Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সবজান্তা

দুনিয়াতে টিকে থাকতে গেলে সব না জানলেও চলে, কিছু কিছু জেনে দোলনা থেকে চিতা পর্যন্ত যাওয়ার নামই জীবন। আমাদের গণেশ সমাজপতির কিন্তু এই তত্ত্বে বিশ্বাস নেই, সে বলে, ‘‘কী এমন বিদ্যে আছে রে ভাই, যা আয়ত্ত করা সম্ভব নয়? এই ভবে সবই সম্ভব। জানতে জানতেই…’’

‘‘জানোয়ার’’ বলে উঠল মাতাল পচা। সে তার প্রথম ম-কারের আধারটা আন্ডারশ্যুটিং করা জামার ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে বলল, ‘‘বেশি জানতে গিয়েই তো আমার এই অবস্থা। তান্ত্রিক হতে হতে আন্ত্রিক হয়ে উঠেছি বাওয়া। লোকে নির্জলা উপোস করে আর আমি নির্জলা খাই।’’

পচার কথাটা সম্পূর্ণ সত্যি নয়, একজন তান্ত্রিকের পাল্লায় সে পড়েছিল বটে তবে সাধনা হয়ে ওঠেনি। উল্টে সেই তান্ত্রিকের পানীয়তে ঠিক কী যে মিশিয়েছিল জানি না, তান্ত্রিক সরাসরি মেডিক্যাল কলেজে রেফার। শেষমেশ মর্গে না গিয়ে ছ’মাস হাসপাতাল থেকে হাড়কঙ্কাল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আর বেরিয়েই মার্গ পরিবর্তন করে ফেলে সে। সব ম-কার ছেড়ে মনকে কূটস্থ করে সর্বত্যাগী হয়ে সোজা হিমালয়ে। এখন নাকি শুধুমাত্র বায়ুসেবন করে ঘোর তপস্যা করছে। কেউ গেলে সৎ প্রবচন দেয়। তবে মাতাল দেখলেই বাকবন্ধ হয়ে তূরীয় অবস্থাপ্রাপ্ত হয়।

পচার কথায় তেমন আমল দিল না গণেশ। হাজার হোক এ গাঁয়ের সবজান্তা সে। হারু হোড়ের হাইড্রোসিল হতে পিনু পাইলটের প্লেনের ইঞ্জিন মেরামত, এ সবই গণেশের অতুল্য কীর্তি। এহেন গণেশের কাছে ‘অসম্ভব’ বলে শব্দটাই অসম্ভব। গ্রামের প্রত্যেকটা লোক এই কথা জানে। আর জানে বলেই ছুটে আসে।

এই তো সেদিন চম্পক চাকলাদারের মেয়ে ঝিলিক নিখোঁজ হয়ে গেল, চম্পক ছুটল গণেশের কাছে। গণেশ তখন এক চিনে পর্যটকের দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা আরশোলার ঠ্যাং বের করছিল। লোকটা নাকি দিনচারেক থেকে দাঁত আর মাড়ির যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। বেশ নিপুণ হাতে মোছনা দিয়ে আরশোলার ঠ্যাংটা বের করে আনতে আনতে গণেশ বলল, ‘‘পাড়ায় আর কেউ হারিয়েছে?’’

চিনা লোকটি বলল, ‘‘চিং চাং চং চুসকি…’’

গণেশ বিরক্ত হয়ে চিনা ভাষায় বলল, ‘‘আপনাকে নয়, ওদেরকে জিজ্ঞেস করছি। আপনাকে খামোখা বাংলায় জিজ্ঞেস করতে যাব কেন? ন’শো আটাশ টাকা দিয়ে কেটে পড়ুন।’’

এরপর চম্পকের উদ্দেশে বাংলায় বলল, ‘কী হল? আর কেউ ভেগেছে?’’

চম্পক বলতে পারল না, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোক বলল, ‘‘সামন্তদের বংশী। ওই যে আনারসের মত চুল কেটে পোঁদ-উঁচু গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়ায়। ওকেই পাওয়া যাচ্ছে না সকাল হতে।’’

চিনা লোকটার কাছে টাকা নিয়ে গুনতে গুনতে গণেশ বলল, ‘‘ওই বংশীর সাথেই পালিয়েছে। সাড়ে-ছ’টার এক্সপ্রেসে ভেগেছে। বাসে চলে যাও, রামনগরে ট্রেনটা ধরে ফেলবে। ওখানে একঘণ্টার মত দাঁড়ায়।’’

চম্পকের মেয়েকে পাওয়া গেল। সাথে সেই বংশীকেও। দুটো আঙুল প্রথমে নিজের চোখের দিকে ধরে পরে গণেশের দিকে উঁচিয়ে বংশী বলল, ‘‘তোমার এই সবজান্তা ঘটি যদি আমি এঁদো পুকুরে না ডোবাই তো আমার নাম বংশী সামন্ত নয়।’’

মোহন সাঁপুইয়ের মেয়ে বীণা কার যেন কুপরামর্শে একটা রাশিয়ান খবরের কাগজের মলাট খেয়ে ফেলেছিল চিবিয়ে, সে তো আর বাংলা বলে না। সারাক্ষণ খালি ‘ইটারস্কি চেকোভিক্স বোজাক্সিন অক্সালিন’ বলে ঘরগুষ্টি সবার কান এঁটো করে দিচ্ছে। পুলিশের লোক এসে ঘরগুষ্টিকে ধরে নিয়ে গেল। রাশিয়ান বিদেশ দপ্তর স্পেশাল টিম পাঠাল তাদের ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বীণার মা তো কেঁদেকেটে অস্থির। অবশেষে বীণাকে নিয়ে আসা হল গণেশের কাছে। গণেশ তার টেবিলে রাখা বোতল হতে কী যেন একটা খাইয়ে দিল বীণাকে। বীণা এখন খাঁটি চিটাগাংয়ের ভাষায় কথা বলে। তা হোকগে, ভাষা তো বোঝা যায়।

একটু জোরাজুরি করতেই আসল কথাটা বলল গণেশ। ওর দিদার মা ছিলেন চিটাগাংয়ের মেয়ে, পান খেতেন খুব। আর এই বোতলটাই ছিল তার পিকদানি। এপারে চলে আসার সময় মায়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বোতলটা এনেছিলেন তিনি। আর তার কাছ থেকেই উত্তরাধিকারক্রমে গণেশের কাছে এসেছে। এ শুনে গোটা সাঁপুই পরিবার এন্তার বমি করেছে। আর গালাগালি দিয়েছে গণেশকে। গণেশ এসব গায়ে মাখে না।

এরকমই আর-একবার বসন্তপুরের মল্লিকদের কালো পাঁঠা হারিয়ে গিয়েছিল। অমাবস্যার ঘুরঘুট্টি রাতে কালো পাঁঠা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গণেশের কাছে আসতেই গণেশ বলল, ‘‘উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেলে পাঁঠা কেন বাঘও খুঁজে এনে দেব।’’

মল্লিকবাড়ির বড়কর্তা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘‘বাঘ নিয়ে কি ধুয়ে খাব? মায়ের বলির সময় পেরিয়ে যায়, পাঁঠাটাই দরকার। টাকাপয়সার চিন্তা মল্লিকেরা করে না।’’

গণেশ বের হল তার শি-গোট ফেরোমন যুক্ত ছাগলের পোশাকটি পরে। সঙ্গে জাল নিয়ে দুটো লোক। লোকদুটো অবশ্য মল্লিকদেরই। বড়কর্তার কথায় মারনে মরনেওয়ালা লোক। পাঁঠা পেলেই তড়িঘড়ি চলে আসার আদেশ আছে।

এদিক-ওদিক খুঁজতে খুঁজতে যেই একটা ঝোপের কাছে হাজির হয়েছে গণেশ অমনি কী একটা ঝাঁপিয়ে পড়ল। নিশ্চয়ই সেই কালো পাঁঠা। লোকদুটো আর দেরি না করে জাল দিয়ে জড়িয়ে ফেলল সেটাকে। নিয়ে চলল মল্লিকদের বাড়ির দিকে।

এর ঠিক মিনিট কুড়ি পরে কালো পাঁঠাখানা কোলে নিয়ে গণেশ যখন হাজির হল তখন গোটা মল্লিকবাড়িতে দক্ষযজ্ঞ চলছে। একটা কেঁদো বাঘ রোঁয়া ফুলিয়ে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে সবাইকে। মল্লিকবাড়ির সকলের কাপড়চোপড়ে অবস্থা।

সে বাঘ অবশ্য গণেশই তাড়িয়েছিল। তবে এর জন্য অতিরিক্ত টাকা দেননি মল্লিককর্তা। গম্ভীর মুখে বলেছিলেন, ‘‘পাঁঠার টোপ দিয়ে বাঘ ধরার কথা তো বলিনি। আমাকে শুদ্ধ চার-চারজন লোক আহত। এদের চিকিৎসার খরচ কে দেবে?’’

এহেন গণেশের কাছে এসেছে বিচিত্র এক সমস্যা। গত একসপ্তাহ হতে রোজ রাতেই ভূতের কেত্তন শোনা যাচ্ছে। কী সব অদ্ভুত ভাষায় গাইছে আর মৃদঙ্গ বাজিয়ে নাচছে।

‘‘ভাষাটা কোনও ব্যাপার নয় কিন্তু ওই কিম্ভূতকিমাকারের দল যদি নাচতে নাচতে জানালার ধারে দাঁড়ায় তবে বুড়ো মানুষের ধড়ে প্রাণ থাকে কেমন করে বলো তো হে!’’ আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বললেন ভজনদাদু।

একখানা পুরোনো রেডিওর সার্কিট বোর্ডে হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড ঘষছিল গণেশ, সেটা থামিয়ে দাদুর দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, ‘‘ভূত বলে কিছু হয় না। সব ভ্রম। রাতের বেলা রুটি আর কুমড়োর ঘণ্ট খেয়ে গ্যাস হয়েছিল। আর সেই গ্যাসের প্রকোপেই ভূতের আবির্ভাব।’’

এবার ভীষণ রেগে গেলেন দাদু, হাতের লাঠিখানা মেঝেতে ঠুকে বললেন, ‘‘গ্যাস তোর চৌদ্দগুষ্টির হয়েছে রে হতচ্ছাড়া! সামান্য মুলো খেয়ে সামলাতে পারিস না আবার এসেছিস আমাকে জ্ঞান দিতে। নিঘ্ঘাত এ তল্লাটে আর কোনও সবজান্তা নেই, তাই তোর কাছে আসা। ভূতের মুখে ঝামা ঘষতে পারবি কি না বল। নাহলে আমি যাই। তিন তিনবার ঘাটকে গিয়েও বেগ আসেনি, এবার মনে হয় আসছে।’’

দাদু আর দাঁড়ালেন না। আর দাঁড়ানো যায়ও না। রাতের কুমড়োর ঘ্যাঁট আর কন্টোলের আটার রুটি যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। সে আঁচ আগেই পেয়েছে গণেশ। কিন্তু তড়িঘড়িতে রুমফ্রেশনার ভেবে ব্যথার স্প্রে-টাই সারাঘরে স্প্রে করে দিয়েছে। উপস্থিত সবাই ক্যাপসেশনের দৌরাত্ম্যে চোখে হাত দিয়ে ‘বাবাগো… মাগো’ শুরু করে দিয়েছে।

দাদু চলে যাওয়ার পর অনেকরকম তির্যক মন্তব্য ভেসে এল গণেশের দিকে। এসব শোনার পাত্র গণেশ নয়, ভূতের শ্রাদ্ধ করেই সে ছাড়বে। উপস্থিত নিন্দুকদের উদ্দেশে বলল, ‘‘ভূতের কেত্তন বন্ধ করার উপায়ও আমার কাছে আছে। আজ রাতেই ব্যবস্থা করে ফেলব ব্যাটাদের।’’

রাত গভীর, সবাই যে যার ঘরে খিল-কপাট দিয়ে শুয়ে পড়েছে। রাতের অন্ধকারে কালো পোশাক গায়ে ঝোলা পিঠে নিয়ে হেঁটে আসছে এক ছায়ামূর্তি। এ আমাদের সবজান্তা গণেশ। ওর ঝোলাতেই আছে ভূত জব্দ করার নানান হাতিয়ার। এ পর্যন্ত কোনও কাজে ব্যর্থ হয়নি সে। আজও সে রেকর্ড অক্ষুন্ন থাকবে।

দাদুর ঘরের কাছে দলবেঁধে গান গাইছে একদল ভূত। উদভট্টি তালে মাদল বাজছে। ধিক-তানা-তাং-তাতিং-নাতা, ছাগলে খেলো খেরোর খাতা। মৃদঙ্গ আর মঞ্জিরাও বাজছে একই তালে। ভূতেরা গাইছে:

কচি কচি দুব্বোঘাসে ছাগল চরে সই লো
সবজান্তা এসেছে ঘরে।
পরাণবঁধূ মরে গেল টুকুসটি করে।
বঁধূর নাকে সদ্দি ছিল বঁধূর বাবা বদ্দি ছিল
সাত কেপনের হাড্ডি ছিল, চাড্ডি ধুতো দুপুরে
সবজান্তা এসেছে ঘরে।
মরে লো সই ভূত হয়েছি সবজান্তার সব খেয়েছি
গান গেয়ে তাই মন কেড়েছি এ রাতদুপুরে।
সবজান্তা এসেছে ঘরে।।

ঝোলা খুলে অমোঘ অস্ত্র বের করল গণেশ, একবার ফুঁ দিয়ে ছড়িয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। কিন্তু গণেশকে সে কাজ করতে হল না, একটা দমকা বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে গেল সেই চূর্ণ। হাওয়াটা ঠিক স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। ঝড়-পাখার হাওয়া কি? গণেশের অভিজ্ঞতা অন্তত সেকথাই বলছে।

মাদলের তালে তালে নাচতে লাগল গণেশ। ঘরের ভেতরে দাদুও নাচতে শুরু করেছেন। কাছাখোলা নৃত্য। ভূতেদের গানে কিন্তু ভাটা পড়েনি। একনাগাড়ে মাদল-মৃদঙ্গ-ঝনঝনি-খঞ্জনি বেজেই চলেছে। গণেশও দমবার পাত্র নয়, সে আর-একটা মোক্ষম অস্ত্র বের করে আনল। একটা মাছধরার জাল। ভূতেরা নাকি জালের প্রান্তে লেগে থাকা লোহার কাঠিকে যথেষ্টই ভয় পায়। দেখা যাক কামাল। ভূতেদের লক্ষ্য করে জাল ছুড়ল গণেশ। কিন্তু ঠিক তখনই একটা প্যাচপ্যাচে কিসে যেন পা হড়কে ‘চিঁ-ধপ্’। আর জাল এসে পড়ল সবজান্তা গণেশেরই ওপর। বিশ্রী একটা গন্ধ, চরম চুলকানি আর জালঢাকা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে গেল গণেশ।

ভোরবেলা জ্ঞান ফিরতেই পাশের পুকুরে স্নান করে এসে সেই যে ঘরে ঢুকে খিল এঁটেছে আর বেরোয়নি গণেশ। বদন ভটচায তার ছেঁড়া জামা, রহিম শেখ তার দাদির আমলের তালাবন্ধ বাক্স, জীবন সর্দার তার পোকাধরা দাঁত এবং আরও বহু লোক বহু সমস্যা নিয়ে ফিরে গেল। শুধু ফিরল না একজন। দাদু। কাল রাতে কী কী হয়েছে তা সব দেখেছেন দাদু। গণেশকে তিনি ছাড়বেন না। চুলকে চুলকে চামড়া উঠে গেল প্রায়!

সবজান্তার এহেন অজ্ঞাতবাসে যাওয়াতে চারধারে শোকের ছায়া নেমে এল। শুধু দুঃখ পেল না বংশী। সে বলল, ‘‘যেমন কর্ম তেমনি ফল। ভালই ছিলিস বাপু! সবজান্তা হয়ে কেন মিছিমিছি লাগতে গেলি বংশী সামন্তর পেছনে? ঝিলিককে না পেলে গণেশ কেন চম্পক চাকলাদারেরও কপালে বিপদ আছে। সাধু সাবধান।’’

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

ভূতের একটি বাজে গল্প

দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিতেই প্রথমে যেটি চোখে পড়ল, সেটি সেই লাল-হলুদ মাফলার, খাটের পাশে ঝোলানো। তাহলে সিড়িঙ্গেবাবু নিশ্চয়ই এই ঘরেই অধিষ্ঠান করেন, তালা দিয়ে কোথাও বেরিয়েছেন। হঠাৎ আমি ভূতগ্রস্তের মত করিডর ধরে হাঁটছি আর এক-একটা করে ঘরের দরজা ঠেলে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছি। কী আশ্চর্য, প্রতিটি ঘরেই কোথাও না কোথাও দেখছি একটা করে ওই লাল-হলুদ মাফলার ঝুলছে। যত দ্রুত পারি দোতলায় ঘরগুলোর দরজা ঠেলে উঁকি দিলাম। সবখানেই এক ছবি।

Read More »
সুজিত বসু

কবিতা: জীবনের নানা দিক

ট্রেনের জানালা থেকে চোখে পড়ে ঘাসের গালিচা/ কোমল রোদের স্নেহে ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চল শান্তির নিদ্রায়/ সমুদ্রে দ্বীপের মতো ছোট ছোট বাড়িগুলি ঘাসের শয্যায়/ অতি দ্রুত বদলে যায় দৃশ্যাবলি, ট্রেন থামে ব্রাসেলস স্টেশনে/ বেলজিয়ামের মোহ দূরে রেখে ট্রেন চলে স্থির নিশানায়/ অভ্রান্ত লক্ষ্যের দিকে, আমস্টারডাম ডাকে কুহকী মায়ায়/ নগরে পৌঁছেই এক নয়নাভিরাম দৃশ্য, সুন্দরী ট্রামেরা/ হাতছানি দিয়ে ডাকে, বহু বহুদিন পরে প্রিয় বাহনের/ ডাকে সাড়া দিয়ে আমি পৌঁছে যাই মহার্ঘ নিবাসে

Read More »
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

অবিন্যস্ত | প্রথম পর্ব

আমাদের খেলা করা দরকার, তাই আমাদের কয়েকজন ছেলে মিলে ক্লাব তৈরি করতে হবে। কোথায় করা যায়? — অমুক জায়গায় — ওই জায়গাটা পড়ে আছে, তা যাদের জায়গা তারা বললেন, “ওই তো ওখানে জঙ্গল হয়ে আছে, তা যদি তোমরা জঙ্গল-টঙ্গল পরিষ্কার-ঝরিষ্কার করে ক্লাব তৈরি করতে পার তো করো।” আমাদের আর পায় কে — আমরা মহাবিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লাম সেই জঙ্গলে। উদ্ধার করলাম। উদ্ধার-টুদ্ধার করে এর বাড়ি থকে চারটে বাঁশ, ওর বাড়ি থেকে তিনটে হোগলা এভাবে যোগাড়-যন্ত্র করে-টরে একটা চালাঘর তৈরি করা হলো। সেই চালাঘরকেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে আমাদের নতুন লাইব্রেরী তৈরি হলো। ক্লাবের নাম হলো ‘সেনহাটি অ্যাথলেটিক ক্লাব’।

Read More »
সন্দীপ মজুমদার

বাঘের হাত থেকে বাঁচতে বাঘেশ্বরীদেবীর পুজো! সেই থেকেই ‘বাগনান’!

ছোট্ট ওই ভূখণ্ডটি বাঘের উপস্থিতির জন্যই তখন ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয় বলে প্রখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরার অভিমত। এই বিষয়ে তিনি আরও জানান, আরবি ভাষা অনুযায়ী ‘নান’ কথার অর্থ হল ‘চরভূমি’। ‘নান’ শব্দের আরও একটি অর্থ হল ‘ছাউনি’। তখন কাছারিপাড়া ছাড়াও নদী সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় ইংরেজ সেনাদের ছাউনি ছিল বলে জানা যায়। যার মধ্যে খাদিনান, পাতিনান, খাজুরনান, বাইনান, চিৎনান, মাছিনান ইত্যাদি জনপদগুলি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু নদীর চরে বাঘেশ্বরী দেবীর পুজো হত, সেই জন্য প্রাথমিকভাবে এলাকাটি ‘বাঘনান’ নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীকালে ‘বাঘনান’ অপভ্রংশ হয়ে ‘বাগনান’-এ পরিণত হয়েছে।

Read More »
আবদুল্লাহ আল আমিন

কবিগান: সমাজবাস্তবতা, বিষয়বৈভব ও রূপবৈচিত্র্য

এমন লোকপ্রিয় বিষয় বাংলা সাহিত্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলা ভাষা, সঙ্গীত ও সাহিত্যে কবিগান ও কবিয়ালদের অবদানের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগান সংগ্রহ এবং এ বিষয় পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে কবিয়ালদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কিংবা কবিগানকে সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আলোচ্য গ্রন্থের লেখক এ গানকে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন, এই গানের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে লোকায়ত বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা দিক যার অধিকাংশই অনালোচিত ও অনালোকিত রয়েছে অদ্যাবধি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার: মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিভা

সর্বভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িয়ে ছিলেন, এবং জাতীয় কংগ্রেসে নিয়মিত যোগ দিতেন। কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদনের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী বছরের জাতক এবং প্রখর প্রজ্ঞাবান অশ্বিনীকুমার ১৮৯৭-এর কংগ্রেসের অমরাবতী অধিবেশনে দৃঢ়তার সঙ্গে একে ‘Threedays’ mockery’,— ‘তিনদিনের তামাশা’ বলে উল্লেখ করেন। দুর্ভাগ্য দেশের, তাঁর কথা অনুধাবন করলেও কেউ গুরুত্ব দেননি। সে-অধিবেশনের সভাপতি চেট্টুর শঙ্করণ নায়ারকে নিয়ে অক্ষয়কুমার-অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত বায়োপিক তৈরি হয়েছে। অথচ সারা উপমহাদেশ-কাঁপানো অশ্বিনীকুমারের মূল্যায়ন আজ-ও অপেক্ষিত।

Read More »