Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

অ্যাভন: বহিয়া চলেছে আগের মতন

দুইপাশে ঘন সবুজ গাছপালা। মাঝখানে বয়ে চলেছে অ্যাভন। এই অ্যাভন নদীর তীরেই জন্মেছিলেন মহাকবি উইলিয়াম শেকসপিয়র। আর উইলিয়াম শেকসপিয়র শুধু মহাকবিই নন, তিনি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার।

১৫৬৪ সালে এই এপ্রিলেই তাঁর জন্ম। ইংল্যান্ডের ওয়ারউইকশায়ারের ছোট্ট শহর স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে পৃথিবীর প্রথম আলো দেখেন উইলিয়াম শেকসপিয়র। তাঁর জন্মতারিখটি নির্দিষ্ট করে জানা না গেলেও তাঁকে Baptize বা খ্রিস্টধর্মের সদস্যভুক্তির দিনটি ধরা হয় ২৬ এপ্রিল। সাধারণত জন্মের কয়েক দিনের মধ্যেই এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়। সেই সূত্রে দিনকয়েক আগেই তাঁর জন্ম হয়েছে বলে ধরে নিতে হয়। আবার ১৬১৬ সালের এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখেই তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। মহান মানুষের আবির্ভাব ও তিরোভাব তিথিতে মিল রাখতেই সকলে তাঁর জন্মদিন হিসেবে ২৩ এপ্রিলকেই মেনে নিয়েছেন। মাঝখানের ৫২টি বছর তিনি পৃথিবীতে ছিলেন। পৃথিবীর মানুষের সুখদুঃখের সঙ্গে তিনি নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। আর এই মাত্র পাঁচ দশকের স্বল্পায়ু জীবনে তিনি পৃথিবীকে দিয়ে গিয়েছেন মোট ৩৭খানি কালজয়ী নাটক, ২খানি কাব্য এবং ১৫৪টি সনেট।

স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভন ওল্ড টাউন।

পৃথিবীর ইতিহাসে শেকসপিয়রের মত প্রতিভা খুব বেশি দেখা যায়নি। তাঁর সৃষ্টিও কোনও নির্দিষ্ট কালের বন্ধনে বাঁধা পড়েনি। তা সব কালের সব মানুষের নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। শেকসপিয়র মানুষের জীবনকে যেমনভাবে নেড়েচেড়ে দেখেছেন, যেমনভাবে মানুষের মন-প্রাণকে বিশ্লেষণ করেছেন, তেমনভাবে পৃথিবীর খুব কমসংখ্যক কবি, লেখক ও নাট্যকারই করেছেন। হয়তো এমনও হতে পারে তাঁর মত করে জীবনকে কেউই উপলব্ধি করেননি। যদিও বা কেউ করে থাকেন তাও তিনি শেকসপিয়রের কাছে গভীরভাবে ঋণী। শেকসপিয়রের কাছ থেকে তিনি উত্তাপ ও আলো ধার করে নিয়েছেন।

স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে শেকসপিয়রের জন্মস্থান।

আজ স্ট্রাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্ট্রাটফোর্ডে ছুটে আসেন শেকসপিয়রের এই প্রিয় জন্মভূমি দর্শন করতে। তার আকাশ, বাতাস, মাঠ, বন, প্রান্তর থেকে সুখানুভূতি আহরণ করতে। অ্যাভনের স্রোতধারায় গা ভাসিয়ে দিতে। কবির বাসভূমি আজ পরিণত হয়েছে শেকসপিয়র মিউজিয়ামে। শেকসপিয়র মিউজিয়াম ছাড়াও এই স্ট্রাটফোর্ডেই রয়েছে অ্যান হ্যাথওয়েজ কটেজ। সেই অ্যান হ্যাথওয়ে, যাঁকে কবি তাঁর প্রণয়িনী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। রয়েছে কবির প্রিয় নদী অ্যাভন। তার দু’পাশে সবুজ মাঠ। একটি পার্কে শেকসপিয়রের মর্মর প্রতিমূর্তি। আর তাকে ঘিরে রয়েছে তাঁরই সৃষ্ট নাটকের কয়েকটি চরিত্রের প্রস্তরমূর্তি।

স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে শেকসপিয়রের জন্মভিটের অন্দরে।

যে এপ্রিল মাসে শেকসপিয়র পৃথিবীতে প্রথম এসেছিলেন সেই এপ্রিল মাসেই আবার তাঁকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। মৃত্যুর পর তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় প্যারিস চার্চের কাছের ওই হিমশীতল মাটিতে। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। তাঁর সমাধিফলকে লেখা এই ক’টি লাইন দর্শকদের চোখকে অশ্রুসজল করে তোলে—
‘GOOD FRIEND FOR JESUS’ SAKE FORBEAR,
TO DIG THE DUST ENCLOSED HERE:
BLEST BE THE MAN THAT SPARES THESE STONES,
AND CURST BE HE THAT MOVES MY BONES.

এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।

এই সেই স্ট্রাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন। এই মাটিতেই তাঁর পৃথিবীর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। এর আকাশ বাতাস নদীজলের সঙ্গে রয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা। এর সবুজ প্রকৃতি তাঁকে দিয়েছে মনের আনন্দ। এর জন-স্রোতধারা তাঁকে দিয়েছে জীবন-রহস্যের নিবিড় অনুভূতি। এই মাটিতেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। আবার এর ধূলিধূসর পথে-প্রান্তরে তিনি পা রেখেছেন যৌবনের দোরগোড়ায়।

১৫৮২-র ২৮ নভেম্বর আঠেরো বছর বয়সে অ্যান হ্যাথওয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। অ্যান ছিলেন শেকসপিয়রের চেয়ে ৭ বছরের বড়। তারপর তাঁদের তিন সন্তানের জন্ম হয়। বড়মেয়ে সুজানার জন্ম ১৫৮৩-তে, তাঁদের বিয়ের ৬ মাসের মাথায় এবং দু’বছর পর ১৫৮৫-তে যমজ সন্তান পুত্র হ্যামনেট এবং ছোটমেয়ে জুডিথের জন্ম। ১৫৯২ সাল। স্ট্যাটফোর্ডের নিবিড় বন্ধনকে শিথিল করে তিনি পা বাড়ালেন লন্ডনের পথে। পিছনে পড়ে রইলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী অ্যান হ্যাথওয়ে, পুত্র হ্যামনেট, দুই কন্যা— সুজানা ও জুডিথ। হ্যামনেটের মৃত্যু হয় মাত্র ১১ বছর বয়সে।

স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে অ্যান হ্যাথওয়ে কটেজ।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, ১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ পর্যন্ত শেকসপিয়রের জীবনযাপনের কোনও হদিশ মেলে না। কোনও রেকর্ডও নেই ওই সাত বছরের। এই দীর্ঘ কালপর্বের সবটাই অনুমান-নির্ভর। তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ মনে করেন ওই সময় শেকসপিয়র বিশ্বভ্রমণ করেছেন, কেউ মনে করেন শিক্ষকতা করেছেন, কেউ মনে করেন আইন নিয়ে পড়েছেন, আবার কেউ মনে করেন তিনি একটি অভিনেতৃ সংঘে যোগ দিয়েছিলেন।

ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগের লন্ডন শহর। এখানেই শেকসপিয়র খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন। এখানেই শেকসপিয়র লাভ করেছিলেন তাঁর জীবনের বিভিন্ন বৈচিত্র‌্যময় অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতাকে তিনি সুনিপুণভাবে কাজেও লাগিয়েছিলেন তাঁর রচনাবলিতে। জীবনের বিভিন্ন রহস্যকে তিনি উদঘাটন করেছিলেন। তিনি সব মানুষের মনের কথাকে গভীর মমতায়, অননুকরণীয় ভাষায়, সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। তাই তো তিনি দেশ ও কালের গণ্ডি ছাড়াতে পেরেছেন। তাই তো তিনি হয়ে উঠেছেন মহাকালের পথের পথিক।

স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে হল’স ক্রফ্ট। এই বাড়ির মালিক উইলিয়াম শেকসপিয়রের মেয়ে সুজানা হল এবং তাঁর স্বামী ড. জন হলের, যাঁকে সুজানা ১৬০৭ সালে বিয়ে করেছিলেন।

শেকসপিয়র তাঁর সমগ্র জীবনে যে বিপুল সৃষ্টিসম্ভার আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন, তা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। তাঁর রচিত নাটকগুলি কমেডি, ট্র‌্যাজেডি এবং ঐতিহাসিক— তিন ধারায় বিভক্ত করা হয়েছে।
কমেডি রয়েছে ১৬টি: ১. The Tempest, ২. The Two Gentlemen of Verona, ৩. The Merry Wives of Windsor, ৪. Measure for Measure, ৫. The Comedy of Errors, ৬. Much Ado About Nothing, ৭. Love’s Labour’s Lost, ৮. A Midsummer Night’s Dream, ৯. The Merchant of Venice, ১০. As You Like It, ১১. The Taming of the Shrew, ১২. All’s Well That Ends Well, ১৩. Twelfth Night, ১৪. The Winter’s Tale, ১৫. Pericles, Prince of Tyre, ১৬. The Two Noble Kinsmen.
ট্র‌্যাজেডিগুলি হল: ১. Troilus and Cressida, ২. Coriolanus, ৩. Titus Andronicus, ৪. Romeo and Juliet, ৫. Timon of Athens, ৬. Julius Caesar, ৭. Macbeth, ৮. Hamlet, ৯. King Lear, ১০. Othello, ১১. Antony and Cleopatra, ১২. Cymbeline এবং ঐতিহাসিক নাটকগুলি হল: ১. King John, ২. Richard II, ৩. Henry IV, Part 1, ৪. Henry IV, Part 2, ৫. Henry V, ৬. Henry VI, Part 1, ৭. Henry VI, Part 2, ৮. Henry VI, Part 3, ৯. Richard III, ১০. Henry VIII, ১১. Edward III.

স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানি।

কবিতার জগতেও শেকসপিয়রের ছিল স্বচ্ছন্দ বিচরণ। তিনি দুখানি কাব্যগ্রন্থও রচনা করেন, ‘Venus and Adonis’ এবং ‘The Rape of Lucrece’। এছাড়াও তিনি ১৫৪টি সনেট রচনা করেন।

সম্ভবত ১৬১০ সালে শেকসপিয়র লন্ডন ছেড়ে ফিরে আসেন তাঁর প্রিয় জন্মভূমি স্ট্রাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে। তারপর ১৬১৬ সালে এখানেই তাঁর জীবনদীপ নির্বাপিত হয়।

৩৩ বছর বয়সে শেকসপিয়ারের কেনা বিশাল পারিবারিক বাড়ি।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায় উইলিয়াম শেকসপিয়র—

যেদিন উদিলে তুমি, বিশ্বকবি, দূর সিন্ধুপারে,
ইংলণ্ডে দিকপ্রান্ত পেয়েছিল সেদিন তোমারে
আপন বক্ষের কাছে, ভেবেছিল বুঝি তারি তুমি
কেবল আপন ধন; উজ্জ্বল ললাট তব চুমি
রেখেছিল কিছুকাল অরণ্যশাখার বাহুজালে,
ঢেকেছিল কিছুকাল কুয়াশা-অঞ্চল-অন্তরালে
বনপুষ্প-বিকশিত তৃণঘন শিশির-উজ্জ্বল
পরীদের খেলার প্রাঙ্গণে। দ্বীপের নিকুঞ্জতল
তখনো ওঠে নি জেগে কবিসূর্য-বন্দনাসংগীতে।
তার পরে ধীরে ধীরে অনন্তের নিঃশব্দ ইঙ্গিতে
দিগন্তের কোল ছাড়ি শতাব্দীর প্রহরে প্রহরে
উঠিয়াছ দীপ্তজ্যোতি মাধ্যাহ্নের গগনের ‘পরে;
নিয়েছ আসন তব সকল দিকের কেন্দ্রদেশে
বিশ্বচিত্ত উদ্ভাসিয়া; তাই হেরো যুগান্তর-শেষে
ভারতসমুদ্রতীরে কম্পমান শাখাপুঞ্জে আজি
নারিকেলকুঞ্জবনে জয়ধ্বনি উঠিতেছে বাজি।

চিত্র: গুগল
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »