Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মলয় গোস্বামীর কবিতাগুচ্ছ

বয়স

ভোরের পাখির ডাক। আলো।

ভেতর-ঘরের থেকে চা-কে পাঠাল৷

সুগন্ধযুক্ত চা৷ দুর্মূল্য কাপে৷

হাতে প্লেট৷ থর্থর… থর্থর… কাঁপে৷

হাতে কী যে হয়!

ভয়৷ একটা— ভয়!

*

হে ভৈরব

অনেক দুঃখ পেয়ে, তবে আমি বনমালীপুরে এসেছি

এসে ভাবছি, এর চেয়ে বাণেশ্বরপুর গেলে ভাল হত

জীবন ফাটিয়ে যে রক্ত বের হল
তাতে দু’হাত মেখে খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে হাহা করে কাঁদলাম

কী এমন করেছি যে, একটা প্রজাপতিও ধরতে পারলাম না
কপালে মাটি মাখিয়ে নিয়ে এ-পাড়ার মধ্যে দিয়ে ও-পাড়ার মধ্যে দিয়ে
        সে-পাড়ার মধ্যে দিয়ে হেঁটে বেড়ালাম ক’টা দিন

হে ভৈরব, তুমি কি একবার বনমালীপুরে আসবে
যেখানে একপাশ দিয়ে খাওয়া আর অন্য পাশ দিয়ে না-খাওয়া ছুটে চলে

আমি দাঁড়িয়ে দেখি নিভৃত উঠোনে…

*

সেই কবিতা

সেই কবিতা আসবে কি?
সেই কবিতা পড়বে কি?
ধুলোর মতন, জলের মতন, বায়ুর মতন?

একটি ঠোঁটের তিলের মতন দৃষ্ট, কিন্তু স্পর্শহীনা—
দুইটি পায়ের ছন্দে বাজে… কিন্তু বাজে নূপুর বিনা?

সেই কবিতা লিখবে কি
বাবার মতন, ভাইয়ের মতন, মায়ের মতন?
হারিয়ে যাওয়া দাদু এবং দিদিমাদের গায়ের মতন?

*

ফ্যানের সুইচ দিলে

আমার স্কুলের মধ্যে ফ্যানের সুইচ দিলে
ফ্যান ঘোরে পথিকের মতো।
দিশেহারা পথিক যেন, হারানো মেয়েকে না-পেয়ে
বনের মধ্যে দিয়ে পুকুরের পাড়ে গিয়ে
                            একবার আকাশে তাকায়

পুকুরের জলে দ্যাখো মেঘ পড়ে, নড়ানড়ি করে
এরপর দিশেহারা, পুকুরকে কেন্দ্র করে
.          মাথাটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে ঘুরে যেতে থাকে

মেয়ের নাম কী ছিল! যেন একটু ভুল হয়ে গেল।
মেঘমালা নাকি? নাকি তার মেজ দাদা
               আল্পনা— নাম রেখেছিল?

এবার দেখছি, সামনে, ছাত্ররা বসে-বসে
                  ক্রমাগত পরীক্ষা দিয়ে যায়
ফ্যান আমি বন্ধ করি। ছাত্ররা চেঁচিয়ে ওঠে—
.                    সুইচটা দিয়ে দিন স্যার।

দিয়ে দিই। ফ্যান ঘোরে দিশেহারা পথিকের মতো।
             আমিও তাকিয়ে দেখি ঘোরার বাহার।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
Advertisement
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Purnendu Mishra
Purnendu Mishra
2 years ago

আহা, প্রতিটি লেখায় ছুঁয়ে গেল

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »