ভিনদেশি পাখিদের মেলা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লোকটাকে ভিড় করে নানান জাতের পরিযায়ী পাখি। পাখির কিচিরমিচির এবং হ্রদের ওপর উড়ে যাওয়া পাখির ঝাঁকের দৃশ্য মনোরম এক অনুভূতি জাগায়। হ্রদের ফিরোজা রঙের জলে ভাসে পর্যটকদের বোট। জলের ভেতরে খেলা করে মাছেদের দল। হ্রদের জলে আছে প্রায় ৫৪ প্রজাতির মাছ এবং প্রায় ২৫ প্রজাতির উভচর প্রাণী। বর্তমানে ২৮৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে এই লোকটাক লেক রামসার সংরক্ষণের আওতায় ‘দ্য ওয়েটল্যান্ড অফ ইন্টারন্যাশনাল ইম্পরিয়েন্স’ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

ইতিমধ্যে ফুমদি-র অভিজ্ঞতা উপভোগ করার জন্য এখানে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ভাসমান হোমস্টে। এখানকার জনজীবন ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে কাছ থেকে উপলব্ধি করার জন্য যা অত্যন্ত মানানসই। মোটামুটি স্বল্প মূল্যেই এসব জায়গায় থাকা বা খাওয়ার বন্দোবস্ত হয়ে থাকে। নৌকাভ্রমণ লোকটাকের প্রধান ও মূল আকর্ষণ। এখানে ঘোরার শ্রেষ্ঠ সময় বিবেচনা করা হয় শীতকালকে। সৌন্দর্যমণ্ডিত পরিবেশের পাশাপাশি প্রতিকূল পরিবেশে উপজাতি অধিবাসীদের কঠিন জীবনযাপন দেখতে পাওয়াও এই লোকটাক ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ।

ভিনদেশি পাখিদের মেলা।

এবার আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়, অবশ্যদর্শনীয় INA Martyrs Memorial-এর কথা। ইম্ফলের কাছে মৈরাঙয়ে অবস্থিত INA Martyrs’ Memorial Complex ভারতবর্ষের স্বাধীনতা স‌ংগ্রামের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্মারক ভাণ্ডার। এখানেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৪-এর ১৪ এপ্রিল ভারতীয় জাতীয় সেনার কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে নেতাজির প্রত‍্যক্ষ ভূমিকা ছিল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কর্তৃক স্বাধীনতার সিংহদ্বার হিসেবে মৈরাঙ স্বীকৃতি লাভ করেছিল। বর্তমানে এই কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে নেতাজির একটি মূর্তি রয়েছে আর সংলগ্ন মিউজিয়ামের সংগ্রহে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব‍্যবহৃত বহু অস্ত্রশস্ত্র, গুরুত্বপূর্ণ চিঠি, নথিপত্র, ব‌ই, দলিল, পাণ্ডুলিপি, মানচিত্র। এটি তামেংলং-এ অবস্থিত।

এবার আসা যাক মণিপুরের আরেকটি দর্শনীয় স্থান Tharon Cave বা Uluan Cave-এর কথায়। ট্রেকিং ও অভিযান-প্রিয় পর্যটকদের জন্য ৬৫০ মিটার লম্বা উত্তর ভিয়েতনামের Hovnanian সংস্কৃতির পরিচয়বাহী এই গহ্বর খুবই আকর্ষণীয়। প্রতি বছর মণিপুর সরকারের পর্যটন বিভাগ এখানে পর্যটকদের জন্য অভিযানের আয়োজন করে।

INA Martyrs’ Memorial Complex.

মণিপুরের Dzukou Valley এবং Leimaram Waterfall যেন অনাঘ্রাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সারল্যে, পর্যটকদের মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয়। পাখিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গ হল মণিপুরের Ukhrul শহরের কাছে অবস্থিত Shirui Kashung Peak। Tamenglong-এর গভীর অরণ্যে slow loris, লেঙ্গুর, সম্বর, হগ ডিয়ার এবং চিতারও দেখা পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে Bar-backed pheasant ও বিরল প্রজাতির Tragopan পাখির দেখা মেলে। পাহাড়ি নদী ও ঝোরা দিয়ে ঘেরা এই ধাপ অঞ্চলে Shirui লিলি ফুল ফুটে জায়গাটিকে ভাষায় অবর্ণনীয় এক মনোরম সৌন্দর্যের উৎসস্থল হিসাবে প্রকাশ করে। মণিপুরের Tamenglong-কে হর্ণবিলের মুক্তাঞ্চল বলে। হর্নবিলের দেখা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে বহু দুষ্প্রাপ‍্য অর্কিডেরও দেখা মেলে।

থৌবল থেকে ইকপ হ্রদ, ওয়েথাউ হ্রদ, লৌসি হ্রদ, খোঙ্গিয়াম ওয়ার মেমোরিয়াল, পিপলস্ মিউজিয়াম দেখে নেওয়া যায়। উরখুলে গেলে সেখানে ঘুরে দেখা যায় খায়াং পার্ক, শিরুই কাশুং শৃঙ্গ, কোচুই ফুং হ্রদ, খাংখুই গুহা, শিরুই কাশুং, হংডুং মাংভা গুহা, নিল্লাই চা বাগান।

সেন্দ্রা দ্বীপ।

মণিপুরের প্রায় ৮০ শতাংশ স্থানই ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। সেনাপতি স্থানটি সেইরকমই এক জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কোনও তুলনা হয় না। এখানে গেলে মাও, ইয়াংখুলেন, জুকোউ উপত্যকা, লিয়াই পুরুল, মারাম খুল্লেন, মাখেল গুহা, সাদু চিরু ঝরনা অবশ্যই দর্শনীয় তালিকায় রাখতে হবে।

এবার আসি মণিপুরের বিশ্ববিখ্যাত বাজার ইমা কেইথেল, অর্থাৎ মায়েদের বাজার। মানে এই বাজারটি পরিচালনা করেন শুধুমাত্র মহিলারা। সব ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মহিলারা এই বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসেন। প্রায় তিন হাজার মহিলা ব্যবসায়ী এই বাজারে ব্যবসা চালান। সারিবদ্ধভাবে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে এখানে কেনাবেচা হয়। খাবার, হস্তশিল্পের পণ্য, গৃহস্থালীর জিনিস থেকে শুরু করে সবই মেলে এখানে। মহিলা চালিত এই বাজারের সুনাম রয়েছে বিশ্বজুড়ে। বহু বিদেশি পর্যটক শুধু এই বাজারের টানেই এখানে বেড়াতে আসেন। নারীশক্তির এক বিশাল উদাহরণ এই ইমা কেইথেল বা মায়েদের বাজার। সরকারিভাবে এই বাজারের প্রতিষ্ঠা হয় ব্রিটিশ আমলে। সালটা ১৯৩৯। সেই বাজার এখনও চলছে রমরমিয়ে। যদিও স্থানীয়দের দাবি, এই বাজারটি চলছে সেই সপ্তদশ শতক থেকেই।

সাদু চিরু জলপ্রপাত।

মণিপুরে শুকনো মাছ ও মাংসের কিছু সাবেকি পদ অত্যন্ত সুস্বাদু। এখানকার বিখ্যাত খাবারগুলি হল এরোম্বা, উমোরোক, সিংজু, চামথং, মোরোক মেটপা, ওক থংবা ইত্যাদি। কেনাকাটার জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান হল এই মণিপুর। বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা তাঁত ভালবাসেন। মণিপুর রাজ্য তার বিশেষ তাঁতবস্ত্র এবং অন্যান্য ঐতিহ্যগত হস্তনির্মিত পণ্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য আছে, যেগুলি ছাড়া মণিপুরে কেনাকাটা অসম্পূর্ণ রয়ে যায় তাদের মধ্যে অন্যতম মৈরাঙফি নকশার চাদর, সিল্কের শাড়ি, সুতির শাড়ি, সাবেকি ওড়না, কম্বল, শাল, বাঁশের তৈরি পণ্য, কাগজ দ্বারা নির্মিত পণ্য, হাতির দাঁতের জিনিস, পুতুল, গয়না ইত্যাদি।

বিমান, রেল এবং সড়কপথে মণিপুর পৌঁছনো যায়। মণিপুরের রাজধানী শহর ইম্ফলে একটি বিমানবন্দর রয়েছে। ইম্ফল বিমানবন্দর দিল্লি, কলকাতা এবং গুয়াহাটির মত প্রধান ভারতীয় শহরগুলির সঙ্গে যুক্ত। ভারতের উত্তর-পূর্বের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং এই শহরে ভারতীয় বিমানের অনবরত আনাগোনা রয়েছে। মণিপুর রাজ্যের একটি রেল স্টেশন হল মোদপুর। এছাড়াও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর যেমন, গুয়াহাটি, ডিমাপুর এবং শিলচর রেল স্টেশন থেকে সড়কপথে মণিপুর পৌঁছনো যায়।

মণিপুর ভ্রমণের বিষয়ে আরও তথ‍্য পেতে যোগাযোগ করা যায়: Manipur House, 26, Rowland Rd, Rowland Row, Ballygunge, Kolkata, West Bengal 700020।

ছবি: লেখক
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
স্বপ্না অধিকাবরী
স্বপ্না অধিকাবরী
2 years ago

ভীষন ভালো লাগলো, গর্ব বোধ হচ্ছে

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »