Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

ছোটগল্প: একটি সকাল ও একটি ট্রেন দুর্ঘটনা

মি তা  না গ  ভ ট্টা চা র্য

বিভূতি নিজের হাতে চা করে নিয়ে সকালে মর্নিং ওয়াকের জন্য রেডি হতে থাকেন। ছেলে অনি কাল রাতের ট্রেনে অফিসের কাজে পুরী র‌ওনা দিয়েছে। বউমাকে আর ডাকাডাকি করেননি। এমনিতেই অনি বাড়িতে থাকলে সারাদিন বাড়িতে ‘এটা দাও সেটা দাও’। বউমা রুমা এক এক সময় বিরক্ত হয়ে যায়। তাই অনি যখন বাইরে তখন আর রুমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেননি।

ক’দিন ধরে বৃষ্টি। বের হতে পারেননি। আজ মনটা খুশি লাগছে।

সামনে হেঁটে চলেছেন আরও দুজন, তাদের টুকরো কথা কানে আসতে থাকে।

—‘কী সাংঘাতিক কথা বলুন, কত মানুষ যে স্পট ডেড, এত বড় অ্যাক্সিডেন্ট।’

কানটা সজাগ হয়, কী বলছেন এরা? তাড়াতাড়ি পা চালাতে আরও স্পষ্ট হয় শব্দ। ট্রেনের নামটা শোনামাত্র‌ই মাথার মধ্যে কেমন ঘুরতে থাকে। অনি তো এই ট্রেনেই র‌ওনা হল!

থমকে দাঁড়াবার আগে মাথাটা ঘুরে ওঠে। রায়বাবু খেয়াল করে ধরে ফেলেন বিভূতিকে।

রুমা আজ বিছানায় নিজেকে আরাম দিতে চাইছিল। এতক্ষণে কতবার যে অনি হাঁক পাড়ত। নানা হুকুম চলে তার পরপর। কলিং বেল বাজছে প্রবল। দরজায় কয়েকজনের গলার স্বর।

—‘এ কী!’ বিভূতিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আরও দুজন। কেমন বিধ্বস্ত লাগছে শ্বশুরমশা‌ইকে।

—‘বিভূতিদার রাস্তায় মাথা ঘুরে গিয়েছিল, ধরে না ফেললে বড় বিপদ হতে পারত।’ রুমা কী করবে বুঝে পায় না। শ্বশুরমশাইকে তাড়াতাড়ি এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

একমাত্র ননদ অর্পিতা, তাকে ফোন করা দরকার। অনি থাকলে চিন্তা ছিল না। কিন্তু অর্পিতার সঙ্গে বছর দুই কোনও কথা নেই। অথচ দুজনার মধ্যে কত সুন্দর সম্পর্ক ছিল।

বিভূতির বুকের ভিতর কী অস্থিরতা। কে জানত সকালটা এমন ঝোড়ো বাতাসে ওলটপালট হয়ে যাবে।

—‘বাবা, এখন কেমন লাগছে? শুয়ে থাকুন, আমি ডাক্তারকে ফোন করি।’

বিভূতি বুঝতে পারছেন, রুমা এখন‌ও কিছু জানে না। হঠাৎ করে মনে হয়, অনির কিছু হয়েছে এমন ভাবছি কেন? আজকাল অল্পেতেই অস্থির লাগে। মনের ভিতর কেবল অনিশ্চয়তা। রুমা আবার এ ঘরে।

—‘বাবা, অর্পিকে ফোন করি। আপনার হঠাৎ কেন এমন হল, প্রেসারটা ঠিক তো?’

—‘না না, ওকে ফোন কোরো না। শুধু শুধু চিন্তা করবে। কাল বেশি রাতে শুয়েছি দেখেই হয়তো।’

রুমার একবার মনে হয় অনিকে ফোন করে, কিন্তু মনটা পিছিয়ে যায়। অফিসের কাজে গিয়ে একবারও রুমাকে ফোন করেনি গতবার। তা নিয়ে কাল তুমুল কথা কাটাকাটি। কিছুতে স্বীকার করল না যে, ভুল করেছে। অনির এ আচরণে রুমা বিভ্রান্ত। আজকাল যেন ঘনঘন বাইরে যাওয়া। পৌঁছে গিয়ে ফোন করার কথা মনেই নেই হয়তো। রুমা অনির এমন অনেক আচরণের ব্যাখ্যা খুঁজে পায় না। এক সময় কষ্ট হত, এখন রুমা নিজেকে বুঝিয়েছে, মানুষ তার নিজের ইচ্ছেতে খারাপ কাজ করে। তাদের বলে লাভ নেই। সে নিয়ে ভেবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। বদলাতে হবে নিজেকে।

শ্বশুরের ফোন বাজছে। অর্পি ফোন করেছে, রোজ সকালে একবার ফোন করে। মা মারা যাবার পর থেকে বাপে-মেয়েতে সকালবেলা গল্প। তাড়া নেই ননদের, স্বামী অমলদা বিবেচক। সকালে চা করে ভাত বসিয়ে দেন, ছেলের টিফিন রেডি করেন। ভাবতেই পারে না রুমা। অনেকে মনে করে, পুরুষেরা সংসার নিয়ে মোটেও ভাবে না। না, সে ভাবনায় নেই রুমা। নিজের বাবাকে দেখেছে, মায়ের হাতে হাতে সব কাজ করতেন। মায়ের শরীর খারাপ হলে অস্থির হয়ে পড়তেন। এক এক দিন ইচ্ছে না করলেও সব কাজ রুমার। অনি কোনও কাজের মধ্যে যাবেই না। সে নিজেকে নিয়েই মেতে থাকে। তবুও বিভূতি বলেন রুমাকে রেস্ট নিতে। সকালের চা তিনি নিজে হাতে করে নেন।

শ্বশুরের গলার স্বর শুনে স্বস্তি পায় রুমা, এখন তাহলে ঠিক আছেন। ওপ্রান্তে মেয়ে থাকলে বিভূতি এক অন্য আনন্দে থাকেন। বিছানা থেকে
উঠে এসেছেন, রুমা ব্যস্ত হতেই বলে ওঠেন, আমি ঠিক আছি। তুমি আর ডাক্তার ডাকতে যেয়ো না। কড়া করে এক কাপ চা দাও দেখি।’

রুমা অবাক। একটু আগেই মানুষটার চোখ দেখে ভয় করছিল। এখন দিব্য ঠিক আছেন।

বিভূতি ঈশ্বরকে নিয়ে কখনও ভাবেননি। আজ বিহ্বল হয়ে পড়ছেন, অর্পির কাছে অনি ফোন করেছে ঠিকমত পৌঁছেছে। পুরী নয়, পাটনা। পুরী যাওয়া ক্যানসেল হয়েছে। অফিস থেকেই সব ব্যবস্থা করেছে। অনি কাজের ব্যস্ততায় বাড়িতে আর বলতে পারেনি। ভগবান এমন সহায়‌ও হন। অনির কিছু হয়ে গেলে বিভূতি কী নিয়ে বাঁচতেন! কিন্তু মনের ভিতর খচখচ করতে থাকে, অনির উচিত ছিল বাড়িতে বলে যাওয়া। আজকাল কী যে সব হচ্ছে। তাঁর আর অনির মায়ের মাঝে কোনও দূরত্ব ছিল না।

দিঘার সমুদ্র অনিকে টানে। চলে এসেছে। বাড়িতে বলা সম্ভব নয়। বাবাকে একা ফেলে রুমাকে আর ছেলেকে সঙ্গে করে আনার কোনও ইচ্ছে অনির ছিল না। সে জীবনটা ভোগ করতে চায়। সঙ্গে যাকে এনেছে, সে বাথরুমে। হোটেল থেকে বের হবার কোনও সিন নেই। জানালা দিয়ে, বারান্দা দিয়ে দেখবে সমুদ্রকে। টিভিটা অন করতেই ঘোষিকার আর্তনাদে চমকায়— ‘ভয়ংকর ট্রেন দুর্ঘটনা…।’

অনির কেমন অস্থির লাগে, কী হবে এখন? ওই ট্রেনেই তো তার আসার কথা ছিল। খবরটা শোনামাত্র বাবা তো আর ঠিক থাকবেন না। বোন অর্পিকে ফোন করে দেয়াই ভাল। রুমা অনেক প্রশ্ন আনবে, কেন বাড়িতে বলেনি, এক মুহূর্ত দেরি না করে অনি অর্পিকে ফোন করেছিল ভাগ্যিস। ট্রেনটা আর দুর্ঘটনা ঘটার সময় পেল না।

কলিং বেল বাজছে। কাজের মেয়েটা এসেছে। যতক্ষণ থাকবে, বকবক করতে থাকবে।

—‘ও বউদি শুনেছ, কী বিরাট ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে?’ শোনামাত্র রুমার কেমন অস্থির লাগতে থাকে। গতকাল অনির সঙ্গে কথায় কথায় জোর লেগে গেছিল। না, রুমা আর অভিমান করে চুপ থাকতে পারে না। অনিকে ফোন করে।

—‘এখন তো মিটিং শুরু হবে, ফোন করছ কেন?’

—‘বারে, তুমি পৌঁছলে কিনা, চিন্তা করছি।’

—‘আমি তো সকালে অর্পিকে জানিয়ে দিলাম, জানি ও জানিয়ে দেবে।’

রুমা ফোন ছেড়ে দেয়। অনি নিরাপদ, এটুকুই যথেষ্ট।

বিভূতি বাজারে যাবার অজুহাত খু়্ঁজছিলেন। ফিরে এসে বলবেন যে, রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্টের খবরটা শুনেছেন। কিন্তু রুমা কিছুতেই রাজি নয়।

কলি়ং বেল বাজছে। কে এসময়?

রুমার বোন ঝিমলি। উদ্ভ্রান্তের মতো অবস্থা।

—‘দিদি কোথায় মেসোমশায়?’

বলার আগেই ঝাঁপিয়ে এসে পড়ে রুমা।

—‘কী রে তুই এত সকালে?’ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে ঝুমা।

—‘দিদি রে এ কী হল বল তো অনিদার ট্রেন…।’

তৃতীয় কোনও অনুভূতির তাগিদে বিভূতি চিৎকার করে ওঠেন,—‘আরে না না, অনি ওই ট্রেনে যায়নি, ও তো গেছে…।’

রুমা এবার অবাক।

—‘তোরা কী বলছিস, আমি কিছু বুঝছি না।’

বিভূতি বোঝেন আর দেরি করা যাবে না। যেভাবেই হোক বুঝিয়ে বলতে হবে রুমাকে।

***

বিকেল পড়ে এসেছে। রুমা নিজের ঘরে। একটাও কথা বলছে না।

রুমাকে জানেন বিভূতি, খুব অভিমান হলে শব্দহীন হয়ে যায় মেয়েটা। মনটা অস্থির লাগছে। অভিমান হতেই পারে মেয়েটার। থাক একটু একা। রুমা একটু অন্য রকম। ওর নিজস্ব এক জগৎ আছে। শাশুড়িকে কখনও কষ্ট দেয়নি রুমা। পড়শোনায় কত ভাল রেজাল্ট। অথচ, অনি নিজের স্ত্রীকে চাকরি করতে দিতে চায় না। বিভূতিকেও তাই কঠোর থাকতে হয়েছে। অনির চরিত্রে বিভূতি নিজের বাবাকে দেখতে পান। অনি কি রুমাকে নিয়ে তৃপ্ত নয়? তাদের পরিবার কিন্তু রুমাকে নিয়ে অসুখী নয়।

রুমার ভিতরে অদ্ভুত ঝড়। অফিস ট্যুরের জায়গা বদল হল, এটা অনি বাড়িতে জানাবে না?

ভাগ্যিস টিভিটা খারাপ। ন‌ইলে শুনে কী ভয়ংকর অমঙ্গলের মিথ্যে ছায়া গ্রাস করত রুমাকে। মনটা কেমন খচখচ করছে। ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য‌ই বোধহয়, কেবলি মনকে সে বোঝাতে থাকে কিছু একটা গোপন করছে অনি। কিন্তু চরম সত্যি এটাই, ওই ভয়ংকর দুর্ঘটনায় পড়া ট্রেনে অনি ছিল না। পরম ঈশ্বরের কৃপায় বুঝি। একমাত্র ছেলের কিছু হলে শ্বশুরমশায়কে রুমা কীভাবে সামলাত? তার নিজের সন্তানও পিতৃহারা হত। আর রুমার নিজের মন? অনি এতটাই রুমাকে অবহেলা করেছে, তার জন্য মনগহীনে অশান্তি ছাড়া আর কিছু নেই।

ননদ অর্পির ফোন আসছে। অনেকদিন পর। ধরবে কিনা ভাবতে ভাবতে ধরেই ফেলে।

—‘বউদিভাই, আসলে কী বলো তো, দাদাকে আমিই করেছিলাম ফোন আগে, তখনই দাদা জানাল যে…।’

রুমার ভিতর তোলপাড়। কিন্তু স্থির থাকল। অর্পির ওপর রাগ করে লাভ নেই। নিজের দাদার ইমেজ ঠিক রাখতে চাইছে। রুমা কারও করুণা পেতে চায় না। যে অনি স্ত্রীকে এত তুচ্ছ করতে পারে, তাকে এত ইমপর্ট্যান্স দেবার দিন শেষ। আকাশে আমলকী রঙা রোদ্দুর ঝিলিক দিচ্ছিল তখন। রোদ্দুরের ঝলক রুমার শরীর ছাপিয়ে মনের ভিতর।

—‘তুমি এত ভেবো না, অর্পি। আমি তোমার দাদাকে নিয়ে আর ভাবি না।’

ফোনের ওপ্রান্তে ঝরঝর করে চোখ বেয়ে জল নামছে অর্পির। কী করে বলবে বউদিকে, দাদা অনি, শুধু একটু এনজয় করার নেশায় অফিসের নাম করে দিঘায় এক মহিলাকে নিয়ে। বাবাকেও কি বলা যায়? বাবা-মায়ের মধ্যে অসাধারণ সখ্যতা ছিল। বাবা চিরকাল এক পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ। বউদি জানলেও খুব দুঃখ পাবে। একটা ট্রেন দুর্ঘটনা সব কিছু যেন কেমন করে দিল। মুহূর্তে ফোনের ওপ্রান্তে রুমা শব্দময়, ‘একজন মিথ্যেবাদীর জন্য ভাবার সময় আমার নেই।’

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »
শুভদীপ রায়চৌধুরী

শুভদীপ রায়চৌধুরীর দুটি কবিতা

অন্ধকারের তুমি,/ নরম পুঁইমাচার নিচে সবজেটে বহুরূপী/ তোমাকে আলোর কণার ভেতর গড়িয়ে যেতে দেখব বলে/ আমি এই পাগলের পৃথিবী ছেড়েছি/ টিলাপায়ে বাস করি/ নাম, সমুদ্রসম্ভব।/ পাতার ইমারত আছে, আছে/ কিছু দৈনন্দিন কাজ/ মাছ ধরার নাম করে/ বালসাভেলায় অনেকদূর যাওয়া/ যতদূর ভেসে গেলে ঢেউয়ের চুম্বন থেকে/ ছোবলটুকু আলাদা করাই যায় না

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | দ্বিতীয় পর্ব

সকালে চিড়ে নারকেল-কোরা আর গুড় খেয়ে আমি সাইকেলে চেপে ছুটিয়ে দিলাম— আট মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে যখন পৌঁছালাম— তখন গণগণে রোদ্দুর তেষ্টায় গলা কাঠ। ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে একটা বাড়ি দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়লাম যদি একটু জল খাওয়া যায়। বাড়ির বারান্দায় একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসেছিলেন— তার কাছে উদ্দিষ্ট ঠিকানার কথা প্রশ্ন করতেই তিনি উঠে এসে আমার হাত ধরে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে একটা পাটি পেতে বসতে দিলেন। আমি আবার জল চাইলে বললেন, “দাদাঠাকুর ব্যস্ত হবেন না— ঠিক জায়গায় এসে পড়েছেন।”

Read More »