Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সুজিত বসুর কবিতা: কিছু কিছু পাপ

নিহত ভোমরা

কিছুটা থাকে রহস্যে ও কিছুটা ভরে কুয়াশা
নিস্তব্ধ ছলনাময়ী স্বর্ণবুটি ময়ালে
শয়ানে ছিল কুণ্ঠাময়ী, লজ্জাব্রীড়াবনতা
অথচ তাকে উদঘাটনে অহঙ্কারী দুরাশা
প্রকট করে পাপের জ্বরে মহিমাশির নোওয়ালে
চরণতলে, আগুন জ্বলে, কৌটো ভরা ভোমরা
প্রখর শীতে জমালে তাকে, নিধনে বুঝি তোমরা
বরণ করো অন্ধতাকে, শরীরে নির্জনতা।

*

ডুবে যাওয়া তরী

একটি ভীরু আর্তনাদ ধ্বনিত হবে পাষাণে
এ যেন ছিল ভাগ্যলিপি, বণিক কেন খনিজ
ধাতুকে দাও সঞ্জীবনী, জানো না বুঝি ও নিজ
মালিন্যেই অনলে যাবে, বেদনাঘন ভাসানে

ও ধাতুমল জলকে কেন কোমল উৎসারণে
লিপ্ত করে কলঙ্কী তা না জেনে কেন দয়াতে
গিয়েছ তাতে লাবণ্য আর ঝরনা সোনা বহাতে
সে পাপে ডোবে পণ্যতরী, বেদনা সেই কারণে।

*

মৃত মৎস্য

বেলাভূমিতে রুপোলি ছায়া বিধুর ঘন বিকেলে
নিহতমুখে মৎস্যটিও জ্যোৎস্নামাখা ছড়ানো
বালুর ধূ ধূ শুভ্র বুকে, ধীবর তুমি কি পেলে
পূর্ণ কোন গভীর শাঁস তৃপ্তিসুখে ঝরানো
লাবণ্য বা ঝিকোনো আঁশ, চারারোপণে সাঙ্গ
পাপের ঘন নিনাদটুকু, মসৃণতায় অংকুর
বিতৃষ্ণায় করেছ বার, একটি মৃত কানকো
যা থেকে তুমি নিহত হবে, এতটা ছিলে ভঙ্গুর।

*

ক্রান্তিকাল

উৎক্ষিপ্ত স্বর্ণজাল, নিকটে দিক চক্রবাল, দৃশ্যমান অদূরে
ঘনায়মান ধূপের ধূম, এবং গাঢ় নিঝুম ঝুম, শরীর থেকে নিদারুণ
ক্ষরণ স্বর প্রতি প্রহর, প্রতিটি দিন বিরামহীন, বলয়ে কোন শনি এ
দিয়েছে ফাঁস সর্বনাশ, মরচে পড়া ধনুক আর অতীতকালে বৃথা তূণ
খুঁজে কি লাভ, অন্য পাপ লক্ষ্যে ঋজু নম্রতায়
জালে গভীর নিবিড়তায় আলিঙ্গনে মধুরপায় ফুলশয্যা কি পাতে
দেখেও কেন পালানো যেন দিলেই ধাতুচর্ম গায়
বিলোপ হবে সমূল লোভ, দেরিতে বড় হয়েছে বোধ ক্রান্তিকালে নিপাতে।

*

পায়ে গুল্মলতা

শৈবাল কে বলেছ তাকে, এ যে বিষম পাথরে
সবুজ জমা, গুল্মলতা পায়ে জড়ায়, নাগিনী
হিসিয়ে ফণা বিষের কণা উজাড় করো আদরে
তরল হিম, নেশার ঝিম কাটে না তাতে, জাগিনি

পাতাল থেকে ওঠার আগে সময় লাগে ও পাপে
শাণিত ছুরি শরীর জুড়ি বলেই দেহে ভগিনী
পেতেছি হাত প্রত্যাঘাতে পাপের গূঢ প্রভাবে
সে হাতে খুব অগ্নিভয়, মমতা ঘৃণা অবজ্ঞায়
ফেরালে মুখ যোগিনী।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
S K Mukhopadhyay
S K Mukhopadhyay
1 year ago

চমৎকার, আবার একগুচ্ছ কবিতা। প্রিয় কবি সুজিত বসু্র কবিতা ভালোভাষায় পেলাম বেশ কিছু
কাল পরে। অসাধারণ

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঋত্বিক ঘটক ও বাংলাদেশ

ঋত্বিক ঘটকের জীবনের প্রথম বাইশ বছর (১৯২৫-১৯৪৭) কেটেছে মূলত পূর্ব-বাংলায়, যা এখনকার বাংলাদেশ। তাঁর জন্ম ঢাকার ২,ঋষিকেশ দাস রোডের ঝুলন বাড়িতে। ১৯৪৭, অর্থাৎ দেশভাগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি মূলত পূর্ব-বাংলায় কাটান। আমরা দেখব, পূর্ব-বাংলা যেমন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে-দেশ, সে-ভূমির প্রভাব তদনুরূপ ঋত্বিকেরও পড়েছিল তাঁর চলচ্চিত্রে।

Read More »
মণিকর্ণিকা রায়

অনুগল্প: অর্জন

অসহায় বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।

Read More »
মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনানন্দ দাশের সময়চেতনা: পুরাণ, প্রকৃতি ও আধুনিক নিঃসঙ্গতার নন্দনতত্ত্ব

পৌরাণিক, মনস্তাত্ত্বিক ও প্রকৃতিগত সময়চেতনা তাঁকে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে এক স্থায়ী ও ব্যতিক্রমী মহাকবির আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের শেখায়— দ্রুত ধাবমান জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ধীরে চলতে, নীরবতার গভীরে কান পাততে এবং প্রতিটি ক্ষণিকের মাঝে অনন্তের ইশারাকে খুঁজে পেতে। তাঁর সাহিত্য ভবিষ্যতের প্রতিটি সংবেদনশীল পাঠকের জন্য আধুনিকতার এক অমূল্য পাঠ হয়ে থাকবে, যা মানুষের জীবনকে শিল্প ও প্রকৃতির একাত্মতায় আবিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ করে দেয়— কাব্যই চূড়ান্ত আশ্রয়, যখন সমস্ত পথ ফুরিয়ে যায়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

জীবনানন্দ: প্রয়াণদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

হেমন্তকাল ও জীবনানন্দ অভিন্ন, ওতপ্রোত ও পরস্পর পরিপূরক। তাঁর কবিতায় বারবার নানা অনুষঙ্গে, বিভঙ্গে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হেমন্তের বসতি যেন। ‘হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু/ শিশিরের জল’, ‘ধানক্ষেতে, মাঠে,/ জমিছে ধোঁয়াটে/ ধারালো কুয়াশা’! কুয়াশা আর শিশির, এই দুই অচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হেমন্তের, চিনিয়ে দেন তিনি। ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল’, হেমন্তকে বাহন করে এই যে প্রকৃতির অপরূপতা মেলে ধরা, তা অন্য কোন বাঙালি কবির আছে?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গা মাঈ কী! জয়!

ঢাকা বা সমগ্র বাংলাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুজোর চাঁদা আদায়ের চল খুব একটা নেই। মণ্ডপে এসেই পাড়ার লোক চাঁদা দেন। জবরদস্তি করে চাঁদা আদায়ের যে বীভৎসতা কলকাতা তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে আছে, তা অন্তত ঢাকা আর বরিশালে দেখিনি। পুজোর দিনেও অনেকে এসে প্যান্ডেলের পাশে চাঁদা আদায়কারীদের টেবিলের সামনে এসে চাঁদা দিয়ে যান। পাড়ার হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে। স্বেচ্ছায় এসে চাঁদা দিয়ে যান। এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

Read More »