Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মৈথুনকাল

তখন আকাশে তেরছা চাঁদ উঠেছে। পথে-ঘাটে এমন এক প্রশান্তি যেন দূর থেকে বাতাসের সাথে শান্তির সুবাস আসছে। ছোরাপ তেরছা টুপিটা মাথায় পরে হনহন করে বিলের দিকে হাঁটছে। গাঁয়ের অন্যান্য মানুষরাও ওয়াজ মাহফিলে যাবে, তবে ছোরাপের হাঁটা দেখলে যে কারও মনে হতে পারে সে বিলের বীথির মত পথ ধরে হেঁটে যাওয়া আর কোনও মানুষকে ভ্রূক্ষেপ করছে না। তার ডান দিকে যে আলোটা দেখা যায় ওটা শরীফ বাড়ির উৎসবের আলো। ছোরাপ সেই আলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বিলের প্রসারিত পথ ধরে আবার হাঁটা শুরু করে।

ওয়াজ মাহফিলের তোরণের কাছে কয়েকজন ভিক্ষুক। ওদের কারও একটা হাত নেই কারও দু’পা বিকলাঙ্গ। কেউ আবার কুষ্ঠ রোগীর মত গরমের ভেতর কম্বল জড়িয়ে পুরো শরীর ঢেকে রেখেছে। একজন গাছের গুঁড়ির মত এক-পা সামনের দিকে এগিয়ে বলছে— আল্লাহু আল্লাহু। আর একজন বুড়োমত লোক ছোরাপের জামায় টান দিয়ে বলছে— হেই বাবা, কিছু দিয়া যা।

এই দুঃখদুর্দশার প্যারেড কাটিয়ে ছোরাপ সামনের দিকে চলছে। সে তুলাতলার নিচে যে ভ্রাম্যমাণ বাজার বসেছে, ভিক্ষুকদের না দেখার ভান করে সেদিকে এগিয়ে যায়। তারপর সে লাইন করে দোকান সাজানো লোকগুলোর মুখের দিকে তাকাতে থাকে। মেয়েদের সস্তা জুতো, মদন মুড়ালি, গুড়ের জিলাপি— যেগুলি লাল লাল রঙের— সেসব বস্তুর পাহাড় ঠেলে সে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। একপাশে বানরের খেলা। জটাধারী লোকটি আস্তেসুরে ডুগডুগি বাজায়। মুখে নানা রকম শ্রাব্য-অশ্রাব্য সংলাপ বলে— যেসবের অধিকাংশই হাস্যকর। আর একজন এমনভাবে বক্তৃতা করছে, যেন আধুনিক যৌনবিজ্ঞানের সকল কায়দাকানুন বোঝাতে লোকটা মরিয়া। সে জড়ো হওয়া লোকদের ফটো অ্যালবাম খুলে দেখায়। সেখানে একজন যুবতী সুন্দরী নারী নগ্ন হয়ে তার স্তন আর লোমে ভরা যোনী প্রদর্শন করছে। লোকজন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটির ছবি দেখতে চাইছে। মজমাওয়ালা বিশেষ ভঙ্গিতে বলল, বাচ্চারা সরে যাও, এই শোনেন, পকেট সাবধান।

লোকটি শক্তিবর্ধক ওষুধ বিক্রি করে। কেউ কেউ গোড়ালি উঁচিয়ে পায়ের পাতার ওপর ভর করে নব্য যৌনবিজ্ঞানীকে দেখতে যায়। ছোরাপ অল্পকিছু মদন মুড়ালি কিনে ওয়াজের ময়দানের এককোণে গিয়ে বসে।

হযরত নাহমাদুহু পড়ে সটানে বয়ানে চলে যায়। আকাশে অকৃপণ তারকা দপদপ করছে। চাঁদের আলোর আস্তিকে ভেসে যাচ্ছে দুনিয়া। মানুষের পিঠের সঙ্গে মানুষ। আহা! কী আসমানি ফরমান হল নবীর ওপর। পবিত্র গ্রন্থে লেখা আছে সুরাতুল ইউসুফে। একদিন কেনান নগরে যাচ্ছিলেন এক সওদাগরের দল— ওদের সর্দার দুই সহোদর। বসির আর বসরা।
কথিত আছে, নবী ইব্রাহিমের দুই পুত্র। একজন ইসহাক আর অন্যজন ইসমাইল। এই ইসহাক নবীর বংশে জন্ম নেয় নবী ঈস্রাইল বা ইয়াকুব। সেই ইয়াকুবের এগারো পুত্রের একজন ইউসুফ।

হুজুর খুকখুক করে দুটো কাশি দেয়। তার জন্য চায়ের ব্যবস্থা। মওলানা চোখবুজে ওয়াজের শায়ের এমনভাবে আওড়ায় যেন কোনও র‌্যাবাই তওরাতের পদ আওড়াচ্ছে।

একদিন মিশর নগরের আজীজের স্ত্রী জোলায়খা বিবি সুদর্শন ইউছুফকে প্রেম নিবেদন করে। জোলায়খা ছিল ভুবন আলো করা সুন্দরী। যেন বেহেস্তের পরী। তার চুলে ফুলের মালা, বেণীতে ঝংকার তোলে। মাখনের মত তুলতুলে নরম শরীর, মাথায় সুদৃশ্য রাজার পত্নীর মুকুট। এমন রমণীর প্রেম নিবেদন, ভাবা যায়!
মিশরের আজীজ কিনে নিয়েছেন ইউছুফকে। রাজ গোলামকে প্রেম নিবেদন করে লাজে মরে যায় জোলায়খা। কিন্তু তাকে তো ইউছুফকে পেতেই হবে নিজের করে। ভৃত্য রাজার স্ত্রীর আদেশ অমান্য করতে পারে না। সে সাত কামরা বিশিষ্ট একটি নির্জন ঘরে মনিবের স্ত্রীর সাথে যায়। কক্ষটি সুবিন্যস্ত, সুনিপুণ। নাজ নেয়ামতের অভাব নেই। মাথার উপর ছাদে, নর-নারীর সঙ্গমের দৃশ্য। পায়ের তলায় নর-নারীর নগ্ন আল্পনা আর দেয়ালের প্রতিটি স্থানে যৌনসঙ্গমের ইঙ্গিতবাহী কারুকার্য।
জোলায়খা ইউছুফকে এমনভাবে চেপে ধরে যেন তার হাড়গোড় ভেঙ্গে যাবে। ইউছুফ আর জোলায়খার মুখের দিতে তাকাতে পারে না। প্রায়-নগ্ন সুন্দরী রমণী সুসজ্জিত বিছানায় প্রিয় রাজ গোলামের প্রণয়ের অপেক্ষায়। জোলায়খা প্রলোভন দেখায় আর ইউছুফ কথা বলে সেই কারুকার্যখচিত মন্দিরের দিকে তাকিয়ে।
আমি তোমার কাছে ভিক্ষা চাই। আমি তোমাকে ভিক্ষা চাই। জোলায়খা মাথা নেড়ে বলল। তার চোখ থেকে বের হতে থাকে কামের স্ফুলিঙ্গ। তার মিনতির ভঙ্গি আবেগের। আর তার খোলা শরীর থেকে বের হয় সমুদ্রের এপার জেরুজালেম থেকে আনা সুবাসিত আতরের গন্ধ।
ইউছুফ খোদার পয়গাম্বার। তার মনে ক্লেদ নেই, কামের মোহ নেই। সে খোদাকে পরমেশ্বরের মত মান্য করে। তার শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে। মনে মনে আওড়াতে থাকে খোদার পবিত্র নাম। ইউছুফ সাত কামরার মন্দির থেকে খোদার নাম নিয়ে চোখ বন্ধ করে দৌড়ে পালায়।

ছোরাপ ওয়াজের মজলিশ থেকে উঠে যায়। রুপোলি রাস্তায় তার পেছনে ছায়ার চলন্ত গতি। বাতাসে ভেসে বেড়ায় কামের গন্ধ। ওয়াজের তোরণের কাছে পা লুলো দুটো মেয়েলোক। ওদের একজনের মাই লতিয়ে পড়ার মত ঝুলে আছে। ছোরাপের করোটিতে খেলা করে অদ্ভুত কামের নেশা। সে যেতে যেতে নদীর পাড়ে চলে যায়। জলের কাছাকাছি গিয়ে তার চোখের সামনে সেই কারুকার্যময় মন্দির চোখে পড়ে। নদীর জলে বাঁকা জলের ভেতর ভেসে বেড়ায় জোলায়খার অর্ধনগ্ন ছায়া। আহা! কী সুডৌল দুটি স্তন। ছোরাপ লুঙ্গির ভেতর হাত ঢুকিয়ে দেখে শিশ্নটা ফুলে উঠেছে। ওটাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তারপর রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে তার চোখে পড়ে বিলের ভেতর বাড়িটিতে আলোর উৎসব।

যে রাস্তাটা বিঘাই গ্রামকে পেঁচিয়ে ধরেছে, সেখান থেকে স্পষ্ট দৃশ্যের সীমানায় আর একটি উৎসব। শরীফ বাড়ির লোকেরা বিয়ের উৎসবে মেতেছে। ছোরাপ ধীরে ধীরে আলোর দিকে এমনভাবে চলছে যেন মহাসমুদ্র থেকে কোনও জাহাজ আলোর নিশানা করে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির প্রতিটি ঘরের সামনে তিরতির করে মেয়েলোকের ছায়া কাঁপছে। আর তাতে ভেতরের মেয়েদের অঙ্গের নাড়াচাড়া বোঝা যাচ্ছে। ছোরাপের মনে হল সে স্বপ্ন দেখেছে। স্বপ্ন দেখতে দেখতে প্রিয় গানের যেটুকু জানা সেটুকু গাইছে। পানজা বিড়ির ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে নিজেকে খুব সুখী সুখী লাগছে তার। শরীফ বাড়ির উঠানে একটা জটলা। ছোট ছোট বাচ্চা নাচের আয়োজন করছে। কেউ আঙুল উঁচিয়ে দেখাচ্ছে। ধনী ঘরের যেই ছেলেরা এসেছে ওরা গরিব ছেলেমেয়ের নাচকে মনে করে বাহুল্য। ধনী পরিবারের বাচ্চারাও অর্থের বিচার বোঝে— ওরা মনে করে সস্তা পোশাক পরা বাচ্চাগুলো নোংরা, অশিক্ষিত আর বেমানান।

ছোরাপের জোলায়খার কথা মনে পড়ে। সে থিয়েটারের ভাঁড়ের মত একা একা অঙ্গভঙ্গি করে আর হাসে। ঝোপের একদিকে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখে ভেতরের উৎসব। সেখানে কলাগাছের আড়ালে একটা ধেমড়া মেয়েলোক ফরসা নিতম্ব উঁচু করে পেচ্ছাব করছে। মনে হল ছোরাপের চোখের সামনে থেকে একটা ধূসর পর্দা খুলে গেল। সে নিঃশব্দে অনেকটা জাদুর মত নিজেকে প্রায় শূন্যে ভাসিয়ে মেয়েটির পাছা দেখার জন্য উদ্যোগ নেয়। তাকে হতাশ করে মেয়েটি উঠে চলে যায়। তারপর মেয়েটি দাঁড়িয়ে তার কোনও সই কিংবা বোনের সঙ্গে কথা বলছে। গলার আওয়াজটা কর্কশ, ভাঙা ভাঙা আর কামুক। যেন নরম চোয়ালের ভেতর থেকে আগুনের শিখা বেরচ্ছে। ছোরাপ শরীফ বাড়ির উঠানে বিয়ের নাচ-গান দেখার তাল আর খুঁজে পায় না। তার ইচ্ছা করে কলাগাছের আড়ালে দেখা মেয়েটিকে ঝোপের এপাশে নিয়ে আসে। তার পিলপিলে চোখদুটো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেয়েটির নগ্ন দেহ দেখে অভিলাষ মিটায়!

কিন্তু সে তো আর ডাকাত নয়! সে চুপি চুপি মেয়েমানুষে ঠাসা ঘরটার কাছে দাঁড়িয়ে একচোখ বেড়ার ফুটোর মধ্যে দিয়ে দেখে ভেতরে নাচের উৎসব। ওড়নাছাড়া মেয়েগুলো স্তন দুলিয়ে নাচছে। আর ওদের পাছায় সের সের মাংস হেলেদুলে ঘুরছে। একদল যুবক সেই দৃশ্য দেখে হাসছে আর শিস বাজাচ্ছে। ছোরাপ ভ্রূ কুঁচকে আকাশের দিকে তাকাল, তারপর নিজের শরীরের দিকে। কেমন কুৎসিৎ দেখাচ্ছে তাকে! একটা গভীর নিশ্বাস ফেলে মুখটা শিথিল করে বিলের পথ ধরে চুপ করে হাঁটতে থাকে। পথে যেতে ছোরাপের মনে পড়ল কার্তিক মাসের কথা। কেমন দল মিলিয়ে কুকুরগুলো রাস্তার তেমাথায় জড়ো হয়। ওরা জোড়া বেঁধে মৈথুনে লেগে পড়ে আর ভাগ হয়ে যায়। আর গরুগুলো ডাক উঠলে সারারাত শরীর খিঁচিয়ে ট্যাডায়। কুকুরের মৈথুনের দৃশ্য, গরুর ট্যাডানির শব্দ ছোরাপের স্নায়ুর ভেতর কুটকুট করতে শুরু করে। তার মনে পড়ে এক মেঘমেদুর সন্ধ্যার কথা। একবার শহর থেকে মেয়ে নিয়ে এসে ছোরাপকে এক যুবক খুঁজে বের করল। ছোরাপ সেই যুগলকে নিয়ে গিয়েছিল বকুলের মায়ের কাছে। বকুলের মা রেইনট্রি ডালের পায়ায় বানানো চৌকিটা দেখিয়ে ছেলেটিকে ইঙ্গিত করে বলেছিল, আপনের গাল ফেরেন্ডের লগোইত ভাল আছে। এইবার চকিতে হুইয়া সমুদ্দুর পাড়ি দেন।

লোকটি বোকা মানুষের মত হাসল তখন। ছোরাপের মনে আছে সেই যুবক-যুবতীর কথা। কী মাখনের মত তুলতুলে চেহারা ছেলে-মেয়ে দুটোর! মেয়েটির মায়াবী মুখের দিকে কতক্ষণ শুধু তাকিয়েই ছিল বকুলের মা। ঘরের প্রান্তের দিকে ছিল দরজাটা। আলোয় আলোয় ভরে উঠেছিল মেয়েটার শরীর। মুখে অল্প কয়েকটা ব্রণ, একটা স্কার্ট আর সুয়েটার ছিল পরনে। কোঁকড়া চুল আর ভ্রূদুটো সাজানো সুন্দর। মেয়েটি ছেলেটিকে শুধু বারবার বলে যাচ্ছিল— তুমি প্রার্থনা করো আমার জেলবন্দি বাবার জন্য।
তারপর ওরা সঙ্গধরা সাপের মত পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে সঙ্গম করেছিল।

বকুলের মা ছোরাপকে আড়ালে ডেকে বলেছিল— আহারে! কোন গিরাস্থ ঘরের মাইয়া শয়তান পোয়াডার লচি কতায় ভুইল্যা কপালডা পোড়ল!

ছোরাপের আধভাঙা চোয়ালের দুপাশের উঁচু হাড় দুটোতে হাত ছুঁয়েছিল বকুলের মা। এগারো বছরের বিধবা জীবনের পূর্বের দৃশ্যগুলো ঝাঁকি দিয়ে উঠেছিল বকুলের মায়ের চোখের সামনে। খপ করে ছোরাপের বালকবেলা পেরুনো মুখ আঁচলের তলায় চেপে ধরেছিল বকুলের মা।

ছোরাপ তখন নাক বের করে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলেছিল— চাচি ইট্টু আওয়ালে আও।

যুবকের যৌনতাড়না কী যে অদ্ভুত সুন্দর হতে পারে; বকুলের মায়ের সেই ঘটনার আগে জানা ছিল না।

সেই রাতে ছোরাপের মনের ভেতর যে ভুত চেপেছে তার একটা বিহিত হওয়া দরকার। সে মনে মনে ঠিক করে— আরবজানের ডেরায় যাবে। চুপিচুপি হোগলার বেড়া ফাঁক করে পেছন দিক দিয়ে কুকুরের মত ঢুকবে। পেছনে একটা কুকুর ডাকছে, আর একটা কুকুরমন কী করে ভয় পাবে তাকে! আরবজানের মুখটা চেপে ধরে বসে পড়বে তার বুকের ওপর। গায়েগতরে জোর আছে ছোরাপের। আরবজান মাগি যদি চেঁচায় তবে জোরে একটা থাপ্পড় মারবে কান বরাবর। তখন নিশ্চয়ই চোখের পলকে কেঁচোর মত বেঁকে যাওয়া রাস্তাটা মরা সাপের মত চোখের সামনে দেখবে। আরবজানের আধমরা শরীরটা হাতিয়ে হাতিয়ে ছেনে দেখবে কিছুক্ষণ। তারপর যা হবার হবে। কী আর এমন হবে! এইসব উৎসবে ফি বছর বিঘাই গ্রামে এক একটা অঘটন তো ঘটেই থাকে। ছোরাপের মনে পড়ল কয়েক বছর আগের সেই ঘটনাটা। শিশু বক্তার চমকপ্রদ ওয়াজের বছর আরবজানের ঘরে এমনই এক কাণ্ড ঘটেছিল। গ্রামটা প্রায় পুরুষশূন্য ছিল সেই রাতে। খুলনা শহরের এক হোটেলে বাবুর্চির কাজ করে আরবজানের স্বামী। বাড়িতে দুবছরের ছেলেকে নিয়ে আরবজান একা থাকত। মাগির শরীরে একদলা মাংস নেই তবে ওর পাছাটা কী করে এত পুষ্ট হয়েছে কে জানে! সেই রাতে কোথা থেকে যেন এক চোরচোট্টা, বাটুয়া লোক এসে আরবজানের গলার ওপর রামদাওখান চেপে ধরল। চিংলা মেয়েমানুষ আরবজান; চোট্টার ভারে একদম নড়তে পারল না।

দাওখান একপাশে রেখে লোকটা আরবজানের শরীরটা নাগালে আনার চেষ্টা করল। আঁধারে ধস্তাধস্তি করা লোকটি ছিল অস্থির, শক্তিশালী, নির্ভীক। গলার ওপর ভাঁজ করা মাথার ফকফকা রামদাটা ধরে আরবজানকে কায়দা করে ফেলল। ওর ছেলেটা ঘুমিয়ে জল হয়ে ছিল তখন। শিশুটি নড়েচড়ে কেঁদে উঠলে পলায়নরত চোরচোট্টার দিকে অন্ধকারে আঙুল তুলে আরবজান চেঁচাতে চেঁচাতে বলল— ওই, গ্যালে, গ্যালে, গ্যালে…

আরবজানের চোট্টা খেদানোর ঘটনাটা গ্রামের কে না শুনেছে? যুবক, বৃদ্ধ আর উঠতি বয়সী মেয়েগুলো, সবাই। আরবজান সকালে যে যুবকের কথা বলল, সেই যুবকের মা-বোন এসে ইচ্ছেমত আরবজানকে শাসিয়ে বলল— ও মাতারি, দেও দিহি মোর পোয়ারে চেন্নক?
আরবজান বিস্ময়ভরা চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল— হ, চেন্নক!

পাড়ার পোংডা ছেলেটি আরবজানের দিকে তাকিয়ে ফোড়ন কেটে বলল— রাইতের বেলা চোরচোট্টার নঙ্কুর মাপ তো আরবজান ঠিক-ই লইয়া লইছে। এহন চেন্নক আর কী দেবে।

পাড়া-প্রতিবেশী বেশ উৎসাহের সঙ্গে ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দিল— আন্ধার রাইতে আরবজান কারও মুখ দেখে নাই। গাঁয়ের বুড়ো চোট্টার সঠিক ইঙ্গিত পেয়ে বড়লোকের পোলা বলে চুপসে যায়। তার বর্ণিত আলাপের অর্থ— মোগো বাপদাদারা প্রজ্ঞাবান। ইতিহাসের সব ঘটনার অন্তরালে উদ্দেশ্য থাকে, ফাঁকি থাকে। আরবজান কিছু পয়সা চায়।

আরবজান বোকা হরদমের মত বলল— আরে, তোমরা তো মোরে মিথ্যাবাদী কইতে চাইছ। ঘরের ভাঙা আয়নাটা যদি টেলিভিশন অইত তইলে চোরচোট্টার ছবি দেখাইতে পারতাম। সে নাভির নিচের কাপড়ের কুচির গোছাটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে বলল, এইভাবে কাপড়টা টান দিয়ে খুলেছিল, তারপর ডান নাকি বাম হাতটা সেহানে চালান কইরা দিয়া… আরও কমু? থাউক গুরাগারা ইহানে। হারাদিন তো পাপ হরো পাপ। অন্তত এই ঘটনাডা বিশ্বাস কইরা কিছুটা ছপ কামাই হরো বুড়ামেয়া।

আরবজান সবাইকে বলতেও পারল না কীভাবে হাতিয়ে হাতিয়ে সে বুঝে নিয়েছে চোট্টার শরীরের গঠন। অভিযোগকৃত যুবকের মা আরবজানকে আড়ালে নিয়ে কানে কানে পরামর্শ করল। কেমন একটা রফা হয়ে গেল দু’মিনিটের মধ্যে। আরবজান আড়াল থেকে ফিরে এসে জড়ো হওয়া লোকদের সামনে মিনমিন করে বলল— কাইল রাইতে মোর ঘরে কেউ আয়ে নাই। দেহেন মুই তো এতিম। মা বাপ কেউ নাই। যে নানায় পালছে মোরে হ্যায়ও বেঁকা হতে হতে কব্বরের দিকে ম্যালা দেছে। আপনেরা একটা রফা হরেন, নইলে খুন্না দিয়া আইয়া পোলার বাহে মোরে রাকপে না।

লোকজনের আর কী কাজ, অযথা গ্রাম্য পলেটিক্সে জড়িয়ে নিজেদের ফ্যাসাদে ফেলে। তারা আরবজানকে ধিক্কার দিতে দিতে যে যার বাড়ি চলে যায়। তারপর থেকে লোকমুখে শোনা যায়, আরবজান রাত-বিরাতে পরপুরুষের হাত ধরে বিল পেরিয়ে নদীর ধারে নিয়ে যায়। রাতের নিস্তব্ধতায় নদীর ধারটা বিষণ্নতায় কাতর হয়। পোকার ঝিঁ-ঝিঁ শব্দ আর শেয়ালের আনাগোনা ছাড়া আর কোনও প্রাণীর স্পন্দন থাকে না। আরবজান হোগল পাতার বনে ঘাসের ওপর তার চ্যাপ্টা পাছাটা এলিয়ে দেয়। তার সাধের নাগর সেখানে নিশ্বাস গরম করতে করতে গড়াগড়ি খায়। রাত্রিকালীন এসব ঘটনা বিঘাই গ্রামের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ, কেউ কখনও এসব বিষয় নিয়ে কথা তোলে না।

ছোরাপ বিলের ভেতর হালটের পাশে স্তূপ করা নাড়ার গাদায় কিছুক্ষণ শুয়ে থাকল। চিন্তার নীরবতা ভাঙার পর মান্দার গাছের ফাঁক দিয়ে উত্তরের সীমানায় নদীর দিকে তাকিয়ে দেখে সড়কের ওপর দিয়ে ঘড়ঘড় করে একটা টেম্পু চলে যাচ্ছে। ওটার পায়ের কাছে সামান্য আলো নাচানাচি করে। আর সড়কের ঢালের কাছে বকুলের মায়ের উঠানে টিমটিমে আলোর কাছে কয়েকজন যুবকের পায়চারী দেখা যায়।

ফাল্গুনের রাতের মাদকতা ছোরাপকে আরও বেশি উদাস করে তোলে। সে মগজের গভীরে সুখ সুখ অনুভবে বুঁদ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তার মাথার ওপর ক্ষয়ে যাওয়া হলদেটে চাঁদ। হালটের খেতের ওপর উদাস করা ফাল্গুনী হাওয়া। সে বিলের মাঝ বরাবর ছিলার পথ ধরে বকুলের মায়ের বাড়ির টিমটিমে আলোর নিশানা ধরে হাঁটে। তার সঙ্গে হাঁটতে থাকে দূরের তারাগুলো আর পথচলা নিজের ছায়া। ছায়াটা ছোরাপকে প্রশ্ন করে, নদীর ধারে দাঁড়িয়ে শরীর ঝাঁকিয়ে সে যে কাণ্ডটা করেছে ছায়ার কাছে সেই দৃশ্যটি গুপ্ত কিছু নয়। কেমন বে-লাজের মত খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে ছায়া। ছোরাপ ছায়াটিকে ছুক ছুক করে তাড়িয়ে দিতে চায়। ছায়াটি শূন্যে দাঁড়িয়ে খিলখিল করে হাসে। সে আর একটি ঘটনার ফিরিস্তি শোনায়। বিয়েবাড়ির মেয়েটির ফরসা পাছাটা দেখে শরীফের গোয়ালঘরে একবার উঁকি মেরেছিল ছোরাপ। সে বকনা বাছুরের পেছনের পায়ের দিকে কামুক দৃষ্টিতে কেমনভাবে তাকিয়েছিল— ছায়া সে কথাটিও মনে করিয়ে দেয়। ছোরাপ ছায়াটিকে কোনওভাবেই তাড়াতে পারে না।

বকুলের মায়ের বাড়ির কিনারায় গিয়ে ছোরাপ দেখে, বেড়ার ফোকর দিয়ে লাল নীল আলোর ভেলকি। ছোরাপ মাটির ওপর কান পেতে শুনতে পায় ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসা চাপাস্বরের মেয়েলি নখরা। এ যেন যুবক-যুবতীর মৈথুনের উৎসব!

বিঘাই গ্রামের উত্তর প্রান্তের তৃতীয় উৎসবের বাড়িটি সাধারণ মানুষের কাছে রহস্যময়। বাড়িটির পাশ দিয়ে দড়ির মত একটা আধভাঙা সড়ক চলে গেছে— সেই শহর। সেই সড়কের ঢালের কাছাকাছি একটা বাড়িতে বকুলের মা থাকে একা। পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বকুলের মায়ের স্বামী মারা গেছে বহু বছর আগে। একমাত্র ছেলেটি দূর শহরের কোথাও জীবিকার ধান্ধায় ব্যস্ত। বাড়িটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মুখে অদ্ভুত সব কথাবার্তা শোনা যায়। পুলিশের তাড়া খাওয়া দূর গ্রামের মানুষ এসে বকুলের মায়ের ধ্যাতরা কাঁথার নিচে ঘুমায়। আবার মাঝেমধ্যে প্রেমিকা নিয়ে মউজ-মাস্তি করতে শহর থেকে আসে কেউ কেউ। ভদ্র নগরের যুবক-যুবতীর জন্য দুদণ্ড নিরিবিলি আনন্দের এমন নিরাপদ আস্তানা আর কোথাও নেই!

সেইসব বহু রঙের মানুষের দেয়া টাকায় বকুলের মায়ের ভালভাবে দিন চলে যায়। গ্রামের মানুষ দিন-দুপুরে বকুলের মাকে সামনে পেলে দাঁত কেলিয়ে জিগায়— দুহার রাইতে তোমগো বাড়ি ল্যাম জ্বলে ক্যা?

এমন স্বাভাবিক প্রশ্নে বকুলের মা চওড়া মাড়ি খুলে হাসে। বলে তোরা আইজকাইল চোহেও দেহিস না। মুই তো রাইত বিরাইকে নাং কাড়াই। সেই হাসি মিলিয়ে যেতে যেতে বকুলের মা বড় রাস্তার পথ ধরে দক্ষিণে যায়। পথে তার আরও মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। যে মানুষগুলো রাত-বিরাতে নদীর ধারের নির্জন বাড়িটিতে তাস পেটাতে আসে। কেউ আবার ঢাকাইয়া অতিথি নিয়ে আসে মাঝেমধ্যে। রাত গভীর হলে রঙিন পানি খেয়ে টাল হয়ে তারা পড়ে থাকে বকুলের মায়ের ছেঁড়া হোগলার ওপর। ফলে নদীপাড়ের বাড়িটির আঁধার রাতের এইসব কাণ্ড দেখে কথিত সমাজপতিদের আর কিছু বলার থাকে না।

বকুলের মা ছোরাপকে দেখে বলে, অয় ছোরাইপ্যা, তুই মফেল থুইয়া আই পড়লি? মেম্বারের ভাই মোকসেদ ঘুকসি নিয়া আইয়া কাম কইরা চইল্যা গ্যাছে। হেই টাহা দিয়া দুলালে ক্যাসেট আনছে।

—বেলেঙ্গি কইরো না চাচি। হারাম শুওয়ের টাহা এখন খাই না। ছোরাপ বলল।

আমতলায় নতুন বানানো চুলায় বকুলের মা চা জ্বাল দেয়। চায়ের জল থেকে ধোঁয়া উঠে বাতাসে মিশে যায় তেজপাতার সুবাস! চুলার তিন ঝিকার ফাঁক দিয়ে লালচে আগুন দপদপ করে জ্বলে বকুলের মায়ের খরখরা চামড়ার ওপর। ছোরাপ কিছুক্ষণ পলকহীন তাকিয়ে থাকে বকুলের মায়ের গালের একপাশে পড়া দপদপে আলোর দিকে। ছোরাপ তাকিয়ে থাকে। ছোরাপ ঘাড় বাঁকা করে বকুলের মাকে ইঙ্গিত করে বলে, ঘরের মধ্যে কী হরে হালারপুতেরা!

ঘরের ভেতর থেকে এক চ্যাঙড়া চ্যাচায়— অই চাচি, চা অইচে?

বকুলের মা গলা আর বাড়ায় না। বিরক্তি উগরে দিয়ে বলে— ও শুয়ার বাচ্চা, দোমন অ। ছোরাইপ্যা আইচে।

রাতের এই শীতল উৎসবে যেন জমে উঠল না ছোরাপের। সে বেড়াটা ঠেলে ঘরের ভেতরে ঢুকে দুলালের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে— অয় দুলাইল্যা, ডাইরেক আনো নাই?

কথাটি শুনে ফ্যাচফ্যাচ করে হাসল দুলাল। সে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে, অই ব্যাডা থাম, চাচি এহনো ঘুমায় নায়।

কিন্তু দুষ্টুদের জ্বালায় বকুলের মা ঘুমাতে পারে না। ডাইরেক্ট ছেড়ে দুলাল সিডির সাউন্ড বাড়িয়ে দেয়।

বকুলের মা বারান্দায় শুয়ে শুয়ে সিডির শব্দার্থ অনুবাদ করে। সে দেহটা ভাঁজ করে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার চেষ্টা করে। একটা পাতলা টিনের বেড়ার আড়ালে চুপ থাকাও বড় দায়। টিভির মনিটরে নীলচোখা মেয়েটি ভেল্কি দেখায়। এক নিগ্রো পুরুষ সেই নীলচোখা নিগ্রো লোকটির কাছে কুকুরের মত কুইঁকুইঁ করে। সিডি দেখা পোলাপাইনগুলোর আচরণ অদ্ভুতভাবে পরিবর্তন হতে থাকে। ওদের চিকন শিরাগুলো নীল কেঁচোর মত ভেসে ওঠে শরীরের আনাচ-কানাচ।

মুহূর্তেই ওদের চেহারাগুলো লাল হয়ে যায়। ওরা আঙুল দিয়ে পায়ের তলার মাটি চেপে ধরে। প্রত্যেকে নিজস্ব ভঙ্গিতে শরীরটাকে প্রবোধ দেয়। ওরা অভুক্ত বাঘের মত গর্জন করে। একটু পরেই চার্জের ক্ষুধায় কাঁপতে কাঁপতে মনিটরের আলো নিভে যায়। হঠাৎ ঝনঝন শব্দে টিনের বেড়াটা আলগা হয়ে যায়। বারান্দায় ধুলার সাথে গড়াগড়ি খেতে থাকে উঠতি বয়সের ছেলেগুলো। ওরা চারদিক থেকে বকুলের মায়ের আঁচল ধরে টানতে থাকে। ওদের অস্থির উন্মাদনায় বকুলের মা বিবস্ত্র হয়ে যায়। সে চওড়া মাড়ি খুলে হাসতে হাসতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এসবের কোনও কিছুই তার কাছে যেন অস্বাভাবিক নয়। সে ঘরের খাটালের ওপর এইসব কর্মকাণ্ড দেখেছে বছরের পর বছর। লজ্জা আর সংকোচ তার কাছে এক ধরনের বাহুল্যতা। জড়তা তার কাছে অচেনা ব্যাধি। কেননা বহু বহু সঙ্গমের একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী সে।

ছেলেগুলোকে একটু সামাল দিতে চেষ্টা করল বকুলের মা। সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমতলার পথ ধরে হাঁটতে থাকে ওয়াপদার রাস্তার দিকে। তার ধামার মত পেটটা ময়দার দলার মত সামনের দিকে হেলে পড়ে। চুপসে যাওয়া বেলুনের মত স্তনদুটি নাভির কাছে নেমে আসে। কেমন এক সহখেলোয়াড়ের মত স্বাভাবিক গলায় বলে, ও শুয়াবাচ্চা, ও শুয়াবাচ্চা, ওরোম হরো ক্যা?

তখন পশ্চিমের হলদে চাঁদ বিঘাই গ্রামের শেষ সীমানায় নেমে যায়। ঘন-কালো শূন্যতার কোনও আলোকবর্ষ দূর থেকে প্রকৃতিতে ঝরে পড়ে রহস্যময় অস্থির ধারা। বকুলের মায়ের বহুদিনের ঢেকে রাখা শরীরের গন্ধ ভুরভুর করে বাতাসে ছড়ায়ে যায়। সেই উৎকট গন্ধের এমন মাদকতা, পোলাপাইনগুলো খলবল করতে থাকে ভাঙাচোরা সড়কের ওপর। হঠাৎ ছোরাপের করোটিতে ভর করে ভরাট নিতম্বের একজন নারী অথবা শরীফ বাড়ির বকনা বাছুর কিংবা আজিজ মেছেরের রানি বিবি জোলায়খা। সে নদীর দিকে ফিরে, রাস্তার একধারে দাঁড়িয়ে প্রস্তুত হয় শরীরটাকে আর একবার ঝাঁকানোর জন্য।

চিত্রণ: মুনির হোসেন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »