Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

রবীন্দ্রনাথ ও রামকিঙ্কর

শান্তিনিকেতনে রামকিঙ্কর বেইজ যখন প্রথম তাঁর শিল্পকর্ম শুরু করেছিলেন, তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তা জানতেন না। সময়টা ছিল ১৯৩৮ সাল। সেসময় রামকিঙ্কর প্রথম এসেছিলেন বোলপুরের শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথও চিনতেন না রামকিঙ্করকে। কীভাবে তাঁদের দুজনের প্রথম পরিচয় হয়েছিল, সেকথাই আজ এখানে বলব।

তখন শান্তিনিকেতনের আশ্রমে অজস্র ফাঁকা জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। এমনই এক দিনের গ্রীষ্মকালের দুপুর বেলার কথা। চারিদিকে লাল-ধুলো মাটি-কাঁকরের সঙ্গে রোদের তেজও ছিল চরমে। চারদিকে বইছে আগুনের হলকা দেওয়া ঝোড়ো বাতাস।

ওই অঞ্চলের সেই রুক্ষ মাটিতে তেমন ঘাম হয় না। তবে বাতাস যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন সারা শরীর রীতিমত জ্বালা করে। রামকিঙ্কর দেখেছিলেন, ওই অঞ্চলে অনেক বড় বড় গাছ লাগানো রয়েছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, রুক্ষ লাল মাটির মধ্যে এই ধরনের গাছ লাগাতে এখানকার আসল মাটিকে সরিয়ে উপযুক্ত মাটি ফেলা হয়েছিল নিশ্চয়ই। আম, জাম, কাঁঠাল, আমলকী, হরীতকী, দেবদারু, শাল, মহুয়া, অশোক, বকুল, কদম গাছ না হলে এভাবে সতেজ থাকত না। এই বিশাল উদ্যানের পাশেই রয়েছে এক আশ্রম। উদ্যান আশ্রমকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে গৃহস্থদের বসবাসের এলাকা।

বৈশাখ মাস শেষ হয়ে জ্যৈষ্ঠ মাস সবে তখন শুরু হয়েছে। সেই জ্যৈষ্ঠের এক দুপুরে নিজের ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন আশ্রমের কর্ণধার স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উত্তর-দক্ষিণ দিকে তৈরি কবির পুবমুখী দোতালা বাড়ির রং উজ্জ্বল হলুদ। বাড়ির দোতালার পুবদিকে খোলা বারান্দা রয়েছে। বাড়ির দক্ষিণ দিকেও ছিল একটি ব্যালকনি। তবে এই হলুদ বাড়িটি তেমন উঁচু নয়। দক্ষিণের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কবি তাকিয়ে দেখছিলেন, তাঁর আশ্রমের নানা দিক। নীচে নেমে এসে রবীন্দ্রনাথ কাঁকর ছড়ানো রাস্তা দিয়ে কয়েক পা হেঁটে এগিয়ে এলেন। তাঁর গায়ে এই গরমের মধ্যেও কাশ্মীরি ফেরনের হালকা কাপড়ের তৈরি জোব্বা। পিছনে দুহাত রাখলেও দীর্ঘ শরীর যেন বয়সের ভারে কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। উন্নতনাসা ফর্সা রবীন্দ্রনাথের চোখদুটি অসম্ভব রকমের উজ্জ্বল থাকলেও, অন্যমনস্কতার ভ্রূদুটিতে ছিল না কোনও অকারণের গাম্ভীর্য বা বিরক্তি। দেখতে লাগছিল এক ঋষিপুরুষের মতই। পায়ে ছিল ধূসর রঙের ভেলভেটের নাগরা জুতো।

কবি এবার দক্ষিণ দিকে এগিয়ে চললেন। তাঁর উজ্জ্বল হলুদ রঙের দোতালা বাড়ির পুব দিকে উত্তর থেকে দক্ষিণে যে লাল রাস্তা রয়েছে, সেটা ধরে। রাস্তার ওপাশে মেহেদি বেড়ার ওপারে রয়েছে একটি হাল্কা হলুদ রঙের অর্ধগোলাকার বাড়ি। সেই বাড়ির লাল রঙের মেঝে কবির নজরে পড়ছে। কিন্ত তিনি চোখ ফিরিয়ে নিলেন পুবদিকে। তাঁর নজরে এল একতলা একটি বাড়ির ঢালু ছাদ। এই বাড়িটির এটাই বৈশিষ্ট্য। মাঝে মাঝে তাল গাছ রয়েছে। লাল কাঁকরের মোরাম পেরিয়ে তিনি আরও দক্ষিণ দিকে এগিয়ে চললেন। রাস্তার পশ্চিম দিকের গোলাপের বাগানে জল দিচ্ছে মালি। গোলাপ বাগানে ঢোকার মুখেই রয়েছে সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা তোরণ, যার ডিজাইন উত্তর-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ স্থাপত্যের আদলে তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকেই গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছে, মাটির তৈরি একটি বাড়ি, যে বাড়ির ছাদ কিন্তু খড় দিয়ে তৈরি নয়। সেই ছাদ তৈরি মাটি দিয়েই। এখানকার বাড়ির সঙ্গে এটাই এই মাটির বাড়ির আলাদা বৈশিষ্ট্য। বাড়িটির দরজার দুদিকে পোড়া ইটের আদলে মাটির তৈরি দুটি সাঁওতাল দম্পতির মূর্তি। কালো রং করা।

কবি এবার সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। যে মালিটি গোলাপের বাগানে জল দিচ্ছিলেন, তিনি কবিকে দেখেই ঝারি রেখে দুহাত জোড় করে প্রণাম জানালেন। মালিকে প্রতিনমস্কার জানিয়ে কবি এগিয়ে চললেন পুব থেকে পশ্চিমে। সেখানে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গেট খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন। তিনি ছাত্রদের থাকার হোস্টেল বাড়ি পেরিয়ে এগিয়ে চললেন নতুন কলম দিয়ে তৈরি আম বাগানের দিকে। পূর্ব-পশ্চিম দিক করে লম্বা একটি বাড়ি রয়েছে সেখানে। উত্তর দিকে রয়েছে সেই বাড়ির দরজা। সেই বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়ালেন কবি। সেই উঠোনেই কবির চোখে পড়ল মাঝখানে কংক্রিটের ঢালাই করা উঁচু বেদির ওপরে একটা মূর্তির মত কিছুর। একঝলক দেখে কবির মনে হল দুটি হাতের মত কিছু যেন তৈরি করা হয়েছে। মূর্তির শরীরের মত যেটা তৈরি করা হয়েছে, সেটা যেন হাতদুটো দিয়ে ফুলের পাপড়ি হয়ে রেণুগুলোকে আড়াল করে রেখেছে। কে বানাল এমন মূর্তি!!

কবি এবার মূর্তিটির কাছে গেলেন আর তাঁর মনে হল, চোখের সামনে যেন ভেসে উঠেছে এক রমণীর মূর্তি। সেই মূর্তি যেন চুম্বনরতা কোনও নারী। আবার মূর্তিটির অন্যদিক থেকে দেখে কবির মনে অনুভব এল, এই মূর্তিটির রমণী কি মিলনপ্রয়াসী! তিনি বেশ কয়েকবার মূর্তিটিকে প্রদক্ষিণ করলেন। কিন্তু সঠিক মানে আবিষ্কার করতে না পারলেও, অনুভব করলেন, যেই এই মূর্তি বানিয়ে থাকুক না কেন, এটা অতি উচ্চমানের এক শিল্পকর্ম।

এদিক-ওদিক তাকিয়ে কবি খুঁজতে লাগলেন কোনও লোককে, যিনি এই মূর্তির বিষয়ে তাঁকে জানাতে পারবেন! ততক্ষণে সাঁওতাল রমণীদের নিজেদের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গিয়েছে। কবির নজরে এল এমনই এক সাঁওতাল রমণী। তাকে জিজ্ঞাসা করে কবি জানতে পারলেন, যিনি মূর্তিটি তৈরি করেছেন, তাঁকে এই সাঁওতাল রমণী চিনলেও তাঁর নাম জানেন না। ততক্ষণে সেখানে কয়েকজন আরও সাঁওতাল রমণী এসে উপস্থিত হয়েছেন। তারা কবিকে জানালেন, যে লোকটা এটা তৈরি করেছেন, তিনি নিজেকে ‘ভাস্কর’ বলেন।

কবি তখন একমনে মূর্তিটির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তিনি তাঁর জায়গায় এরকম একটা মূর্তি তৈরি করায় সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট হয়েছেন, সেটা তাঁর অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যাচ্ছিল না।

উপস্থিত হওয়া রমণীদের একজন বললেন, ‘সে থাকে পুরনো মেথর পল্লির এক চালায়। জায়গার নাম কদমতলা। সে কিনা এরকম একটা প্রাচীন বিখ্যাত জায়গাতে জমি দখল করে এই সব পেত্নিদের মূর্তি বানাচ্ছে! আমরা নিষেধ করেছিলাম। সে আমাদের কথা শোনেনি। উলটে আমাদের জানাল, এখন নাকি আরও কী সব ছাইভস্মের মূর্তি তৈরি করবে এখানে!’

অন্য একজন রমণী জানালেন, ‘সে তো এসেছে, বাঁকুড়ার ইয়ে বাড়ি থেকে। তাই তো মেথর পল্লিতে থাকতে তার জাত যায় না!’

কবি শুধু বললেন, “হুম, বুঝলাম। তা তাঁকে একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে বোলো তো!”

কবির এই কথা মন্ত্রের মত কাজ করল সাঁওতাল রমণীদের ক্ষেত্রে। তারা আরও উৎসাহ পেলেন ওই ভাস্করকে খবর দেওয়ার। কবিও নিজের থাকার জায়গার দিকে চললেন চিন্তা করতে করতে পিছনে দুহাত দিয়ে।

পুরনো মেথর পল্লি হলেও মেথররা আর এখন সেখানে থাকেন না। সেখানেই এক মাটির দেওয়াল, খড়ের চালার ঘরের সামনের জায়গাতে কাজ করছিলেন রামকিঙ্কর। কাজ বলতে আরও একটি মূর্তির খসড়া তৈরি করছিলেন, মাটি দিয়ে। যেটাকে পরে কংক্রিটের করে শান্তিনিকেতনের জমিতে তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। তাই আগে মাটি দিয়ে খসড়া মূর্তি বানাচ্ছিলেন একমনে। তাঁর এক হাতে মাটি, অন্য হাতে রয়েছে বাঁশের একটি পাত। সেই বাঁশের পাত দিয়ে মাটির ডেলাতে মূর্তির আবয়ব তৈরির কাজ করছিলেন তিনি। মাটির মূর্তিটি এক সাঁওতাল রমণী, এক পুরুষ আর এক পশুর। সাঁওতাল পুরুষটির কাঁধে বাঁক রয়েছে। রামকিঙ্কর মূর্তি তৈরিতে এতটাই মগ্ন ছিলেন, কখন সূর্য ইউক্যালিপটাস গাছের মগডাল ছুঁয়েছে, সেটা খেয়াল করেননি। তাঁর কাজ এখনও শেষ হয়নি। একবার গড়ছেন, পছন্দ হচ্ছে না। তাই ভেঙে আবার তৈরি করছেন।

এরমধ্যে বাড়ির উঠোনে ঢুকলেন শুকনো কাঠ পাতাকুড়োনি কয়েকজন সাঁওতাল রমণী। তাদের মধ্যে থেকে একজন তাঁর উদ্দেশে বললেন, ‘তোমাকে তিনি ডেকেছেন।’

রামকিঙ্কর চমকে তাকালে এবার অন্য একজন সাঁওতাল রমণী বললেন, ‘কী হে! কথাটা বুঝতে পারলে না। উনি তোমাকে ডেকেছেন! তিনি বাগানে এসে তোমার কীর্তি দেখেছেন! আজ তিনি নিজের থাকার বাড়ি থেকে বাগানে এসেছিলেন তো!’

রামকিঙ্কর অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাকে দেখা করতে বলেছেন!”

এই কথাগুলো জানিয়েই সাঁওতাল রমণীরা বাড়ির দিকে রওনা দিলেন কিন্তু সঙ্গে রামকিঙ্করকে বিদ্রুপ করতে ছাড়লেন না ‘ভাস্কর’ বলে।

অন্ধকার নেমে এসেছে। রামকিঙ্কর চলেছেন কবির সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু তাঁর কানে বেজেই চলেছে, সেই সাঁওতাল রমণীদের বিদ্রুপ ‘ভাস্কর, ভাস্কর’। রবীন্দ্রনাথের থাকার জায়গায় গিয়ে রামকিঙ্কর যখন কবির সাক্ষাৎ পেলেন, তখন কবি চোখে চশমা এঁটে টেবিলের ছোট খাতায় কলম দিয়ে কিছু লিখছেন। তার উপস্থিতি টের পেয়ে কবি চোখ থেকে চশমা সরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে!”

“আজ্ঞে! আপনি আমাকে আজ বিকালে দেখা করতে বলেছিলেন!” রামকিঙ্কর ভয়ের সঙ্গে জবাব দিলেন।

“ও, তুমি! হ্যাঁ, তোমায় আমি ডেকেছি। আজ বিকালে বাগানে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল তুমি কিছু একটা বানিয়েছ। কী বানিয়েছ ওটা!” রবীন্দ্রনাথ জিজ্ঞাসা করলেন।

“আজ্ঞে আমি জানি না।”

“নিজেই জানো না কি বানিয়েছ!” কবির চোখে অবাক প্রশ্ন!

রামকিঙ্কর বললেন, “জানি কী বানিয়েছি, কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারব না যে!”

রবীন্দ্রনাথ অভয় দিয়ে বললেন, “আমার তো মনে হল এক নারীর মূর্তি। যে নীচু হয়ে রয়েছে চুম্বন দেওয়ার জন্য!”

“হবে হয়তো! আমার মনে যা এসেছিল, সেটাই বানিয়ে দিয়েছি।”

রামকিঙ্করের কথা শুনে রবীন্দ্রনাথ হেসে উঠলেন। মুখে বললেন, “তুমি আমার বাগানে যত ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সব এই ধরনের নানা মূর্তি দিয়ে ভরিয়ে দাও! আর শোনো, একটা মূর্তির কাজ শেষ করবে, আবার একটা নতুন মূর্তি তৈরির কাজ ধরবে। কখনও পিছন দিকে তাকাবে না।”

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
3 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
SHIVAJI PANDIT
SHIVAJI PANDIT
3 years ago

লেলেখাটা পড়ে ভাল লাগল।

Siddhartha Majumdar
Siddhartha Majumdar
3 years ago

খুব ভালো লাগল লেখাটি পড়ে।

শুভ্র মুখোপাধ্যায়
শুভ্র মুখোপাধ্যায়
3 years ago

অসাধারণ; সংক্ষিপ্ত তবু মন স্পর্শ করে। রামকিঙ্কর নিয়ে যতোই বলা যায়, মনে হয় শেষ হয়না

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শতবর্ষে মহানায়ক উত্তমকুমার

‘মহা’ শব্দটি মহান আর বিশাল, এই দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন ‘মহাকাব্য’ বা ‘মহারাজ’। কাব্য আর রাজার চেয়ে তার মাত্রা ভিন্ন, মহিমা অনেক বেশি তাৎপর্যময়। উত্তম বাংলা চলচ্চিত্রের সেই তাৎপর্যময়তার একমাত্র উদাহরণ। যাঁকে শ্রদ্ধাভরে আমরা ‘কিংবদন্তি’-ও বলে থাকি। তাই সত্যজিৎ রায়ের মতো আরেক কিংবদন্তি তাঁকে নিয়ে চিত্রনাট্য লেখেন, ছবি বানান, আর সে ছবির ‘নায়ক’ হন উত্তমকুমার।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সুকান্ত ভট্টাচার্য: ভিসুভিয়স-ফুজিয়ামার সহোদর এক কবি

‘–ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে’, সুকান্ত লিখেছেন নিজের সম্পর্কে। বলেছেন, ‘আমি এক অঙ্কুরিত বীজ’। এই বীজ মহীরুহে পরিণত হতে পারল না, বাংলা সাহিত্যের পরম দুর্ভাগ্য এটা। কিন্তু তাঁর একুশ বছরের জীবনে তিনি আভাস দিয়ে গেছেন, তাঁর সম্ভাবনা কতদূর প্রসারিত হতে পারত। সুকান্ত মানে একজন কবিমাত্র নন, তার চেয়েও আরও অধিক কিছু।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাইশে শ্রাবণ ও প্রসঙ্গত

প্রয়াণের আগে, সব হিসেব বাদ দিয়ে যদি তাঁর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের কথা-ই ধরি, দেখব, কত প্রিয়জনের মৃত্যুশোক বহন করতে হয়েছে তাঁকে। যেহেতু তিনি ছিলেন মানুষের সান্নিধ্যপ্রিয়, তাই অন্যের চেয়ে ঢের ঢের বেশি মৃত্যুবেদনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। এসব মৃত্যু তাঁকে বেদনার্ত করলেও নিজের মনোবলের জোরে সে-অরুন্তুদ বিষাদকে কাটিয়েও উঠেছেন। পাশাপাশি মৃত্যু নিয়ে তাঁর দর্শন গড়ে উঠতেও তা ভূমিকা রেখেছে। তাই তিনি বলতে পারেন, তিনি-ই বলতে পারেন, ‘দুদিন দিয়ে ঘেরা ঘরে/ তাইতে যদি এতই ধরে/ চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময়?’ কেন পারেন?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

উত্তমকুমার: অন্য ও অনন্য

তাঁর জন্মদিনের চেয়েও মৃত্যুদিনটিকে অধিকভাবে স্মরণ করা হয়, এ এক আশ্চর্য ব্যাপার। তাছাড়া বাংলা চলচ্চিত্র-জগতে তো কম খ্যাতিমান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়নি, সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল, ছবি বিশ্বাস-কানন দেবী-সুচিত্রা-সৌমিত্র, তবু তাঁর মতো, ঠিক তাঁর মতো স্মরণযোগ্য হয়ে রইলেন না কেউ। শ্রাবণের অনুষঙ্গে নয়, উত্তমকুমারের প্রয়াণদিবসটি চিহ্নিত চব্বিশে জুলাই তারিখটির বিধুরতায়। ১৯৮০-র এই দিনটিতে বাংলা চলচ্চিত্র-জগতের এই দিকপাল প্রতিভার জীবনাবসান ঘটে। আজ তাঁর মৃত্যুর পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্তিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে উত্তম সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্যের ডালি।

Read More »
শৌনক দত্ত

রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী

নাটকটির নাম প্রথমে রেখেছিলেন যক্ষপুরী, তারপর নন্দিনী এবং পরিশেষে রক্তকরবী নামে থিতু হয়। শিলং-এ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে যে নাটক লেখা শুরু হয়েছিল তার দশম খসড়া প্রকাশিত হয় রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রায় দেড় বছর পর আশ্বিন ১৩৩১ বঙ্গাব্দে—১৯২৪ সালে। প্রকাশিত হবার পরেও, একাদশতম খসড়া প্রস্তুত করার কথা ভাবেন নাট্যকার। অনেকেই বলেছেন, এটি নাট্যকারের হৃদয়ে লালন করা কোনও স্বপ্ন। কেউ কেউ এই নাটকের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম চেতনার ছায়া খুঁজেছেন। নানা প্রশ্ন, নানা যুক্তি নিয়ে নাটকটি রচনার পর থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত দারুণ আলোচিত ও জনপ্রিয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত নাটকটি নিয়ে বহু আলোচনা। শতবর্ষে এসে দাঁড়ানো সেই রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ নানামাত্রায় বিবেচনাযোগ্য একটি নাটক; বহুমাত্রিক এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

Read More »
নুশান জান্নাত চৌধুরী

নুশান জান্নাত চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ

কিছুকাল ঘুমিয়ে, কিছুকাল লুকিয়ে,/ কিছু শহর, কিছু মানুষের ভিড়ে হারিয়ে/ আমি দেখি—// কোনও এক/ পথহারা দেবদূতের বিষণ্ণ ডানার পাশে/ আমি বুক পেতে দিয়েছি// চুলের ভেতর জন্ম নিয়েছে/ ঘাসফুল থোকা থোকা, বুকের মাঝখানে একটা প্রাচীন পেরেক,// ঝরাপাতার রাজ্যপাটে/ আমার বাম হাঁটুতে গেঁথে আছে—/ আগামী বছরের প্রথম সন্ধ্যা;

Read More »