Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মোহাম্মদ কাজী মামুনের কবিতা

উড়াল পথের যাত্রী

সে ছিল উড়ালপথ এক ভীষণ
আর নারকেল গাছটার সাথে ছিল তার কতকালের গাঁটছড়া।
উড়ালের ধাতব শরীর থেকে যানগুলি যখন ছড়িয়ে দিত হলকা
গাছটা শুকোত একটু একটু করে
আর কেঁদে-কেটে বুক ভাসাত রাত্র গভীর হলেই।

কিন্তু সেদিন কী হল! এল সে দ্রিম দ্রিম শব্দ করে
তারপর উড়তে উড়তে আটকে গেল
গাছটির শাখা-প্রশাখায় আচ্ছা করে।
শহরকে কেউ দেখেছে কভু চড়তে গাছে?
আর উড়াল পথও কি কখনও থেমে থাকে?

কিন্তু সেদিন সে তাকে পেয়ে গেল হাত ছোঁয়াতেই,
আর আলতো করে টেনেটুনে দিলে
খয়েরি বুক-জামা থেকে বেরিয়ে আসা
থোকা থোকা সবুজ স্তন।
লম্বাটে মুখে যার অনেক কোমল খাঁজ,
পাতার শিরায় শিরায় চুমুর নিবিড় ভাঁজ।
ফলগুলো তখনও পার করেনি কৈশোর
সোঁদা গন্ধ, রসালো শাঁসের ভারে টইটুম্বুর।

এদিকে পথটি তখন কাঁপছে থেমে থেমে
যেথায় সে বেলা হলেই সে উঠে পড়ে আস্তে করে
আর তারপর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে অনন্তকাল
কোন এক সিগনালের প্রবল প্রতীক্ষায়।
ঠিক যখুনি বাতিরা সব যায় আউটিংয়ে
আর ঘ্যাড়ঘ্যাড়ে ইঞ্জিনের নামে নিদ
রুদ্ধশ্বাস ছুটতে ছুটতে শহরের এই পুলের পরে
যাত্রীদল এসে দাঁড়ায় গনগনে সূর্যকে মাথায় করে।
শরীরের রস বন্যার তোড়ে ভেসে গেলে
গাছের ছায়ায় জিরোয় তারা হেলে গিয়ে
ঘন নিশ্বাসের আশ মিটিয়ে পোহায় রোদ
তারপর জলের বাষ্পে ছেয়ে ফেলে নোনা চরাচর।

বেতার কাঁপতে থাকতে দশ নম্বর সাইক্লোন সংকেতে
কিন্তু হঠাৎই জ্বলে ওঠে সিগনাল বাতির রক্তস্রাব
দীর্ঘ পাতার সারি পিছু ধাওয়া করেও অবশেষে থেমে পড়ে
আর সে সরসর করে নামতে থাকে ভীষণ সেই উড়াল হতে।
পেছনে গাছেরা ফুলে ফুলে ফের গর্ভবতী
থোকা থোকা ফলের জন্ম, গন্ধ ও স্বাদহীন
সেই যাত্রী যখন চলমান কোনও জট ছাড়া
গাছেদের তখন ফের উড়ালপথের গাঁটছড়া।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
1.5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Nayan Basu
Nayan Basu
2 years ago

এটা একটা ধরণের কবিতা। এই ধরনটা ব্যক্তিগত ভাবে আমার ভালো লাগে না। কবিতাটা ভালো। শব্দ নিয়ে কাজ আছে। তবে আমি এই ধরণের কবিতায় আনন্দ পাই না।

মোহাম্মদ কাজী মামুন
মোহাম্মদ কাজী মামুন
2 years ago
Reply to  Nayan Basu

অনেক অনেক ধন্যবাদ, নয়নদা!

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »