Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

লেবেদেফ এবং ও তাঁর সংস্কৃত শিক্ষক জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন

একজনের নাম গোলকনাথ, অন্যজনের নাম জগন্নাথ। এই দুই নাথ-এর ছত্রছায়ায় একজন রুশ পরিব্রাজক হয়ে উঠলেন ভারতচর্চার অগ্রগণ্য পথিকৃৎ। শুধু তাই নয়, সেই রুশ নাগরিক লেবেদেফের হাত ধরে বাংলা তথা ভারত পেল প্রথম ইউরোপীয় ধাঁচের প্রসেনিয়াম থিয়েটার। গোলকনাথের কথা তবুও দুই বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উৎসাহীজনেরা কম-বেশি জানেন। তিনি ছিলেন লেবেদেফের বাংলা শিক্ষক। অথচ লেবেদেফের সংস্কৃত শিক্ষকের কথা রয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অতলে। কে সেই সংস্কৃত পণ্ডিত? কী তাঁর পরিচয়? কোথায় ছিল তাঁদের বাস? ‘বাংলা থিয়েটারের জনক’ লেবেদেফের সেই শিক্ষাগুরুর কথা জানার আগে সংক্ষেপে জেনে রাখা দরকার লেবেদেফের বর্ণময় জীবনের কথা।

তাঁর পুরো নাম হেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেডেফ বা গেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেডেফ। তিনিই প্রথম রাশিয়ান এবং ইউরোপীয় ভারতবিদ, ভারতে ইউরোপীয় ধাঁচের প্রসেনিয়াম থিয়েটার তথা বাংলা থিয়েটারের জনক এবং পুরনো কলকাতার স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী। একাধারে অভিযাত্রী, ভাষাবিদ ও অনুবাদক লেবেদেফের জন্ম ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরের ইয়ারোস্লাভ শহরে। পরে সপরিবারে চলে আসেন সেন্ট পিটার্সবার্গে। লেবেদেভ নিজের প্রচেষ্টায় ইংরেজি, ফরাসি এবং জার্মান ভাষা শেখেন। সেন্ট পিটার্সবার্গে লেবেদেভ প্রথমে স্থায়ী রাশিয়ান থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা ফায়োদর ভলকভের সঙ্গে পরিচিত হন ও ভলকভের থিয়েটারে অভিনয়েও অংশ নেন। লেবেদেফ ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত বেহালাবাদক এবং একটি বাদ্যযন্ত্রীদলের সদস্য হিসাবে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যান। তারপর একদিন সেই দল থেকে পালিয়ে গোটা ইউরোপ চষে বেড়ান এবং বেহালাবাদক হিসেবে কিছুকাল জীবন অতিবাহিত করেন। ইত্যবসরে বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতসাধক মোৎজার্টের সঙ্গেও তাঁর বন্ধুত্ব হয়।

১৭৮২-তে প্যারিস হয়ে লন্ডন চলে যান লেবেদেফ। সেখানে বছর চারেক কাটিয়ে ব্রিটিশ সামরিক ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘রডনি’ নামক জাহাজে চড়ে ১৭৮৫-র ১৫ আগস্ট মাদ্রাজে পা রাখেন। মাদ্রাজে দু’বছর কাটিয়ে ১৭৮৭-র আগস্টে আসেন কলকাতায়। পরবর্তী দশবছর কলকাতাই হয়ে ওঠে তাঁর ঘরবাড়ি। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সঙ্গে ভারতীয় সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। শেখেন বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দি প্রভৃতি ভারতীয় ভাষাও। তৎকালীন ডোমতলায় নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে ১৭৯৫-এর ২৭ নভেম্বর এবং ১৭৯৬-এর ২১ মার্চ দুটি বাংলা অনুবাদ নাটক পরিবেশন করেন। ১০ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা অভিনেত্রী নিয়ে মঞ্চস্থ হয় সে নাটক। এবং রচিত হয় ইতিহাস। তখন শুধুই ইংরেজি থিয়েটারের চল। চক্রান্ত করে লেবেডেফকে ভিটেছাড়া করা হয়। মামলা লড়েন। কাজ হয় না। অসুস্থ হন। ব্যবসার চেষ্টায় নানা জায়গায় দরবার করেন। ব্যর্থ হয়ে কলকাতা ছাড়েন ১৭৯৭-এর ১০ ডিসেম্বর। পাড়ি দেন লন্ডনের উদ্দেশে। মাঝপথে আফ্রিকাতেও কাটান কিছুদিন। ১৮০১-এর মে মাসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে উৎসর্গীকৃত তাঁর ব্যাকরণগ্রন্থটি মুদ্রিত হওয়ার আগেই তিনি লন্ডনে পৌঁছন। তারপর ফিরে যান স্বদেশে। সম্ভবত বিয়ে করেননি। ১৮১৭-র ১৫ জুলাই ৭১ বছর বয়সে প্রয়াণ ঘটে ভারতীয় সংস্কৃতির এই উৎসাহী পুরুষের।

লেবেদেফের ‘বাংলা থিয়েটারের জনক’ হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর বাংলা শিক্ষক গোলকনাথ দাসের অবদান অনস্বীকার্য। তখন কলকাতা শহরে এসে জনৈক রুশ চিকিৎসকের সাহায্যে স্থানীয় সমাজে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে সুনাম কুড়েচ্ছিলেন লেবেদেফ। কিন্তু বাঙালি সমাজের আরও গভীরে যেতে হলে, তাঁকে শিখতে হবে বাংলাভাষা। পেয়ে গেলেন স্কুলশিক্ষক গোলকনাথ দাসকে। তাঁর কাছেই শিখতে শুরু করলেন বাংলা এবং ক্রমে ব্রতী হলেন নাট্যসাধনায়। গোলকনাথের সঙ্গে তাঁর চুক্তি হল, গোলক তাঁকে শেখাবেন বাংলা। বিনিময়ে লেবেদেফ তাঁকে শেখাবেন বেহালা। শেখাবেন পাশ্চাত্য সঙ্গীত। লেবেদেফ তাঁর বইতে লিখছেন: ‘‘…আমি ‘দি ডিসগাইস’ এবং ‘লাভ ইজ দ্য বেস্ট ডক্টর’ নামে দুটি ইংরেজি নাটক বাংলায় অনুবাদ করি। লক্ষ্য করি, এদেশের লোকজন উপদেশমূলক গুরুগম্ভীর আলোচনার চেয়ে হালকা ঠাট্টা-তামাশা বেশি পছন্দ করেন। তাই চৌকিদার, চোর, উকিল, গোমস্তা প্রভৃতি চরিত্রের সন্নিবেশ রয়েছে এমন দুটি নাটকই বেছে নিই। অনুবাদ শেষ করে কয়েকজন নামজাদা পণ্ডিতকে ডাকি, তাঁদের সামনে নাটকদু’টি পঠিত হয়। নাটকের কোন কোন অংশ তাঁদের মনে ধরেছে, সেসব লক্ষ্য করি খুব মন দিয়ে।… পণ্ডিতেরা যখন বলেন, কোনও অসুবিধা নেই, তখন আমার শিক্ষক গোলকনাথ দাস প্রস্তাব দেন, আমি যদি নাটকদুটি অভিনয় করানোর বিষয়ে রাজি থাকি তা হলে প্রয়োজনীয় অভিনেতা এবং অভিনেত্রী তিনি যোগাড় করে দিতে পারেন। তাঁর এই প্রস্তাবে তো আমি হাতে চাঁদ পেয়ে যাই এবং কালবিলম্ব না করে গভর্নর জেনারেল জন সোর-এর কাছে আবেদন রাখি, আমাকে নাট্যশালা খোলার লাইসেন্স মঞ্জুর করা হোক। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সে আবেদন মঞ্জুর করেন।’’

এই গোলকনাথ দাসই তাঁকে সংস্কৃত শিখতে উৎসাহ দিলেন। গোলকনাথ লেবেদেফকে পরামর্শ দিলেন: ‘‘সংস্কৃত অক্ষর পরিচয়টা সেরে ফেলুন। কারণ প্রাচ্য বিজ্ঞান ও জ্ঞান ভাণ্ডারের চাবিকাঠি এর কাছেই আছে।’’ তদানীন্তন বঙ্গদেশের নামজাদা সংস্কৃত পণ্ডিত, জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ভট্টাচার্যর কাছে সংস্কৃতের পাঠ নেওয়ার জন্য গেলেন লেবেদেফ। লেবেদেফ নিজে অবশ্যও জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চাননের নাম লিখেছেন, ‘‘জগন-মোহন-বিদ্যে পঞ্চানন ভট্টাচার্য’’। পণ্ডিত জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা-সংলগ্ন মাটিকুমড়োর বাসিন্দা। মাটিকুমড়ো তখন ছিল প্রসিদ্ধ কুশদহ অঞ্চলের অংশ। জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ছাড়াও আর-এক জগন্নাথের কাছেও অধ্যয়ন করেন লেবেদেফ। এই জগন্নাথ হুগলির ত্রিবেণীর লোক। তাঁর নাম জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন। তাঁকে লেবেদেফ উল্লেখ করেছেন ‘‘জগন্নাথ তর্ক’’ নামে। জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের জন্ম ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে। তিনি প্রয়াত হন ১৮০৭-এর ১৯ অক্টোবর। প্রখ্যাত ইংরেজ ভাষাতাত্ত্বিক স্যার উইলিয়াম জোন্সও জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের সান্নিধ্যে এসেছেন। গভর্নর জেনারেল জন সোর এবং লেবেদেফের অন্যান্য বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষকরা তাঁকে উৎসাহিত করলেন বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দি প্রভৃতি ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে। লেবেদেফ সেই সময়কার চালু রীতি অনুযায়ী দুই জগন্নাথের মতো বিখ্যাত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের কাছেই শিখলেন ‘‘ব্রাহ্মণীয় রীতি, অভিধান, ব্যাকরণ, পাটিগণিত, ক্যালেন্ডার ও অন্যান্য বিষয়’’।

জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চাননের পুরো নাম জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ভট্টাচার্য। তিনি তৎকালীন বাংলার চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত কুশদহের মাটিকোমড়া গ্রামের বিখ্যাত পণ্ডিত রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কারের বংশধর তথা প্রসিদ্ধ পণ্ডিত রামশরণ ন্যায়বাচস্পতির দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। স্মৃতিশাস্ত্রে জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চাননের বিশেষ বুৎপত্তি ছিল। এবং ধর্মশাস্ত্র সম্বন্ধে তাঁর ব্যবস্থা বলতে গেলে ছিল অকাট্য। জগন্নাথের চার পুত্রও ছিলেন, এঁরা হলেন রামচন্দ্র শিরোমণি, অমৃতলাল ভট্টাচার্য, রামকমল চূড়ামণি এবং তারিণীচরণ ভট্টাচার্য। এখানে বলা ভাল, জগন্নাথের পূর্বপুরুষ রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কারের পিতামহ প্রথম শ্রীকর আচার্য ছিলেন নবদ্বীপের স্মৃতিশাস্ত্রের পণ্ডিত। রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কারের পিতা শ্রীনাথ আচার্য ছিলেন ষোড়শ শতকের প্রখ্যাত পণ্ডিত শ্রীচৈতন্যের সমসাময়িক স্মার্ত রঘুনন্দনের গুরু। অনেকগুলি স্মৃতি ও টীকার বই লিখে খুবই যশস্বী হয়েছিলেন শ্রীনাথ আচার্য। বাবার মতো রামভদ্রও বিপুল পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। বিখ্যাত নৈয়ায়িক রামভদ্র জীমূতবাহনকৃত দায়ভাগের টীকাকারও ছিলেন। সতেরো শতকের কুশদহ বা কুশদ্বীপ পরগনায় তিনটি প্রধান পণ্ডিত-স্থান ছিল— মাটিকুমড়া, গৈপুর ও খাঁটুরা। রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কার মাটিকুমড়ার পুতিটুণ্ড-বংশীয় ছিলেন। খাঁটুরার পণ্ডিতদের মধ্যে রামরুদ্র ন্যায়বাচস্পতি ও গৌরমণি ন্যায়ালঙ্কারের নামও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তবে রামভদ্র নদীয়ার নৈয়ায়িক গদাধর ভট্টাচার্যের সমকালীন ছিলেন। তখন তাঁদের নামে জনশ্রুতি ছিল— ‘‘নদের গদা, কুশদহের ভদা’’।

শিক্ষাগুরুদের প্রতি লেবেদেফের ছিল অটুট শ্রদ্ধা এবং পরবর্তীতে তিনি লিখলেন: ‘‘আমি সংস্কৃত বা দেবনাগরী যাই বলুন, সেসব ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করলাম, এই সংস্কৃত বা দেবনগরীর হাত ধরেই বাংলা ভাষা ও ক্রিয়া ও একই সঙ্গে চালু ভাষা ‘মুরিশ’ যা শুধু সমগ্র ভারতেই নয়— এমনকি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া যাযাবররাও— ভারতীয় উপজাতি থেকেই যাদের সৃষ্টি— তারাও ব্যবহার করে— তাও শিখতে পারলাম। এমনকি ব্রাহ্মণদের সুপ্রাচীন ক্রিয়াপদ্ধতি তাদের পূজার্চনা ও চালু অভ্যাসগুলির ওপরেও আমার এক বোধ তৈরি হল।’’ আসলে, শুধু সংস্কৃত পাঠই নয়, ভারত সম্পর্কে লেবেদেফের চোখ খুলে দিয়েছিলেন জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন। লেবেদেফ ভারতকে ভুলে যাননি কোনওদিন। ভারত থেকে ফেরার সময় লেবেদেফের সঙ্গে থাকা পাণ্ডুলিপিগুলির সন্ধান পাওয়া যায়, তাঁর মৃত্যুর প্রায় উনিশ বছর পর। সেগুলি হল— সংস্কৃত অভিধান ‘অমরকোষ’, সংস্কৃত ভাষায় রচিত ‘হিতোপদেশ’, হিন্দিতে রচিত ‘মধুমালতীজৈত প্রসঙ্গকথা’ এবং নিজের হাতে লেখা চারটি পঞ্জিকা ও আরও কিছু বই। এছাড়াও তিনি প্রচুর খসড়া পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। তার মধ্যে ছিল, ‘বাংলা–রুশ শব্দকোষ’ (অসম্পূর্ণ), ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ (অসম্পূর্ণ), ‘‘ভারতচন্দ্রের ‘বিদ্যাসুন্দর কাব্য’-র প্রথম অংশের রুশ অনুবাদ’’, ‘আফ্রিকার দিনপঞ্জী’ ‘কলকাতায় ১৭৯৭-তে লেখা আত্মজীবনীমূলক রচনা’, ‘ভারতীয় পাটিগণিতের ওপর লেখা বই’ ইত্যাদি।

ভারত-প্রেমিক লেবেদেফ স্মরণীয়, তাঁর কীর্তিসমূহ রাশিয়ায় সংরক্ষিত রয়েছে। অথচ লেবেদেফের ভারত-বিদ্যার সোপান বাঙালি পণ্ডিত জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চাননকেই ভুলে গিয়েছে তাঁর স্বদেশ ও স্বজাতি।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

দেখুন, সংস্কৃত পণ্ডিত জগন্নাথ বিদ্যাপঞ্চানন ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রথম ও একমাত্র তথ্যচিত্র।

3 Responses

  1. লেবেদেফ চর্চার একেবারে অনালোচিত দিকগুলি উঠে এলো।তথ্যচিত্রটি উপরি পাওনা।লেখকের জন্য কোন ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়!

  2. অসাধারণ লেখা শ্যামলেশ, কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আরও লেখা পড়তে চাই।

  3. তথ্যসমৃদ্ধ রচনা। অজানা বিষয়। উপস্থাপনা চমৎকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + 3 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »