Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়: রজনীর শেষ তারা

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়া (৪ অক্টোবর ১৯৩১-১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২) নিশ্চয়‌ই অকালপ্রয়াণ নয়, তবে বাংলা গানের নক্ষত্রযুগের অবসান অবশ্য‌ই। বিগত এক শতকের বাংলা গানের পরম্পরায় যে পটপরিবর্তন, তাকে যদি রবীন্দ্রনাথ-অতুলপ্রসাদ-দ্বিজেন্দ্রলাল-রজনীকান্ত-কাজী নজরুল ইসলামবাহিত ঐতিহ্যিক বলি, তাহলে তার পাশাপাশি তিরিশের দশক থেকে সমান্তরালভাবে আরও একটি যে ধারা প্রবাহিত হচ্ছিল, সেই ধারার অন্যতম সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

এ-সমান্তরাল ধারাটির সূচনালগ্ন উনিশ শতকের গোড়া থেকেই। গ্রামোফোন রেকর্ডের আবির্ভাব সমগ্র বিশ্বে যেমন, ঠিক তেমনই বাংলা সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও যুগান্তর এনেছিল। আশি বছরের ওপর গ্রামোফোন দাপিয়ে বেড়িয়েছে, সিডির আগমনের মুহূর্ত পর্যন্ত। নির্মাণ করেছে বাংলা সঙ্গীতের অপরূপ ও বিচিত্র মিনার। এছাড়াও অবদান ছিল তিরিশের দশকে কলকাতা বেতারের। এক বিপুল সঙ্গীতশিল্পীর কারুবাসনার প্রশ্রয় দিয়েছে ও অদ্যাপি দিয়ে চলেছে বেতার, যদিও দূরদর্শনের প্রতাপে আজ তার জনপ্রিয়তা অনেকটাই কোণঠাসা। তৃতীয় আরেকটি মাধ্যম, চলচ্চিত্র, তৃতীয় দশকের মধ্যবর্তী সময় থেকে সবাক হ‌ওয়ার ফলে, একদিকে নায়ক-নায়িকার সঙ্গীতপারদর্শী হ‌ওয়ার অত্যাবশ্যকতা ঘোচাল, তেমনি অসাধারণ নেপথ্য কণ্ঠশিল্পীর (প্লেব্যাক আর্টিস্ট) সম্ভাবনা তৈরি করল। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এ-সময়কার সঙ্গীতপ্রতিভূ, সঙ্গীতপ্রতিভা।

পিতা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছেই তাঁর সঙ্গীতশিক্ষার সূচনা। পরবর্তীকালে পাতিয়ালা ঘরানার সুবিখ্যাত শিল্পী ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলীর কাছে নাড়া বাঁধেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর বড়ে গোলামের পুত্র মুনাব্বর আলীর কাছেও সঙ্গীতের পাঠ নেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এ টি কানন, সন্তোষকুমার বসু, চিন্ময় লাহিড়ীর কাছেও গান শিখেছিলেন। মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে গান গেয়ে ‘গীতশ্রী’ উপাধি পান, যে পদবি তাঁর নামের আগে সর্বদা উচ্চারিত হয়। প্রথম রেকর্ড বেরোয়, সে-ও তাঁর চোদ্দো বছর বয়সে, ১৯৪৫ সালে। কুড়ি বছর বয়সে তিনি বম্বে (অধুনা মুম্বাই) যান হিন্দি ছবি ‘তারানা’-র প্লেব্যাক করতে, ১৯৫১-তে। সহশিল্পী কে? না— লতা মঙ্গেশকর।

বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক করেন তিনি এ-সময়ে। শচীন দেব বর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, অনিল বিশ্বাস প্রমুখের সুরে। কিন্তু সেখানে স্থায়ী হ‌ওয়ার মানসিকতা তাঁর ছিল না বলে কলকাতায় চলে আসেন।
বেতারে তাঁর গান প্রথম প্রচারিত হয় যখন, তখন তাঁর বয়স মাত্রই বারো। সেই থেকে প্রায় সারাজীবন বেতারশিল্পী হিসেবে পেয়েছি তাঁকে। পঙ্কজকুমার মল্লিকের সঙ্গীত পরিচালনায় যে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পরিবেশিত হয়, সেখানেও একাধিক গানে বিভিন্ন পর্যায়ে সঙ্গীত পরিবেশিত হয়েছে সন্ধ্যার কণ্ঠে। ধ্রুপদী সঙ্গীত থেকে আধুনিক, কীর্তনাঙ্গ, মীরা ও অন্য মরমী সাধকের ভজন, রবীন্দ্রসঙ্গীত— সব ধরনের গানেই শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছেন তিনি অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল জুড়ে।

বেতারে তাঁর গান প্রথম প্রচারিত হয় যখন, তখন তাঁর বয়স মাত্রই বারো। চিত্র: গুগল

তাঁর সম্পর্কে একটি বিবেচিত জিনিস হল, কবিদের গীতরচনা যখন বাংলা গানের জগতে আর দেখা যেত না, সেসময়ে বেশ কিছু কবির লেখা গান তিনি পরিবেশন করেছেন। একদা কবিরা গান-ও লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল তো বটেই, আরও বহু কবির লেখা গান বাংলা সঙ্গীতজগৎকে সমৃদ্ধ করেছিল। এই ধারাটি পরে লুপ্ত হয়ে যায়, যদিও ব্যতিক্রমীভাবে সজনীকান্ত দাসের লেখা গান ‘প্রণাম তোমায় ঘনশ্যাম’ (কানন দেবীর কণ্ঠে), অথবা প্রেমেন্দ্র মিত্র ও অন্যান্য কবিদের কবিতা সুরারোপিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সলিল চৌধুরী যুগান্তকারী ভূমিকা রাখেন, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ আর ‘ঠিকানা’ কবিতাকে সুরারোপিত করে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘পাল্কির গান’-ও তাঁর সুরারোপিত। পরবর্তীতে ‘বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই’ পেয়েছি প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে, যা মূলত কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর একটি কবিতা।

সন্ধ্যা গাইলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত গান ‘মধুর মধুর বংশী বাজে’, গাইলেন কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের লেখা ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’। কবিতা ও গানের যুগলবন্দী রচিত হল নতুন করে তাঁর কণ্ঠের অভিজাত সুরবিন্যাসে। তিনি যাঁদের সুরে গেয়েছেন, সেই বিশাল তালিকার মধ্যে আছেন শচীন দেব বর্মন, অনিল বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুধীন দাশগুপ্ত, নচিকেতা ঘোষ, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। গীতিকারদের মধ্যে সলিল চৌধুরী, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অনেকে। হ্যাঁ, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের মত কবির লেখা ‘থ‌ই থ‌ই শাওন এল ওই’-তেও কণ্ঠ দেন তিনি।গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়রাও কবি ছিলেন, যাঁদের লেখা বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সন্ধ্যা। তবে এঁরা গীতিকার হিসেবে এতটাই প্রসিদ্ধ হয়ে গেছেন যে তাঁদের কবিসত্ত্বাকে আমরা কেউ তেমন মনে রাখি না।

যেমন মনে রাখি না কবি শ্যামল গুপ্তকে, যিনি ছিলেন রসায়নের কৃতী ছাত্র, কবি ও গীতিকার, এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের স্বামী। মীরা দেব বর্মন গান লিখেছেন শচীনকর্তার জন্য, আর উল্টোদিকে শ্যামল লিখেছেন সন্ধ্যার জন্য। শ্যামল গুপ্ত রচিত গান গেয়েছেন অনেকেই, যেমন মান্না দে (‘ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে’), মানবেন্দ্র (‘আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি’), সতীনাথ মুখোপাধ্যায় (‘আমি চলে গেলে পাষাণের বুকে লিখো না আমার নাম’)। সন্ধ্যার গলায় শ্যামল গুপ্ত রচিত আধুনিক ও ছায়াছবির গান, তা-ও এক আলাদা নিবন্ধের বিষয় হতে পারে। ‘ও বক বক বক বকম বকম পায়রা’, ‘আমরা তো আর ছোট নেই’, ‘ক্ষতি কি না হয় আজ পড়বে, মেটেরিয়া মেডিকার কাব্য’ একদিকে, অন্যদিকে ‘কী করি সজনী আসে না প্রীতম’, ‘চন্দন-পালঙ্কে শুয়ে একা একা কী হবে’, ‘ঝরাপাতা ঝড়কে ডাকে’ ইত্যাদি বেশ কিছু গান। ছিলেন রসায়নবিদ, চাকরি করতেন পুণেতে বিস্ফোরণবিশেষজ্ঞ হিসেবে। ‘অরণি’, ‘অভ্যুদয়’ ইত্যাদি পত্রিকায় লিখতেন কবিতা, আর গল্প লিখতেন ‘বসুমতী’, ‘সত্যযুগ’-এ। লিখেছেন চিত্রনাট্য, আর প্রথমদিকে গান-ও গাইতেন। ১৯৬৬-তে বিয়ে করলেন সন্ধ্যাকে। আর তার আগে থেকেই ঘটাতে লাগলেন অন্য ধরনের বিস্ফোরণ— গানরচনায়‌। তাঁর লেখা গানে আজও আপ্লুত বাঙালি। ২৭ জুলাই ২০১০-এ ক্যানসার তাঁর জীবন কেড়ে নেয়।

প্রসঙ্গত, সন্ধ্যার মৃত্যুর পরদিনই প্রয়াত হয়েছেন আর এক জননন্দিত বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী বাপি লাহিড়ী। বাপি সুর দিয়েছিলেন শ্যামল গুপ্ত রচিত গানেও। এবছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সে-উপলক্ষে তাঁর সুরারোপিত গানদুটির কথা বলে বাপির প্রতিও শ্রদ্ধা জানানো যাক। ১. হাজার বছর পরে আবার এসেছি ফিরে, ২. সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম ‘মুজিবর মুজিবর মুজিবর’/ সাড়ে সাত কোটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেলাম ‘মুজিবর মুজিবর মুজিবর’!

গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নিজে সুরও দিয়েছেন। ‘চন্দন-পালঙ্কে শুয়ে একা একা কী হবে’ আর ‘ঝরাপাতা ঝড়কে ডাকে, বলে তুমি নাও আমাকে’ গানদুটির সুরকার ও শিল্পী তিনি নিজে। সিনেমায় প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৫৫-তে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে। সুচিত্রা সেন এ-ছবির নায়িকা। ছবিটিতে অভিনয়ের মাধ্যমে উত্তম-সুচিত্রা যেমন বাঙালির হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিলেন, তেমনই সুচিত্রার লিপে সন্ধ্যার গান একটি শাশ্বত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। সুচিত্রা-উত্তমের যুগলবন্দী নিয়ে যেমন লিখে শেষ করা যাবে না, তেমনি সুচিত্রা-সন্ধ্যা নিয়ে লিখতে বসলে একদিকে মন্থন করতে হবে গোটা অভিনয়শাস্ত্র, অন্যদিকে সঙ্গীতবিদ্যার যাবতীয় জ্ঞান। তবু এই দৈবী রসায়নের সামান্য পরিচয় দেওয়া যাক। ‘পথে হল দেরি’ (১৯৫৭) ছবিতে ‘কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে’ আর ‘এ শুধু গানের দিন’ গানদুটিতে দুজনের মধ্যে কে যে আমাদের অধিক অকূলে ভাসিয়ে নিয়ে যান, নির্ণয়ে অপারগ আমরা।

অনেক, অনেক পরে ‘দেবী চৌধুরাণী’ ছবিতে বজরায় বসে প্রায় ছিন্ন খঞ্জনার মত সুচিত্রার সমর্পিত হৃদয়াকুতি, আর তাঁর দোহার হয়ে সন্ধ্যার রাগাশ্রয়ী কণ্ঠ ‘ওগো এসো হে আমার রাজাধিরাজ’, তৈরি করেছে এমন এক মহালগন, যেখানে সুধীন্দ্রনাথের ভাষা ধার করে বলতে ইচ্ছে করে, ‘থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি!’ অথবা ধরা যাক চিরন্তন মরমী ছবি ‘উত্তরফাল্গুনী’। সুচিত্রা যখন মুজরোর ভঙ্গিতে গাইছেন ‘তোরে নয়না লাগে’, ছবির মুখরাটুকু ছায়াদেবী গেয়েই স্থান ছেড়ে দেন সন্ধ্যাকে, আর সন্ধ্যাও প্রমাণ করার সুযোগ পান, ওস্তাদ বড়ে গোলামের শিষ্যা বটে তিনি!

‘সপ্তপদী’-র কথাটা একদম শেষে উল্লেখ করতে চাই। কারণ, উত্তম-সুচিত্রার জীবনে যে তিরিশটি যৌথ ছবি, তাতে ওই একটিমাত্র ছবিতে ওই একটিমাত্র ডুয়েট গান আছে, ‘এ পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলো তো?’ কণ্ঠ দিয়েছিলেন হেমন্ত ও সন্ধ্যা। বাংলা চলচ্চিত্রের হাজার হাজার গানের মধ্যমণি হয়ে আছে গানটি, যেন বাঙালি জীবনে রোমান্সের হীরকখণ্ড! যে বাঙালি এই ছবি দেখেনি, বারবার এ-গান শুনে অভিভূত হয়নি, হয়ে ওঠেনি নস্টালজিক, তার বাঙালিত্বে সন্দেহ করার যথার্থ কারণ আছে। হাজার হাজার গান পরেও সিনেমায় গাওয়া হয়েছে, হয়েছে শত শত ডুয়েট গান, কিন্তু এই গানটির সমকক্ষ হতে পারেনি কোনওটিই। এইখানেই হেমন্ত- উত্তম-সুচিত্রা-সন্ধ্যা অনন্য!

পরিশেষে একটি গানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতেই হবে। সেটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা একটি গানের সন্ধ্যা-কৃত পরিবেশনা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সন্ধ্যা নিয়োজিত ছিলেন সঙ্গীতের মাধ্যমে নিজ দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করতে। অবশেষে ষোলোই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হল, আর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এ পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বঙ্গবন্ধু। ওইদিন রাতে কলকাতা বেতার থেকে পরিবেশিত হয়েছিল সন্ধ্যার গান, ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি আজ/ ঘরে ঘরে এত খুশি তাই/ কী ভাল তোমাকে বাসি আমরা/ বলো কী করে বোঝাই!’
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালনের বছরটিতেই বন্ধুর পথে যাত্রা করলেন সন্ধ্যা! আমরা কেবল এইটুকুই বলতে পারি, ‘দিব্যান্ লোকান্ সা গচ্ছতু।’— দিব্যলোকে তাঁর প্রস্থান হোক।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
J.Ghosh
J.Ghosh
3 years ago

প্রনাম?

সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
সিদ্ধার্থ মজুমদার Siddhartha Majumdar
2 years ago

বা: লেখাটি পড়ে বেশ ভালো লাগল…

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »