Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বাঙালির ‘মাছে-ভাতে’ থাকার আইকনিক পরিচয় জিইয়ে রেখেছেন এই বঙ্গসন্তান

এই ২০২১ সালে এসে তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করেছেন। ২১ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন। কিন্তু এই বঙ্গসন্তানকে নিয়ে দেশে আশ্চর্য নীরবতা। দেশবাসী তাঁকে কার্যত চেনেই না। অথচ  কার্প জাতীয় মাছের ‘প্রণোদিত প্রজননের জনক’ বলে বিশ্ববাসী তাঁকে কুর্নিশ করেছে। বিশ্বে ‘নীল বিপ্লব’-এর পথপ্রদর্শক হিসাবেও বিবেচিত হন তিনি। বিশ্বের বহু দেশের বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন এই বিজ্ঞানসাধক। অনেকে মনে করেন, প্রথম বিশ্বের কোনও দেশে জন্মালে হয়তো নোবেল পুরস্কারটা তাঁর ঝুলিতেও থাকত। জন্মশতবর্ষে সেই মহান বাঙালি বিজ্ঞানী ড. হীরালাল চৌধুরির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
আমাদের দেশে কী পেয়েছেন তিনি? দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ তো অনেক দূরের, ‘পদ্মশ্রী’ ‘পদ্মভূষণ’ ‘পদ্মবিভূষণ’ প্রভৃতি কোনও ‘ভূষণ’ই তাঁর জন্য বরাদ্দ হয়নি। শুধু তাঁর উদ্ভাবন সাফল্যকে স্মরণে রেখে ১০ জুলাই ‘ফিস ফার্মার্স ডে’ উৎযাপিত হয় দেশে। পেয়েছেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স আকাডেমির ‘চন্দ্রকলা হোরা মেমোরিয়াল মেডেল’, ‘রফি আহমেদ কিদওয়াই পুরস্কার’। মুম্বাইয়ের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফিশারিজ এডুকেশন তাঁকে সাম্মানিক ডি.এসসি ডিগ্রি দিয়েছে। বাংলায়, মৎস্যবিজ্ঞানে সারাজীবনের অবদানের জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছিল। ব্যাস, এই পর্যন্তই।

মাছকে ইনজেকশন দিচ্ছেন ড. চৌধুরী।

দেখে নেওয়া যাক, বিদেশে তাঁর সমাদর ছিল কতটা? প্রখ্যাত জাপানি মৎস্যবিজ্ঞানী ড. কুরোনুমা তাটট তাঁকে ‘Father of induced breeding of the Carp’ আখ্যা দিয়েছিলেন। পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘গামা সিগমা ডেল্টা’ অ্যাওয়ার্ড, আলাবামার অবার্ন ইউনিভার্সিটির ‘গোল্ডেন কি’ অ্যাওয়ার্ড, ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াকালচার অ্যাওয়ার্ড’, ‘এশিয়াটিক সোসাইটি অ্যাওয়ার্ড’ ইত্যাদি। এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বোদেগা মেরিন ল্যাবরেটরিতে তাঁর সম্মানে প্যাসিফিক রিম অ্যাকুয়াকালচারে এন্ডোক্রিনোলজির অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কিত একটি সম্মেলনের আয়োজনও করে।
প্রফেসর হীরালাল চৌধুরী জন্মেছেন অবিভক্ত ভারতে, ১৯২১-এর ২১ নভেম্বর, তৎকালীন আসামের সিলেট (শ্রীহট্ট)-এর (অধুনা বাংলাদেশে) সুরমা নদী উপত্যকা সংলগ্ন কুবাজপুর গ্রামে। ছাত্র হিসেবে ছিলেন উজ্জ্বল। ম্যাট্রিকুলেশনে চারটি বিষয়ে লেটার সহ পাস করেন। তারপর ছাত্রবৃত্তি লাভ করে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে আই.এসসি পড়েন। বি.এসসি (সাম্মানিক)-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ থেকে প্রাণীবিদ্যায় এম.এসসি পাস করেন। এরপর অধ্যাপনা শুরু করেন। কিন্তু দেশভাগের ফলে কর্মচ্যুত হয়ে ভারতে চলে আসনে। এখানে ভারত সরকারের অধীন Central Inland Fisheries Research Institute (CIFRI)-এ কাজ এবং গবেষণা একসঙ্গে চলতে থাকে। কর্মদক্ষতার জন্য অবার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এম.এস এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মৎস্য প্রজননে পিটুইটারি ইনজেকশনের প্রভাব ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়। এরপর দেশের বিভিন্ন সংস্থায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। এছাড়া রাষ্ট্রসংঘের এফ এ ও (Food and Agricultural Organisation)-র উপদেষ্টা হয়ে সুদান, নাইজেরিয়া, ফিজি, লাওস, ফিলিপিনস, মায়ানমার সহ বিশ্বের বহু দেশে কাজ করেছেন। ছিলেন ফিলিপিনসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফিশারিজ উন্নয়ন কেন্দ্রের (SEAFDEC) রিজিওনাল কোঅর্ডিনেটর এবং সহকারী অধিকর্তা ও ফিলিপিনসের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাকুয়াকালচারের পরিদর্শক বিজ্ঞানী।

এনামেল ট্রেতে নিষিক্ত কার্প মাছের ডিম পর্যবেক্ষণ করছেন ড. চৌধুরী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে যখন দেশ খাদ্য এবং প্রোটিনের সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল সেই সময় মাছের চাষ কিছুটা গতি পায়। মৎস্য চাষকে দেশের অর্থনীতিতে এক বিশেষ জায়গায় পৌঁছে দিতে ভারত সরকার এই বিষয়ে গবেষণার কাজে আরও গতি আনতে চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বারাকপুরে স্থাপন করে CIFRI, যেখানে দেশের সমস্ত মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এই গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরেই হাওড়া জেলার অনেক ছোটবড় পুকুর থেকে মাছের চারা সরবরাহ করা হত, যেগুলোকে বলা হত ‘ফিস সিড সিন্ডিকেট’। তবে ‘নীল বিপ্লব’ বা Blue Revolution শুরু হয় ড. কে এইচ আলিকুনহির তত্ত্বাবধানে ড. হীরালাল চৌধুরীর হাত ধরে ‘Seed production technology through Induced Breeding’ (Hypophysation)-এর মাধ্যমে। ডক্টর আলিকুনহি ছিলেন CIFRI (কটক)-এর Pond culture division-এর প্রধান, সংস্থাটি বর্তমানে CIFA (Central Institute of Freshwater Aquaculture) নামে পরিচিত।
বারাকপুরের কেন্দ্রে থাকার সময়ই ড. চৌধুরী লক্ষ্য করেন, গঙ্গার ধারে ইটভাটায় জোয়ারের জলে ভেসে আসা পেটফোলা মাছ ধরে টিপে দিতেই ওভাল শেপের স্বচ্ছ ডিম বেরিয়ে আসছে এবং কয়েক ঘণ্টা এক পাত্রে রাখার পর জীবনের সঞ্চার প্রত্যক্ষ হচ্ছে। এই ঘটনাই তাঁকে ‘প্রণোদিত প্রজনন প্রক্রিয়া’ সম্পর্কে চিন্তাভাবনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কটকের মৎস্য গবেষণাগারে সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে মাছের এন্ডোক্রাইনোলজি এবং ফিজিওলজির ওপর দীর্ঘ ৯ বছর গবেষণার পর ১৯৫৭-র ১০ জুলাই কার্প প্রজাতির মাছের প্রণোদিত প্রজননে সাফল্যের মুখ দেখেন, যা প্রাণীবিজ্ঞানে প্রথম সারির একটি মৌলিক কাজ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও এই প্রক্রিয়ায় মৎস্য প্রজনন সম্ভব হয়নি। এই পদ্ধতিতে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটাখয়রা ও গ্রাসকার্প প্রজাতির মাছের প্রজনন যেমন সম্ভব হয়েছে, তেমনই কই, পাবদা, মাগুর প্রভৃতি বহু প্রজাতির মাছের প্রণোদিত প্রজননও সম্ভব হয়েছে। তাঁর এই গবেষণার ফলেই আজকের মৎস্যচাষিরা প্রয়োজনমতো যেকোনও সময়ে চাষের জন্য একসঙ্গে সমবয়সী সুস্থ ডিমপোনা পেয়ে যাচ্ছেন। আজ আমাদের পাতে যে সস্তায় রুই-কাতলা-মৃগেল উঠছে, তার রূপকার প্রফেসর হীরালালই।

সাফল্য এসেছিল ১৯৫৭-র ১০ জুলাই।

তবে হীরালাল চৌধুরী কেবল প্রণোদিত প্রজননেরই জনক নন। পরবর্তীকালে পুকুরে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবিড় মিশ্রচাষের (মিশ্রচাষ হল একই পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির পৃথক জলস্তরে পৃথক খাদ্যাভ্যাসে থাকা মাছের বহুগুণ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া) দিশা দেখিয়েছেন তিনিই। এছাড়াও কার্প প্রজাতির ১২ রকমের নতুন সঙ্করীকরণ করেছেন। আঁতুর পুকুরের ডিমপোনা কোন পোকার দ্বারা আক্রান্ত হয়, তা চিহ্নিত করে তার প্রতিকার এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে আঁতুর পুকুর পালনের পদ্ধতির উপায় বিশদে দেখিয়েছেন।
এবারে একটু জেনে নিই প্রণোদিত প্রজনন বা Induced Breeding পদ্ধতিটি আসলে কী আর কেন প্রয়োজন? যদি বিষয়টিকে বুঝতে না পারা যায়, তবে ড. চৌধুরীকে হয়তো আমরা যথাযথভাবে চিনতে পারব না, বুঝতেও পারব না যে তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার বাঙালি তথা সারা পৃথিবীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ!
প্রথমত, মাছ বর্ষাকালে নদী, খাল-বিল বা পুকুরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায়, বৃষ্টি হচ্ছে এমন অবস্থায় ডিম পাড়ে। জলের স্রোত অবশ্যই থাকতে হবে। কারণ এই অবস্থাগুলোই মাছের ডিম পাড়ার আদর্শ। দ্বিতীয়ত, মাছ বছরে একবারই ডিম পাড়ে; বিশেষ করে কার্প জাতীয় মাছ, যেমন রুই কাতলা মৃগেল। তৃতীয়ত, প্রাকৃতিক অবস্থায় বিভিন্ন কারণে ৫৬ থেকে ৬০ শতাংশ মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যায় বা অন্য মাছ খেয়ে সাবাড় করে। এখন যদি কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে মাছকে বছরে দুই থেকে তিন বার ডিম পাড়ানোর ব্যবস্থা করা যায় ও একইসঙ্গে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মাছের ডিম বাঁচিয়ে চারার জন্ম দেওয়া যায়, তবে উৎপাদন একধাক্কায় অনেকখানি বাড়ানো যেতে পারে। এই চিন্তাই প্রণোদিত প্রজনন বা Induced Breeding-এর উদ্দেশ্য। প্রফেসর হীরালাল চৌধুরী এই কাজটিই করে দেখিয়েছেন, যা সারা পৃথিবীতে তাঁর আগে আর কেউ করে দেখাতে পারেননি।
প্রণোদিত প্রজনন বা Induced Breeding সম্বন্ধে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক খুব সহজ করে। মাছের বাজারে গেলে লক্ষ্য করবেন কিছু লোক মাছের পিটুইটারি গ্রন্থি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। নিয়ে যাওয়ার কারণ হল এই পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন তৈরি করে তা পুরুষ ও মেয়ে মাছকে ইনজেক্ট করা হয়। মেয়ে মাছটিকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর দুবার ও পুরুষমাছকে একবার পিটুইটারি ইনজেকশন দেওয়া হয়। মাছের ওজন দেড় কেজির আশপাশে রাখতে হয় এবং তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু থাকতে ও বয়স দুই থেকে চার বছরের মধ্যে হতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত Intramuscular Injection দেওয়াই প্র‌্যাকটিস করানো হয়ে থাকে। এর পর কৃত্রিম জলাশয়ে কৃত্রিম ফোয়ারা বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মোটামুটিভাবে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্তকরণের কাজটি সমাপ্ত হয়। নিষিক্ত ডিম্বাণু দেখতে স্বচ্ছ হয়। তারপর ডিম ফুটে চারা বের হয় ও এই উপায়ে প্রায় ১০০ শতাংশ চারা বাঁচানোই সম্ভব হয়। পৃথিবীর তাবড় পণ্ডিত যাকে যুগান্তকারী সাফল্য বলে বর্ণনা করেছেন।
২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ড. হীরালাল চৌধুরী প্রয়াত হয়েছেন। তবে তাঁর উদ্ভাবন তাঁকে অমর করে রাখবে। তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের ফলে দেশে Aqua-Explosion  ঘটে, শত শত মৎস্য আঁতুরঘর বা Fish Hatchery তৈরি হয়ে সেখানে প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে চারা উৎপাদন শুরু হয়। এর ফলে দেশে ‘নীল বিপ্লব’-এর সূচনা হয় এবং দেশের অর্থনীতির উন্নতি হয়। ভারতীয় ফিশারিজ সেক্টর থেকে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে শুরু করে। তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের ফলে দেশের মৎস্য উৎপাদন প্রায় ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে আজ ৯.৫৮ মিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে (২০১৪ সালের হিসেব)। ১৯৫০ সালে যা ছিল ০.৭৫ মিলিয়ন টন। বর্তমানে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য উৎপাদক দেশ, চিনের পরেই।

চিত্র : গুগল
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »