Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

শাহেদার খেতের পথে

দ্বিতীয় কিস্তি

অম্বিকাপুরে প্রথম আসি বছর পাঁচেক আগে। কবি জসীমউদ্দীনের জন্মস্থান দেখতে। আর গতবছর এসেছিলাম শাহেদার পেঁয়াজবীজ চাষের কাহিনি শুনে তা দেখতে। আবার এলাম দিন চারেক আগে। দুদিন ঝড়জল ছিল বলে বাইরে বেরনো হয়নি। আজ সকালে শাহেদা নিয়ে গেলেন ওঁর পেঁয়াজচাষের জমি দেখাতে।

ওঁর বাড়ি আর জমির মধ‍্যে পোয়াটাক পথ। অধিকাংশ-ই পাকা সড়ক, তারপর গ্রামের আলপথ, মাটির। কিছুদূর গেলেই কুমার নদী পড়বে। পাকা সাঁকো আছে। ছোট নদী, সাঁকো-ও ছোট্ট। চরিত্রগতভাবে নয়, নদ ও নদীর লিঙ্গ নির্ধারিত হয় নদীনামের লিঙ্গ অনুসারে, অর্থাৎ বৈয়াকরণিকভাবে। অ-কারান্ত নদীগুলি তাই নদ। যেমন অজয়, কপোতাক্ষ (‘সতত হে নদ, তুমি পড় মোর মনে’), দামোদর, ব্রহ্মপুত্র যেমন। অন‍্যদিকে আ-কারান্তরা,— পদ্মা, গঙ্গা, করতোয়া বা মেঘনা, সবাই নদী। কুমার, পদ্মার শাখা, দৈর্ঘ‍্যে আশি কিলোমিটারের বেশি হবে না, অতএব নদ। এদেশে আরও একটি কুমার নদ আছে, চুয়াডাঙ্গা কুষ্টিয়া দিয়ে প্রবাহিত।

ইরির চাষ বিপ্লব এনে দিয়েছে উপমহাদেশে। আর পেঁয়াজ এনেছে ঐশ্বর্য।

যাই হোক, পথের দুপাশে শিশু, সজনে, নিম, সুবাবুল, শাল গাছের সারি। শতাব্দীপ্রাচীন না হলেও সত্তরোর্ধ্ব, আশি-ও হওয়া সম্ভব। মৃদু বাসন্তী হাওয়া বইছে ভোরবেলায়, দিগন্ত থেকে বয়ে আসা হাওয়া। কাঁঠাল ফলে আছে গৃহস্থের উঠোনের গাছে। কোকিলের ডাক। এই নেপথ‍্যসঙ্গীতটি মনে গেঁথে দিল, খেয়াল থাকুক না থাকুক, আজ বসন্ত। ময়না টিয়া চড়ুই ফুটে আছে গাছে গাছে, যেমন মেঠোপথের পাশের বাড়ির উঠোনে ফুটে আছে ফুল। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আম গাছ থেকে খসে পড়া কুসি কুড়িয়ে নিই, অমনি মনে পড়ে যায় অপু-দুর্গাকে। আবহমান কালের বাংলা। মাটির ঘ্রাণ এসে নাকে লাগে। সামনে অগাধ পথ, অপার আকাশ, অফুরান জমির পর জমি। আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের সময় এমন-ই ছিল, তানসেনের জন্ম নেওয়ার দিন, রোম যখন পুড়ছিল বা নির্মিত হচ্ছিল চিনের প্রাচীর, অজন্তার চিত্রাবলি, মোৎসার্তের সঙ্গে বাখ-এর প্রথম পরিচয়ের দিনটিতে, অথবা কনস্ট্যান্টিনোপলের পতনের সময়।

শাহেদা বেগম।

ইটভাটা বেরসিকের মতো এখানে-ওখানে। আসলে সুরাসুরের দ্বন্দ্ব তো বিশ্বব‍্যাপী; টিউলিপ বাগানের পাশেই পারমাণবিক চুল্লি, পদ্মের মধ‍্যে বজ্র। এগুলোকে উপেক্ষা করতে হয়, নইলে সকালবেলার আকাশ বৃথাই ভৈরবীর আহ্বান জানায়, গাছের শাখায় দুর্গাটুনটুনি মনের আনন্দে দোল খায়, পৃথিবী আবর্তিত হয় আর গ্রীষ্মবর্ষাশীত আসে যখন, তাকে হৃদয়ে বরণ করা হয় না।

ক’দিন ধরেই আবহাওয়ার ছন্দপতন টের পাচ্ছি। শাহেদার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এই যে বসন্তে বৃষ্টি গেল দুদিন, পেঁয়াজবীজের ক্ষতি হবে এতে? হবে না। তবে বাড়াবাড়ি রকম বৃষ্টি হলে হবে। কাগজে দেখলাম ফরিদপুরের কয়েক জায়গায় প্রবল বৃষ্টিপাতে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে।

শাহেদা তাঁর অপারবিস্তৃত পেঁয়াজের খেতে এনে ফেললেন আমাকে। এখানে যখন পেঁয়াজের বীজ চাষের সূত্রপাত হয়নি, তখন এসময়ে ইরি ধান চাষ হত। ইরি বা বোরোর চাষ বছর কুড়ি-বাইশ বছর ধরে হচ্ছে। উচ্চফলনশীল এই ইরি ধানের আবিষ্কর্তা বাংলাদেশের-ই ঝিনাইদা জেলার হরিপদ কাপালী। তাঁর নাম থেকেই হরি ধান, যা ইরিতে রূপান্তরিত। আর বোরো বলা হয় এ ধানকে, কারণ বাওর অঞ্চলে এর ব‍্যাপক চাষ শুরু হয়েছিল আগে। বাওর > বোরো। কীভাবে যে গণমুখে শব্দ পালটে পালটে যায়!

বক্তারসাহেব ও শাহেদা।

ইরির চাষ বিপ্লব এনে দিয়েছে উপমহাদেশে। আর পেঁয়াজ এনেছে ঐশ্বর্য। ইরির তিনগুণ! তবে এখনও চাষ-আবাদ মূলত প্রকৃতিনির্ভর। জলের অভাবকে পূরণ করা যাচ্ছে ডিপ টিউবওয়েলের সাহায‍্যে। কিন্তু বন‍্যার কাছে কৃষক নতজানু ও অসহায়!

মেঘভারনত আকাশ। পেঁয়াজের ফাঁকে ফাঁকে আগাছা। এরা অবাঞ্ছিত। অথচ সৃষ্টির আদি থেকেই তো আছে এরা। মানুষের প্রয়োজনে হয়তো লাগে না, কিংবা মানুষ ব‍্যবহারে লাগাতে পারলে লাগে। কিন্তু বিশ্বব‍্যাপারে এইসব গুল্মের ভূমিকা আছেই আছে। পৃথিবীতে এমন কত তৃণ, সম্মিলিতভাবে এদের অক্সিজেন উৎপাদনের পরিমাণ কি তুচ্ছ করার মতো? তাও অপরিণামদর্শী মানুষ নির্দ্বিধায় বনস্পতিকে হত‍্যা করে, আর এ তো তৃণ! মানুষ চায় সদ‍্য লাভ।

বক্তারসাহেবের সঙ্গে শাহেদা।

শাহেদা শস‍্য পরিক্রমার মধ‍্যেই নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষকদের। আমার নজর চরাচরের দিকে। ফুলের আবরণ ভেঙে কালো রঙের বীজ আমার হাতে দিলেন তিনি। এই কালো-ই ধলো, কেননা তা অর্থ আনছে। কালোর যে কত মাহাত্ম‍্য! ‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দ কেনে?’ বা ‘এক কালা দতের কালি, যা দ‍্যা কলম লেখি।’ অথবা ‘কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,/ তারির পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন’ (জসীমউদ্দীন)। আমি টের পাচ্ছি, গায়ে এসে পড়া হাওয়াটা মোটেই বাসন্তী হাওয়া নয়। পেঁয়াজকে নতুন করে পাওয়ার লগ্নে অন‍্য কিছু চিন্তা মাথায়। বসন্তে বর্ষাভাব, এটা কী বার্তা দিচ্ছে? আজগুবি নয়? তাছাড়াও কেন এরকম হচ্ছে তার সমীচীন কারণ বোঝার চেষ্টায় থেকে মনে হল, জন্ম থেকেই মানুষ ও প্রকৃতি, বিশেষ করে প্রকৃতির ঋতুচক্র অঙ্গাঙ্গী গ্রথিত। মানুষ তার স্বভাবস্বাতন্ত্র‍্যে এক-একটি ঋতুকে ভালবাসে, সে এক জিনিস। কিন্তু সমস্ত ঋতুর প্রভাব-ই তার শরীর ও মনে কমবেশি সক্রিয়, এবং এই অনুভূতি ধারাবাহিকতা মেনে চলে।

গ্রীষ্ম চলে গিয়ে বর্ষার সূচনা হবে বলে মনকে প্রস্তুত রাখে মানুষ। হয়তো জিনগতভাবেই। গ্রীষ্মকালের পর বর্ষা না এসে সহসা শীত এলে অতি শীতপ্রিয় মানুষকেও তা অস্বস্তিতে ফেলে। বা শরতের পর বর্ষা এলে মন বলে বেসুর বাজে রে! এইভাবেই অভ‍্যস্ত আমাদের মন। ছন্দপতন সয় না। অনুক্রমপ্রিয় সে, ছন্দপ্রিয়।

গতবছর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে তিন কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে তাঁদের।

শাহেদার সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ‍্যমে অবিশ্বাস‍্য একটি তথ‍্য জেনেছি। গতবছর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে তিন কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে তাঁদের। সংখ‍্যাটা আবার লেখা যাক, হ্যাঁ, তিন কোটি। অর্ধাহার থেকে এই পর্যায়ে উঠতে কী যে সাধনা করতে হয়েছে তাঁর, তা অনুমান করাও কষ্টসাধ‍্য। আমরা কেবল একটি প্রচলিত উদ্ধৃতি-ই ব‍্যবহার করতে পারি,— ‘বাণিজ‍্যে বসতে লক্ষ্মীঃ’। আর নিতে পারি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের নাম, মাত্র আটশো টাকা পুঁজি নিয়ে যিনি ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল’ প্রতিষ্ঠা করে কয়েক কোটি টাকায় তাঁর লাভকে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর কর্মবিমুখ, চাকরিপ্রিয় ও অলস বাঙালির জন‍্য লিখে গিয়েছিলেন ‘বাঙালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব‍্যবহার’। আমরা কান দেবার প্রয়োজন-ও বোধ করিনি। করলে অন্তত দু-দশজন দ্বারকানাথ ঠাকুর, রামদুলাল দে, আলামোহন দাশ, পরবর্তীতে স‍্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জীর মতো উদ‍্যোক্তার দেখা মিলত।

অথচ ভারত ও বাংলাদেশে কিন্তু নারী-উদ‍্যোক্তাও রয়েছেন অনেক। আমাদের মনে পড়বে ভারতের ধনীতম মহিলা H.C.L.-এর প্রতিষ্ঠাতা পঁচাশি হাজার কোটি টাকার সম্পদ যাঁর, সেই রোশনী নাদাল-এর কথা। আছেন HONASA CONSUMMER-এর মালিক গজল আরাঘ। তালিকায় ভারতীয় বাঙালি মহিলা SAIL-এর সোমা মণ্ডলও রয়েছেন। অনুরূপভাবে বাংলাদেশে গত দুবছর ধরে সর্বোচ্চ করদাতা শাহনাজ রহমান। তাঁদের পাশেই স্থান আনোয়ারা হোসেন, আমিনা আহমেদ, তাসমিন মাহমুদ এবং পারভীন হাসান।

এঁরা সবাই বিশাল বিশাল উদ‍্যোগের সঙ্গে যুক্ত। আমরা যখন মাহমুজা মীনা-র কথা পড়ি, দুটিমাত্র গোরু নিয়ে ডেয়ারির ব‍্যবসা শুরু করে রাজশাহীর যে মহিলা এখন পঞ্চাশটি গোরু ও সেইসঙ্গে ভেড়া, হাঁস ও মুর্গি নিয়ে সফল ব‍্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, অথবা চট্টগ্রামের লুৎফা সানজিদার কথা, তখন উপলব্ধি করি, শাহেদাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর অধ‍্যবসায় কী সোনার ফসল-ই না ফলাতে পারে। অবাক হব না একদিন আমাদের শাহেদা যদি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ করদাতার পদবিতে পৌঁছান।

>>> ক্রমশ >>>
চিত্র: শাহেদা বেগমের সৌজন্যে

পড়ুন, প্রথম কিস্তি…

অম্বিকাপুর: শাহেদার দিগ্বিজয়

পড়ুন, তৃতীয় কিস্তি…

শাহেদা বেগম: পেঁয়াজ সমাচার

পড়ুন, চতুর্থ কিস্তি…

অথ পেঁয়াজচাষ কথা

পড়ুন, পঞ্চম কিস্তি…

শাহেদা বেগম: বাংলাদেশের পত্রপত্রিকার আলোয়

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব তিন]

সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোয় মেয়েদের অবস্থান কী, তা নিশ্চিত অজানা ছিল না তাঁর। সে চিত্র তিনি নিজেও এঁকেছেন তাঁর গল্প উপন্যাসে। আবার ব্রাহ্মধর্মের মেয়েদের যে স্বতন্ত্র অবস্থান খুব ধীরে হলেও গড়ে উঠেছে, যে ছবি তিনি আঁকছেন গোরা উপন্যাসে সুচরিতা ও অন্যান্য নারী চরিত্রে। শিক্ষিতা, রুচিশীল, ব্যক্তিত্বময়ী— তা কোনওভাবেই তথাকথিত সনাতন হিন্দুত্বের কাঠামোতে পড়তেই পারে না। তবে তিনি কী করছেন? এতগুলি বাল্যবিধবা বালিকা তাদের প্রতি কি ন্যায় করছেন তিনি? অন্তঃপুরের অন্ধকারেই কি কাটবে তবে এদের জীবন? বাইরের আলো, মুক্ত বাতাস কি তবে কোনওদিন প্রবেশ করবে না এদের জীবনে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব দুই]

১৭ বছর বয়সে প্রথম ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে ইংরেজদের বেশ কিছু সামাজিক নৃত্য তিনি শিখেছিলেন। সেদেশে সামাজিক মেলামেশায় নাচ বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে, তা এখন আমরা একপ্রকার জানি। সদ্যযুবক রবীন্দ্রনাথ তাদেরই দেশে তাদের সাথেই নাচের ভঙ্গিতে পা মেলাচ্ছেন। যে কথা আগেও বলেছি, আমাদের দেশের শহুরে শিক্ষিত পুরুষরা নাচেন না। মূলবাসী ও গ্রামীণ পরিসর ছাড়া নারী-পুরুষ যূথবদ্ধ নৃত্যের উদাহরণ দেখা যায় না। এ তাঁর কাছে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এবং তা তিনি যথেষ্ট উপভোগই করছেন বলে জানা যায় তাঁরই লেখাপত্র থেকে।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব এক]

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জুড়ে থাকা গ্রামজীবনের যূথবদ্ধতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, যা তাদের শিল্পসংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, নানান ঝড়ঝাপটা সত্ত্বেও একেবারে ভেঙে পড়েনি, তবে এই শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবোধ একে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। নগরজীবনে সংকট এসেছে আরও অনেক আগে। যত মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরেছে, যত সরে এসেছে কায়িক শ্রম থেকে, উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে যূথবদ্ধতা ততটাই সরে গেছে তাদের জীবন থেকে। সেখানে নাচ শুধুমাত্র ভোগের উপকরণ হয়ে থাকবে, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।

Read More »