Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

আক্রান্ত রুশদি: উদ্বিগ্ন বিশ্ব

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঔপন্যাসিক সলমন রুশদি আক্রান্ত হলেন খোদ আমেরিকাতেই। এই জঘন্য ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উইলিয়াম ডালরিম্পিল, নেইল গাইমান প্রমুখ সাহিত্যিক। আবার ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের মত কেউ কেউ হিরন্ময় নীরবতা পালন করলেন। কেউ কেউ আবার উল্লসিতও। ঠিক হয়েছে। যেমন কর্ম, তেমন ফল পেয়েছেন।

১৯৮৮ সালে কোনও এক উপন্যাসের জন্য এই লেখকের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়। ওই উপন্যাসে নাকি মহানবীকে অপমান করা হয়েছে। এই অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন ইরানের সেই সময়ের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি। এই উল্লসিতরা এমন একটি ভাব দেখাচ্ছেন যাতে মনে হতেই পারে যে, সেই ফতোয়ার ধারা মেনেই এই এত বছর বাদে এই আক্রমণ। যা সত্যি কি না এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত চলছে। তবে এখনও কোনও সেরকম তথ্য পাওয়া যায়নি। মূল অভিযুক্ত বলে যাকে মনে করা হচ্ছে সে একজন ২৪ বছরের মার্কিন যুবক। তবে তার মা ও বাবা লেবাননি। বাবা থাকেন লেবাননে। মা আমেরিকায়। তার মায়ের দেওয়া তথ্য অনুসারে, সে ২০১৮ সালে লেবাননে যায় ও বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এর পরই সে নাকি কট্টর মুসলমান হয়ে ওঠে। তার আচরণেও পরিবর্তন দেখা যায়। অসামাজিক হয়ে ওঠে সে।

এখানেই বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসে। প্রথমত, যে লেখকের ওপর ফতোয়া আজও বহাল, তাঁর নিরাপত্তা এত ঢিলেঢালা হবে কেন? দ্বিতীয়ত, চার বছর ধরে যার এরকম অসামাজিক আচরণ, তাকে তার পরিবার অথবা পুলিশের পক্ষ থেকে মেন্টাল অ্যাসাইলামে পাঠানো হয়নি কেন? কেন এত সহজে সে সশস্ত্র অবস্থায় বুকার-জয়ী এক লেখকের কাছে যেতে পারে? তবে কি এখানে কোনও অন্য গল্প আছে? আছেই, এখনই এমনটা বলা না-গেলেও, কিছু সন্দেহ যে হয় না এমন নয়। এখানে তার অবতারণা করি।

সলমন রুশদি চিরকালের বামপন্থী। সকল শাসকেরই সমালোচনা করেছেন তিনি। এই সমালোচনা প্রবণতার কারণে তিনি যে শুধু খোমেইনির বিরাগভাজন হয়েছিলেন এমন নয়। ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, জুলফিকার আলি ভুট্টো, কন্যা বেনজির। এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানেরও। রিগ্যানের আমলে নিকারাগুয়ার সান্দানিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে সিআইএ-কে লেলিয়ে দেন তিনি। যার সমালোচনা করেন রুশদি। চলমান রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষেও তাঁর অবস্থান আমেরিকাকে রুষ্ট করে। পেন ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে তিনি ‘অবিলম্বে এই অর্থহীন যুদ্ধ’ বন্ধের আবেদন করেন। যারা এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইছে, তাদের কাছে এই বার্তা নিশ্চয় মধুবর্ষণ করবে না। তারাই কি চাইছে রুশদিকে খুন করে তার দায়টা মুসলমানদের ঘাড়ে চাপাতে? তারা যে ‘সন্ত্রাসবাদী’ জনমনে তার একটা ছাপ ফেলা গেছে বিগত ২৫ বছরের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায়। এখন বাকিটুকু করা কি বড়ই শক্ত? বিশেষত ৭৫ বছরের এই বাম-মনস্ক ঔপন্যাসিক যে বেশি নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা পছন্দ করেন না, তা সবাই মোটামুটি জানে।

Advertisement

না। এরকমই যে হয়েছে তা আমি বলছি না। তবে এটি সম্ভাবনামাত্র। যেমন সম্ভাবনা যুবকটির জঙ্গিযোগ। এখনও এটির বিষয়ে কোনও স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু পশ্চিমি মিডিয়াগুলি এমন করছে যাতে এই যুবক যে একজন জঙ্গি, তা আমাদের মালুম হচ্ছে। গত তিরিশ বছর ধরে অত্যন্ত সুচতুরভাবে এই মিডিয়াই মানুষের মনে ইসলামোফোবিয়া ঢুকিয়ে দিয়েছে। যার ফলে মানুষের মনে ধারণা তৈরি হয়েছে যে মুসলমান মানেই বর্বর, জঙ্গি। সেই ধারণার ওপরই নির্মাণ চলছে যুবকটির জঙ্গিযোগ তত্ত্বের। তবে একটা কথা বলাই যায়। রুশদির ওপর আক্রমণ আমাদের সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলল।

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 2 =

Recent Posts

মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনচক্রের মহাকাব্য নবান্ন: শ্রম, প্রকৃতি ও নবজন্মের দ্বান্দ্বিকতা

নবান্ন। এটি কেবল একটি ঋতুভিত্তিক পার্বণ নয়; এটি সেই বৈদিক পূর্ব কাল থেকে ঐতিহ্যের নিরবচ্ছিন্ন ধারায় (যা প্রাচীন পুথি ও পাল আমলের লোক-আচারে চিত্রিত) এই সুবিস্তীর্ণ বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষের ‘অন্নময় ব্রহ্মের’ প্রতি নিবেদিত এক গভীর নান্দনিক অর্ঘ্য, যেখানে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে শস্যের অধিষ্ঠাত্রী লোকদেবতার আহ্বানও লুকিয়ে থাকে। নবান্ন হল জীবন ও প্রকৃতির এক বিশাল মহাকাব্য, যা মানুষ, তার ধৈর্য, শ্রম এবং প্রকৃতির উদারতাকে এক মঞ্চে তুলে ধরে মানব-অস্তিত্বের শ্রম-মহিমা ঘোষণা করে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বুদ্ধদেব বসু: কালে কালান্তরে

বুদ্ধদেব বসুর অন্যতম অবদান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য (Comparative Literature) বিষয়টির প্রবর্তন। সারা ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়-মানে এ বিষয়ে পড়ানোর সূচনা তাঁর মাধ্যমেই হয়েছিল। এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। এর ফলে তিনি যে বেশ কয়েকজন সার্থক আন্তর্জাতিক সাহিত্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যিক তৈরি করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্বসাহিত্যের বহু ধ্রুপদী রচনা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে তাঁরা বাংলা অনুবাদসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। অনুবাদকদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নবনীতা দেবসেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ। এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব।

Read More »
দেবময় ঘোষ

দেবময় ঘোষের ছোটগল্প

দরজায় আটকানো কাগজটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল বিজয়া। ওসব আইনের বুলি তার মুখস্থ। নতুন করে আর শেখার কিছু নেই। এরপর, লিফটের দিকে না গিয়ে সে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে উঠে বসল গাড়িতে। চোখের সামনে পরপর ভেসে উঠছে স্মৃতির জলছবি। নিজের সুখের ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে ‘ডিফল্ট ইএমআই’-এর নোটিস পড়তে মনের জোর চাই। অনেক কষ্ট করে সে দৃশ্য দেখে নিচে নেমে আসতে হল বিজয়াকে।

Read More »
সব্যসাচী সরকার

তালিবানি কবিতাগুচ্ছ

তালিবান। জঙ্গিগোষ্ঠী বলেই দুনিয়াজোড়া ডাক। আফগানিস্তানের ঊষর মরুভূমি, সশস্ত্র যোদ্ধা চলেছে হননের উদ্দেশ্যে। মানে, স্বাধীন হতে… দিনান্তে তাঁদের কেউ কেউ কবিতা লিখতেন। ২০১২ সালে লন্ডনের প্রকাশনা C. Hurst & Co Publishers Ltd প্রথম সংকলন প্রকাশ করে ‘Poetry of the Taliban’। সেই সম্ভার থেকে নির্বাচিত তিনটি কবিতার অনুবাদ।

Read More »
নিখিল চিত্রকর

নিখিল চিত্রকরের কবিতাগুচ্ছ

দূর পাহাড়ের গায়ে ডানা মেলে/ বসে আছে একটুকরো মেঘ। বৈরাগী প্রজাপতি।/ সন্ন্যাস-মৌনতা ভেঙে যে পাহাড় একদিন/ অশ্রাব্য-মুখর হবে, ছল-কোলাহলে ভেসে যাবে তার/ ভার্জিন-ফুলগোছা, হয়তো বা কোনও খরস্রোতা/ শুকিয়ে শুকিয়ে হবে কাঠ,/ অনভিপ্রেত প্রত্যয়-অসদ্গতি!

Read More »
শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »