বন্ধ দরজা
এখানে গভীর ক্ষয়, এখানে পাতাঝরা বিকেল
জাদুবাক্স খুলে বসে আছে স্মৃতির অ্যালবাম…
ওখানে ব্যস্ত তুমি সাংসারিক কাজে
ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়ে বসে আছ;
মধ্যরাতে ঝড় ওঠে, বাতাসের উন্মত্ত প্রলাপ
ধুলো মেখে পাতা মেখে বিপর্যস্ত তুমি
দু’হাতে চেপে ধরো দরজার খিল…
আমি সেই বন্ধ দরজায় মাথাকুটে
. ফিরে আসি রোজ…
*
রমণীয় ভুল
মাঠের নাড়ায় উঠেছিল ঢেউ
গ্রামদেশ ছেড়ে এসে তোমাকে ভাবিনি
ভুলে গেছি, ভুলে গেছি মনে করে
আত্মতৃপ্তি নিয়ে আমি চৌকাঠে দাঁড়িয়ে!
মৃদু হেঁটে আঁচল উড়িয়ে তুমি হেসেছিলে
আমি শুধু রমণীয় ভুল নিয়ে
সারাজীবন ভালবাসা ভিক্ষা করে গেছি…
*
উষ্ণতায় ভরেছিল ঠোঁট
উষ্ণতায় ভরেছিল ঠোঁট
তোমার চুম্বনস্মৃতি
আজও শরীর কাঁপায়…
ধুলো মেখে ধুলো ঝেড়ে জীবন অস্থির
অক্সিজেন শেষ হল
ফুসফুস হাঁপাচ্ছে খুব
শীতঘুম নেমে আসবে চোখের পাতায়
তবু কিছুক্ষণ তোমার চুম্বন নিয়ে উষ্ণ হতে চাই…
*
ভিতু আমি
গাছের কোটরে বসে হেসেছিল চাঁদ
জীবনানন্দের পেঁচা তা দেখছিল কিনা
সেটা অনুমান-নির্ভর…
শুধু বাগানে বেড়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলে তুমি
আমার হাতে কোনও ফুল ছিল না, চিঠিও না
তবু ফাল্গুনের সন্ধ্যা উৎকর্ণ…
ভিতু আমি, কাছে যেতে পারিনি সেদিন
দূর থেকে একপলক দেখে হারিয়েছি অন্ধকারে!
*
অগস্ত্যযাত্রা
একটি গাছের ছায়ায় প্রেম এসে বসে
একদিন ইস্কুল-ফেরতা পথের ধুলোয়
প্রেম হেঁটে গিয়েছিল;
এখন দু’জনে দুই বারান্দায় চাঁদ দেখি
দু’টি অন্য বিছানায় শুই
দেওয়ালের দিকে পাশ ফিরে
দু’টি ভিন্ন পৃথিবীর জলজ গন্ধ পাই…
কোনও সাঁকো খুঁজে পাইনি আজও
যা পার হলে প্রেম অগস্ত্যযাত্রা থেকে ফেরে!
*
ডমরু বেজেছে
চাঁদের আলো ছিল না
আমি অন্ধকারে চোখ জ্বালি
তোমার শরীরগন্ধ
আমার না-পড়া পদাবলি।
আজ সে গাঙুড় নেই
মান্দাস ভেসেছে দূরে
মৃতপ্রাণ ফিরে পেতে
ডমরু বেজেছে সুরে!
*
অঙ্ক পারেনি বলে
একটি বালিকা ছিল
অঙ্ক থেকে মুখ তুলে আকাশ দেখত
বড় হতে গিয়ে দেখল আকাশ
কোনও কাজে লাগে না…
শুধু অঙ্ক, অঙ্ক…
জীবনের প্রতিটা ধাপে শুধু অঙ্কই লেখা…
সে অঙ্ক পারেনি বলে
এখন আকাশেই আশ্রয় নিয়েছে!