Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মা ও ছা

শক্ খেয়ে মাথার চুলগুলো সব খাড়া হয়ে গেছে— এমন ফটো আমরা অনেকেই দেখেছি। আজকাল টিভির বিজ্ঞাপন আর গুগলের দৌলতে এমন সব নানা ধরনের ছবি নাকের ডগাতেই বলা যায়। কিন্তু সত্যি সত্যি ‘Live-wire’ নিয়ে কারা deal করে জানো? বাবা-মায়েরা! এক-একটা বাচ্চা, এক-একটা live-wire! আর সে বাচ্চা যত ছোটই হোক না কেন!

আমরা যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি। মা-কাকিমার কাছে শুনেছি, একবার কোনও এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে, আমি আর আমার খুড়তুতো ভাই, বাড়ির লোকদের বেজায় লজ্জিত করেছিলাম। ব্যাপারটা এইরকম: আত্মীয় নানারকম খাবার থালায় পরিবেশন করেছেন। যথাযথ সম্মান জারি রয়েছে। গরম গরম বেগুনভাজা উনি থালায় দিতে যাবেন, এমন সময় মা আর কাকিমা দুজনেই প্রায় একইসঙ্গে বলে উঠেছিলেন, ‘না, না ওদের (ইঙ্গিত আমার আর খুড়তুতো ভাইয়ের প্রতি) দেবেন না। ওরা বেগুনভাজা খায় না। মিছিমিছি নষ্ট হবে।’

বাড়ির রোজকার অভিজ্ঞতা থেকেই ওঁরা কথাটা বলেছেন। কিন্তু ওঁরা কী করে বুঝবেন, বাচ্চারা অভিযানে বেরিয়েছে! এখানে সেট রুটিন ফেল! আমি আর খুড়তুতো ভাই নাকি সমস্বরে বলে উঠেছিলাম, ‘না, না আমরা বেগুনভাজা খাই। খুব খাই। দিন।’ মা-কাকিমার তখন কী অপ্রস্তুত অবস্থা হয়ে থাকবে, আজ তা খুব বুঝতে পারি! বাড়ির লোকেদের কাছে আরও শুনেছি, আমি নাকি ছোটবেলায় ঘরের বাইরের বাগানে দাঁড়িয়ে, যেকোনও লোককে বলতাম, ‘ও কাকু, ও কাকিমা, আসুন না, আমাদের বাড়িতে একটু চা খেয়ে যান।’ অনেক সময় আবার নাছোড়বান্দা হয়ে কাউকে কাউকে বাড়িতে প্রায় টেনে নিয়ে আসতাম। তখন আমার বয়স নাকি বছর চারেকের বেশি নয়! বাড়ির লোকে এমনও বলে, ‘আধা কলোনির লোকের সঙ্গে তো তোর সূত্রেই আলাপ! সবাই নাকি তোর কোনও কাকু-কাকিমা!’

এই ক’বছর আগের কথা। আমার বাড়িতে, একবার আমার বন্ধুর দুই ছেলে এসেছে। তাদের বয়স তখন পাঁচ আর সাত। ওরা চিঁড়ে ভাজা খেতে খুব ভালবাসত। দুজনেই খাচ্ছে। হঠাৎ করে ছোট ছেলেটি একমুঠো চিঁড়ে ভাজা নিয়ে, ঘরের সিলিংয়ের উপর ছুড়ে দিয়ে বলল, ‘হোলি হ্যায়!’ আমার সাধের কার্পেট, সোফা সব ততক্ষণে চিঁড়ে ভাজা নামক আবির মেখে হোলি খেলেছে!

আরও একবার এই বাচ্চাটিই তার প্রিয় ‘পার্লে-জি’ বিস্কুট খাচ্ছে। আমার মনে আছে, এই বাচ্চাটির কথা মনে রেখেই আমি ‘পার্লে-জি’ বিস্কুট আনিয়ে রাখতাম তখন। বাচ্চাটি জলে ডুবিয়ে ‘পার্লে-জি’ বিস্কুট খেত। বাড়িতে এসেই বলত, ‘আন্টি, পানি বিস্কিট দিজিয়ে।’ তারপর যত মনোহারী বিস্কুটই তুমি দাও না কেন, ‘পার্লে-জি’ বিস্কুট দেখলে, তা হাতে তুলে নিয়ে বলত, ‘আরে বাহ! ‘পার্লে-জি’…ই তো হমরা পুরা দেহ মে ভরল হ্যায়!’

আমার ছেলের বয়স তখন বছর আড়াই হবে। নতুন জায়গায় শিফ্ট করেছি সবে। ফার্স্ট ফ্লোরে ফ্ল্যাট। আমার ফ্ল্যাটের ব্যাংগ অপোজিটে যারা থাকেন, তাঁদেরও এক ছেলে। তার বয়স বছর পাঁচেকের বেশি নয়। কোনও একদিন নিচে খেলার সময়, ওদের আলাপ হয়ে থাকবে। একদিন ওই বাড়ির মহিলা আমার সঙ্গে গল্প করছিলেন। ওঁর কোনও তুতো বোনের বিয়েতে যাবার জন্য প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। কথা বলতে বলতে উনি আমায় বললেন, আপনি তো আমাদের রীতি-রেওয়াজ সবই জানেন দেখছি। তাহলে আপনার বুঝি অন্য ধর্মে বিয়ে হয়েছে? আমি প্রশ্নটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। উনি সেটা বুঝিয়ে বললেন, ‘না মানে, ওই যে আপনার ছেলে সেদিন বলল, ওর নাম পিটার… কী যেন… তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।’

এটা শুনতেই আমি বুঝে গেলাম, কী ব্যাপার। আমি হেসে বললাম, ‘কী নাম বলেছে? পিটার পার্কার? যথার্থ…।’ মহিলাটি বললেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ এটাই বলেছে।’ আমার ছেলে স্পাইডারম্যান-পাগল। সে তার নিজের নামের আগে ‘পিটার পার্কার’ জুড়ে দিয়েছে বুঝলাম। তার নিজস্ব নাম পিছনের সারিতে থাকায়, মহিলাটির শুধু পিটার মনে ছিল, আর ‘পার্কার’ তিনি বিস্মৃত হয়েছেন। তার পরের অক্ষরগুলি তার মনে ঠাঁইও পায়নি। যত্নে রাখা নামটিকে যখন নামধারকই পাত্তা দেয়নি, তখন মহিলাটি আর ও নাম মনে রাখার দায় সামলাতেন কী করে? ছায়ের নাম চয়ন, মাকে একটু হলেই অজ্ঞান করেছিল আর কী! আমার কথা শুনে ভদ্রমহিলা হেসে কুটিপাটি!

এটাও ক’বছর আগের কথা। আমার ছেলের স্কুলে ওপেন হাউসে গেছি। খাতাপত্র দেখে বেরোব, এমন সময় ওর এক বন্ধুর মা আমাকে ডাকলেন। উনি তখনও ওঁর ছেলের খাতা দেখছেন। আমাকে ডেকে বললেন, ‘জারা দেখিয়ে একবার। ইয়ে লারকা ক্যা গুল খিলায়া হ্যায়।’ বাচ্চা তখন ক্লাস ফোর-এ পড়ে। আমি দাঁড়িয়ে আছি। ছেলের পরীক্ষার খাতার একটা পাতা উল্টে উনি ওনার ছেলের উদ্দেশে বললেন, ‘অউর ই কাহে নহি লিখে? ইয়েবালা তো জানতে থে না?’ ওঁর বাচ্চা গম্ভীরভাবে, জিজ্ঞাস্য প্রশ্নের দিকে নজর দিল। তারপর বলল, ‘লিখা তো থা।’ মা বললেন, ‘তো ফির টিচার মিটা দি হ্যায় ক্যা?’ বাচ্চা সরপট বলল, ‘লাগতা তো ওহি হ্যায়।’ মা প্রথমে আমার দিকে নজর দিয়ে বললেন, ‘দেখ রহী হ্যায়? এইসা হ্যায় ইয়ে।’ তারপর বাচ্চাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘চলো আজ ঘর তুম। মিটাতি হু তুমকো!’ কোনওরকমে আমি ওখান থেকে আগেভাগে কেটে পড়লাম! এমনতর উদাহরণের শেষ নেই। অভিভাবক আর বাচ্চাদের মধ্যে সম্পর্কটা যে ঠিক কী রকম, তা এককথায় বলা মুশকিল। নানা রঙের পরত থাকে তাতে!

আর এক বছরের কথা। রাজস্থান ভ্রমণে বেরিয়েছি আমরা। বাই রোড। উদয়পুরে পৌঁছনো হল ২৪ ডিসেম্বর সন্ধেতে। আমার ছেলে হঠাৎ করে বলল, ‘এবছর স্যান্টা আমায় গিফট দিতে পারবে না। স্যান্টা তো বাড়ি এসে আমায় খুঁজেই পাবে না!’ বললাম, ‘স্যান্টা পরে কখনও গিফট দিয়ে দেবেন।’ কিন্তু আমি খুব বুঝছিলাম, ক্রিসমাসের সকালে মোজার ভেতর কিছু আবিষ্কার না করার দুঃখ তার মনে বেশ চেপে বসেছে। আমি সেবছর এসব ভাবার একদম সময় পাইনি। তাই নিজের একটু খারাপ লাগলেও সেটাকে আর প্রশ্রয় দিলাম না। ছেলেও ডিনারের পর লোকাল পেস্ট্রি শপে গিয়েই খুশি হয়ে গেল। পরের দিন পঁচিশে ডিসেম্বর। ছেলে বিছানায় বসে খেলছে। আমরা হোটেল থেকে বেরোনোর জন্য তৈরি হচ্ছি। বাই রোড ট্রিপে কিছু ক্যাশ টাকাপয়সা রাখতে হয়। সব জায়গায় কার্ড চলে না। তাই বেশ কিছু টাকা আমি বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় লাগেজের মধ্যে, জামাকাপড়ের ব্যাগে রেখেছিলাম। পুরো সুটকেস খুঁজেও তার হদিস পেলাম না।

মনে মনে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছি। বাড়ির লোক বলছে, ‘এখন থাক না। পরে ঠিক পাওয়া যাবে।’ আমার মন তবু খটখট করছে। আনমনা হয়েই সুটকেস বন্ধ করলাম। তখনই ছেলে খুশিতে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, ‘ইয়েএএএ… স্যান্টা গিফট দিয়ে গেছে! স্যান্টা হ্যাজ ফাউন্ড মাই অ্যাড্রেস!’ সাত বছরের ছেলে কীসে এত আত্মহারা, তা দেখতে গিয়ে দেখলাম, সে লাল-সাদা স্যান্টা টুপিটা পরতে গিয়ে, তার ভেতর ক্যাশ টাকা আবিষ্কার করেছে। আর সে নিশ্চিত, টুপির ভেতর স্যান্টাই টাকা রেখে গেছে! ততক্ষণে আমার মুখেও হাসি ফুটেছে।

পরে উদয়পুর দর্শনের সময় ছেলে আমাকে বলল, ‘মা, স্যান্টা দেখেছে, আমরা বাইরে আছি। তাই গিফট না দিয়ে টাকা দিয়ে গেছে। যাতে আমরা পরে ওই দিয়ে নিজেরাই গিফট কিনে নিই। এখানে গিফট দিলে ক্যারি করতে প্রবলেম হতে পারে তো তাই।’ আমি আমার আগামী গচ্চার হিসাব করে নিলাম! মনে মনে স্যান্টাকে ধন্যবাদও দিয়ে দিলাম। সেবারের ক্রিসমাস গিফটটা স্যান্টা আমাকেই দিয়েছিল! মনে মনে ‘ছা’-কে বললাম, ‘কার স্যান্টা কে!’

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »