Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

আয় সুখ আয়

কলকাতাটা আজকে বড় আজব। হালকা হয়ে ভাসছে। আলতো একটা মন ভালতে। যেন হাওয়ায় পাক খাচ্ছে। কখনও বা চরকি। অনেকটা ঘুড়ির মত। অক্ষয় তৃতীয়ার সকালে রোদ্দুরটাও ভিনখুশিতে উড়ান দিচ্ছে নিচু অ্যাসবেস্টস থেকে মাল্টিস্টোরিডের দিকে। কখনও সোজা কোন খেয়ালে মধ্য কলকাতার গলিতে নেমে আসছে ট্রামলাইনে। দোকানপাট, পথচারী, যানবাহন-সব যেন দিলদরিয়া। বউবাজারের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিলাসের চোখ যায় সোনার দোকানের দিকে। হালখাতার এই দিনটা যেন সত্যিই জীবনের হাল ফেরানোর। সারা বছরের ধূসর দিনগুলি পেরিয়ে আবার লাভক্ষতির লেজারটাকে নতুন মলাটে বাঁধিয়ে নেওয়া। নতুন সিঁদুর আর স্বস্তিকের মাখামাখি। সময়কে হার মানিয়ে যা কিছু একটু ভাল একটু শুভ তা চিরটাকাল থেকে যাবে। চিরন্তন হয়ে যাবে। এটুকু ভরসা নিয়েই যেন আবার এ বছরের এই বৈশাখ মাসের সকালটা শুরু হয়েছে।

বিভার মোড় থেকে ডান দিকে ঘুরেই যেন থমকে থ। বড় বেমানান ঝুপসিদের এই বাড়িটা। আশেপাশে ঝাঁ-চকচকে সব স্টেশনারি দোকান, ওষুধের ফার্মেসি, প্রতিমা স্টুডিও, রেস্টুরেন্ট আর দুপুরে মিস্ত্রি কিংবা কারখানার লোকদের জন্য ভাতের হোটেল। তার মাঝখানে ওদের এই টিনের চাল দেওয়া একটা ঘর আর ভাঙা বেড়ার বাথরুমটা যেন কেমন উদ্ভট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন মনখারাপের ঝুপড়ি একটা। ঝুপড়ি আর ঝুপসি। বড় মিল শব্দ দুটোয়। দুই বান্ধবী। ওর এই ঝুপসি নামটা ওর মা শ্যামলীর বাবা যোগেন রায় মানে ওর দাদু রেখেছিল। সে তো ওই কাশীপুরের শ্মশানে কবেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। শুধু জন্মের দিন থেকে শুরু করে আজকে এই তেরো বছর আট মাস কয়েকটা দিন পর্যন্ত তার গায়ে এই অন্ধকারের গন্ধটা লেগেই রইল। আদর্শপল্লির পুকুরে গায়ে সাবান মাখা ধুঁধুলের খোসা ঘষেও সে বাস আর গেল না। দাদু বলত, ‘‘পুড়ে কেউ ছাই হয় নারে দিদিভাই, পুড়ে মাটি হয়। শ্মশানের মাটিতে নাক রাখলেই যত মানুষ এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তাদের সবার গায়ের গন্ধ পাবি। প্রত্যেকের গন্ধ আলাদা। একটু সময় মাটিতে মুখ রেখে শুয়ে থাকলেই চেনা-অচেনা সব মানুষের গন্ধ পাওয়া যায়। সে গন্ধ কখনও হারায় না। হাওয়ায় ঘুরতেই থাকে। কালবৈশাখীতে। বাদলা রাতে। শীতের নিশুতিতে। সারাক্ষণ শুধু ঘুরতেই থাকে।’’ চোখের কোণ দুটোয় কেমন যেন শুকনো লঙ্কার জ্বালা ঝুপসির। কী জানি। সে এই বেলঘড়িয়া ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলে তার গন্ধও কি থেকে যাবে? রাত-বেরাতে লোক চিনতে পারবে তাকে? ফিক করে নিজের মনেই হেসে ফেলে ঝুপসি। তাকে এই বিভার মোড় আর কলোনি বাজারে ক’জনই বা চেনে? কার দায় পড়েছে বিটি রোডে গিয়ে তার গায়ের গন্ধ শুঁকে আসবে। পলেস্তারা খসা শ্যাওলা ধরা ভাঙা মিটার ঘর আর বাথরুমটার মাঝখানে যে চাতালের মত জায়গাটায় ঝুপড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে বিভা সিনেমার ফাঁকা জমিটাকে কোনাকুনি দেখা যায়। ওর এই সামান্য বয়সের মধ্যে ঝুপসি কত কী যে বদলাতে আর পাল্টাতে দেখল তার শেষ নেই। এক সময় কী হৈহৈ রৈরৈ ছিল দুপুর বারোটা থেকে রাত ন’টা। জুটমিল থেকে সিনেমাহল পর্যন্ত রাস্তাটা একেবারে সরগরম হয়ে থাকত। একটার পর একটা শো। নুন, ম্যাটিনি, নাইট। ঝালমুড়ি, ফুচকা, বাদাম আর হরেক রকমের লজেন্স আর বিস্কুট। মাঝদুপুরে সেজেগুজে স্বামী-স্ত্রী আর বাচ্চাকাচ্চা। আবার কখনও ইস্কুল আর কলেজ পালিয়ে জোড়ায় জোড়ায়। টেরিলিনের জামা। ঘোলাটে জিনসের প্যান্ট। ঝিকমিক ফ্রক বা সালোয়ার। সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উল্টোদিকে ঝন্টুদার দোকান থেকে একটা চারমিনারে আগুন ধরানো কিংবা ননীদার বাহারী পানে দুজনেরই টুসটুসে লাল ঠোঁট। কয়েকটা মেয়ে শাড়ি পরেও আসত। সঙ্গিনীর কোমর জড়িয়ে ধরে কেমন যেন নেপোলিয়নের মত সদর্পে হলে ঢুকে যেত ছেলেগুলো। আবার একবার ফিক করে হেসে ফেলে ঝুপসি।

অনেকগুলো সোনার দোকান এই মোড়টায়। পুরনো আর নতুন মিলিয়ে গোটা আট-দশেক তো হবেই। কী সেজেছে সব। মোটা গাঁদার মালা। রজনীগন্ধা। ধূপধুনোর গন্ধ। পুরোহিতের মন্ত্র ছিটকে আসছে কুয়োতলার দিকে। টগর গাছটায় যেন নেশা লেগেছে। কী সব মিষ্টির গন্ধ। মিষ্টি যেন হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে রাস্তাটায়। ভূতের রাজা বর দিয়েছে। একবার চোখ বুজে বুকভরে বাতাসটা নেয় ঝুপসি। সব আলাদা আলাদা চেনা যাচ্ছে! দানাদার, মিহিদানা, সন্দেশ, কালোজাম, রসগোল্লা, জিলিপি… সব! দাদু ঠিকই বলত। চোখ দুটো বুজে নাকটাকে সজাগ করলে মরা মানুষ থেকে মিষ্টি— সবাইকেই আলাদা করে চেনা যায়। একটু ভাল করে ভাবতে চায় ঝুপসি। আচ্ছা, মিষ্টির দোকানের ট্রেতে যদি দশটা দানাদার থাকে তাহলে তাদের প্রত্যেকের গন্ধও কি আলাদা আলাদা হবে? বোধহয় তাই। ঘোষের দোকানে মাছির মত ভনভন করছে খরিদ্দার। নীলগঞ্জ রোডের দিকে যাবার রাস্তায় মিষ্টির দোকানদুটোও কম যায় না। বিলাসের কথাটা ধক করে মনে পড়ে। মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসে বিলাস। তার পছন্দ আবার একটু আলাদা। অত সব বড়লোকের মিষ্টি না। গজা, ক্ষীরের চপ কিংবা অমৃতি পেলেই সে খুশি। এবার পয়লা বৈশাখে আর দেখা হয়নি বাপ-মেয়ের। বিলাস আসেনি এবার। শ্যামলী সারাদিন পথ চেয়ে বসেছিল। জমানো খুচরো পয়সায় পোনা মাছ এনে রান্না করেছিল। কিন্তু কোথায় কে। সে মানুষের সারাদিনে দেখাই মেলেনি। কী আর হবে। এ বছর নতুন সুতো গায়ে তোলা ভাগ্যে ছিল না ঝুপসির। গত বছর হলুদ রঙের ফ্রক এনেছিল বিলাস। সেটাকেই ধুয়ে কেচে এবার পরিয়ে দিয়েছিল শ্যামলী। এখন যেন একবার বিলাসকে দেখতে পেল ঝুপসি। এই সিমেন্ট চটা বারান্দাটায় এসে বসেছে। কাঁচাপাকা দাড়ি। একগাল হেসে কাছে ডাকছে ঝুপসিকে। হাতে সেই বাদামি রঙের প্যাকেটে মোড়া হলুদ ফ্রকটা।

কী ভিড় সোনার দোকানে। সবার খাতা আছে। নগদেও কিনছে অনেকে। হালখাতার পুজোর সঙ্গে অন্যদিকে চলছে কাস্টমারদের খাতিরদারি। লুচি, মিষ্টি, ছোলার ডাল আর কোল্ড ড্রিংকস। সঙ্গে গিফট ব্যাগ। বিভার মোড়টা এখন যেন একটা সিনেমার পর্দা। সবচেয়ে দামি টিকিট কেটে কুয়োতলার পাশে পেছনের সিটে বসে আছে ঝুপসি। একসময় শ্যামলীরও খাতা ছিল ‘অনুপমা’-তে। তখন কলকাতার দিকে গেলেই শ্যামবাজার থেকে শুরু করে গড়িয়াহাট পর্যন্ত কত নামকরা সোনার দোকানে গেছে বাপ মা আর মেয়ে। কয়েকটা গয়না কিনেওছিল সেখান থেকে। কানের দুল, হার, নাকছাবি, বাউটি, মকরমুখী বালা, আংটি— একটু একটু করে সব বানিয়েছিল শ্যামলী। সে সবই এখন হারু কর্মকারের কাছে পড়ে আছে। হারুর বন্ধকী কারবার। ইদানীং ওর হাসিটায় বড় লোভ। হয় সোনাগুলো আর না হয় শ্যামলী। কোনও একটাকে যেন সে লুঠ করবেই। অথচ একদিন ছিল যখন বিলাসকে তোয়াজ করত ষাট বছরের হারু। ছোলার ডাল কচুরি আর চা খাওয়াত সকাল সকাল। খাবার দোকান করার জন্য হারুকে টাকাও দিয়েছিল বিলাস। সে টাকা অনেক বছর সময় নিয়ে শোধ করেছিল হারু। তখন বিলাসের মুদি দোকান বালিহাঁসের মত ডানা মেলে উড়ছে। রমরমা বাজার। ফিডার রোডের মত জায়গায় পনেরো বাই বারোতে তিনজন কর্মচারী। চালু ব্যবসা। সাজানো সংসার। হঠাৎ যে কী ঘুণপোকা ধরল ওকে। নবদ্বীপ থেকে কয়েকটা লোকের আনাগোনা ছিল ওর দোকানে। তারাই বোধহয় বীজ ঢেলেছিল কানে। বোষ্টম হবার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আশা জুগিয়েছিল কীর্তনের দল করবার। মাঝরাতে শ্যামলীর ভরাট শরীর ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে থাকত বিলাস। দু-একদিন শ্যামলীর ফোঁপানোর আওয়াজও পেয়েছে ঝুপসি। একটা সময় সে বুঝতে পারত। ওদের দুজনের সেই ঘামের গন্ধ আর বিছানায় নেই। যে ঘাম ভালবাসার সময় বের হয়। এক রাতে চুপি চুপি বিলাসের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। মুখার্জিদের উঠোনের শিউলি গাছটার দিকে একভাবে চেয়ে দাঁড়িয়েছিল বিলাস। অন্ধকারেও যেন স্পষ্ট। ওর বিষণ্ন দুটো চোখ। নিশ্বাসের শব্দও কি নেই? নিজেও যেন নিস্তব্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছিল ছোট্ট একটা মেয়ে। একসময় একটা দীর্ঘশ্বাসের মত বেরিয়ে আসে দুটো শব্দ-‘হা কৃষ্ণ’। তারপর পেছন ফেরে বিলাস। দুটো ছায়ামূর্তি মুখোমুখি। নিশ্চল।

‘আমার রাধা মা এলে গো— আমার রাধা মা’— কেমন যেন এক ফকিরের মত ভিক্ষা চেয়ে দুটো হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দেয় বিলাস।

মন্ত্রের বশে ঝুপসি ধরা দেয় ওর কাছে। নিঃশব্দ কান্নায় ওর পায়ের কাছে বসে পড়ে বিলাস। পায়ে পায়ে কখন যেন দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল শ্যামলী। একটা পুকুরপাড়ে রাতের কুয়াশা মেখে দাঁড়িয়ে থাকা দেবীমূর্তির খড়ের কাঠামোর মত। এই বুঝি খসে পড়বে তার গায়ের মাংস।

রানাঘাট, কৃষ্ণনগর আর নবদ্বীপে গিয়ে আখড়ায় পড়ে থাকত বিলাস। দিনের পর দিন আসা নেই যাওয়া নেই। মাঝে মাঝে হঠাৎ ধূমকেতুর মত একদিন বা দুদিন। তাও আবার সারারাত ঘুরে বেড়াত জুটমিলের ধারে বা ট্রেন লাইনে। বিছানায় পিঠ দিত না। দিনকে দিন বাড়ছে চুলদাড়ি। ভ্রূক্ষেপ নেই। একবার চন্দন নিয়ে এল রাধামাধবের মন্দির থেকে। শ্যামলীকে তিলক করানোর জন্য সে কী পীড়াপীড়ি। তাকে বোষ্টমী বানাবেই। সেদিন সারা সন্ধ্যা ঘোলার দিকে গিয়ে খোলা মাঠে ঝিলপারে বসেছিল বিলাস। ফিরে এসে শ্যামলী জানতে চাওয়াতে নিজেই বলেছিল সে কথা। রাত্রে খিদে নেই বলে শুয়ে পড়ল। তারপর মাঝরাতে মা মেয়ে যখন ঘুমে থৈথৈ তখন দরজা খুলে বিলাস উধাও হয়ে গেছিল ব্যারাকপুরের দিকে। আর এরপরই শুরু তার কীর্তনের নেশা। বর্ধমান থেকে শুরু করে বীরভূম, হুগলি, মেদিনীপুর, নদীয়া এমনকি উত্তরবঙ্গেরও কত জেলা। গানের গলাটা ওপরয়ালা ছোট্ট বয়স থেকেই দিয়েছিল। প্রশংসা, তারিফ কিংবা মেডেল-সবই জুটেছে। টাকাপয়সা রোজগার করে এনেও দিয়েছে অনেকবার শ্যামলীর হাতে।

‘ও মেয়ে একবার এদিকে আয় না। বলি চান-খাওয়া তো করতে হবে নাকি? সব্জিটায় অন্তত হাত দে।’

চমক ভাঙে। সব্জি কুটেই গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেবে। বড্ড গরম।

সবে দুজনের চোখ বুজে এসেছে। শ্যামলীর বুকে মাথা গুঁজে দিয়েছে ঝুপসি। অনেক দূর থেকে হাওয়ায় ভেসে ঘরে ঢুকছে কিশোরকুমার। আমার পূজার ফুল ভালবাসা হয়ে গেছে, তুমি যেন ভুল বুঝো না। উঠোনে জামাকাপড় শুকোতে দেওয়া আছে। বিকেল হলে তুলতে হবে। এসব বলতে বলতে ঝুপসির চুলে আঙুল চালায় শ্যামলী। ঝুপসির চোখের বন্ধ পাতার আড়ালে এখন লাল, নীল, হলদে, সবুজ, কমলা আর বেগুনি রঙের অনেক গোল গোল আলোর বৃত্ত।

সন্ধ্যার পরে ওদের বাড়ির মোড়টায় ঠিক এরকম আলো ভেসে বেড়াবে… বুদবুদের মত… ফানুসের মত…

হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। ঘুমের ভেতরে প্রথমে ঠিক বুঝতে পারে না শ্যামলী। তারপর কোনওরকমে ঝুপসিকে ছাড়িয়ে শাড়িটা বুকের ওপর তুলে উঠে বসে। এখন তো কারওর আসার কথা নয়! কে! দ্রুতপায়ে নেমে গিয়ে দরজাটা খোলে। বিলাস!

সন্ধ্যাবেলা মনটা হঠাৎই ভাল হয়ে গেছে ঝুপসির। বিলাস মধ্য কলকাতার এক বড়লোক বাড়িতে কীর্তন গেয়ে সোনার হার পুরস্কার পেয়েছে। সেই হার সে নিজের হাতে পরিয়ে দিয়েছে শ্যামলীকে। ক’দিন ধরে সে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া অতিথি আপ্যায়ন। তাই দেরি হয়ে গেল এখানে ফিরতে। ওদিকে মায়াকোলের কাছে এক জমিদার বাড়িতে কীর্তন করে অনেক টাকাও পেয়েছে। তারা ওকে গৃহদেবতা বাসুদেবের মন্দিরে প্রধান কীর্তনীয়া হিসাবে চেয়েছেন। বায়নার টাকা এসেছে বর্ধমান আর মেদিনীপুরের প্রায় দশ বারোটা জায়গা থেকে। লক্ষাধিক টাকা।

হারুর কাছ থেকে গিয়ে কিছু টাকা দিয়ে কয়েকটা গয়না ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে বিলাস। সেও হয়ে গেল প্রায় কয়েক ঘণ্টা। এখন রাত প্রায় রাত দেড়টা। শ্যামলী ঝুপসিকে কোলের কাছে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। একটা অদ্ভুত মোহ মাখানো আছে আজকে শ্যামলীর সমস্ত অস্তিত্বে। পুরুষকে পাগল করে দেওয়া একটা টান। সেটা কি ওর মুখে? নাকি সারা শরীরের ওঠানামায়? কিংবা কোনও চোরা উপত্যকায়? না কি ওর এই আচমকা সুখে? ঝুপসিটাও কি আজকে অনেক অচেনা?

পায়ে পায়ে এখন অন্ধকার বারান্দাটায়। আকাশে অনেক তারা। ওদেরও কি খুব আনন্দ? ওইটুকু একটা সোনার হার আর ফিরে পাওয়া কয়েকটা গয়নায় যেন ভাল লাগাটুকু আজ বড় ছোঁয়াচে। তার নেশা লেগেছে এই বিভার মোড় থেকে স্টেশনের দিকে চলে যাওয়া সুনসান রাস্তাটাতেও। হঠাৎ চমকে পেছন ফিরে তাকায় বিলাস। কাঁধের কাছে একটা ঝাপসা ছোঁয়া। কিছুটা সঙ্কোচ মেশানো। শ্যামলী!

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Haimanti Pal
Haimanti Pal
2 years ago

খুব সুন্দর

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »