রোদ হয়ে আছ
কচার বেড়ার গায়ে কার্তিকের বিকেলের
রোদ এসে পড়ে আছে, বেড়ে ওঠা লালশাক,
খেতের মাটিতে তেজি পাতা মেলে বেগুনের
চারা, বাঁধাকপি, পালং, শালিকের সুখী ডাক!
তুমি তার মাঝে মিশে—, ঘানিঘর নেই তবু
তার চিহ্ন ঢেকে আছে, ঝরে কাঠবাদামের
লাল পাতা। সারাদিন ঘুরে চলা চোখ ঢাকা
বলদেরা নেই আর এই পড়ন্ত রোদের
রঙে মিলেমিশে তার গতি পেল চাকা।
শতাব্দীর ইতিহাসে; সেই সব বলদের
নিরীহ ঠিকানা আজ। তুমি তার সাথে ছিলে;
আজ কচার বেড়ায়, রোদ হয়ে আছ মিশে—
ধান হয়ে পেকে
বাঁশের সাঁকোর দৃশ্য মনে এল শেষ কার্তিকের।
সন্ধ্যার কুয়াশা মেখে ছোট্ট নদী বুকে, শালিকের
ডাক মেখে সাঁকো বাঁশে বসে কালো ফিঙে দুটি শুধু
ল্যাজ নেড়ে কুয়াশায় করে তারা যেন অভিসার—
নদীর দু’পারে খেতে— সবে ধান কচি শিষ তুলে
অঘ্রাণের আনন্দকে চাষির উঠানে এনে দিতে;
কুয়াশার চাদরের আড়ালে করে যে নীরবে সাধনা!
অতীতের চাষিদের মন থেকে কামনার ছোট কণা
ধানের জমিতে এসে ধান হয়ে পেকে হবে সোনা!
লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ, জমির আলের পরে রেখে
ধীরে এসে প্রতি ঘরে ছড়াবেন শান্তি ও শুশ্রূষা!
বাঁশের সাঁকোয় সেই ফিঙে দুটি পুরাবে বাসনা।
নবান্নের আহ্বান রেখে
কুয়াশা নেমেছে দেখি এ রাতের মফস্বলে!
শেষ কার্তিকের চাঁদ, তার মাঝে জ্যোৎস্না ঢালে;
তোমার বাড়ির ছাদে মাঠে ঘাসে হৃদয় অঞ্চলে।
সেই কুয়াশার মাঝে কবেকার চাঁদ ফের এসে
কথা বলে হেসে আজ, স্মৃতির আড়াল থেকে ভেসে!
সেই কথা— প্রেমালাপ ধানের শরীরে নেমে এলে;
কুলের পাতায় ফুলে নীরব স্পর্শের ভাষা তুলে
অঘ্রাণকে কাছে চায়, যে অঘ্রাণ মনে দোলে—
কুয়াশায় মাখা চাঁদ, আলো যায় তাতে ফেলে!
কার্তিকের রাত শুধু তোমার মনের ধানখেতে
নবান্নের আহ্বান রেখে, বলবে সে— ‘থেকো সাথে!’
শিশিরে ভিজছে মন, হৃদয়ের চাঁদ নিয়ে মফস্বলে!
মুছবে না এই দৃশ্য
কোনো এক দিন অঘ্রাণের রাতে তুমি
চাঁদের মতন, কুয়াশা মাড়িয়ে দামি
রূপ নিয়ে এসে, দাঁড়াবেই অভিমানী!
সেই দিন বুঝি, জীবনের অন্ধকার
সব মুছে দিয়ে— পাব তোমাকে আবার!
চোখে চোখ রেখে, দু’য়ে চুপ প্রীতিকামী।
সব কথা এসে দুজনের দুটি চোখে,
হৃদয়ের দেশে, একে অন্যেরই দিকে
চেয়ে থেকে থেকে, চুপি আসবে আগামী!
আমাদের এই দৃশ্য শতাব্দীর পরে আরো
শতাব্দী অবধি, রয়ে যাবে— তবু একবারো
মুছবে না এই, প্রেমের অপূর্ব রূপ, প্রেমী!
দূরে নীল তাঁবু হাসে
যে পাতারা ছায়া দিত, ঝরে পড়ে যায় হলুদ সে হলে;
শীতে তার আগুনেতে হাত সেঁকে বসে রাতে মানুষেরা;
এমন নিয়ম দেখো, তুমি দেবদারু, ঋজু, পাতা ঝরা
গাছেদের নিয়মেতে পাতা ঝরে, তবু আকাশের তলে;
মুক্ত ভেবে সুখী থাকো, ভাবো— ‘এই অনন্তের এক তুমি’—
চারিদিকে কোলাহল, জগতে বিমান উড়ানের ফলে
তোমার এই ‘মুক্ত’ ভাব, আগন্তুক এক যেন চিরকাল;
আকাশের এই নীল তাঁবুর আশ্রয়ে সে তো ঊর্ধ্বগামী—
এ কথা চড়াই পাখি বোঝে বলো, বোঝে? শুধু তার ডালে
উড়ে এসে বসে ভাবে— ‘তারা মুক্ত সব আকাশের তলে।’
ডানার বাতাসে ঝরা পাতা সে কি ভাবে মনে মনে— ‘মুক্ত’?
পাতাকুড়ানির মেয়ে, নিয়ে যায় তাকে দেখো— সেও সুখী।
ভাত ফোটে মনে তার, শীতের সন্ধ্যায়, মাটির উনুনে।
এইভাবে সুখী সব, মুক্ত তারা— দূরে নীল তাঁবু হাসে—