Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

কঠোর বিকল্পের পরিশ্রম নেই

‘কঠোর বিকল্পের পরিশ্রম নেই’। Umbrella বিতর্ক দেখে শঙ্খ ঘোষের ‘বিকল্প’ কবিতার এই লাইনটি মনে পড়ল। একদল মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজিতে ফেল করেছে। পাশের দাবিতে তারা রাস্তায় ধর্নায় বসেছে, ফেল করার মত পরীক্ষা তারা নাকি দেয়নি। একজন সাংবাদিক তাদের একজনকে umbrella বানান জিগেস করেছিল। মেয়েটি ভুল বলেছে, a দিয়ে বানান শুরু করেছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। হাসাহাসি হয়েছে। একজন ছাত্রী যে কিনা দাবি করছে সে ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেটার পেয়েছে তার অন্তত Umbrella বানান a দিয়ে শুরু নয় u দিয়ে শুরু এটা জানা উচিত ছিল। পুরো বানান ভুল হতেই পারে কিন্তু ওই বয়েসের একজন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর u দিয়ে Umbrella শুরু হয় এটা জানা উচিত। Umbrella তো চেনা জিনিস, শব্দও বহুল প্রচারিত। জানা উচিত ছিল। কিন্তু জানে না কেন?

একদল সাবঅলটার্নপ্রেমী জনদরদী মেয়েটির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা ওই ভুল বানানের জন্যে দায়ী করে লকডাউনে পড়াশুনো বন্ধ, ইস্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা, শিক্ষাব্যবস্থা— সবকিছুর গুষ্টি উদ্ধার করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। এই ভুল বানানের সূত্রে ভদ্রবিত্ত এবং বুর্জোয়া শিক্ষাব্যবস্থাকে একহাত তো নেওয়া গেল। অবোধের গোবধে আনন্দ।

শিক্ষা কমিশন কোনও ওষুধের কোম্পানি নয় যে অঙ্ক ইংরেজি শেখার বড়ি তৈরি করবে। শিক্ষক-শিক্ষিকরাও তো নার্স নন যে, সেই বড়ি ছাত্রছাত্রীদের খাইয়ে দেবেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কোনও বিষয় বুঝিয়ে দিতে পারেন, কী করতে হবে সেটা বলে দিতে পারেন। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের পরিশ্রম করেই শিখতে হবে। কোনও বিকল্প নেই। না খাটলে শিখতে পারবে না। নামতা বা বানানের মেড ইজি হয় না। খেটেই সেসব শিখতে হয়, মনে রাখার মত কষ্ট করতেই হবে। মেয়েটি ইংরেজিতে ফাঁকি মেরেছে তাই Umbrella-র মত সাধারণ বানানও u না a দিয়ে শুরু সেটা বলেছে। ওই ইস্কুলের যে ছাত্রী বা ছাত্রীরা ইংরেজিতে ভাল ফল করেছে তারাও লকডাউনে ইস্কুলে পড়তে যায়নি, যেটুকু ক্লাস করেছে ওই একই শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে পড়েছে। হয়তো একই কোচিংয়েও পড়েছে। তফাত গড়েছে পরিশ্রম। বিষয়টা এমন নয় যে ভিডিওটি কোনও ক্লাসঘরে গোপনে তোলা। তবে নিশ্চয়ই আপত্তি থাকবে। রাজপথে ১৭-১৮ বছরের মেয়েরা ইংরেজিতে ফেলকে পাশ করাতে দল বেঁধে অবস্থান অবস্থান করছে। অত্যন্ত স্মার্ট ভঙ্গিতে বুমের সামনে বক্তব্য রাখছে। আর সাংবাদিক বানান জিগেস করতেই শিক্ষাব্যবস্থার দোষ হয়ে গেল।

নামধাম গোপন রেখে ওই মেয়েদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করে দেখা যাক না, ওরা শুধু উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি টিউশনের জন্যে কত টাকা খরচ করেছে? দেখা হোক ওরা সরকারের দেওয়া টাকায় ট্যাব বা স্মার্টফোন কিনেছে কি না? একটি তথ্য জেনে রাখা ভাল, প্রতিটি বোর্ডের বেশিরভাগ সাবজেক্টের চ্যাপ্টার অনুযায়ী ভিডিও ইউটিউবে বিনা পয়সায় দেখতে পাওয়া যায়। এইগুলো খুবই কাজের। ইস্কুল যেতে হবে না, কোচিং যেতে হবে না— শুধু এইগুলো নিয়মিত দেখে খানিক পরিশ্রম করলেই যে বোর্ড পরীক্ষায় ৮৫ শতাংশ পাস করে সেই পরীক্ষায় পাস করে যাওয়া যায়।

যথেষ্ট বয়েস হয়েছে, পড়েনি একদম, পুরো ফাঁকি মেরেছে তাই ফেল করেছে। না পড়ে অন্য কাজে নিজের মনকে ব্যস্ত রেখেছে। বিক্ষোভ কেন? গতবছর সবাই পাস করেছে করোনার জন্যে, এবার কেন নয়— তাই। শিক্ষা নিয়ে, ড্রপ আউট নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু বখে গিয়েই যে অনেকে ফেল করে বা পড়াশুনো ছাড়ে— সে কথা তেমন আলোচিত হয় না। আর তা ছাড়া সারা বছর এত উত্সবের ঘনঘটা থাকলে পড়বেটাই বা কখন?

এটা ঘটনা যে শিক্ষা ক্রমশ অর্থনির্ভর হচ্ছে। কিন্তু এ বছরও যারা আইআইটি জয়েন্ট পাবে বা চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট করবে, তারা দিনরাত্তির এক করে পরিশ্রম করেই করবে। তার বন্ধু আছে কি নেই সেসব নিয়ে মড়াকান্না না কেঁদে তাদের পরিশ্রমকে সম্মান দিতেই হবে। পরিশ্রমের কোনও বিকল্প এখনও লেখাপড়ায় নেই।

চিত্রণ: মুনির হোসেন
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Satyajit
2 years ago

Thank you for this upright article

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গাপুজো: অতীত দিনের স্মৃতি

মহালয়া দিয়ে হত পুজোর প্রকৃত সূচনা। শরতের ভোররাতে আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটির শ্রোতা অন্তহীন, এবং এখনও তা সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও অনুষ্ঠানটির শ্রোতা অগণিত। আমাদের শৈশবে বাড়ি বাড়ি রেডিও ছিল না, টিভি তো আসেইনি। বাড়ির পাশে মাঠে মাইক থাকত, আর প্রায় তিনশো গজ দূরের এক বাড়িতে মাউথপিস রাখা থাকত। সেখান থেকে ভেসে আসত মহালয়ার গান, ভাষ্য।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

দুর্গাপূজা, মূর্তিপূজা: দেশে দেশে

আসলে বাঙালি নিরন্তর এক অনুসন্ধানী, ব্যতিক্রমী, অভিনব-চিন্তক, ক্রমবিকাশপ্রিয় ও অন্তিমে রহস্যময় জাতি। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান আস্তিক নাস্তিকে মিলিত এই জাতি সঙ্ঘারাম আর মিনার, ধ্বজা ও ওংকার, জগমোহন-মিরহাব-স্তূপ-ভস্মাচ্ছাদিত এক জাতি, নিজ মুদ্রাদোষে নয়, মু্দ্রাগুণে আলাদা।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

শারদোৎসব: বাংলাদেশে

দুর্গাপুজো কেবল ভক্তের জন্য-ই নয়, ভাল লাগাদের জন্যও। যে ভাল লাগা থেকে ভাই গিরীশচন্দ্র সেন কোরানশরীফ বাংলায় অনুবাদ করেন, অদ্বৈত আচার্য যবন হরিদাসের উচ্ছিষ্ট নিজহাতে পরিষ্কার করেন, স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম-তনয়াকে কুমারীপুজো করেন! দুর্গা বাঙালির কাছে, ধর্মনির্বিশেষে আগ্রহের, যেহেতু এই দেবী পরিবারসহ আসেন, আর সঙ্গে নিয়ে আসেন কাশফুল আর শিউলি। তাই তো সনাতন রামপ্রসাদ, খ্রিস্টান মাইকেল, ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথ এবং মুসলমান কাজী নজরুল দুর্গাকে নিয়ে কলম না ধরে পারেননি!

Read More »
কাজী তানভীর হোসেন

ধানমন্ডিতে পলাশী, ৫-ই আগস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে কয়েকদিন ধরে যা ঘটেছিল, তা শুরু থেকেই গণআন্দোলনের চরিত্র হারিয়ে একটা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পরিণত হয়েছিল। আজ আমরা কার্যক্রম দেখেই চিনে যাই ঘটনাটি কারা ঘটাচ্ছে। আগুন আর অস্ত্র নিয়ে রাজনীতি করার স্বভাব রয়েছে বিএনপি-জামাত ও রোহিঙ্গাদের। তারা যুক্তিবুদ্ধির তোয়াক্কা করে না।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

আমরা বিধানচন্দ্র রায়ের মতো মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছিলাম, যাঁকে খুব সঙ্গত কারণেই ‘পশ্চিমবঙ্গের রূপকার’ বলা হয়। পেয়েছি প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো স্বার্থত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী। এবং জ্যোতি বসুর মতো সম্ভ্রান্ত, বিজ্ঞ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখর কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ। কিন্তু তাঁদের সকলের চেয়ে অধিক ছিলেন বুদ্ধদেব। কেননা তাঁর মতো সংস্কৃতিমনা, দেশবিদেশের শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্র নাটক সম্পর্কে সর্বদা অবহিত, এককথায় এক আধুনিক বিশ্বনাগরিক মানুষ পাইনি। এখানেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনন্যতা।

Read More »