Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

তীর্থঙ্কর মৈত্রের একগুচ্ছ কবিতা

রোদ হয়ে আছ

কচার বেড়ার গায়ে কার্তিকের বিকেলের
রোদ এসে পড়ে আছে, বেড়ে ওঠা লালশাক,
খেতের মাটিতে তেজি পাতা মেলে বেগুনের
চারা, বাঁধাকপি, পালং, শালিকের সুখী ডাক!
তুমি তার মাঝে মিশে—, ঘানিঘর নেই তবু
তার চিহ্ন ঢেকে আছে, ঝরে কাঠবাদামের
লাল পাতা। সারাদিন ঘুরে চলা চোখ ঢাকা
বলদেরা নেই আর এই পড়ন্ত রোদের
রঙে মিলেমিশে তার গতি পেল চাকা।
শতাব্দীর ইতিহাসে; সেই সব বলদের
নিরীহ ঠিকানা আজ। তুমি তার সাথে ছিলে;
আজ কচার বেড়ায়, রোদ হয়ে আছ মিশে—

ধান হয়ে পেকে

বাঁশের সাঁকোর দৃশ্য মনে এল শেষ কার্তিকের।
সন্ধ্যার কুয়াশা মেখে ছোট্ট নদী বুকে, শালিকের
ডাক মেখে সাঁকো বাঁশে বসে কালো ফিঙে দুটি শুধু
ল্যাজ নেড়ে কুয়াশায় করে তারা যেন অভিসার—
নদীর দু’পারে খেতে— সবে ধান কচি শিষ তুলে
অঘ্রাণের আনন্দকে চাষির উঠানে এনে দিতে;
কুয়াশার চাদরের আড়ালে করে যে নীরবে সাধনা!
অতীতের চাষিদের মন থেকে কামনার ছোট কণা
ধানের জমিতে এসে ধান হয়ে পেকে হবে সোনা!
লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ, জমির আলের পরে রেখে
ধীরে এসে প্রতি ঘরে ছড়াবেন শান্তি ও শুশ্রূষা!
বাঁশের সাঁকোয় সেই ফিঙে দুটি পুরাবে বাসনা।

নবান্নের আহ্বান রেখে

কুয়াশা নেমেছে দেখি এ রাতের মফস্বলে!
শেষ কার্তিকের চাঁদ, তার মাঝে জ্যোৎস্না ঢালে;
তোমার বাড়ির ছাদে মাঠে ঘাসে হৃদয় অঞ্চলে।

সেই কুয়াশার মাঝে কবেকার চাঁদ ফের এসে
কথা বলে হেসে আজ, স্মৃতির আড়াল থেকে ভেসে!
সেই কথা— প্রেমালাপ ধানের শরীরে নেমে এলে;

কুলের পাতায় ফুলে নীরব স্পর্শের ভাষা তুলে
অঘ্রাণকে কাছে চায়, যে অঘ্রাণ মনে দোলে—
কুয়াশায় মাখা চাঁদ, আলো যায় তাতে ফেলে!

কার্তিকের রাত শুধু তোমার মনের ধানখেতে
নবান্নের আহ্বান রেখে, বলবে সে— ‘থেকো সাথে!’
শিশিরে ভিজছে মন, হৃদয়ের চাঁদ নিয়ে মফস্বলে!

মুছবে না এই দৃশ্য

কোনো এক দিন অঘ্রাণের রাতে তুমি
চাঁদের মতন, কুয়াশা মাড়িয়ে দামি
রূপ নিয়ে এসে, দাঁড়াবেই অভিমানী!

সেই দিন বুঝি, জীবনের অন্ধকার
সব মুছে দিয়ে— পাব তোমাকে আবার!
চোখে চোখ রেখে, দু’য়ে চুপ প্রীতিকামী।

সব কথা এসে দুজনের দুটি চোখে,
হৃদয়ের দেশে, একে অন্যেরই দিকে
চেয়ে থেকে থেকে, চুপি আসবে আগামী!

আমাদের এই দৃশ্য শতাব্দীর পরে আরো
শতাব্দী অবধি, রয়ে যাবে— তবু একবারো
মুছবে না এই, প্রেমের অপূর্ব রূপ, প্রেমী!

দূরে নীল তাঁবু হাসে

যে পাতারা ছায়া দিত, ঝরে পড়ে যায় হলুদ সে হলে;
শীতে তার আগুনেতে হাত সেঁকে বসে রাতে মানুষেরা;
এমন নিয়ম দেখো, তুমি দেবদারু, ঋজু, পাতা ঝরা
গাছেদের নিয়মেতে পাতা ঝরে, তবু আকাশের তলে;
মুক্ত ভেবে সুখী থাকো, ভাবো— ‘এই অনন্তের এক তুমি’—
চারিদিকে কোলাহল, জগতে বিমান উড়ানের ফলে
তোমার এই ‘মুক্ত’ ভাব, আগন্তুক এক যেন চিরকাল;
আকাশের এই নীল তাঁবুর আশ্রয়ে সে তো ঊর্ধ্বগামী—
এ কথা চড়াই পাখি বোঝে বলো, বোঝে? শুধু তার ডালে
উড়ে এসে বসে ভাবে— ‘তারা মুক্ত সব আকাশের তলে।’
ডানার বাতাসে ঝরা পাতা সে কি ভাবে মনে মনে— ‘মুক্ত’?
পাতাকুড়ানির মেয়ে, নিয়ে যায় তাকে দেখো— সেও সুখী।
ভাত ফোটে মনে তার, শীতের সন্ধ্যায়, মাটির উনুনে।
এইভাবে সুখী সব, মুক্ত তারা— দূরে নীল তাঁবু হাসে—

চিত্রণ : চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »