Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছোটগল্প : জীবনসঙ্গিনী

‘দাদা, কত হল?’ প্রশ্ন করল মেঘনা।

রেস্তোরাঁর ওয়েটারটি বলল, ‘পাঁচ হাজার, ম্যাডাম।’

বিলের অঙ্ক শুনে মুখ শুকিয়ে গেল প্রত্যয়ের, তার ম্যানিব্যাগে ১০০ টাকার বেশি নেই। বারবার করে বলা সত্ত্বেও মেঘনা তাকে জোর করে রেস্তোরাঁয় ধরে নিয়ে এল। অবশ্য, এই ঘটনা নতুন কিছু নয় প্রত্যয়ের কাছে। তবুও, কেমন হীনমন্যতায় ভোগে সে। মেঘনা তার পার্স থেকে ক্রেডিট কার্ড বার করে বিলটা পেমেন্ট করে দেয়, তারপর বলে, ‘চলো। কী হল, কী ভাবছ?’

প্রত্যয়ের সম্বিত ফেরে, সে বলে, ‘হ্যাঁ, চলো।’ রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে মেঘনা প্রত্যয়ের হাতটা ধরে, আর বলে, ‘কালকের ইন্টারভিউয়ের কথাটা মনে আছে তো?’

প্রত্যয় ঘাড় নাড়ে। মেঘনার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এই হাসিটাই এক অজানা আত্মবিশ্বাস এনে দেয় প্রত্যয়কে। এই পাগলি মেয়েটা তার গোটা মন জুড়ে রয়েছে। মেঘনার সঙ্গে প্রত্যয়ের আলাপ হয় ক্লাস টেনে পড়ার সময় সুমনদার কোচিং ক্লাসে। যথারীতি, আর পাঁচজনের মতোই তাদের নোটসপত্র দেওয়া-নেওয়ার সূত্রে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারপর, কখন কীভাবে যে একে-অপরের মনের ঘরে ভালবাসার পাখি বাসা বাঁধল তারা জানতেই পারেনি। প্রত্যয় একটু সংকোচবোধ করত নিজের মনের কথা মেঘনাকে বলার জন্য। কারণ, মেঘনা একটি উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আর, প্রত্যয়ের বাবা সামান্য একজন কেরানির চাকরি করেন। ফলে, প্রত্যয়ের সংকোচবোধটা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু, অপ্রত্যাশিতভাবে মেঘনাই একদিন নোটের খাতার ভিতরে চিঠি আর গোলাপ ফুল দিয়ে প্রত্যয়কে জানিয়েছিল তার মনের কথা। প্রত্যয় দারুণ চমকে গিয়েছিল মেঘনার এই সাহস দেখে। যাইহোক, নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তাদের এই সম্পর্কের পাঁচ বছর হতে চলল।

কিন্তু, প্রত্যয় কোনওদিন মেঘনাকে দামি কিছু কিনে দিতে পারে না। সামান্য ক’টা টাকা পায় টিউশনি করে। বাবা রিটায়ার করেছেন। তাই, তাঁর পেনশন আর প্রত্যয়ের টিউশনির টাকায় কোনওমতে সংসার চলে তাদের। বাড়িতে ছোট দুটো ভাই-বোন রয়েছে। তাদের পড়াশোনারও খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রত্যয় ইচ্ছা থাকলেও মেঘনাকে দামি কিছু দিতে পারে না। কিন্তু, আশ্চর্যভাবে পাগলিটা তার কাছে কিছু চায়ও না। তার দেওয়া ছোট-ছোট উপহারগুলো মেঘনা খুব খুশি হয়ে নেয়। এমনকি, এখনও প্রত্যয়ের হয়ে নিজের পরিবারের সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে, যাতে তারা এই সম্পর্কটাকে মেনে নেয়। মেঘনার এই বিশ্বাসই প্রত্যয়কে জীবনযুদ্ধে লড়ার শক্তি দেয়।

হঠাৎ, প্রত্যয় দাঁড়িয়ে পড়ে। মেঘনা জিজ্ঞেস করে, ‘কী হল? দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?’

প্রত্যয় মেঘনার হাতদুটো ধরে বলে, ‘আমি একটা অপদার্থ, মেঘনা। আজ, তোমার জন্মদিন। আজও তোমায় ভাল কিছু উপহার দিতে পারলাম না। রেস্টুরেন্টের বিলটাও তুমি মেটালে। আমি একটা অকর্মণ্য, আমি তোমার যোগ্য নই।’ বলতে বলতে কেঁদে ফেলে প্রত্যয়।

মেঘনা প্রত্যয়ের হাতটা ধরে বলে, ‘কীসব বলছ উল্টোপাল্টা? এত গোলাপ এনেছ, চকোলেট এনেছ। আর কী চাই! আমি আমার জন্মদিনে তোমাকে খাইয়েছি, কী হয়েছে তাতে?’

প্রত্যয় কান্নাভেজা গলায় বলে, ‘তুমি আমার জন্য কত করো, আমার খেয়াল রাখো, সবসময় আমার পাশে থাকো। আমার পরিবারের ভাল-মন্দেরও খোঁজ রাখো। আর, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারি না। এতগুলো চাকরির ইন্টারভিউ দিলাম, একটাও চাকরি বাঁধাতে পারলাম না। আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না, কিচ্ছু হবে না মেঘনা।’

মেঘনা শক্ত করে প্রত্যয়ের হাত দুটো ধরে বলে, ‘কে বলল তুমি আমার জন্য কিছু করোনি? তুমি আমার জন্য যা করেছ যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না আমার। আর, কে বলল তুমি পারবে না? তুমিই পারবে, নিশ্চয় পারবে। আমার সে বিশ্বাস আছে তোমার ওপরে। নাও, এবার ওঠো। বুড়ো ছেলে, বাচ্চাদের মতো কাঁদছে!’

মেঘনার কথা শুনে হেসে ফেলে প্রত্যয়, বলে, ‘তুমি আমায় এতটা ভালবাসো মেঘনা? এতটা কনফিডেন্ট আমাকে নিয়ে?’

মেঘনা বলে, ‘হুম, মশাই। এতটাই ভালবাসি তোমাকে যে, তোমার জন্য গোটা পৃথিবীর সঙ্গে লড়তে পারি। সারাজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারি। এবার তো চলো। কাল, ইন্টারভিউ আছে তোমার।’

প্রত্যয় চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে মেঘনার বিশ্বাস, মেঘনার ভালবাসাকে সে হারতে দেবে না।

দেখতে দেখতে ১০ বছর পার হয়ে গেছে। মেঘনা এখন একজন স্কুল টিচার। সে এখন ভিক্টোরিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আর বারবার ঘড়ি দেখছে। আজ, সকালবেলায় একটা আননোন নাম্বার থেকে তার কাছে একটা ফোন আসে। ফোনটা জয়দীপ করেছিল। জয়দীপ প্রত্যয় আর মেঘনা দু’জনেরই খুব ভাল বন্ধু। কী একটা জরুরি দরকার আছে, মেঘনা যেন ঠিক ৩টের সময় ভিক্টোরিয়ার গেটের সামনে পৌঁছে যায়। আর, কিছুই সে বলেনি। মেঘনা অবাক হয়, কী দরকার রে বাবা। আজ, সন্ধ্যার ফ্লাইটে প্রত্যয় ১০ বছর পর কলকাতায় ফিরছে। সেইজন্য, সে খুবই ব্যস্ত আর উত্তেজিত। তবু, জয়দীপের কথা ফেলতে পারে না। তাই, সে ঠিক সময়ে পৌঁছে যায় ভিক্টোরিয়ার সামনে। অথচ, দেখো আধঘণ্টা হতে চলল, জয়দীপের পাত্তা নেই। ছেলেটা বরাবরই লেট লতিফ। অন্যদিন হলে না হয় একটা কথা ছিল, কিন্তু আজ দেরি করলে যে মেঘনার চলবে না। নিজের মনে মনেই বলে সে, ‘উফ! জয়টা চিরকালের কেয়ারলেস। জানে প্রত্যয় ফিরছে আজকে, ওকে এয়ারপোর্টে আনতে যাব, তবু দেখো যে কে সেই। আয় না একবার, তোর আমি ১২টা না বাজিয়েছি তো আমার নাম মেঘনা বসু নয়।’

হঠাৎ, দুটো হাত পিছন থেকে মেঘনার চোখদুটো চেপে ধরে। মেঘনা চমকে ওঠে। এই স্পর্শ যে তার খুব চেনা! তবু, দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’

পিছন থেকে চেনা গলায় উত্তর আসে, ‘সে কী! নিজের বিশ্বাস-কেই চিনতে পারছেন না মেঘা ম্যাডাম?’

মেঘনার হৃৎস্পন্দন কয়েক গুণ বেড়ে যায় উত্তেজনায়। সে পিছনে ঘোরে, ঘুরতেই আরও একবার চমকে যায়। সে কি স্বপ্ন দেখছে? এ যে প্রত্যয়!

প্রত্যয়কে মাঝে মাঝে মজার ছলে মেঘনা ‘বিশ্বাস’ বলে ডাকত, আর প্রত্যয় তাকে ডাকত মেঘা ম্যাডাম’ বলে। কিন্তু, প্রত্যয়ের তো সন্ধ্যাবেলায় আসার কথা ছিল? পিছন থেকে একটা হাসির শব্দ আসতেই মেঘনা ঘুরে জয়দীপকে দেখতে পায়। জয়দীপ হাসতে হাসতে বলে, ‘কী রে, কেমন দিলাম বল? দেখ, আগে থেকেই বলে রাখি যে, পুরো প্ল্যানটা কিন্তু প্রত্যয়ের ছিল। ও-ই আমাকে ফোন করে বলল যে, তোকে সারপ্রাইজ দিতে চায়, তাই সন্ধ্যায় নয়, দুপুরের ফ্লাইটে ও কলকাতায় আসছে। আর, আমি যেন ওকে একটু হেল্প করি। ব্যস! আমার কাজ শেষ, নাও এবার তোমরা দু’জনে মিলে তোমাদের প্রণয়ালাপ শুরু করো, আমি বরং আসি।’ এই বলে জয়দীপ প্রত্যয়ের দিকে একবার চোখ টিপে চলে যায়।

মেঘনা একটু অভিমানী স্বরে বলে, ‘জানাওনি কেন যে, তুমি দুপুরের ফ্লাইটে আসছ?’

প্রত্যয় বলে, ‘ওই যে সারপ্রাইজ দেব ভাবলাম, তাই আর জানাইনি।’ মেঘনার হাতদুটো ধরে বলে, ‘সব তোমার জন্য হয়েছে মেঘনা। তুমি যদি না বিশ্বাস করতে আমার ওপর, আমি কিছুই হয়তো করতে পারতাম না। আমি হারতে দিইনি তোমার বিশ্বাসকে, হারতে দিইনি তোমার ভালবাসাকে। ছিলাম একটা বেকার ছেলে, সেখান থেকে আজ দিল্লি ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ডিপার্টমেন্টের হেড ড. প্রত্যয় সেনগুপ্ত। তুমি আমার পাশে না থাকলে আমি এতদূর যেতে পারতাম না।’

মেঘনা মুচকি হেসে বলে, ‘আমি জানতাম তুমি পারবে। তোমার রিসার্চ পেপারের সাফল্যের কথা আমি খবরের কাগজে পড়েছি। তোমার মধ্যে সম্ভাবনা ছিল। তাই, তুমি পেরেছ।’

প্রত্যয় বলে, ‘আর, তুমি ছিলে আমার শক্তি।’

মেঘনা মুখ নামিয়ে বলে, ‘ধ্যাৎ! এইবার কিন্তু আমার খুব লজ্জা করছে।’

এরপর, প্রত্যয় যেটা করল, সেটা মেঘনার কাছে স্বপ্ন মনে হল। হাঁটু গেড়ে বসে কোটের পকেট থেকে একটা গোলাপ ফুলের মতো দেখতে আংটির বাক্স বার করে প্রত্যয়। তারপর, বাক্সটা খুলে আংটিটা বার করে মেঘনার দিকে তুলে ধরে বলে, ‘দশ বছর আগে তুমি আমায় প্রপোজ করেছিলে। উত্তরে শুধু ‘হ্যাঁ’ ছাড়া আর কিছুই বলার সাহস সেদিন আমার ছিল না। আজ, সেই কথাটা বলছি। তুমি কি আমার জীবনসঙ্গিনী হবে?’

মেঘনার চোখে জল এসে যায়। এই দিনটার জন্যই সে দশ বছর ধরে অপেক্ষা করছিল। সে হাত বাড়িয়ে দেয় প্রত্যয়ের দিকে, প্রত্যয় আংটিটা পরিয়ে দেয়। তারপর, মেঘনা আর প্রত্যয় একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটায়। বিকেল গড়িয়ে আসে। বিকেলের নরম আলো মেঘনার মুখে এসে পড়ে, প্রত্যয় তন্ময় হয়ে দেখতে থাকে তাকে।

মেঘনা জিজ্ঞেস করে, ‘কী দেখছ?’

প্রত্যয় উত্তর দেয়, ‘কনে দেখা আলোয় আমার কনেকে দেখছি।’

মেঘনা লজ্জা পেয়ে যায় আবার, প্রত্যয়ের কাঁধে মাথা রেখে সে বলে, ‘তুমি এইরকমই থেকো সারাজীবন।’

প্রত্যয় বলে, ‘তুমিও।’

তারপর, দুজনের হাতে হাত রেখে সূর্যাস্তের মোহময় রূপ দেখতে থাকে। প্রকৃতি যেন সাক্ষী হয় একটি সম্পর্কের পরিণতি পাওয়ার দিনে।

চিত্রণ: মুনির হোসেন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »