Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

মানুষ ও বিজ্ঞানী: অমরনাথ ভাদুড়ী

একজন কীর্তিমান বিজ্ঞানীর প্রাথমিক পরিচয় হল বিজ্ঞান গবেষণায় তাঁর কৃতিত্ব, সাফল্য ও অবদান। আর এই কৃতিত্ব, খ্যাতি ও সফলতার পরিমাপ করা হয় মূলত সেই বিজ্ঞানীর প্রকাশিত উচ্চমানের গবেষণাপত্র, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অবদান আর সম্মাননা ও পুরস্কার প্রাপ্তি ইত্যাদি বিচার করে।

এখানে আমরা একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাব্রতী অধ্যাপক অমরনাথ ভাদুড়ীর (১৯৩৫-২০০৩) কথা বলব। বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে অমরনাথের সম্মাননা প্রাপ্তির তালিকাটি যথেষ্টই বড়। ভারতবর্ষের বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর স্মৃতি পুরস্কার’ (১৯৭৯) সহ একাধিক স্বীকৃতি, সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। যদিও পুরস্কার বা সম্মাননা প্রাপ্তি দিয়ে একজন মানুষকে কখনওই পরিমাপ করা যায় না। একজন প্রকৃত বিজ্ঞানীর পরিচয় শুধু তাঁর পুরস্কার প্রাপ্তি আর গবেষণাপত্রতেই সীমাবদ্ধ, তা কখনওই নয়। এরই পাশাপাশি একজন প্রকৃত বিজ্ঞানী হবেন সমাজসচেতন মানুষ। বিজ্ঞান গবেষণালব্ধ ফসল ও জ্ঞান যাতে সাধারণ মানুষের উপকারে লাগে সে বিষয়ে থাকবে সজাগ ও দরদি দৃষ্টি। সেই সঙ্গে ছাত্রছাত্রী থেকে বিজ্ঞানে খামতি থাকা সাধারণ মানুষদের মধ্যে যাতে বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে, সে দিকে থাকবে তাঁর সজাগ দৃষ্টি।

অমরনাথ দেশে-বিদেশে সমাদৃত একজন কীর্তিমান বিজ্ঞানীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ছাত্রদরদি একজন আদর্শ শিক্ষকও। বহুমাত্রিক এবং আদ্যোপান্ত মানবতাবাদী ও সমাজসচেতক মানুষ। একই সঙ্গে যাঁর ছিল মানুষের জন্যে দরদি মন।

অমরনাথ ভাদুড়ীকে অভিনন্দিত করছেন রাষ্ট্রপতি রামাস্বামী ভেঙ্কটরমণ।

অমরনাথ ভাদুড়ী প্রাণরসায়নের বরেণ্য অধ্যাপক, একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক। CSIR-Indian Institute of Chemical Biology-র পূর্বতন অধিকর্তা। আইআইসিবি-র অধিকর্তা হিসেবে ভারতবর্ষের এই প্রধান গবেষণাগারকে জীববিজ্ঞান ও জীবচিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উজ্জ্বলতর এবং নতুন আকার দিয়ে গেছেন। বস্তুত ওই সময়কালে তাঁর এবং সহযোগী গবেষকদের উচ্চপর্যায়ের গবেষণার জন্যেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরজীবী গবেষণায় আইআইসিবি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। World Health Organisation (WHO) তাঁকে জেনিভার কালাজ্বর বিষয়ক নির্বাচিত উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা হিসেবে মনোনীত করেছিল। আমরা এখানে তাঁর গবেষণার জগতের কথায় বিশদে যাব না। এই লেখায় আমরা খুব সংক্ষেপে চেনার চেষ্টা করব ‘মানুষ’ হিসেবে অমরনাথকে। দু-চার কথায় বলার চেষ্টা করব, বিশেষত যারা বিজ্ঞানী অমরনাথ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন, তাঁদের জন্যে।

একজন ‘ভার্সেটাইল’ মানুষ বলতে যা বোঝায়, তারই প্রতিফলন দেখতে পাই আমরা অমরনাথের জীবনে। তাঁর আশিতম জন্মবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে ‘অমরনাথ ভাদুড়ী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে— ‘অমরনাথ ভাদুড়ী: মানুষ ও বিজ্ঞানী’ (২০১৭) শীর্ষক একটি মূল্যবান সংকলন। বইটি থেকে তাঁর বহুমাত্রিক ব্যক্তিজীবন ও অবদান সম্পর্কে নানান অজানা প্রসঙ্গ ও বিষয় সম্পর্কে জানতে পারা যায়। সেই সব রচনাগুলির মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক ইতিহাস আর অমরনাথের পরিমণ্ডল সম্পর্কে। অমরনাথের কয়েকজন অভিন্নহৃদয় বন্ধুর স্মৃতিচারণা রয়েছে এই বইতে। প্রফেসর উমাদাস মৈত্র, অধ্যাপক অমিয়কুমার বাগচী এবং অধ্যাপক অমিয়কুমার ব্যানার্জি প্রমুখের লেখা।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্মানিক ডি. এসসি গ্রহণ অনুষ্ঠানে অমরনাথ ভাদুড়ী।

১৯৬৩ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়ন বিদ্যা নিয়ে ডি.এসসি ডিগ্রি পান। হারভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে পোস্টডক্টরাল গবেষণা করেছেন। স্বচ্ছন্দে বিদেশে গবেষণা করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন তিনি। কিন্তু না, নিজের দেশে বিজ্ঞান গবেষণার কাজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ফিরে আসেন দেশে। দেশে ফিরে এলেন ঠিকই, কিন্তু তখন তাঁর হাতে কোনও চাকরি ছিল না। এখানে আর-একটা কথা উল্লেখ করতে হয়, অমরনাথের বিশ্বাসে গভীরভাবে প্রোথিত ছিল মার্ক্সীয় জীবনবোধ এবং আদর্শ। প্রথম জীবনে রাজনীতির প্রত্যক্ষ সংযোগে এসেছিলেন ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে কর্পোরেশনের কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছিলেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না, আসলে এসব কিছুর মূল উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষের জন্যে কিছু করার সদিচ্ছা। মার্ক্সবাদকে শুধুমাত্র একটা সামাজিক অর্থনৈতিক সমাধানের উপায় হিসেবেই গ্রহণ করেননি তিনি। মার্ক্সীয় ভাবধারা তাঁর কাছে ছিল আরও ব্যাপক ও গভীর সত্য হিসেবে। গবেষণার পাশাপাশি গণবিজ্ঞানের প্রসারের কাজ, বিজ্ঞান সচেতনতার কাজও করেছেন তিনি অসীম গুরুত্ব দিয়ে। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, বিজ্ঞান মঞ্চ প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আজীবন। গ্রামেগঞ্জে সহজ ভাষায় বিজ্ঞান সচেতনতার কাজে বা বিজ্ঞান কর্মশালায়, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনি সামিল হয়েছেন বহুবার।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ছিল তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ। আবার তারই পাশাপাশি, সাহিত্য চর্চা, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের মার্গ সঙ্গীত— এসব কিছুও অমরনাথের জীবনে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিল। কবিতার প্রতি ছিল অমরনাথের বিশেষ অনুরাগ। ছাত্রজীবনের বন্ধু শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ছাড়াও জীবনানন্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অরুণ মিত্র, শঙ্খ ঘোষ, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কবির কবিতার ভক্ত ছিলেন তিনি। উল্লেখ্য যে, সাতের দশকে প্রায় ছ’বছর তিনি বিখ্যাত ‘পরিচয়’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। Science and Culture পত্রিকাটির কার্যকরী সম্পাদক ছিলেন কয়েক বছর। অমরনাথের প্রিয় কবি ও ব্যক্তিজীবনে খুব কাছের মানুষ ছিলেন স্বনামধন্য কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়।

ছিল ক্রিকেট, টেনিস, ইতিহাস, সমাজনীতি, রাজনীতি— সব কিছুতেই ছিল তাঁর অফুরান উৎসাহ। প্রেসিডেন্সি কলেজের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন ও ইউনিভার্সিটি ব্লু ছিলেন। বেশ কয়েক বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও খেলেছিলেন। উত্তর কলকাতার ইউনাইটেড ক্লাবের জন্মলগ্ন থেকে আজীবন সংযুক্ত ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমী অমরনাথ।

অমরনাথ ভাদুড়ী স্মারক পুস্তিকা।

স্বনামধন্য লেখক সতীনাথ ভাদুড়ী (‘জাগরী’ উপন্যাসের লেখক) এবং সাম্যবাদী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ ও লেখক সোমনাথ লাহিড়ীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় অমরনাথ। পিতামহ চন্দ্রভূষণ ভাদুড়ী, স্যার আলেকজান্ডার পেডলারের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের কেমিস্ট্রি বিভাগ। বলা বাহুল্য, অমরনাথের বাড়ির শিক্ষা সংস্কৃতি ও পরিবেশ সব কিছু প্রভাবিত করেছিল তাঁর জীবনে। সেই সঙ্গে সম্ভবত সাম্যবাদী চিন্তা ও চেতনার দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন।

বিজ্ঞান জগতের বন্ধুবান্ধব ছাড়াও, অন্য বিভাগের সহপাঠীদের সঙ্গেও ছিল তাঁর আজীবন সখ্য। অধ্যাপক অমিয় বাগচী, যশোধরা বাগচী, নবনীতা দেবসেন, শিশির দাস, জ্যোতির্ময় পাল চৌধুরী প্রমুখ। যারা প্রত্যকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। এছাড়াও এই বই থেকে জানতে পারছি, বিখ্যাত সাহিত্যিক, ভাষাবিদ, সমাজকর্মী ও স্বনামধন্য গবেষক সেলিনা হোসেনের (বাংলাদেশ) সঙ্গেও অমরনাথ ও স্ত্রী রীণা ভাদুড়ীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধামিশ্রিত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

অমরনাথ ভাদুড়ী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত সংকলন গ্রন্থ ‘অমরনাথ ভাদুড়ী: মানুষ ও বিজ্ঞানী’।

বাংলায় লেখা তাঁর বেশ কয়েকটি মূল্যবান রচনা রয়েছে। ‘অমরনাথ ভাদুড়ী: মানুষ ও বিজ্ঞানী’ বইটিতে সেইসব লেখা গ্রন্থিত হয়েছে। বিজ্ঞান অনুরাগী সকলের কাছে এই সমস্ত লেখা নতুন ভাবনাচিন্তার উদ্রেক করবে, তা বলা বাহুল্য। বাংলা ভাষায় তিনি কতটা সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ তা লেখাগুলি পড়লে বোঝা যায়। ‘সমাজ জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: কিছু ভাবনা’, ‘বিজ্ঞান: বাংলায় প্রয়োগ যোগ্যতা’, ‘নতুন শতাব্দীর জৈবপ্রযুক্তি: কিছু ভাবনা’, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: স্বাধীনতার চার দশক পরে’, ‘আধুনিক বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ’ ইত্যাদি। এবং প্রতর্ক, অনুষ্টুপ বিশেষ সংখ্যা, কালান্তর, শারদীয় প্রভৃতি পত্রপত্রিকার সম্পাদকরা তাঁকে দিয়ে এইসব রচনা লিখিয়ে নিয়েছিলেন, যা এক-একটি মূল্যবান এবং জরুরি দলিল। অমরনাথের লেখাগুলি পড়লে বোঝা যায়, তাঁর পেশ করা ভাবনা ও বক্তব্যগুলি, আজও কতখানি প্রাসঙ্গিক।

তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, “সহজ ভাষায় বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই।… আমি নিজে বিজ্ঞানের কথা বাংলায় লিখতে বা বলতে কোনও অসুবিধা বোধ করি না। আসলে সমস্যাটা ভাষায় নয়, সমস্যাটা মানসিক।”

লেখাতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি দারুণ সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ ছিলেন। বাংলায় লিখতে যে কোনও অসুবিধা বোধ করতেন না, তা যে শুধু কথার কথা নয়, তা আরও কয়েকটি লাইন পড়লে আমরা বুঝতে পারব। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “স্বাধীনতার তিপান্ন বছর পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস নোটে কিংবা চিঠিপত্রে বাংলা অনুপস্থিত কেন? এর তো সত্যিই কোনও যুক্তি নেই। এ আমাদের মানসিক সংস্কার।” এই প্রসঙ্গে আরও বলেছেন— “ভাষা আমাদের সচল প্রকাশ ভঙ্গী। তাঁর বিকাশ হয় দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায়। যেমন কথা বলতে বলতে আমরা ব্যাকরণের কত প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ভাঙছি, কথায় কথায় গড়ছি নতুন নিয়ম। না হলে এতো বৈচিত্র্যময়, এতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠত না এই ভাষা। এই দ্বান্দ্বিক বিকাশকে মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যাকরণের কঠিন জাঁতাকলে আটকে না রেখে মুখের কথায়, কলমের আঁচড়ে স্বচ্ছন্দে বিকশিত হলে শুধুমাত্র বাংলা নয় যে কোনও ভাষাই হয়ে উঠবে সত্যিকারের কাজের ভাষা।’’ (এবং প্রতর্ক, ফেব্রুয়ারি, ২০০১, বিশেষ সংখ্যা, প্রসঙ্গ বাংলা ভাষা)।

আজ, ৫ জুন, অমরনাথ ভাদুড়ীর প্রয়াণদিন। এই লেখায় গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো করলাম তাঁরই কথা দিয়ে।

চিত্র: লেখক/ গুগল
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শতবর্ষে মহানায়ক উত্তমকুমার

‘মহা’ শব্দটি মহান আর বিশাল, এই দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন ‘মহাকাব্য’ বা ‘মহারাজ’। কাব্য আর রাজার চেয়ে তার মাত্রা ভিন্ন, মহিমা অনেক বেশি তাৎপর্যময়। উত্তম বাংলা চলচ্চিত্রের সেই তাৎপর্যময়তার একমাত্র উদাহরণ। যাঁকে শ্রদ্ধাভরে আমরা ‘কিংবদন্তি’-ও বলে থাকি। তাই সত্যজিৎ রায়ের মতো আরেক কিংবদন্তি তাঁকে নিয়ে চিত্রনাট্য লেখেন, ছবি বানান, আর সে ছবির ‘নায়ক’ হন উত্তমকুমার।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সুকান্ত ভট্টাচার্য: ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার সহোদর এক কবি

‘–ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে’, সুকান্ত লিখেছেন নিজের সম্পর্কে। বলেছেন, ‘আমি এক অঙ্কুরিত বীজ’। এই বীজ মহীরুহে পরিণত হতে পারল না, বাংলা সাহিত্যের পরম দুর্ভাগ্য এটা। কিন্তু তাঁর একুশ বছরের জীবনে তিনি আভাস দিয়ে গেছেন, তাঁর সম্ভাবনা কতদূর প্রসারিত হতে পারত। সুকান্ত মানে একজন কবিমাত্র নন, তার চেয়েও আরও অধিক কিছু।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও প্রসঙ্গত

প্রয়াণের আগে, সব হিসেব বাদ দিয়ে যদি তাঁর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের কথা-ই ধরি, দেখব, কত প্রিয়জনের মৃত্যুশোক বহন করতে হয়েছে তাঁকে। যেহেতু তিনি ছিলেন মানুষের সান্নিধ্যপ্রিয়, তাই অন্যের চেয়ে ঢের ঢের বেশি মৃত্যুবেদনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এসব মৃত্যু তাঁকে বেদনার্ত করলেও নিজের মনোবলের জোরে সে-অরুন্তুদ বিষাদকে কাটিয়েও উঠেছেন। পাশাপাশি মৃত্যু নিয়ে তাঁর দর্শন গড়ে উঠতেও তা ভূমিকা রেখেছে। তাই তিনি বলতে পারেন, তিনি-ই বলতে পারেন, ‘দুদিন দিয়ে ঘেরা ঘরে/ তাইতে যদি এতই ধরে/ চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময়?’ কেন পারেন?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার: অন্য ও অনন্য

তাঁর জন্মদিনের চেয়েও মৃত্যুদিনটিকে অধিকভাবে স্মরণ করা হয়, এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। তাছাড়া বাংলা চলচ্চিত্র-জগতে তো কম খ্যাতিমান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়নি, সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল, ছবি বিশ্বাস-কানন দেবী-সুচিত্রা-সৌমিত্র, তবু তাঁর মতো, ঠিক তাঁর মতো স্মরণযোগ্য হয়ে রইলেন না কেউ। শ্রাবণের অনুষঙ্গে নয়, উত্তমকুমারের প্রয়াণদিবসটি চিহ্নিত চব্বিশে জুলাই তারিখটির বিধুরতায়। ১৯৮০-র এই দিনটিতে বাংলা চলচ্চিত্র-জগতের এই দিকপাল প্রতিভার জীবনাবসান ঘটে। আজ তাঁর মৃত্যুর পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্তিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে উত্তম সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্যের ডালি।

Read More »
শৌনক দত্ত

রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী

নাটকটির নাম প্রথমে রেখেছিলেন যক্ষপুরী, তারপর নন্দিনী এবং পরিশেষে রক্তকরবী নামে থিতু হয়। শিলং-এ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে যে নাটক লেখা শুরু হয়েছিল তার দশম খসড়া প্রকাশিত হয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রায় দেড় বছর পর আশ্বিন ১৩৩১ বঙ্গাব্দে—১৯২৪ সালে। প্রকাশিত হবার পরেও, একাদশতম খসড়া প্রস্তুত করার কথা ভাবেন নাট্যকার। অনেকেই বলেছেন, এটি নাট্যকারের হৃদয়ে লালন করা কোনও স্বপ্ন। কেউ কেউ এই নাটকের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম চেতনার ছায়া খুঁজেছেন। নানা প্রশ্ন, নানা যুক্তি নিয়ে নাটকটি রচনার পর থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত দারুণ আলোচিত ও জনপ্রিয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত নাটকটি নিয়ে বহু আলোচনা। শতবর্ষে এসে দাঁড়ানো সেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নানামাত্রায় বিবেচনাযোগ্য একটি নাটক; বহুমাত্রিক এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

Read More »
নুশান জান্নাত চৌধুরী

নুশান জান্নাত চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ

কিছুকাল ঘুমিয়ে, কিছুকাল লুকিয়ে,/ কিছু শহর, কিছু মানুষের ভিড়ে হারিয়ে/ আমি দেখি—// কোনও এক/ পথহারা দেবদূতের বিষণ্ণ ডানার পাশে/ আমি বুক পেতে দিয়েছি// চুলের ভেতর জন্ম নিয়েছে/ ঘাসফুল থোকা থোকা, বুকের মাঝখানে একটা প্রাচীন পেরেক,// ঝরাপাতার রাজ্যপাটে/ আমার বাম হাঁটুতে গেঁথে আছে—/ আগামী বছরের প্রথম সন্ধ্যা;

Read More »