নাম তাঁর সান্দ্রা। জন্ম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬। স্ত্রী ওরাংওটাং। প্রকৃতিতে বন্যপ্রাণী, প্রতিষ্ঠা বা মর্যাদায় ‘মানবেতর মানুষী’। যিনি ‘মানবাধিকার’ পাওয়া একমাত্র মানবেতর প্রাণী। যিনি ভালবাসার পাত্রের সঙ্গে ভ্যালেন্টাইন দিবসে একান্তে নিজের জন্মদিনও পালন করেন। বনমানুষীকে আপনি-আজ্ঞে সম্বোধন? আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন! কারণ, মনুষ্যেতর প্রাণীদের মধ্যে বিশ্বে তিনিই প্রথম ‘মানবেতর ব্যক্তি’-র মর্যাদা ও অধিকারের আইনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তাই সান্দ্রা আইনত কোনও বন্যপ্রাণী নন, বরং একজন ‘মানবেতর মানুষী’।
প্রায় আড়াই দশক বন্দি ও নিঃসঙ্গ সান্দ্রাকে মুক্ত করতে আদালত তাঁকে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার প্রদানের কথা ঘোষণা করে, যাতে তাঁর জীবন, স্বাধীনতা সুনিশ্চিত হয় এবং শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পান তিনি। এর পর থেকেই রাষ্ট্রসংঘ নির্দেশিত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুযায়ী বিশ্বের সকল মানুষ যে যে মৌলিক অধিকার ও উন্নত জীবনযাত্রার সুবিধা ভোগ করেন, তা পাওয়ার অধিকারিণী হয়েছেন সান্দ্রা।
সান্দ্রার জন্ম জার্মানিতে, এক চিড়িয়াখানায়। এর পর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস শহরে অধুনা উঠে যাওয়া এক চিড়িয়াঘরে খাঁচাবন্দি জীবন কাটাতে হয় দীর্ঘ ২৫ বছর। মাঝখানে ১৯৯৯-এ সান্দ্রার দু’টি মেয়ে হয়েছিল। সেই দুই কন্যা ‘শেমবিরা’ আর ‘গেমবিরা’-কে ২০০৮-এ চিনের একটি বন্যপ্রাণী পার্কে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই পর্বে অনেকগুলো বছর অন্য ওরাংওটাংদের সাহচর্য ছাড়াই নিঃসঙ্গভাবে কাটে তাঁর। এই অসহায় পরিস্থিতি থেকে তাঁকে উদ্ধারে ২০১৪-তে সান্দ্রার হয়ে মামলা দায়ের করেন প্রাণীদের হয়ে ওকালতি করা একদল আইনজীবী। সেই মামলার জেরে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিতি পেয়েছিলেন সান্দ্রা। মামলায় একটি আদালতের বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেন, যে, সান্দ্রা একজন ‘মানবেতর ব্যক্তি, (যার) কিছু মৌলিক মানবাধিকার রয়েছে।’ রায়দানের সময় বিচারক এলেনা লিবারেটরি নির্দেশ দেন, সান্দ্রাকে কোনও সুখ্যাত নিভৃত আবাসে স্থানান্তরিত করতে হবে, যেখানে তাঁর মৌলিক চাহিদাগুলি সহজ-স্বাভাবিকভাবে পূরণ হতে পারে।
এই ঐতিহাসিক রায়ের ঘটনা ২০১৫-র। তার পরও দীর্ঘ বিধির বাধা ডিঙিয়ে ২০১৯-এ সান্দ্রার ঠাঁই হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ওয়াউচুলায় সেন্টার ফর গ্রেট এপস-এ (সিজিএ)। এখানে এসে তাঁর একাকিত্ব ঘুচেছে। সবুজঘেরা সেই অভয়ারণ্যে তাঁর চেয়ে আড়াই বছরের ছোট স্বজাতীয় পুরুষ ‘জেথরো’র প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন সান্দ্রা। শান্ত ও কোমল স্বভাবের জেথরোও সান্দ্রার দেহরূপসুধা আকণ্ঠ পান করেছে। পরস্পরকে জানা এবং বিশ্বাসী হওয়ার প্রক্রিয়া চলাকালীন জেথরোকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ ও অনুসরণ করেছেন সান্দ্রা। অবশেষে সম্পর্কের প্রতি আস্থা অর্জন করায় জেথরোকে ক্রমে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ক্রমে তারা পরস্পরের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছেন। এখন তাঁদের অবাধ ‘মেলামেশা’। ঠিক যেন কোনও মানবীর প্রণয়কাহিনির অংশ। হবে নাই বা কেন? জিন গবেষণাতেও প্রমাণ মিলেছে, এই ওরাংওটাংদের জিনগত বৈশিষ্ট্য মানুষের অনেকটাই কাছাকাছি। উভয়ের মধ্যে প্রায় ৯৬ শতাংশ মিল রয়েছে যে!