স্কুল থেকে বেরিয়ে আসতেই বাকি সবাই ঘিরে ধরে জিজ্ঞেস করে, ‘হেড মিস রাজি হলেন?’
ঝিনুকের বাবা সবার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে উত্তর দিলেন, ‘না। উনি কিছুতেই রাজি হলেন না। পুরো ফিজটাই লাগবে।’
—আপনি কোর্টের অর্ডারের কথা কিছু বললেন না।
—আরে আমি তো সবই বললাম। সেদিন থেকে বলেই যাচ্ছি। উনি কোনও কথা শুনতেই চাইছেন না।
একজন অভিভাবকের কথার উত্তরে ঝিনুকের বাবা একশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন।
গোলমালটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। আরও কয়েকজন অভিভাবকও এসে জড়ো হলেন। বিভিন্ন জায়গায় কয়েকজন মিলে শলাপরামর্শ করতে আরম্ভ করলেন। এই নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই টাউনশিপের এই স্কুলে ঝামেলা চলছে। প্রাইভেট স্কুল, একটা সময় টাউনশিপে বেশ নাম করেছিল। শুধু উচ্চমাধ্যমিকই পড়াশোনা হয়। সকালে মেয়েদের, বেলাতে ছেলেদের। দুটো দিকেই ছাত্রছাত্রীরা এই শহর ছাড়া বাইরের শহর থেকেও পড়তে আসে। প্রাইভেট স্কুল, তাই ফিজ স্ট্রাকচার অনেকটাই বেশি। এর আগে কোনও অসুবিধা না হলেও এইবার ফিজ নিয়ে একটু অসুবিধা হয়েছে। যাদের চাকরি চলে গেছে বা অর্ধেক পেমেন্টে চাকরি করছেন, তাদের অসুবিধাটাই বেশি। বাকি সব সরকারি চাকরি। ওদের অফিস না গিয়ে বা ঢপের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের নামেও তো ঠিক মাসে মাসে মাইনে ঢুকে যায়। তাদের কি আর এই কয়েকটা টাকার কম-বেশিতে কিছু এসে যায়! ওরা সব দিব্বি আছেন। টাকাপয়সার তো আর চিন্তা নেই।
ঝিনুক যেদিন তার স্কুলের বান্ধবী অঙ্কনার থেকে স্কুলের এই ফিজের ব্যাপারে শোনে, সেদিনই বাকি আরও কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলে। একমাত্র কাকলির মা বলেন, ‘না রে এই সময় অতগুলো টাকা কীভাবে দেব, তোর কাকু তো জানিস একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে। এই অবস্থাতে কত দিন ধরে অর্ধেক টাকা পেমেন্ট দিচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই কোম্পানি বলছে, ‘চাহিদা নেই, সব ঠিক হলে পুরো টাকা দেওয়া হবে। আমাদের কীভাবে চলছে সেটা আমরাই জানি।’
—সে তো কাকিমা আমার বাবারও। বাসে কাজ করে, এখন যা অবস্থা বাসে তো আর প্যাসেঞ্জার সেরকম নেই। খুব খারাপ অবস্থা চলছে।
ফোনে ফোনে তাদের কথাও হয়। সেইমত ঝিনুকরা একদিন ফোন করে সবাই মিলে স্কুলে যায়। কিন্তু গেলেও কী হবে। স্কুলের হেড মিস কোনও কথাই শুনতে চান না। উল্টে বলে দেন, ‘তোমাদের বাবা-মাদের বলো, এটা সরকারি স্কুল নয়, প্রাইভেট স্কুল, এখানে মাইনেপত্তর সব তোমাদের দেওয়া মাইনে থেকেই ব্যবস্থা করতে হয়, আকাশ থেকে টাকা আসে না।’
—ম্যাম, আমরা তো কেউ ফিজ দেব না, সেটা তো বলছি না। শুধু বলছি এই যে ডেভেলপমেন্ট, লাইব্রেরি, ইলেকট্রিক চার্জ, ল্যাব চার্জ, ক্যান্টিন চার্জ বা স্কুলের ক্লিনলিনেসের জন্যে যে চার্জটা নেন সেটাও তো মাসে মাসে মাসে পনেরোশো টাকা, ওটা না নিলেও তো কিছুটা কমে। আমরা তো ম্যাম কেউই এখন কোনও কিছুই ব্যবহার করছি না।
—তোমাদের জন্যে তো অনলাইন ক্লাস করানো হচ্ছে। ম্যামরা নিজেদের মোবাইলের নেট ব্যবহার করে ক্লাস করাচ্ছেন, নোট দিচ্ছেন, কই আমরা তো তার জন্যে কোনও একস্ট্রা চার্জ নিচ্ছি না।
—কিন্তু ম্যাম আমরা তো তার জন্যে টিউশন ফিজ দিচ্ছি।
—সে ব্যাখ্যা তোমাদের দিতে আমি বাধ্য নই। বাকি সব ছাত্রীরাই ফিজ দিয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে। বয়েজ সেকশনেও কেউ কোনও ঝামেলা করেনি। তোমরা যারা এই সব ঝামেলা পাকাচ্ছ, মনে রাখবে, ফিজ ক্লিয়ার না হলে আমি কিন্তু পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করতে দেব না।
কথাগুলো ঝিনুক বাড়িতে এসে জানাতেই মা বলে, ‘শোনো, অত ঝামেলাতে যেতে হবে না। আমার একজোড়া ছোট কানের আছে, বন্ধক দিয়ে যা লাগবে দিয়ে দে।’
—আরে দাঁড়াও না। কিছু দিন অপেক্ষা করি। শহরের বাকি সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অভিভাবকরা মিলে একটা ফোরাম করেছেন। ওরা কোর্টেও গেছেন, একটা রায়ও বেরিয়েছে। গতকালই একজনের সাথে কথা হল। ওনার ফোন নম্বরটাও নিয়ে এসেছি। উনি কোর্টের অর্ডারের একটা জেরক্স কপি দিয়ে দেবেন বলেছেন। ওটা পাই, তারপর কথা হবে। দরকার হলে আমি নিজে অর্ডার কপিটা নিয়ে স্কুলে যাব। তাতেও যদি না হয় তখন একবার পার্টির লোকেদের কাছেও যেতে হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রীর সাথেও কথা বলব।
ঝিনুকের বাবা আরও কয়েকজন অভিভাবক মিলে তার পরের দিন স্কুলে গেলেও লাভের লাভ কিছুই হল না। হেড মিস কোর্টের অর্ডার দেখে বলে উঠলেন, ‘ওসব এখানে দেখাবেন না। যখন ভর্তি করেন তখন জানতেন না এটা প্রাইভেট স্কুল, সরকারি স্কুলে পড়াতে পারতেন, টাকাপয়সা লাগত না। বরং আরও অনেক কিছু পেতেন। এটা রেশনের দোকান নয়, একটা প্রাইভেট স্কুল, এখানে অত কোর্টের অর্ডার চলে না। তাছাড়া বাকি গার্ডিয়ানদের তো কোনও অসুবিধা নেই। আপনাদের অসুবিধা হলে নিজেরা একটু ভাবুন, কীভাবে সুবিধা করানো যায়। সব কিছু মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’
ঝিনুকের বাবা তারপর কয়েক জন পার্টির নেতার সঙ্গেও দেখা করেন। কিন্তু তারাও সেরকম কোনও কিছুই আশার কথা শোনাতে পারেন না। এমনকি শহরের যে গার্ডিয়ান ফোরাম এতদিন ধরে ফিজ কমাবার আন্দোলন করে আসছে, তারাও সব শুনে বলে, ‘দেখুন আমাদের এখানে যেসব দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম, তাদের অনেকগুলি আগেই মিটে গেছে। আপনারা এখন অনেকটাই দেরি করে ফেলেছেন। তাও দেখছি, নিজেদের মধ্যে একটু আলোচনা করতে হবে। আপনি কয়েকদিন পরে আসুন।’
কয়েকদিন পরে গেলেও সেই বিভিন্ন বাহানা শুনতে হয়। এর মধ্যে এক অভিভাবক ঝিনুকের বাবাকে ফোন করে বলেন, ‘আরে মুখার্জিবাবু, আপনি একটা কাজ করুন, প্রয়োজনে কারওর কাছে কিছু টাকা ধার নিয়ে সব ঝামেলা মেটান। অত টাকা দিতে পারছেন আর এই ক’টা টাকা দিতে পারবেন না।’
ঝিনুকের বাবা একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘কয়েকদিন আগেই মেয়ের অনলাইন ক্লাসের জন্যে একটা মোবাইল কিনতে হয়েছে। সেই টাকাও এখনও শোধ করতে পারিনি। তাছাড়া, বিষয়টা শুধুমাত্র কয়েক হাজার টাকার নয়, এরা যা খুশি তাই আরম্ভ করেছে। এই তো কালকে শুনলাম কয়েকজন ছাত্রীকে স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু স্কুলের গ্রুপ থেকেই নয়, কয়েকটা ক্লাসের গ্রুপ থেকেও রিমুভ করে দিয়েছে। একেই তো ক্লাস যা হচ্ছে, সেটা যতটা না বলা যায় ততটাই ভাল। কয়েকজন ম্যাডাম ওই পাঁচ মিনিট কী সব বলেন, তাতেই ক্লাস শেষ। আমরা প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করে কি পাপ করেছি? তাছাড়া যেখানে কোর্ট একটা ইতিবাচক অর্ডার দিয়েছে, সেখানে ওরা কীভাবে এমন আচরণ করতে পারে, সেটাও তো ভাববার বিষয়।’
তারপরেই ঝিনুকরা কয়েকজন বান্ধবী নিয়ে স্কুলের গেটের সামনে বসে থাকতে আরম্ভ করে। প্রথমে কয়েকজন এলেও আস্তে আস্তে সংখ্যাটাও একটু বাড়ে। ছাত্রী ও অভিভাবক মিলে প্রায় একশোজন প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে হেড মিসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে হেড মিস আলোচনার জন্যে একজনকে ডেকে পাঠান। অভিভাবকদের থেকে সবাই ঝিনুকের বাবাকেই পাঠান। উনি স্কুলের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে এই কথাগুলো বলতেই আবার সেই জটলা আরম্ভ হয়। আলোচনা চলতে থাকে। ঝিনুকের সঙ্গে তখন আরও কয়েকজন বান্ধবী এসে জড়ো হয়, সঙ্গে তাদেরও সব অভিভাবকরা। কিন্তু কেউ কোনও সিদ্ধান্তে যেতে পারেননি। স্কুল যদি সত্যি সত্যিই ফিজ না কমায় তাহলে তো আর জোর করা যায় না।
ঝিনুকের বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে একজন অভিভাবিকা বলেন, ‘একবার কি আমরা যাব? যদি আমাদের কথা শোনেন। মানে, দেখুন, আমরা যারা এখানে এসেছি, তাদের কারওর পুরো টাকা দেবার ক্ষমতা নেই বলেই তো এসেছি। এই শহরে কয়েকটা স্কুল আছে সেখানে সব বড়লোকের ছেলেমেয়েরা পড়ে। ওখানে একপয়সা কমায়নি। ওখানে কিন্তু কোনও আন্দোলোন নেই। এখানে আমাদের শুধু স্কুলে ফিজ দিলেই হবে না। নিজেদের ও…’
—হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনারাও একবার যান। তারপর দরকার হলে আমরা সবাই মিলে আর-একবার যাব। মুখার্জিবাবু একা গেলে আর হবে না।
অভিভাবিকাদের দলটা স্কুলে ভিতর গিয়েও কাজের কাজ কিছু হল না। ওরাও স্কুলের বাইরে এসে হেড মিসকে গাল দিতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু গাল দিলে তো আর সমস্যার সমাধান হয় না। অভিভাবিকাদের পর আর-একবার কয়েকজন অভিভাবক স্কুলের ভিতরে যাবার জন্যে পা বাড়াতেই দেখলেন স্কুলের গেটের সামনে একটা পুলিশের গাড়ি আসে। কয়েকজন পুলিশের লোক সোজা স্কুলের ভিতরে চলে যান। অভিভাবকদের কয়েকজন ভিতরে ঢুকতে গেলে তাদের বাধা দিয়ে বলেন, ‘আপনারা ভিতরে আসবেন না। কয়েকদিন ধরেই স্কুলের গেটের সামনে ঝামেলা করছেন, হেড মিসকে হ্যারাস করেছেন। উনি আমাদেরকে ডাকতে বাধ্য হয়েছেন।’
পুলিশের মুখে কথাগুলো শুনে সবাই একটু অবাক হয়ে যান। হেড মিসকে হ্যারাসমেন্ট করা হয়েছে! কথাগুলো শুনে সবাই একটু অবাক হয়ে যান। দুজন পুলিশকর্মী স্কুলের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন বাকিরা ভিতরে চলে যান। কোনও অভিভাবক বা অভিভাবিকাকে ভিতরে ঢুকতে দেন না। কিছু সময় পর দুজন পুলিশকর্মী বাইরে এসে বলেন, ‘এখানে ঝিনুক মুখার্জির বাবা কে আছেন?’
ঝিনুক ও তার বাবা সঙ্গে সঙ্গে সেই পুলিশকর্মীর সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এই যে আমি, কী ব্যাপার বলুন।’
—আপনি আমাদের সাথে থানায় চলুন। আপনি একজন মহিলার গায়ে হাত দিয়েছেন। যিনি আবার আপনার মেয়ের স্কুলের হেড টিচার।
—আমি গায়ে হাত দিয়েছি! কবে, কার গায়ে হাত দিলাম? আপনি প্রমাণ দিতে পারবেন?
—অত প্রমাণ আপনি কোর্টে গিয়ে দেবেন। উনি সরাসরি আপনার নামেই তো অভিযোগ করেছেন।
—শুনুন স্যার, উনি খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ, কিন্তু আমাদের মত ওনারও অতটা টাকাপয়সার জোর নেই, তাই স্কুলের পুরো পেমেন্ট দিতে পারেননি। কিন্তু আমাদের সবার হয়ে উনি কথা বলতে গেছিলেন।
—আমাদের অত কথা বলবার সময় বা ইচ্ছে কোনওটাই নেই। প্রমাণ দেবার থাকলে সব কোর্টে দেবেন। এখন গাড়িতে উঠুন। শেষের কথাগুলো বলে পুলিশকর্মীটি ঝিনুকের বাবার হাত ধরে গাড়িতে ওঠানোর সময়েই পিছন থেকে বাকি সব অভিভাবকরা হৈ হৈ করে ওঠেন। ঝিলিক ততক্ষণে বাবার হাতে ধরে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিয়েছে। পুলিশের গাড়ির দরজা খুলে বাবার পাশে বসে পড়ছে আর একজন পুলিশকর্মী তার সঙ্গে কথা বলে নামানোর চেষ্টা করছেন। কয়েকজন ছাত্রী পুলিশের গাড়ির সামনেও দাঁড়িয়ে পড়েছে, কয়েকজন গাড়ির পিছনেও দাঁড়িয়ে গেছে। এই সময় আর-এক গাড়ি পুলিশও এসে গেছে। এই গাড়িতে বেশি মহিলা পুলিশ আছেন। তারা নেমেই ছাত্রীদের সরানোর চেষ্টা করছেন, অভিভাবিকাদের সরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু যত সরাতে যাচ্ছেন, তত তারা এসে পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরছেন। পুলিশকে শেষপর্যন্ত লাঠি হাতে তাদের তাড়ানোর চেষ্টা করতে হয়েছে।
ঝিনুক এইসব দেখে এক্কেবারে ভ্যাবাচ্যাকা মেরে গেছে। গতকাল রাতেও মা বলেছে, ‘শোন তোর বাবাকে বলতে হবে না, আমি তোকে একজোড়া ছোট কানের দিচ্ছি। তুই সাধন স্যাঁকরার দোকানে গিয়ে বিক্রি করে যা যা বাকি আছে সব মিটিয়ে দে।’
ঝিনুকের এখন মনে হচ্ছে মায়ের কথাগুলো শুনলেই ভাল হত। তখন বাবাই বারণ করেছিল। এখন বাবাকে থানাতে নিয়ে চলে গেলে কী করবে ঝিলিক, মাকে কী বলবে? তার নিজেরও খুব কান্না পেল। ছুটে পুলিশের ওই অফিসারটার কাছে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করল, ‘আমার বাবাকে ছেড়ে দাও না গো, আমরা সব বাকি ফিজ দিয়ে দেব।’ ভাবল, একবার কি হেড মিসের কাছে গিয়ে বলবে, জিজ্ঞেস করবে, ‘ম্যাম, আপনি এত বড় মিথ্যে কথা বললেন?’
পুলিশের গাড়িটা ছেড়ে দিল। তবে শুধু ঝিনুকের বাবা একা নন, আরও কয়েকজন ছাত্রীর বাবা এমনকি মাকেও পুলিশে উঠিয়ে নিয়ে গেল। বাকি যারা ছিলেন তারা সবাই স্কুলের সামনের রোডে বসে কেউ বা শুয়ে রাস্তাটা আটকে দিলেন। ঝিনুকের এইসব এক্কেবারে ভাল লাগছিল না। বাবাকে পুলিশে মারবে না তো? একটা কাকিমা একটু আগে কয়েকজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে হেড মিসের চরিত্র নিয়ে বদনাম করছিলেন। অন্য অনেকে শুনছিলেন। ঝিনুক সরে এসে স্কুলের মেন গেটের পাশে একটা কালভার্টের ওপর এসে বসল। দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে আসছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। মাথাটা দুটো হাতের ভিতর চেপে ধরে বসে থাকতে থাকতে সামনেটা এক্কেবারে অন্ধকার হয়ে গেল।
চোখদুটো খুলতেই নিজেকে একটা বিছানাতে শুয়ে থাকতে দেখল। চারদিকে কয়েকজন লোক তাকে ঘিরে আছেন। ঝিনুকের চোখ খোলা দেখেই একজন নার্সের পোশাক পরা ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করেন, ‘এখন কেমন লাগছে?’
ঝিনুক মাথা নেড়ে ‘ভাল লাগছে’ সেটা জানায়।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাবা, মা সহ কয়েকজনকে চারদিকে দেখতে পায়। সবার মুখ ঝিনুক চিনতে পারে না। ঝিনুক বাবার দিকে তাকিয়ে খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি এখানে…?’
—ও অনেক কথা, তুই বাড়ি গেলে সব বলব। তোদের হেড মিসও এসেছিলেন। উনি আমাদের কথা শুনেছেন। যারা পারবে না তাদের ওই এক্সট্রা ফিজগুলো আর দিতে হবে না।
ক্লাসের বান্ধবীরাও ঝিনুকের মুখে হাসি দেখতে পেল। তবে তারাও কেউ ঝিনুককে জানাল না, কীভাবে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার পর, এই হাসপাতাল, প্রেস, পুলিশ এমনকি রাজ্যের শাসক, বিরোধী সব দলের কাছেই ব্যাপারটা পৌঁছে যায়। টিভিতে ঘন ঘন খবর দেখাতে থাকে। ঝিনুকের বাবা, মা সবার বাইট দেখানো হয়। রাস্তায় স্কুলের ফিজ মেটানোর জন্যে অনেক সংগঠন নিজের থেকে টাকা দিতে চলে আসে। হেড মিস সব অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, ঝিনুককে দেখতেও আসেন। কেউ বুঝতে পারে না একটা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ছাত্রীর এতটা শক্তি থাকতে পারে!