Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মণিশংকর বিশ্বাসের কবিতা

বই

(উৎসর্গ: নবনীতা সেন, সুজনেষু)

নিখিল জ্ঞানের শিশু
নতভাবে ফুটে থাকো রৌদ্র-সায়রে
বিলাপের মতো ঈষৎ আন্দোলিত হও—
ধিমে আসা হ্যাজাকের আলোয়।
তোমাকে জাগাব আমি কোনও এক বারুণী-মত্ত মাঝরাতে—
তাসের মতন বেটে
কখনও-বা চালান করে দেব টেবিলের তলায়
হয়তো পুরনো জাহাজি সে, ঠিকঠাক নারীসঙ্গে বঞ্চিত
ভুলেও জিজ্ঞেস কোরো না তাকে সমুদ্রের কথা
সে আরেক শাপগ্রস্ত, তরল নক্ষত্র এক
তার-চে পিপেতে লুকিয়ে থাকা বিড়ালীর সাথে
ভাগ করে নিয়ো টুনা-স্যান্ডউইচ—

অন্ধকারের জটিল গ্রন্থি

যদি একঘেয়ে লাগে, বোলো, মেষপালনের মত
সহজ দায়িত্ব দেব কোনও, গান গেয়ে শিস দিতে দিতে
বানিয়ো পাতার মুকুট
অতিগ্রীষ্মে সতর্ক থেকো
এসময় দলবেঁধে পশুরা পাগল হয়— ক্রুদ্ধ পশু
মাইল মাইল পথ হেঁটে যায় মিষ্টিজলের খোঁজে
জলভরা চামড়ার থলে কাঁধে তুমি যেয়ো
নিচু ডাঙার খোঁজে উন্মাদ পশুর পিছনে
যেখানে জল থাকে সারা বছর, সরলবর্গীয় ছায়াঘেরা

যদি ভাল না লাগে, হাইওয়ের পাশে যে সরাই
সেখানেই দেখা হবে উস্তাদ
রাতে একসাথে খাটিয়ায় বসে
সপ্তর্ষি-মণ্ডল, কালপুরুষে আঙুল বোলাতে বোলাতে
গল্প করা যাবে, জিজ্ঞেস করা যাবে,
ট্যাটু সম্পর্কে তুমি কতটা সিরিয়াস— হাতের নিশানা কেমন?
শেষ কবে শিকারে গিয়েছ?

ঘুমিয়ে পড়ে যদি কেউ স্বপ্ন দেখি
তা-ও ভাগ করে নেব সমান সমান—

বলো রাজি আছ কিনা

পাথরের ছাদ হতে পরপর ঝোলানো ঘণ্টাগুলি—
জাপানি অক্ষর আর সূক্ষ্ম কারুকাজ করা
একটি কাঠের সুদৃশ্য দণ্ড দিয়ে সেগুলোকে ছুঁয়ে যেতে হবে
তাতেই যা হবার হবে— না লেখা কবিতার প্রথম পঙ্‌ক্তি
নন-ফিকশনের প্রোলগ— ব্লার্বের লেখা
অথবা সমস্ত নীল উজাড় করে দেওয়া
একটি ছোবল…

অথচ তোমার সঙ্গগুণে যত পুণ্য, আমি তার সবই
সস্তার সরাইখানায় এক বোতল জুয়ার প্রসঙ্গে খরচ করে ফেলি

দেখি— ফণীমনসার কাঁটায় লেগে আছে একটি শিশিরবিন্দু—

বলাই-বাহুল্য ওই আলোকবিন্দুটিই সেই সন্ন্যাসী যে কিছু পরে
মিশে যাবেন শ্মশানযাত্রীদের শোক ও মদে—
আর যার কোমরে বাঁধা আছে চূড়ার ঘণ্টাঘরের চাবি…

তারপর একদিন সূর্যোদয়ের আগে শুরু করব ট্রেকিং
মধ্যাহ্নের একটু পরেই পৌঁছে যাব সূর্যাস্ত চূড়ায়—
যেখানে মন্দির তোমার,
চিৎকৃত নৈঃশব্দ্য দিয়ে গড়া
ধূসর বেদির উপরে বিশাল এক ঘণ্টা, দেবতার কানের মত
তার ঠিক নিচে বসে কাঁদব আমরা
ফেলে আসা নদী, বজরা খেত, ভেড়ার খামার
পাহাড়তলির চায়ের দোকানটির জন্য—
আমরা কাঁদব প্রেম, অভিজ্ঞান, আমাদের শৈশব,
এমনকি সূর্যমুখী খেতে ফেলে আসা মরদেহটির জন্য

তখন কীইবা থাকবে আর
অনেক নীচে বুদ্‌বুদময় কাচের ওই পেপারওয়েটটির কাছে!

যাকে ছুঁয়ে এতকাল বেঁচে থেকেছি
যার ভিতর বসে বসে এই মৃত্যুর কথা ভেবেছি!

চিত্রণ : মুনির হোসেন
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
8 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Parijat
Parijat
3 years ago

Vishan sundar dada…

মণিশংকর বিশ্বাস
মণিশংকর বিশ্বাস
3 years ago
Reply to  Parijat

খুব ভালো লাগল পারিজাত, তুমি পড়লে খুব আনন্দ হল!

রশীদ হারুণ
রশীদ হারুণ
3 years ago

ভীষণ সুন্দর। আনন্দ পাই পড়ে। আবার বেদনায় মুষড়ে উঠি। লেখাগুলো মথিত করে রাখছে। আবার পড়তে হবে।

মণিশংকর বিশ্বাস
মণিশংকর বিশ্বাস
3 years ago

আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ভাই

রঞ্জনা অধিকারী সিংহ
রঞ্জনা অধিকারী সিংহ
3 years ago

খুব ভালো লেখা, মণিমুক্তো

মণিশংকর বিশ্বাস
মণিশংকর বিশ্বাস
3 years ago

আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন

Sumana Sanyal
Sumana Sanyal
3 years ago

কোনো মন্তব্যই যথেষ্ট নয়। একটানে পড়লাম। হাইওয়ের পাশে একটা সরাই দোল খাচ্ছে চোখের সামনে। ফণীমনসার ডালে লেগে থাকা শিশিরের শব্দ শুনছি। এই লেখাগুচ্ছের প্রতিটি শব্দকে আমার প্রণাম। প্রণত হে…

মণিশংকর
মণিশংকর
3 years ago
Reply to  Sumana Sanyal

আর কী চাইতে পারতাম! “ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো যোগ্যতাই নাই এ-দীনের” ?????

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »