Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

যে গ্রন্থে ‘সত্যেরে লও সহজে’ কথা ক’টির যথার্থ বাস্তবায়ন ঘটেছে

বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত তাঁর অসংখ্য মননশীল প্রবন্ধ-নিবন্ধ যেমন আমাদের চোখে পড়েছে, তেমনই বৈদ্যুতিন মাধ্যমে নানা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যও কানে এসেছে এবং আসছে। এছাড়া সমাজসেবার দিকটিও উল্লেখ করার মতো। তিনি মীরাতুন নাহার। একটা গোটা জীবন মেরুদণ্ড টান টান করে চলা মানুষ এই সময়ে খুব একটা চোখে পড়ে না। সুতরাং ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বই বটে।

একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিতান্ত ভালবেসেই তিনি আমাকে পড়তে দিয়েছিলেন তাঁর সদ্যপ্রকাশিত গ্রন্থ ‘অমৃতে-বিষে’। গ্রন্থের শিরোনামের ঠিক নিচেই বন্ধনীর মধ্যে লেখা ছিল ‘কাহিনির মতো, কাহিনি নয়া’ কথা ক’টি। স্বভাবতই কৌতূহল ছিল গ্রন্থটি নিয়ে। এবং সেই কৌতূহল মেটাতেই দ্রুত স্বাদ নেওয়া গেল ‘অমৃতে-বিষে’-র। তবে বলতে দ্বিধা নেই, একই সঙ্গে অমৃত-বিষ মন্থন করে যে সারবস্তুটুকু পাওয়া গেল— তা জীবনে চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে নিশ্চিত। এমন বিরল অভিজ্ঞতা পাঠকের কমই হয়।

দেড় শতাধিক (১৫২) পৃষ্ঠার বই। বইয়ের বাঁদিকের ব্লার্বে লেখা হয়েছে, ‘এক মানবী-জীবনের একান্ত আপন আরশিতে প্রতিবিম্বিত সমগ্র মনুষ্য-জীবনের বিচিত্র রহস্যময়তা। যাপিত জীবনের নিয়ত ঘটে চলা উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার বিবৃতি মাত্র নয়।’ তাহলে কী আছে আলোচ্য গ্রন্থে? এমন একটা প্রাসঙ্গিক (এবং কৌতূহলিও বটে) প্রশ্ন পাঠকের মনে জাগাটাই খুব স্বাভাবিক। এই আলোচকের মনেও জেগেছে। এবং তার যথার্থ উত্তরও মিলেছে বইকী। যার ভাগ এই লেখায় পাঠকের জন্যে উন্মোচিত হল।

ওই কথাগুলির পরেই ওই ব্লার্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সেসবের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে সাধারণভাবে নারী-জীবনের সমাজ-নির্মিত যন্ত্রণা-বিদ্ধ অবস্থান, রাষ্ট্রব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে বিস্তৃত অন্ধকারাচ্ছন্নতা, দেশোন্নয়নের দায়ভার বহন করে চলা নেতা-নেত্রীদের দেশ-ঘাতী ধ্যান-ধারণা সহ নিজ ব্যক্তিজীবনের আলো-ছায়া মাথা পথে অবিশ্রাম চলমানতার চিত্র।’ এই চিত্রের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাবনার বীজ, যা আমাদের সবারই চলার পথকে সহজ ও সুগম করতে পারে। যদি তা অনুসরণ করি।

কারণ এই প্রাজ্ঞ ও প্রবীণা লেখিকার মতে, ‘আমাদের জীবনযাত্রায় অমিয় ও গরল দুই-ই গ্রহণ করতে হয়। এই সত্য কেবল অধ্যয়ন-পিপাসুদের উপলব্ধির বিষয় নয়। এটি মানুষ মাত্রেরই নিবিড় জীবন-পাঠে লভ্য জীবনদর্শন…।’ জীবনকে সঠিক অর্থে জানা-বোঝার কঠিন প্রয়াসই প্রাধান্য পেয়েছে এই অনুপম গ্রন্থে। লেখিকার কথায়, এই গ্রন্থ কোনও ‘আত্মকথা বা আত্মকাহিনি নয়।’ কিন্তু এই বইয়ের তন্নিষ্ঠ পাঠক কী বলেন? ‘অমৃতে-বিষে’-র প্রধান চরিত্র রাইমন কি স্বয়ং লেখিকা নন? তিনি কি শুধুই সূত্রধার?

যাক, এই তর্ক-বিতর্কে না ঢুকে বরং তাঁর ‘অমৃতে-বিষে’ গ্রন্থের কথায় আসা যাক। শুরুটা হয়েছে এভাবে, ‘সকালের সোনা রঙের মিঠে রোদ ঘরময় ছড়িয়ে পড়লে তবে রাইমনের ঘুম ভাঙে রোজ…।’ এই ছোট্ট রাইমন থেকে সত্তরোর্ধ্ব রাইমনের ‘আলো-ছায়া মাথা পথে অবিশ্রাম চলমানতার চিত্র’-ই আঁকা হয়েছে ‘অমৃতে-বিষে’, যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করায়— হতাশা নয়, হাল ছেড়ে দেওয়া নয়, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা নয়, প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করে বেঁচে থাকার নামই জীবন।

এই পার্থিব জগতে প্রাপ্তির (অর্থ-প্রচার-পদ নানাবিধ) হাতছানিকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই আছে। ‘পরিবর্তন’-এর আগে-পরে ‘প্রাপ্তি’-র এমন অনেক ঘটনাই আমাদের কমবেশি জানা। সেই জানার বাইরেও যে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা মেরুদণ্ড নোয়াতে জানেন না— তাঁদেরই একজন এই গ্রন্থের প্রধান চরিত্র রাইমন ওরফে লেখিকা। যাঁর বৌদ্ধিক আচরণ, নান্দনিক কর্মকাণ্ড আর মানবদরদি সংগ্রাম আমাদেরকে ভীষণভাবেই উদ্বুদ্ধ করে। জীবনের আইডল হিসেবে তাঁকে অনায়াসেই প্রতিষ্ঠা দেওয়া যায়।

যদিও আজকের ভোগবাদী বা পণ্যবাদী দুনিয়ায় ত্যাগ-আদর্শ-ন্যায়নীতির কোনও আপাত-মূল্য নেই বলেই অনেকের ধারণা। এই ‘অনেক’-কে অবশ্য দোষ দেওয়া যায় না। কারণ তাদের সামনে আজ আর তেমন কোনও আদর্শ নেই। লেখিকার কথার, ‘রাষ্ট্রব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে বিস্তৃত অন্ধকারাচ্ছন্নতা, দেশোন্নয়নের দায়ভার বহন করে চলা নেতা-নেত্রীদের দেশ-ঘাতী ধ্যান-ধারণা’ আমাদেরকে কমবেশি প্রভাবিত করে তো বটেই। আমাদের অসহায়তা কিংবা বিপণ্নতা, আমাদের সরল বিশ্বাস তাদেরকে ওইকাজে ইন্ধন যোগায় নিশ্চিত।

রাইমন চরিত্রের মধ্য দিয়ে এমন অকপটে ‘কাহিনির মতো, কাহিনি নয়’-তে বর্ষীয়ান লেখিকা অধ্যাপিকা ড. মীরাতুন নাহার সমাজের যে দগদগে ঘা-এর চিত্র তুলে ধরেছেন তা কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় কি? আমাদের বোধ ও বোধি, আমাদের মন ও মনন, আমাদের দেখা ও দেখানোর মধ্যে যে বিস্তর ফাঁকফোকর আর গরমিল তা স্পষ্ট হয় অমৃত-বিষের মন্থনে। মুখ ও মুখোশের ফারাক স্পষ্ট হয়। অস্বীকার করে লাভ নেই, কপটতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে আছি অনেকেই; কিন্তু তা আড়াল করতে ব্যস্ত সবাই।

আজকের (অপ)রাজনীতি যে শুধু ‘ক্ষমতা দখলের দর্শন’— তা বার বার প্রমাণ করছেন এদেশের ডান-বাম সব পক্ষই। যে ক্ষমতা দখলের পিছনে আছে শুধুই দলীয় শ্রীবৃদ্ধির উগ্রচিত্র। নেই মানবকল্যাণের ছিটেফোঁটাও। ঝান্ডা নির্বিশেষে দলীয় রাজনীতির এই নোংরা ও উলঙ্গ চেহারা দেখে যারপরনাই বীতশ্রদ্ধ রাইমন। তাই বাম-ডান উভয় দলের সরকারের দেওয়া অত্যন্ত লোভনীয় পদ গ্রহণে তাঁর বিন্দুমাত্র স্পৃহা নেই। হেলায় ছেড়ে দিতে পারেন তা— যা পাওয়ার জন্য লালায়িত এ রাজ্যের ‘বিশিষ্টজন’-দের অনেকেই।

আত্মজৈবনিক গ্রন্থ আমাদের কমবেশি অনেকেরই হয়তো-বা পড়া। সে মহাত্মা গান্ধী থেকে বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ব্যক্তিজীবনের অনেক গোপন কথাই তাঁরা বিশদে বর্ণনা করেছেন তাঁদের বহুচর্চিত গ্রন্থে। কিন্তু ‘অমৃতে-বিষে’-র রাইমন চরিত্রের মধ্যে দিয়ে এমন মার্জিত, নান্দনিক ও দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করা— অত্যন্ত সাহসিকতার কাজ এ বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই। স্বনামধন্যা শিক্ষাবিদ ও লেখিকা ড. মীরাতুন নাহার এই কাজটি অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে সম্পন্ন করেছেন।

স্কুলজীবন থেকে অধ্যাপনাজীবন— এই দীর্ঘজীবনে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বা ঝড়-ঝাপটা সইতে হয়েছে সংখ্যালঘু পরিবারে জন্ম নেওয়ার ‘অপরাধ’-এ। ভারতের মতো ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশেও এসব ঘটনা আকছারই আমাদের চোখে পড়ে, যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। স্বীকার করুন আর নাই করুন, এই অন্তর্গত যন্ত্রণা নিয়েই চলতে হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেককে। মানুষের ‘প্রথাগত ধর্ম’-ই যখন মানুষের মধ্যে বিভেদ-বিদ্বেষ ঘটায়, তখন সেই ‘ধর্ম’ থেকে দূরত্ব রেখে চলাটাই বোধহয় সমীচীন। কিন্তু তা পারছি কোথায়?

‘আত্মসংযম ও আত্মজ্ঞানই ধর্মের প্রধান দিক ও সার অংশ। যদি আত্মসংযম করতে পারা যায় তবেই আত্মজ্ঞান লাভ সম্ভব হয়…।’ স্বামী অভেদানন্দের এই চূড়ান্ত আত্ম-উপলব্ধিকে মান্যতা দিলে ধর্মীয় বিভেদ-বিদ্বেষের প্রশ্ন ওঠে কোথায়? মুখে আমরা অনেক তত্বজ্ঞানের কথা আওড়ালেও আমাদের মনের মধ্যে জমানো কালিমা-কলুষতা দূর করতে আগ্রহী নই। বর্ষীয়ান প্রাজ্ঞ লেখিকা ড. মীরাতুন নাহার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখান আমাদের ভিতর ও বাইরে দ্বিচারী মানসিকতা। কীভাবে এখনও ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ চলছে।

অপরাজেয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘মানুষের মরণ আমাকে বড় আঘাত করে না, করে মনুষ্যত্বের মরণ দেখিলে…।’ আমাদের চারদিকে এখন ‘মনুষ্যত্বের মরণ’। যা আঘাত করে, যন্ত্রণা দেয় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যেকোনও অনুভবী মানুষকেই। আঘাত করে ড. মীরাতুন নাহারের মতো মনুষ্যত্ব ও মানবিকতায় ভরপুর একজন প্রাজ্ঞ মানুষকে। এটা আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি-সভ্যতার নির্বিকল্প লজ্জা। শুধু প্রথাগত সমাজ-সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জঘন্যতম লজ্জা।

আলোচ্য গ্রন্থে মুদ্রণ-প্রমাদ নেই বললেই চলে। তবে কিছু জায়গায় রাইমন থেকে হঠাৎই ‘আমি’-তে চলে এসেছেন লেখিকা। বলাবাহুল্য, তিনটি জায়গায় এটা চোখে পড়েছে। যা এড়ানো গেলে ভাল হত নিশ্চিত। যেমন এক জায়গায় (৫৪ পৃষ্ঠায়) ‘…আমি নামছি। সাহায্যে এগিয়ে এলেন অন্য যাত্রী কয়েকজন। আমার সহযাত্রীটি তখন দূরে দাঁড়িয়ে। হয়তো কিছু অভিযোগ শোনার অনিচ্ছায়…।’ এরপরই অবশ্য তিনি ফিরেও গেছেন রাইমনের কথায়, ‘রাই আজ পর্যন্ত তাকে কিছু বলেনি এমন সব কাণ্ড ঘটানোর পরও…।’

এছাড়া তেমন কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি একেবারেই চোখে পড়েনি। আলোচ্য গ্রন্থে ব্যবহৃত হরফের সাইজ, চারদিকের ছাড়, সুন্দর কাগজে ঝকঝকে ছাপা ও বাঁধাই বেশ ভাল। যা হাতেগোনা দু’-একটি বাংলা প্রকাশনা ব্যতীত চোখে পড়ে না। তবে বইয়ের নামের লেটারিং এবং শাওনী শবনম-কৃত প্রচ্ছদ-চিত্রটি আরও একটু বাঙ্ময় হলে মনে হয় ভাল হত। শৈল্পিক চেতনার সঙ্গে দৃশ্যনন্দন বিষয়টাও গভীরভাবে সম্পৃক্ত যে। আসলে ডিজিটাল-যুগে বর্ণময় (অর্থবহও) চিত্রের সঙ্গে অভ্যস্ত চোখে একটু বেমানান লাগে হয়তো-বা।

আলোচনার ইতি টানা যাক রবীন্দ্রনাথের কথা দিয়ে (যাঁকে ছাড়া আমরা একেবারেই অচল)— ‘মনেরে তাই কহ যে,/ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে।’ ‘অমৃতে-বিষে’-র কেন্দ্রীয় চরিত্র রাইমন নিজের জীবনে এই ‘সত্যেরে’ সহজে নিয়েছেন। এজন্য তাঁকে পদে পদে হেনস্থা ও হয়রানি কম সইতে হয়নি; কিন্তু কোনও অবস্থাতেই তিনি নিজের দৃঢ় অবস্থান থেকে কিছুমাত্র বিচ্যুত হননি। এখানেই তাঁর চারিত্রিক দৃঢতার অনন্য পরিচয়। আর এখান থেকেই আমাদের শিক্ষা নেওয়ার প্রকৃত পাঠ পাই। সেই পাঠে মনুষ্যজীবন আলোকিত হয়।

অমৃতে-বিষে ।। মীরাতুন নাহার ।। জিজ্ঞাসা ।। মূল্য: ১৭৫ টাকা

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »