Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর কবিতাগুচ্ছ

ব্যাপ্ত হয় সারা অঙ্গে

মুখের উপরে তবু কেবলই সশব্দে ঘোরে একটি নীল মাছি
বেঁচে আছি আজও বেঁচে আছি
এইসব অনুভূতি ম্লান হয়, হতে হতে শব্দচূর্ণ ঝরে
তোমার আমার মুখে নিঝুম মর্মরে
অথবা এমনই ব্যস্ত স্তব্ধতা সঞ্চিত ছিল মায়াবী বাক্সোতে
হিমঘন তুষারের স্রোতে
অবশ স্পন্দন দেবে এইভাবে গাঢ় নীল বিষাক্ত মক্ষিকা
সমাধি তুহিন পাত্রে বিষে স্নিগ্ধ শিখা
মৃত্যুর শীতল দিয়ে আলস্যে নির্মম প্রেমে জ্বালো; ধ্বংসবীজ
রোপণে তন্দ্রার মোহ ভেবেছ বিলীন হবে, জানো না কিছুই
কীভাবে ধূসর মৃদু ঘুমের পরিজ
গলে যায় কৃপণের তালু বেয়ে, শনিবার এলে
বন্দি দুই বাহু পদ অঙ্গ দিয়ে মনে হয় ছুঁই
অনেক জমানো কাজ, লুপ্ত হবে সব জানি রবির বিকেলে
কফির হেলানো কাপে, সামান্য সঞ্চয় নীল কুণ্ডলীটুকুও
এভাবে মাছির মতো উড়ে উড়ে ‘দুয়ো’

বলে বলে ঘুরে যায়; বাসে ট্রামে রাস্তাতেও সর্বক্ষণ ঘুম
ব্যাপ্ত হয় সারা অঙ্গে, মাথায় কুয়াশা, পথে নিহত কুসুম।

*

যা হতে পারিনি

যা হতে পারিনি, যা হতে পারি না
যা হবে না কোনোদিন
তাই নিয়ে কত ঈর্ষা হিংসা
ক্ষোভ বিদ্বেষ ঋণ

রেখে চলে যাওয়া, শীতে কেঁপে ওঠা
ভোর ভোর কুয়াশায়
বুকে অভিমান, গলায় আগুন
জ্বর ছমছম গায়

আগুনে পুড়ছে কেউ সে পুড়ুক
আমার কী আসে যায়
আমি পুড়ছি না জ্বর জ্বর গায়ে
অভিমানে বেদনায়!

হতে কি পেরেছি কিছুই কখনো
ছুঁয়েছি রুপোলি মুখ!
নিরুদ্দেশেই যাব, বুকে কাঁটা
ফুটছে, তা সে ফুটুক

*

পাঁচিল

টাকার মধ্যে জমিয়ে রেখেছে তারা
কিছুটা কি অভিমান
বড় স্নেহে তাই তুলে তুলে নেয় লোকে
রুমালেতে মোছে ঘাম
ব্যাংকে লকারে দিয়ে রাখে তাকে চাবি
তার বুঝি করে শীত
ঘাসের শিশির পড়ে থাকে ভিজে ভোরে
রাস্তার কংক্রিট
তারা চেয়ে চেয়ে দেখে মুগ্ধের চোখে
সকলেই অসহায়
মোহরের মেঘ অভিমানে জমে জমে
বৃষ্টি শুধু ঝরায়

আমিও পারিনি ফেরাতে দুচোখ লোভী
তুমিও পারোনি কিছু
দুজনের মাঝে পাঁচিল তুলেছি শুধু
ক্রমশ হয়েছি নিচু

*

বিষাদে আপ্লুত থাকি

যে হাতে ছুঁয়েছি তাকে সেই হাত রক্তকালিমায়
ভরা আজ, যে শরীরে একদিন তাকে আলিঙ্গনে
জড়িয়েছি, শয্যাশায়ী সে শরীর বিনম্র লজ্জায়
চুম্বনে ঝরে না মধু আজ শুধু অকালবোধনে
প্রতি মধ্যরাতে কত জ্বলেছিল স্বপ্নের জোনাকি
কত ভেসেছিল নীল জাহাজেরা সমুদ্রের জলে
নিশীথে সুগন্ধি ধূপ, জল্পনা কল্পনা
সারাদিন সারারাত তার সঙ্গে, সেসব কথা কি
বিস্মরণ ধুলোচাপা, অনেক বলেছি কথা, আর বলব না
সাত সমুদ্রের পারে কুমারীর চোখের কাজলে
কী ছিল কুহক মোহ, সাবানের ফেনিল বুদ্বুদ
কত না রক্তিম হত গোধূলির ম্লান সূর্যালোকে
কবে যেন বিস্ফোরণে ভেঙে গেল, গুলি ও বারুদ
বিষাক্ত করেছে আজ জতুগৃহ, শিরায় শিরায়
শুধু শ্বেতকণিকার পদধ্বনি সুগম্ভীর, শোকে
বিষাদে আপ্লুত থাকি, পরাজিত গ্লানি বেদনায়
ভাঙা জানালার ফাঁকে হিমতুষারের ঝড়, শীত
দিদিমা কেন যে নাম রেখেছিলে আমার সুজিত!

*

নৌকো কবে ভেসে গেছে

কোথাও কেমনভাবে স্বর্ণরেণু কুহেলির মতো
স্তূপময় জমেছিল, জলধারা বর্ষাকণা মেঘময়তার
প্রান্তে এসে পড়ে থাকে, ওই তার স্তনচূড়ো, যেন ক্ষয় তার
ধূম হয়ে ঝরে পড়ে, ঝরোঝরো নম্র অবনত
ভারে ভারে ভরে থাকা এ মেদুর পরাবৃত্ত গোল বৃত্তাকার
ফলানো ছুরির নিচে ফুলে থাকে, যেন তার কত
আদরে আদুর হয়ে ভরে থাকা, ভরে থাকা কোমল সংখ্যার
শঙ্খধ্বনি বেজেছিল, কোমল লাবণ্য গন্ধ আলোর সন্তত
এভাবে বঙ্কিম হয়ে অস্পষ্ট আভাস হয়, কোমল পাতার
নৌকো কবে ভেসে গেছে মায়ার কুয়াশাপুরে চূর্ণ পরাহত।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
3 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Subhra Kumar Mukhopadhyay
Subhra Kumar Mukhopadhyay
2 years ago

অসাধারণ এই গুচ্ছ কবিতা। সুজিত বসুর কবিতা আমাদের প্রাণিত করেছে সাতের-আটের দশকে। দেশ পত্রিকা সহ সেসময় সব নামী পত্র পত্রিকায় সুজিত বসুর কবিতা পড়তাম। মাঝে হাতে এসেছে দুটি কাব্যগ্রন্থ; কিন্তু কবি যেন হঠাৎ নিখোঁজ। আবার এখানে সেখানে দেখছি তাঁর কবিতা। গত বছর শারদীয় কবি সম্মেলন সহ বিভিন্ন শারদ সংখ্যায় অসাধারণ সব কবিতা পড়েছি। ভালোভাষাকে ধন্যবাদ, এই কবিতাগুচ্ছ পাঠকদের উপহার দেবার জন্য।

Kishore Dutta
Kishore Dutta
2 years ago

কবি সুজিত বসুর কবিতাগুচ্ছ অসাধারন। এই কবিতাগুচ্ছ এর ছন্দে ও আবেগে পরিপূর্ণ অর্থপূর্ন প্রতিটি কবিতা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। কবির এই কবিতাগুচ্ছ পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ভালোবাসা কে অশেষ ধন্যবাদ। আশাকরি আগামীতেও কবি সুজিত বসুর লেখা সুন্দর সুন্দর কবিতা আমাদের উপহার দেবেন।

Bipasha
Bipasha
2 years ago

কবি সুজিত বোস আত্মাকে আলোড়িত করে এমন কবিতা লিখেছেন। কবিতাগুলো পড়তে খুব ভালো লাগে। আরো কবিতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব।

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »