Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ভোটযুদ্ধ ও গণতন্ত্র হত্যা

বৃদ্ধ মানুষটি কেমন যেন নিস্পন্দের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর ঘরে গিয়ে মলিন বিছানায় বসলেন। কানে আসছে তখনও… ‘অমর রহে, অমর রহে…।’ ‘শহিদ’ হয়েছে পাড়ার দুর্ধর্ষ দুষ্কৃতী তার দলের দোস্তদেরই হাতে, দাপুটে নেতার নির্দেশে, দলীয় কোন্দলের জেরে। সেই ‘মহান শহিদ’-কে ফুলের মালায় সাজিয়ে শোভাযাত্রা বেরিয়েছে রাস্তায়! চলছে স্লোগান— ‘শহিদ… অমর রহে।’ বৃদ্ধের দুচোখে জলের ধারা নামল বহু পরে। তারপর তিনি যেন সম্বিত ফিরে পেলেন। দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা দেশবরেণ্যদের ছবিগুলো নামিয়ে ধুলো মুছে যেন আদর করলেন। তারপর খাটের নিচ থেকে পুরনো রংচটা টিনের বাক্স বের করে সেগুলোকে সেটির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তোমরা এখন এখানেই থাকো।’ যেন তাঁদেরকে তিনি এমন ঘটনার সাক্ষী হওয়া থেকে আড়ালে রাখতে চাইলেন। সে কর্মটি সারা হলে নির্বিরোধী মানুষটি আবার শান্তি ফিরে পেলেন নিজের মনে। নিষ্ঠুর বাস্তবের এমন কাহিনিরূপ পড়েছিলাম একালের গল্পলেখকের লেখায়। ক্রমশ নিকটবর্তী হয়ে আসা ভোটযুদ্ধের কথা ভেবে আমারও যেন একই অবস্থা হয়েছে! শুনতে পাচ্ছি স্লোগান— শহিদ গণতন্ত্র অমর রহে। অমর রহে! অমর রহে!

ভোটযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের শব

গণতন্ত্র বহু বছর আগে শহিদ হয়েছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটিতে। আর তার শবদেহ নিয়ে আমরা শোভাযাত্রা করে চলেছি যেন অনন্ত বছরকাল! সেই সঙ্গে স্লোগান তুলছি— গণতন্ত্র অমর রহে। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কোনও রাজনৈতিক দলের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে সে কথা আমার কানে এমন স্লোগান হয়েই বাজে। কেন? মনে হয়, গণতন্ত্র যদি বেঁচে থাকত তাহলে ‘শাসক’, ‘ক্ষমতা’, ‘দখল’, ‘আমরা’, ‘ওরা’ শব্দগুলো গণতন্ত্রের (আসলে দলতন্ত্রের) ধ্বজাধারীদের মুখে শোভা পেতে পারত না কোনওমতেই। নির্বাচনে ‘দখল’ নেওয়াকে ঘিরে জয়-পরাজয়ের ফলাফল ঘোষিত হতে পারত না। দখল নেওয়ার জন্য পরিকল্পিত ভোটযুদ্ধে বোমা-গুলি-আগুন ছুটত না দুষ্কৃতীদের হাতে। এই যুদ্ধে জয়ের আনন্দে মাত্রাতিরিক্ত উল্লাস আর পরাজয়ের জ্বালায় বাক্যবাণ ব্যবহার করার চিত্র উজ্জ্বল হয়ে উঠত না সংবাদমাধ্যমের পাতায় ও গণমাধ্যমের পর্দায়। ফলাফলকে ঘিরে হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটত না! অথচ সাম্প্রতিককালের নির্বাচন প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দেয় ‘গণতন্ত্র’ বলতে আজ এসবকেই বোঝানো হয়। দলাদলির নামে হিংসা ও রক্তপাত ঘটিয়ে একদল ‘জয়’ কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের ফুলঝুরি ঝরায় মুখে। অন্যদিকে ভিন্নদল পরের বার একই পদ্ধতিতে জয়ের মুখ দেখার জন্য মুষ্টিবদ্ধ করে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণের পথ অবলম্বন করে। চলছে এই খেলা বহুবছর ধরে। ইতিমধ্যে গণতন্ত্রকে এভাবে যে তারা শবাধারে ঢুকিয়ে ফেলেছে তা বুঝতে পারছে না অথবা বুঝেও অবুঝ হয়ে পড়েছে। এই অবোধের দল গণতন্ত্রের শব কাঁধে বয়ে নিয়ে চলেছে। তাতে সামিল হয়েছে রাজ্যবাসীও।

গণতন্ত্রের শোকসভা

নাগরিক সমাজের সদস্যরা মাঝেমধ্যেই শোকাভিভূত হয়ে শহিদ গণতন্ত্রের স্মরণে সভা বসায়। সে কাজও চলছে পাশাপাশি বহুদিন ধরে। নির্বাচন ঘটে যখন রাজ্যে তখন তার মধ্যে একটু-আধটু গণতন্ত্রের ছায়া দেখতে পায় কেউ কেউ। কিন্তু বন্দুক-বোমাবাজির অত্যাচারে তা মিলিয়ে যায় অচিরে। বদলে দেখা যায়, বিভিন্ন দল-সমর্থকরা বাঁচার তাগিদে মরণ-বরণ করে শহিদ হয়ে যায় বিরোধী পক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে। সেভাবে ভোটযুদ্ধে দেখা যায় বৃদ্ধ-নারী-শিশু শহিদ হওয়ার সূত্রে একসারিবদ্ধ হয়েছে, যেমন সবক্ষেত্রে হয় ‘অসহায় প্রাণী’ হিসেবে। এদেশে পূর্ণবয়স্কা নারীরাও জীবনে বৃদ্ধ এবং শিশুদের সঙ্গে একই গোত্রভুক্ত হয়! ভোট-লড়াইয়ে হিংসার বলি হওয়ার ক্ষেত্রে মরণেও সেটি দেখা যায়। বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে আহত হয় অবোধ বালক ভোটের সময়। মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধে হার হয় তার। তার এইপ্রকার অকাল-মৃত্যুর জন্য দায় নেয় না কেউ। অপরাধী বলে ধরা হয় না কাউকেও। উল্টে শোনা যায়, ‘গণতন্ত্রের উৎসব’ হয়েছে এই রাজ্যে। নিহত বালকের আত্মজনেরাও সেকথা বলবে? মানবে? মানবে সেকথা ভোট-হিংসায় নিহত হওয়া অন্যান্য মানুষগুলির পরিবার-পরিজন? না মানলেও তাদের শোকে পাথর হয় না নেতা-নেত্রীদের ‘মানবদরদী’ হৃদয়। কেবল পরাজিত দল তখন গণতন্ত্রের জন্য শোকসভা বসায়! সেই সঙ্গে আগামী পর্বে জয়ের আশায় বুক বাঁধে সেসব দলের নেতৃবৃন্দ এবং জয়ের তিলক কপালে কাটতে পারলে গণতন্ত্রের জয়গান তারা তখন গাইবে দ্বিগুণ চড়া সুরে। এই পরম্পরা চলছে। চলবে। চলতে দেখা যায়!

গণতন্ত্রের প্রাণনাশ-প্রক্রিয়া

রাজ্যের বিভিন্ন দলের নেতৃবর্গ সমর্থকদের ‘জনগণ’ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ার প্রথা চালু করে ফেলেছে। তারা আর দেশের জনগণ থাকে না। হয়ে যায় ‘আমরা’ ও ‘ওরা’ এবং পরস্পরের শত্রু। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নেতৃবর্গ ‘লড়াই’ বলে গণ্য করতে শেখায় শিষ্যদের। সেই লড়াইয়ে ‘অস্ত্র’ ব্যবহৃত হবে— হিংসার অস্ত্র। রক্তপাত, হানাহানি অবশ্যম্ভাবী। তা না হলে ‘যুদ্ধ’! এভাবে মূলত নষ্ট হয়ে যায় গ্রাম-প্রধান বাংলার পরিবেশ। উন্নয়নের চিন্তা লোপাট হয়ে যায়। উৎপীড়ন সেখানে দখল নেয়। গ্রামবাসীরা একে অন্যের উৎপীড়ক হয়ে পড়ে। শহরেও এই ধারার প্রসারণ চলে। দেখা যায়, নিজেদের গদি বা ক্ষমতা দখল করা নামক চক্রান্তের জালে বঞ্চিত, বিপন্ন, বেকার ও দরিদ্র রাজ্যবাসীকে মাছেদের মতোই তুলে নেওয়ার কৌশল রপ্ত করে ফেলে বিভিন্ন দলের প্রধানরা। ভোগের উপকরণ (নারীও তার অন্তর্ভুক্ত) বিতরণ করে শিষ্যদের জালে গেঁথে চলতে থাকে নেতাদের দখলদারির খেলা। অথচ গণতন্ত্রের মূলকথা হল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সমর্থন নিয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অভিযোগ মিটিয়ে রাজ্যকে সকল রাজ্যের উপরে ঠাঁই করে দেওয়ার লক্ষ্যে অবিচল থাকবে এবং তাদের বুকের মধ্যিখানে বাজবে একটাই মন্ত্র— আমরা সকলে মিলে আমাদের দেশকে ভালবেসে সর্বপ্রকারে সমৃদ্ধ করে তুলব। গণতন্ত্রের প্রাণপাখিটির তার মধ্যেই বেঁচে থাকার কথা। তা হতে পারল না এতদিনেও নেতাদের দুর্বুদ্ধিতে।

তারা এমন রাজনীতি চালু করল যেটি হল সম্পূর্ণত দুর্জন-নির্ভর এবং হিংসাশ্রয়ী, কেন না সেই রাজনীতির লক্ষ্য দেশগঠন বা দেশোন্নয়ন নয়, জনগণের ওপর নিজদলের দখলদারী অর্থাৎ দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। সকল রাজ্যবাসী হবে ‘আমাদের লোক’— সেটিই হল তাদের একমাত্র দলীয় কামনা। দুর্নিবার সে কামনা। সে কামনার আগুনে পুড়ল সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গের দেশপ্রেমিক সত্তা। দগ্ধ হল রাজ্যবাসীর শান্তিপ্রিয়, সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন-কামী অন্তর। তাদের ভোগবাসনার লেলিহান শিখা প্রকৃতিজগতেও বিষবাষ্প ছড়িয়ে ধ্বংসসাধন করতে উদগ্র হয়ে উঠল। সর্বংসহা প্রকৃতিও তাদের ভোগবাদী সত্তার আগ্রাসনে তাই রুষ্ট হয়ে রুদ্রমূর্তিতে দেখা দেয় প্রায়শই। তাতেও তাদের হুঁশ ফিরছে না। স্বনির্ভর প্রকৃতি ও স্বজাতি, স্বজন মানুষেরও দুশমন হয়েছে আজ ‘শ্রেষ্ঠ জীব’ মানুষ মন্দ রাজনীতির গোলকধাঁধায় বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে। গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে ঘাতক দলতন্ত্রের হাতে এভাবে। গণতন্ত্রের প্রাণ হল জনগণ। সেই জনগণই দলতন্ত্রের ক্রূর জালে পড়েছে যখন, তখন গণতন্ত্র বাঁচে কীভাবে? কিন্তু না। এটাই শেষকথা নয়। জনগণকে দলীয় ফাঁদ থেকে মুক্তিলাভ করতেই হবে, কেন না গণতন্ত্রের মূল্যবান সঞ্জীবনী পরশকাঠিটি তাদেরই হাতে রয়েছে।

গণতন্ত্রের সঞ্জীবনী পরশকাঠি

পশ্চিমবঙ্গের দলতন্ত্রে দস্যুতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, সাহসী রাজ্যবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া একান্ত আবশ্যক। সুটিয়া, কামদুনি, ভাঙড়, খরজুনা, গেদের গ্রামবাসী ও বিশেষত মহিলারা পথপ্রদর্শনের কাজটি করে ফেলেছে বর্তমান সরকারের আমলেই। গত সরকারের সময়কালে পথ দেখিয়েছে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের জনগণ। সেই ঐক্যবদ্ধতা ধ্বংস করার জন্য ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে চলেছে দলতন্ত্রের সাধক ও শিষ্যবর্গ। সেই ধ্বংসাত্মক কাণ্ডকে ধ্বংস করতে পারে জনগণের ঐক্যশক্তি, যার চেয়ে বড় শক্তি পৃথিবীতে নেই। সেই সঙ্গে ভোটদান প্রক্রিয়ায়ও ‘পরিবর্তন’ সাধন করতে হবে। কোনও রাজনৈতিক দলই যেন পাঁচ বছরের বেশি ক্ষমতার গদিতে না থাকতে পারে। জনগণই পারে সেটিকে বাস্তবায়িত করতে। একমাত্র সে প্রক্রিয়াতেই গণতন্ত্রের পুনর্জীবন লাভ সম্ভব। দলতন্ত্রের দস্যুতা নিষ্ক্রিয় করার সে পথ অবলম্বন করা আজ সকল রাজ্যবাসীর জন্য একান্ত কর্তব্য!

চিত্র: গুগল
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »