Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা

গত শতকের প্রথম দিকে দেশে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় চল্লিশ হাজার। প্রধানত, নির্বিচারে শিকারের কারণে কমে কমে ১৯৭৩-এ যখন সেই সংখ্যা ১৮২৭-এ পৌঁছেছিল, সেই সময় পয়লা এপ্রিল ১৯৭৩-এ বাঘ সংরক্ষণের জন্য শুরু হল প্রোজেক্ট টাইগার। বিভিন্ন রাজ্যের ১৮,২৭৮ বর্গ-কিমি অরণ্যে ন’টি ব্যাঘ্র প্রকল্প চালু হয়েছিল। পরিধি ও সংখ্যা বেড়ে এখন দেশ জুড়ে ৭৫,০০০ বর্গ-কিমিতে ৫৩টি ব্যাঘ্র প্রকল্প। গত ১ এপ্রিল ২০২৩-এ প্রকল্পের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশ জুড়ে ধন্য ধন্য। সভা, সেমিনার, বক্তৃতায় সরগরম হয়েছে দেশ।

২০২২-এ বাঘ সুমারি অনুযায়ী দেশে বাঘের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩,১৬৭; ২০১৮-য় সেই সংখ্যা ছিল ২,৯৬৭। অর্থাৎ পাঁচ বছরে দেশে দু’শোটি বাঘ বেড়েছে। নিশ্চিত আনন্দের খবর। যদিও দুর্জনরা বলছেন, এই হিসেবে জল আছে প্রচুর। ২০২২ থেকে ইতিমধ্যেই একশোর ওপর বাঘ মারা গিয়েছে নানা কারণে; সেগুলিও নাকি এখনও জীবিত হিসেবেই ধরা! সে যাই হোক, বাঘ বাড়ছে, এ নিশ্চয়ই ভাল খবর। সারা পৃথিবীর বাঘের ৭০ শতাংশ রয়েছে ভারতে আর তাদের সংখ্যা বছরে ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু এও আবার বেশ দুঃখের যে, ভারতের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থা (Wildlife Protection Society of India; WPSI) জানিয়েছে, মূলত চোরাশিকার ও নানান দুর্ঘটনায় ২০০৮ থেকে ২০২৩-এর পয়লা এপ্রিলের মধ্যে ভারতে ১,২৮৭টি বাঘ প্রাণ হারিয়েছে!

গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো এখন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আর্থিক বরাদ্দে বোধকরি ভাগ বসাতে চলেছে আমদানি করা, নব্য অতিথি প্রাণী, চিতা। চলতি আর্থিক বছরে ব্যাঘ্র প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৩৮.৭ কোটি টাকা আর চিতার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা, আফ্রিকা থেকে আনার খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি বাবদ CAMPA-র (Compensatory Afforestation Fund Management and Planning Authority) আওতায় বরাদ্দ হয়েছে ২৯.৪৭ কোটি টাকা। অথচ ভারত সরকারের Ministry of Environment, Forest and Climate Change-এর Funds for Project Tiger জানাচ্ছে যে, সারা দেশে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২, এই চার অর্থবর্ষে ব্যাঘ্র সংরক্ষণের জন্য মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল প্রায় ১,০৪৮ কোটি টাকা। ভারতের বাঘকে তো বটেই বোধহয় গুজরাতের সিংহকেও আফ্রিকা থেকে আগত চিতাদের জন্য কিছুকাল ‘অতিথি দেবো ভবঃ’ বলে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য বলিদান দিতে হবে।

মহামান্য সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের ১৫/৪/২০১৩ আর ২৮/১/২০২০-র দুটি নির্দেশ এখানে বলা দরকার। প্রথমটি ছিল অবিলম্বে কুনো-পালপুর অভয়ারণ্যের এলাকা বাড়িয়ে গুজরাতের গির অরণ্যের বেড়ে চলা ভারতীয় সিংহের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে আর সাত বছর পরের দ্বিতীয় আদেশনামায় ছিল আফ্রিকা থেকে চিতা আনার অনুমতি। এই সর্বব্যাপী দেখনদারির দেশে আফ্রিকার চিতা আমদানি যে দেশের সিংহের পুনর্বাসনের চেয়ে জনচিত্ত অনেক বেশি আলোড়িত করবে, সেটুকু বুঝতে রাজনীতির দেরি হবে কেন! তাই বুঝতে অসুবিধে নেই, কেন ঢাকঢোল পিটিয়ে চিতারা আগেই কুনো-পালপুরে অধিষ্ঠিত। অথচ ১৯১৩ সালের ২০টি সিংহ বেড়ে ২০২২-এ ৭৫০টি হয়েছে। শুধুমাত্র জুনাগড় বন্যপ্রাণ অঞ্চলে, ১২ জন মানুষ সিংহের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন, দারুণ জখম হয়েছেন ৭০ জন আর ৩,৯২৭টি গবাদিপশুর প্রাণ গিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন বড় বালাই; আর্থিক সংস্থানও দেশে সীমিত। এইসব টানাটানির মধ্যে কূল রাখতে গিয়ে আমাদের নিজের দেশের অরণ্য আর বন্যপ্রাণের সঙ্গে নতুন অতিথি শ্যামেরা বাঁচলেই মঙ্গল।

চিত্র: গুগল
5 2 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস ও কালিদাস

পণ্ডিতেরা তর্ক তুলেছেন, কালিদাস ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’ লেখেননি৷ কেননা একেবারে পয়লা আষাঢ়েই যে মেঘ নেমে বৃষ্টি আসবে, তা হয় না। তাঁদের মতে, ওটা আষাঢ়ের শেষদিন, ‘আষাঢ়স্য প্রশম দিবস’ হবে। কিন্তু প্রথম দিবস-ই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এবং তা এতটাই যে, কালিদাসকে নিয়ে ভারত সরকার যে ডাকটিকিট বের করেছে, সেখানে ‘আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে’ শ্লোকটি উৎকীর্ণ।

Read More »
রূপকুমার দাস

রূপকুমার দাসের কবিতাগুচ্ছ

পড়তি বিকেলে আলতা রং রৌদ্রের রক্তিম ইজেলে,/ লজ্জারাঙা মুখ হত তরতাজা বসরাই গোলাপ।/ এখন ঈশানের মেঘপুঞ্জ ঢেকে দেয় সব কারুকাজ।/ বারুদের কটু ঝাঁঝে গোলাপের গন্ধ উবে যায়।/ নক্ষত্রের আলো কিংবা জ্যোৎস্নার ঝর্নাধারা নয়,/ বজ্রের অগ্নিঝলকে ঝলসে যায় উদভ্রান্ত চোখের নজর।/ হৃদয়ের ক্যানভাসে এঁকে রাখা আরাধ্যার চিত্রলেখা,/ অজানা শংকায় ডুবে যায় অন্ধকার সমুদ্রের জলে।/ সে সমুদ্র তোলপাড় লবেজান আমি তার পাই না হদিস।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »