Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

আয় সুখ আয়

কলকাতাটা আজকে বড় আজব। হালকা হয়ে ভাসছে। আলতো একটা মন ভালতে। যেন হাওয়ায় পাক খাচ্ছে। কখনও বা চরকি। অনেকটা ঘুড়ির মত। অক্ষয় তৃতীয়ার সকালে রোদ্দুরটাও ভিনখুশিতে উড়ান দিচ্ছে নিচু অ্যাসবেস্টস থেকে মাল্টিস্টোরিডের দিকে। কখনও সোজা কোন খেয়ালে মধ্য কলকাতার গলিতে নেমে আসছে ট্রামলাইনে। দোকানপাট, পথচারী, যানবাহন-সব যেন দিলদরিয়া। বউবাজারের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিলাসের চোখ যায় সোনার দোকানের দিকে। হালখাতার এই দিনটা যেন সত্যিই জীবনের হাল ফেরানোর। সারা বছরের ধূসর দিনগুলি পেরিয়ে আবার লাভক্ষতির লেজারটাকে নতুন মলাটে বাঁধিয়ে নেওয়া। নতুন সিঁদুর আর স্বস্তিকের মাখামাখি। সময়কে হার মানিয়ে যা কিছু একটু ভাল একটু শুভ তা চিরটাকাল থেকে যাবে। চিরন্তন হয়ে যাবে। এটুকু ভরসা নিয়েই যেন আবার এ বছরের এই বৈশাখ মাসের সকালটা শুরু হয়েছে।

বিভার মোড় থেকে ডান দিকে ঘুরেই যেন থমকে থ। বড় বেমানান ঝুপসিদের এই বাড়িটা। আশেপাশে ঝাঁ-চকচকে সব স্টেশনারি দোকান, ওষুধের ফার্মেসি, প্রতিমা স্টুডিও, রেস্টুরেন্ট আর দুপুরে মিস্ত্রি কিংবা কারখানার লোকদের জন্য ভাতের হোটেল। তার মাঝখানে ওদের এই টিনের চাল দেওয়া একটা ঘর আর ভাঙা বেড়ার বাথরুমটা যেন কেমন উদ্ভট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন মনখারাপের ঝুপড়ি একটা। ঝুপড়ি আর ঝুপসি। বড় মিল শব্দ দুটোয়। দুই বান্ধবী। ওর এই ঝুপসি নামটা ওর মা শ্যামলীর বাবা যোগেন রায় মানে ওর দাদু রেখেছিল। সে তো ওই কাশীপুরের শ্মশানে কবেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। শুধু জন্মের দিন থেকে শুরু করে আজকে এই তেরো বছর আট মাস কয়েকটা দিন পর্যন্ত তার গায়ে এই অন্ধকারের গন্ধটা লেগেই রইল। আদর্শপল্লির পুকুরে গায়ে সাবান মাখা ধুঁধুলের খোসা ঘষেও সে বাস আর গেল না। দাদু বলত, ‘‘পুড়ে কেউ ছাই হয় নারে দিদিভাই, পুড়ে মাটি হয়। শ্মশানের মাটিতে নাক রাখলেই যত মানুষ এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তাদের সবার গায়ের গন্ধ পাবি। প্রত্যেকের গন্ধ আলাদা। একটু সময় মাটিতে মুখ রেখে শুয়ে থাকলেই চেনা-অচেনা সব মানুষের গন্ধ পাওয়া যায়। সে গন্ধ কখনও হারায় না। হাওয়ায় ঘুরতেই থাকে। কালবৈশাখীতে। বাদলা রাতে। শীতের নিশুতিতে। সারাক্ষণ শুধু ঘুরতেই থাকে।’’ চোখের কোণ দুটোয় কেমন যেন শুকনো লঙ্কার জ্বালা ঝুপসির। কী জানি। সে এই বেলঘড়িয়া ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলে তার গন্ধও কি থেকে যাবে? রাত-বেরাতে লোক চিনতে পারবে তাকে? ফিক করে নিজের মনেই হেসে ফেলে ঝুপসি। তাকে এই বিভার মোড় আর কলোনি বাজারে ক’জনই বা চেনে? কার দায় পড়েছে বিটি রোডে গিয়ে তার গায়ের গন্ধ শুঁকে আসবে। পলেস্তারা খসা শ্যাওলা ধরা ভাঙা মিটার ঘর আর বাথরুমটার মাঝখানে যে চাতালের মত জায়গাটায় ঝুপড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে বিভা সিনেমার ফাঁকা জমিটাকে কোনাকুনি দেখা যায়। ওর এই সামান্য বয়সের মধ্যে ঝুপসি কত কী যে বদলাতে আর পাল্টাতে দেখল তার শেষ নেই। এক সময় কী হৈহৈ রৈরৈ ছিল দুপুর বারোটা থেকে রাত ন’টা। জুটমিল থেকে সিনেমাহল পর্যন্ত রাস্তাটা একেবারে সরগরম হয়ে থাকত। একটার পর একটা শো। নুন, ম্যাটিনি, নাইট। ঝালমুড়ি, ফুচকা, বাদাম আর হরেক রকমের লজেন্স আর বিস্কুট। মাঝদুপুরে সেজেগুজে স্বামী-স্ত্রী আর বাচ্চাকাচ্চা। আবার কখনও ইস্কুল আর কলেজ পালিয়ে জোড়ায় জোড়ায়। টেরিলিনের জামা। ঘোলাটে জিনসের প্যান্ট। ঝিকমিক ফ্রক বা সালোয়ার। সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উল্টোদিকে ঝন্টুদার দোকান থেকে একটা চারমিনারে আগুন ধরানো কিংবা ননীদার বাহারী পানে দুজনেরই টুসটুসে লাল ঠোঁট। কয়েকটা মেয়ে শাড়ি পরেও আসত। সঙ্গিনীর কোমর জড়িয়ে ধরে কেমন যেন নেপোলিয়নের মত সদর্পে হলে ঢুকে যেত ছেলেগুলো। আবার একবার ফিক করে হেসে ফেলে ঝুপসি।

অনেকগুলো সোনার দোকান এই মোড়টায়। পুরনো আর নতুন মিলিয়ে গোটা আট-দশেক তো হবেই। কী সেজেছে সব। মোটা গাঁদার মালা। রজনীগন্ধা। ধূপধুনোর গন্ধ। পুরোহিতের মন্ত্র ছিটকে আসছে কুয়োতলার দিকে। টগর গাছটায় যেন নেশা লেগেছে। কী সব মিষ্টির গন্ধ। মিষ্টি যেন হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে রাস্তাটায়। ভূতের রাজা বর দিয়েছে। একবার চোখ বুজে বুকভরে বাতাসটা নেয় ঝুপসি। সব আলাদা আলাদা চেনা যাচ্ছে! দানাদার, মিহিদানা, সন্দেশ, কালোজাম, রসগোল্লা, জিলিপি… সব! দাদু ঠিকই বলত। চোখ দুটো বুজে নাকটাকে সজাগ করলে মরা মানুষ থেকে মিষ্টি— সবাইকেই আলাদা করে চেনা যায়। একটু ভাল করে ভাবতে চায় ঝুপসি। আচ্ছা, মিষ্টির দোকানের ট্রেতে যদি দশটা দানাদার থাকে তাহলে তাদের প্রত্যেকের গন্ধও কি আলাদা আলাদা হবে? বোধহয় তাই। ঘোষের দোকানে মাছির মত ভনভন করছে খরিদ্দার। নীলগঞ্জ রোডের দিকে যাবার রাস্তায় মিষ্টির দোকানদুটোও কম যায় না। বিলাসের কথাটা ধক করে মনে পড়ে। মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসে বিলাস। তার পছন্দ আবার একটু আলাদা। অত সব বড়লোকের মিষ্টি না। গজা, ক্ষীরের চপ কিংবা অমৃতি পেলেই সে খুশি। এবার পয়লা বৈশাখে আর দেখা হয়নি বাপ-মেয়ের। বিলাস আসেনি এবার। শ্যামলী সারাদিন পথ চেয়ে বসেছিল। জমানো খুচরো পয়সায় পোনা মাছ এনে রান্না করেছিল। কিন্তু কোথায় কে। সে মানুষের সারাদিনে দেখাই মেলেনি। কী আর হবে। এ বছর নতুন সুতো গায়ে তোলা ভাগ্যে ছিল না ঝুপসির। গত বছর হলুদ রঙের ফ্রক এনেছিল বিলাস। সেটাকেই ধুয়ে কেচে এবার পরিয়ে দিয়েছিল শ্যামলী। এখন যেন একবার বিলাসকে দেখতে পেল ঝুপসি। এই সিমেন্ট চটা বারান্দাটায় এসে বসেছে। কাঁচাপাকা দাড়ি। একগাল হেসে কাছে ডাকছে ঝুপসিকে। হাতে সেই বাদামি রঙের প্যাকেটে মোড়া হলুদ ফ্রকটা।

কী ভিড় সোনার দোকানে। সবার খাতা আছে। নগদেও কিনছে অনেকে। হালখাতার পুজোর সঙ্গে অন্যদিকে চলছে কাস্টমারদের খাতিরদারি। লুচি, মিষ্টি, ছোলার ডাল আর কোল্ড ড্রিংকস। সঙ্গে গিফট ব্যাগ। বিভার মোড়টা এখন যেন একটা সিনেমার পর্দা। সবচেয়ে দামি টিকিট কেটে কুয়োতলার পাশে পেছনের সিটে বসে আছে ঝুপসি। একসময় শ্যামলীরও খাতা ছিল ‘অনুপমা’-তে। তখন কলকাতার দিকে গেলেই শ্যামবাজার থেকে শুরু করে গড়িয়াহাট পর্যন্ত কত নামকরা সোনার দোকানে গেছে বাপ মা আর মেয়ে। কয়েকটা গয়না কিনেওছিল সেখান থেকে। কানের দুল, হার, নাকছাবি, বাউটি, মকরমুখী বালা, আংটি— একটু একটু করে সব বানিয়েছিল শ্যামলী। সে সবই এখন হারু কর্মকারের কাছে পড়ে আছে। হারুর বন্ধকী কারবার। ইদানীং ওর হাসিটায় বড় লোভ। হয় সোনাগুলো আর না হয় শ্যামলী। কোনও একটাকে যেন সে লুঠ করবেই। অথচ একদিন ছিল যখন বিলাসকে তোয়াজ করত ষাট বছরের হারু। ছোলার ডাল কচুরি আর চা খাওয়াত সকাল সকাল। খাবার দোকান করার জন্য হারুকে টাকাও দিয়েছিল বিলাস। সে টাকা অনেক বছর সময় নিয়ে শোধ করেছিল হারু। তখন বিলাসের মুদি দোকান বালিহাঁসের মত ডানা মেলে উড়ছে। রমরমা বাজার। ফিডার রোডের মত জায়গায় পনেরো বাই বারোতে তিনজন কর্মচারী। চালু ব্যবসা। সাজানো সংসার। হঠাৎ যে কী ঘুণপোকা ধরল ওকে। নবদ্বীপ থেকে কয়েকটা লোকের আনাগোনা ছিল ওর দোকানে। তারাই বোধহয় বীজ ঢেলেছিল কানে। বোষ্টম হবার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আশা জুগিয়েছিল কীর্তনের দল করবার। মাঝরাতে শ্যামলীর ভরাট শরীর ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকত বিলাস। দু-একদিন শ্যামলীর ফোঁপানোর আওয়াজও পেয়েছে ঝুপসি। একটা সময় সে বুঝতে পারত। ওদের দুজনের সেই ঘামের গন্ধ আর বিছানায় নেই। যে ঘাম ভালবাসার সময় বের হয়। এক রাতে চুপি চুপি বিলাসের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুখার্জিদের উঠোনের শিউলি গাছটার দিকে একভাবে চেয়ে দাঁড়িয়েছিল বিলাস। অন্ধকারেও যেন স্পষ্ট। ওর বিষণ্ন দুটো চোখ। নিশ্বাসের শব্দও কি নেই? নিজেও যেন নিস্তব্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছিল ছোট্ট একটা মেয়ে। একসময় একটা দীর্ঘশ্বাসের মত বেরিয়ে আসে দুটো শব্দ-‘হা কৃষ্ণ’। তারপর পেছন ফেরে বিলাস। দুটো ছায়ামূর্তি মুখোমুখি। নিশ্চল।

‘আমার রাধা মা এলে গো— আমার রাধা মা’— কেমন যেন এক ফকিরের মত ভিক্ষা চেয়ে দুটো হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দেয় বিলাস।

মন্ত্রের বশে ঝুপসি ধরা দেয় ওর কাছে। নিঃশব্দ কান্নায় ওর পায়ের কাছে বসে পড়ে বিলাস। পায়ে পায়ে কখন যেন দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল শ্যামলী। একটা পুকুরপাড়ে রাতের কুয়াশা মেখে দাঁড়িয়ে থাকা দেবীমূর্তির খড়ের কাঠামোর মত। এই বুঝি খসে পড়বে তার গায়ের মাংস।

রানাঘাট, কৃষ্ণনগর আর নবদ্বীপে গিয়ে আখড়ায় পড়ে থাকত বিলাস। দিনের পর দিন আসা নেই যাওয়া নেই। মাঝে মাঝে হঠাৎ ধূমকেতুর মত একদিন বা দুদিন। তাও আবার সারারাত ঘুরে বেড়াত জুটমিলের ধারে বা ট্রেন লাইনে। বিছানায় পিঠ দিত না। দিনকে দিন বাড়ছে চুলদাড়ি। ভ্রূক্ষেপ নেই। একবার চন্দন নিয়ে এল রাধামাধবের মন্দির থেকে। শ্যামলীকে তিলক করানোর জন্য সে কী পীড়াপীড়ি। তাকে বোষ্টমী বানাবেই। সেদিন সারা সন্ধ্যা ঘোলার দিকে গিয়ে খোলা মাঠে ঝিলপারে বসেছিল বিলাস। ফিরে এসে শ্যামলী জানতে চাওয়াতে নিজেই বলেছিল সে কথা। রাত্রে খিদে নেই বলে শুয়ে পড়ল। তারপর মাঝরাতে মা মেয়ে যখন ঘুমে থৈথৈ তখন দরজা খুলে বিলাস উধাও হয়ে গেছিল ব্যারাকপুরের দিকে। আর এরপরই শুরু তার কীর্তনের নেশা। বর্ধমান থেকে শুরু করে বীরভূম, হুগলি, মেদিনীপুর, নদীয়া এমনকি উত্তরবঙ্গেরও কত জেলা। গানের গলাটা ওপরয়ালা ছোট্ট বয়স থেকেই দিয়েছিল। প্রশংসা, তারিফ কিংবা মেডেল-সবই জুটেছে। টাকাপয়সা রোজগার করে এনেও দিয়েছে অনেকবার শ্যামলীর হাতে।

‘ও মেয়ে একবার এদিকে আয় না। বলি চান-খাওয়া তো করতে হবে নাকি? সব্জিটায় অন্তত হাত দে।’

চমক ভাঙে। সব্জি কুটেই গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেবে। বড্ড গরম।

সবে দুজনের চোখ বুজে এসেছে। শ্যামলীর বুকে মাথা গুঁজে দিয়েছে ঝুপসি। অনেক দূর থেকে হাওয়ায় ভেসে ঘরে ঢুকছে কিশোরকুমার। আমার পূজার ফুল ভালবাসা হয়ে গেছে, তুমি যেন ভুল বুঝো না। উঠোনে জামাকাপড় শুকোতে দেওয়া আছে। বিকেল হলে তুলতে হবে। এসব বলতে বলতে ঝুপসির চুলে আঙুল চালায় শ্যামলী। ঝুপসির চোখের বন্ধ পাতার আড়ালে এখন লাল, নীল, হলদে, সবুজ, কমলা আর বেগুনি রঙের অনেক গোল গোল আলোর বৃত্ত।

সন্ধ্যার পরে ওদের বাড়ির মোড়টায় ঠিক এরকম আলো ভেসে বেড়াবে… বুদবুদের মত… ফানুসের মত…

হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। ঘুমের ভেতরে প্রথমে ঠিক বুঝতে পারে না শ্যামলী। তারপর কোনওরকমে ঝুপসিকে ছাড়িয়ে শাড়িটা বুকের ওপর তুলে উঠে বসে। এখন তো কারওর আসার কথা নয়! কে! দ্রুতপায়ে নেমে গিয়ে দরজাটা খোলে। বিলাস!

সন্ধ্যাবেলা মনটা হঠাৎই ভাল হয়ে গেছে ঝুপসির। বিলাস মধ্য কলকাতার এক বড়লোক বাড়িতে কীর্তন গেয়ে সোনার হার পুরস্কার পেয়েছে। সেই হার সে নিজের হাতে পরিয়ে দিয়েছে শ্যামলীকে। ক’দিন ধরে সে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া অতিথি আপ্যায়ন। তাই দেরি হয়ে গেল এখানে ফিরতে। ওদিকে মায়াকোলের কাছে এক জমিদার বাড়িতে কীর্তন করে অনেক টাকাও পেয়েছে। তারা ওকে গৃহদেবতা বাসুদেবের মন্দিরে প্রধান কীর্তনীয়া হিসাবে চেয়েছেন। বায়নার টাকা এসেছে বর্ধমান আর মেদিনীপুরের প্রায় দশ বারোটা জায়গা থেকে। লক্ষাধিক টাকা।

হারুর কাছ থেকে গিয়ে কিছু টাকা দিয়ে কয়েকটা গয়না ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে বিলাস। সেও হয়ে গেল প্রায় কয়েক ঘণ্টা। এখন রাত প্রায় রাত দেড়টা। শ্যামলী ঝুপসিকে কোলের কাছে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। একটা অদ্ভুত মোহ মাখানো আছে আজকে শ্যামলীর সমস্ত অস্তিত্বে। পুরুষকে পাগল করে দেওয়া একটা টান। সেটা কি ওর মুখে? নাকি সারা শরীরের ওঠানামায়? কিংবা কোনও চোরা উপত্যকায়? না কি ওর এই আচমকা সুখে? ঝুপসিটাও কি আজকে অনেক অচেনা?

পায়ে পায়ে এখন অন্ধকার বারান্দাটায়। আকাশে অনেক তারা। ওদেরও কি খুব আনন্দ? ওইটুকু একটা সোনার হার আর ফিরে পাওয়া কয়েকটা গয়নায় যেন ভাল লাগাটুকু আজ বড় ছোঁয়াচে। তার নেশা লেগেছে এই বিভার মোড় থেকে স্টেশনের দিকে চলে যাওয়া সুনসান রাস্তাটাতেও। হঠাৎ চমকে পেছন ফিরে তাকায় বিলাস। কাঁধের কাছে একটা ঝাপসা ছোঁয়া। কিছুটা সঙ্কোচ মেশানো। শ্যামলী!

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Haimanti Pal
Haimanti Pal
3 years ago

খুব সুন্দর

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শতবর্ষে মহানায়ক উত্তমকুমার

‘মহা’ শব্দটি মহান আর বিশাল, এই দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন ‘মহাকাব্য’ বা ‘মহারাজ’। কাব্য আর রাজার চেয়ে তার মাত্রা ভিন্ন, মহিমা অনেক বেশি তাৎপর্যময়। উত্তম বাংলা চলচ্চিত্রের সেই তাৎপর্যময়তার একমাত্র উদাহরণ। যাঁকে শ্রদ্ধাভরে আমরা ‘কিংবদন্তি’-ও বলে থাকি। তাই সত্যজিৎ রায়ের মতো আরেক কিংবদন্তি তাঁকে নিয়ে চিত্রনাট্য লেখেন, ছবি বানান, আর সে ছবির ‘নায়ক’ হন উত্তমকুমার।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সুকান্ত ভট্টাচার্য: ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার সহোদর এক কবি

‘–ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে’, সুকান্ত লিখেছেন নিজের সম্পর্কে। বলেছেন, ‘আমি এক অঙ্কুরিত বীজ’। এই বীজ মহীরুহে পরিণত হতে পারল না, বাংলা সাহিত্যের পরম দুর্ভাগ্য এটা। কিন্তু তাঁর একুশ বছরের জীবনে তিনি আভাস দিয়ে গেছেন, তাঁর সম্ভাবনা কতদূর প্রসারিত হতে পারত। সুকান্ত মানে একজন কবিমাত্র নন, তার চেয়েও আরও অধিক কিছু।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও প্রসঙ্গত

প্রয়াণের আগে, সব হিসেব বাদ দিয়ে যদি তাঁর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের কথা-ই ধরি, দেখব, কত প্রিয়জনের মৃত্যুশোক বহন করতে হয়েছে তাঁকে। যেহেতু তিনি ছিলেন মানুষের সান্নিধ্যপ্রিয়, তাই অন্যের চেয়ে ঢের ঢের বেশি মৃত্যুবেদনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এসব মৃত্যু তাঁকে বেদনার্ত করলেও নিজের মনোবলের জোরে সে-অরুন্তুদ বিষাদকে কাটিয়েও উঠেছেন। পাশাপাশি মৃত্যু নিয়ে তাঁর দর্শন গড়ে উঠতেও তা ভূমিকা রেখেছে। তাই তিনি বলতে পারেন, তিনি-ই বলতে পারেন, ‘দুদিন দিয়ে ঘেরা ঘরে/ তাইতে যদি এতই ধরে/ চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময়?’ কেন পারেন?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার: অন্য ও অনন্য

তাঁর জন্মদিনের চেয়েও মৃত্যুদিনটিকে অধিকভাবে স্মরণ করা হয়, এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। তাছাড়া বাংলা চলচ্চিত্র-জগতে তো কম খ্যাতিমান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়নি, সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল, ছবি বিশ্বাস-কানন দেবী-সুচিত্রা-সৌমিত্র, তবু তাঁর মতো, ঠিক তাঁর মতো স্মরণযোগ্য হয়ে রইলেন না কেউ। শ্রাবণের অনুষঙ্গে নয়, উত্তমকুমারের প্রয়াণদিবসটি চিহ্নিত চব্বিশে জুলাই তারিখটির বিধুরতায়। ১৯৮০-র এই দিনটিতে বাংলা চলচ্চিত্র-জগতের এই দিকপাল প্রতিভার জীবনাবসান ঘটে। আজ তাঁর মৃত্যুর পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্তিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে উত্তম সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্যের ডালি।

Read More »
শৌনক দত্ত

রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী

নাটকটির নাম প্রথমে রেখেছিলেন যক্ষপুরী, তারপর নন্দিনী এবং পরিশেষে রক্তকরবী নামে থিতু হয়। শিলং-এ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে যে নাটক লেখা শুরু হয়েছিল তার দশম খসড়া প্রকাশিত হয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রায় দেড় বছর পর আশ্বিন ১৩৩১ বঙ্গাব্দে—১৯২৪ সালে। প্রকাশিত হবার পরেও, একাদশতম খসড়া প্রস্তুত করার কথা ভাবেন নাট্যকার। অনেকেই বলেছেন, এটি নাট্যকারের হৃদয়ে লালন করা কোনও স্বপ্ন। কেউ কেউ এই নাটকের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম চেতনার ছায়া খুঁজেছেন। নানা প্রশ্ন, নানা যুক্তি নিয়ে নাটকটি রচনার পর থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত দারুণ আলোচিত ও জনপ্রিয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত নাটকটি নিয়ে বহু আলোচনা। শতবর্ষে এসে দাঁড়ানো সেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নানামাত্রায় বিবেচনাযোগ্য একটি নাটক; বহুমাত্রিক এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

Read More »
নুশান জান্নাত চৌধুরী

নুশান জান্নাত চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ

কিছুকাল ঘুমিয়ে, কিছুকাল লুকিয়ে,/ কিছু শহর, কিছু মানুষের ভিড়ে হারিয়ে/ আমি দেখি—// কোনও এক/ পথহারা দেবদূতের বিষণ্ণ ডানার পাশে/ আমি বুক পেতে দিয়েছি// চুলের ভেতর জন্ম নিয়েছে/ ঘাসফুল থোকা থোকা, বুকের মাঝখানে একটা প্রাচীন পেরেক,// ঝরাপাতার রাজ্যপাটে/ আমার বাম হাঁটুতে গেঁথে আছে—/ আগামী বছরের প্রথম সন্ধ্যা;

Read More »