Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সপ্তর্ষি হোড়ের একগুচ্ছ কবিতা

আত্মস্নান

মনখারাপ সারানোর ওষুধ তো জানা আছে তোর,
তবুও আবার বলি–
আগে ধরনটা নির্বাচন কর,
অবস্থান থেকে নেমে আয় নিচে,
ধরন অনুযায়ী হাঁটতে থাক পথ৷
রেললাইনের ধার দিয়ে, ঝুপড়ির পাশ দিয়ে,
রুগণদের খিদে ছুঁয়ে ছুঁয়ে, কষ্ট ছুঁয়ে ছুঁয়ে,
কান্না ছুঁয়ে ছুঁয়ে, হাঁটতে থাক
স্টেশনে বসে থাকা পঙ্গু, অন্ধ, বোবাদের
আত্মার কোলঘেঁষে৷
হাঁটতে থাক শ্মশানে দাহ হতে থাকা পরিজনদের
আত্মবেদনাকে ঘিরে৷
সমানুভূতির অনুতাপে পুড়ে যাবে মনখারাপের কারণ৷
পড়ে থাকবে গ্লানিধোয়া নিষ্পাপ আনন্দ,
একেই বলে আত্মস্নান৷
ভুলে যাওয়া ভাল, তবে ভালটা ভোলা ভাল না৷
কথা ছিল, নিজেই নিজের ত্রাতা৷
মনখারাপের দিনে গাছের বুকে মাথা রেখে
ছায়াপান করে বলেছিলি, ওঁ শান্তি।

আত্মনির্দেশ

হাসিটুকু ঢেকে রাখে তোর লাজুক মেঘ,
লজ্জাবশত শুকিয়ে যায় শ্রাবণের খেত৷
আলো একটা নাম, অন্ধকার একটা নাম,
তুইও একটা নাম, তোর
অনুচ্চারিত সত্ত্বার কোনও নাম নেই৷
কিছু নামহীন নৈঃশব্দ্য ভেসে আছে অলৌকিক বাতাসে,
কোনও কোনও ধ্যানস্থ মহাত্মা ওই অনন্তে জোনাকি৷
তুই তো সামান্য অনুভূতিমাত্র,
নিষ্পাপ ভালবাসা রেখেছিস নদীর চরে,
নরম ঘাসে, পথের ধারে ফুটে থাকা জংলি ফুলে,
মাড়িয়ে চলে লোকে, মরিস না, এটা অহংকার৷
অহংকার মহত্ব ও মহাত্মার ফোটা ফুল৷
তোকে আচ্ছন্ন করতে অনন্তের পাঠে শিখে নিচ্ছি–
একটি গাছের ভালবাসার নাম মায়া,
মেয়েটির উপেক্ষার নাম মায়া,
ঝড়ে ভেঙে পড়া সম্বলটুকুর নাম মায়া,
বুকে আগলে রাখা উপহারটির নাম মায়া,
পূর্ণ কলস ঢালতে ঢালতে দিগন্তে লীন হওয়ার নাম মায়া,
জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে প্রবাহমান পথটুকুর নাম মায়া৷
তোকে আচ্ছন্ন করতে যে ধারণা জন্মাবে তার নাম পুণ্য৷
একটু আগে যে কথাটা হারিয়ে গেছে
তাকে আর খোঁজার দরকার নেই,
সব হারানো নির্মল নিঃস্বতার নাম সত্য,
শুধু সত্যটাকে হারাস না কখনও৷

জ্যোৎস্না রাতের ঘুম

নগ্ন লক্ষ্মীর চারিপাশে
কালো মেঘ হওয়ার কথা ছিল তোর,
বলেছিলি, পোড়াকপালের খেতে বৃষ্টি হবি৷
অর্ধেক গল্প লিখে গুঁজে রাখলি রুগণ চালের বাতায়,
অর্ধেক কবিতা লিখে রেখে দিলি ভেজা বালিশের তলায়।
ভেবেছিলি মেঠো পথ, গাছপালা, নদী, পশুপাখি,
নৌকা, একখানা সাইকেল তোর সংসার৷
সুখকল্পে সূর্যে ছিল জাগা, চাঁদে ছিল ঘুম৷
এখন নাটকের মঞ্চ থেকে আলো এসে
বাঁকা শিস দেয় তোর শূন্য বারান্দায়, ব্যথা পাস৷
সারাদিন হাতড়ে বেড়াস! আর–
ইট, কাঠ, বালি, পাথর, লোহার কামড় খেয়ে
ফিরে আসিস আত্ম অন্ধকারে৷
বলেছিলি, সংগ্রাম হবে নিজের ভেতর খুঁড়ে
প্রাণপণ নিজেকে উপড়ে আনা৷
ওরে পাগল! তুই যে তোর না, সেটাই জানিস না৷
মনের সাথে আত্মার সম্পর্ক নষ্ট করেছে ঈপ্সিত সংশয়৷
কোনও মৃত্যুই যে মুক্তি নয়!
মুক্তির সন্ধানে আধ্যাত্মিক ধ্যানে
আত্মায় মিলিয়ে দিতে হয় অস্থির অহম্।
কালের খাতায় কে রয়েছে কেউ জানে না৷
বলেছিলি, একটা চিঠি লিখবি৷
প্রত্যাশা নয়, অভিযোগ নয়, দুঃখ নয়, আনন্দও নয়, শুধু এক জ্যোৎস্না রাতের ঘুম৷
এখনও লিখিসনি যখন, আর কিছুদিন ধৈর্য্য ধর৷

জীবনের ধারাপাত

আমি আমার সাথে গল্প করতে করতে হেঁটে চলেছি
আমাদের ছোট্ট পৃথিবীর কল্পিত নির্জন পথে৷
কোথাও আগুন জ্বলছে, কোথাও বৃষ্টি,
কোথাও বা বরফ পড়ছে, কোথাও ঝড়৷
পরিবেশ থেকে কিছু দূরে
হৃদয়ে বারুদ ঠুকে পুড়িয়ে দিচ্ছি
যত সব অবাঞ্ছিত অভিমান, দুঃখ, ক্ষোভ, ভয়,
নির্মল ভালবাসাটুকু রেখে দিচ্ছি অলিন্দ নিলয়ে৷
কী হে সপ্তর্ষিবাবু! ঠিক করছি তো?
নিজেকে কী ভাবছিস?
ওভাবে নাক সিটকোচ্ছিস কেন?
পথ চলতি দুর্গন্ধ টের পাচ্ছিস ?
পথচলতি মেয়েটাকে সদ্য ফোটা ফুল ভাবছিস?
এ তোর সুস্থ জীবনের ধারাপাত৷
একে ভালবাসা দিয়ে জড়িয়ে রাখ কলিজায়৷
একটি জীবন একটি পথ, তাড়াহুড়ো নয়,
প্রতিটা কণার স্পর্শ নিতে নিতে চল,
পথের অনুগত না হয়ে পথকে অনুগত করে চল৷
শূন্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে লাভ নেই রে পাগল,
নিজের আয়ু নিজে যত্ন করে রাখ৷

অমৃত সর্প

লেখারও বিষ আছে,
লেখককে সে দংশায়৷
ছটফট করতে থাকে লেখক,
ভুলে ভুলে ছিন্ন হতে থাকে স্বাভাবিক যাপন।
অন্তঃসত্ত্বা পশুর মত খুঁজতে থাকে গহ্বর,
নির্জন পৃথিবীর কোণ, গাছের আড়াল৷
ঝগড়াঝাটি, বকুনি, তিরস্কার শেষে,
প্রসব শেষে বিষ জন্মায় অমৃত হয়ে৷
অমৃত পান করে ঋদ্ধ হয় পাঠক,
একমাথা খোলা আকাশ হয়ে ভেসে যায় লেখক৷
এসো এসো, আরও আরও দংশন করো!
আহা! লেখা এক অমৃত সর্প, অমৃত সর্প৷

চিত্রণ : চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Subhankar Saha
Subhankar Saha
3 years ago

” লেখা এক অমৃত সর্প” অপূর্ব। এত সহজিয়া চলনের মধ‍্যে গভীর বোধ… চুপটি করে বসে ওম নিতে ইচ্ছে করছে।
শুভঙ্কর সাহা।

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »