Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

সবজান্তা

দুনিয়াতে টিকে থাকতে গেলে সব না জানলেও চলে, কিছু কিছু জেনে দোলনা থেকে চিতা পর্যন্ত যাওয়ার নামই জীবন। আমাদের গণেশ সমাজপতির কিন্তু এই তত্ত্বে বিশ্বাস নেই, সে বলে, ‘‘কী এমন বিদ্যে আছে রে ভাই, যা আয়ত্ত করা সম্ভব নয়? এই ভবে সবই সম্ভব। জানতে জানতেই…’’

‘‘জানোয়ার’’ বলে উঠল মাতাল পচা। সে তার প্রথম ম-কারের আধারটা আন্ডারশ্যুটিং করা জামার ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে বলল, ‘‘বেশি জানতে গিয়েই তো আমার এই অবস্থা। তান্ত্রিক হতে হতে আন্ত্রিক হয়ে উঠেছি বাওয়া। লোকে নির্জলা উপোস করে আর আমি নির্জলা খাই।’’

পচার কথাটা সম্পূর্ণ সত্যি নয়, একজন তান্ত্রিকের পাল্লায় সে পড়েছিল বটে তবে সাধনা হয়ে ওঠেনি। উল্টে সেই তান্ত্রিকের পানীয়তে ঠিক কী যে মিশিয়েছিল জানি না, তান্ত্রিক সরাসরি মেডিক্যাল কলেজে রেফার। শেষমেশ মর্গে না গিয়ে ছ’মাস হাসপাতাল থেকে হাড়কঙ্কাল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আর বেরিয়েই মার্গ পরিবর্তন করে ফেলে সে। সব ম-কার ছেড়ে মনকে কূটস্থ করে সর্বত্যাগী হয়ে সোজা হিমালয়ে। এখন নাকি শুধুমাত্র বায়ুসেবন করে ঘোর তপস্যা করছে। কেউ গেলে সৎ প্রবচন দেয়। তবে মাতাল দেখলেই বাকবন্ধ হয়ে তূরীয় অবস্থাপ্রাপ্ত হয়।

পচার কথায় তেমন আমল দিল না গণেশ। হাজার হোক এ গাঁয়ের সবজান্তা সে। হারু হোড়ের হাইড্রোসিল হতে পিনু পাইলটের প্লেনের ইঞ্জিন মেরামত, এ সবই গণেশের অতুল্য কীর্তি। এহেন গণেশের কাছে ‘অসম্ভব’ বলে শব্দটাই অসম্ভব। গ্রামের প্রত্যেকটা লোক এই কথা জানে। আর জানে বলেই ছুটে আসে।

এই তো সেদিন চম্পক চাকলাদারের মেয়ে ঝিলিক নিখোঁজ হয়ে গেল, চম্পক ছুটল গণেশের কাছে। গণেশ তখন এক চিনে পর্যটকের দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা আরশোলার ঠ্যাং বের করছিল। লোকটা নাকি দিনচারেক থেকে দাঁত আর মাড়ির যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। বেশ নিপুণ হাতে মোছনা দিয়ে আরশোলার ঠ্যাংটা বের করে আনতে আনতে গণেশ বলল, ‘‘পাড়ায় আর কেউ হারিয়েছে?’’

চিনা লোকটি বলল, ‘‘চিং চাং চং চুসকি…’’

গণেশ বিরক্ত হয়ে চিনা ভাষায় বলল, ‘‘আপনাকে নয়, ওদেরকে জিজ্ঞেস করছি। আপনাকে খামোখা বাংলায় জিজ্ঞেস করতে যাব কেন? ন’শো আটাশ টাকা দিয়ে কেটে পড়ুন।’’

এরপর চম্পকের উদ্দেশে বাংলায় বলল, ‘কী হল? আর কেউ ভেগেছে?’’

চম্পক বলতে পারল না, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোক বলল, ‘‘সামন্তদের বংশী। ওই যে আনারসের মত চুল কেটে পোঁদ-উঁচু গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়ায়। ওকেই পাওয়া যাচ্ছে না সকাল হতে।’’

চিনা লোকটার কাছে টাকা নিয়ে গুনতে গুনতে গণেশ বলল, ‘‘ওই বংশীর সাথেই পালিয়েছে। সাড়ে-ছ’টার এক্সপ্রেসে ভেগেছে। বাসে চলে যাও, রামনগরে ট্রেনটা ধরে ফেলবে। ওখানে একঘণ্টার মত দাঁড়ায়।’’

চম্পকের মেয়েকে পাওয়া গেল। সাথে সেই বংশীকেও। দুটো আঙুল প্রথমে নিজের চোখের দিকে ধরে পরে গণেশের দিকে উঁচিয়ে বংশী বলল, ‘‘তোমার এই সবজান্তা ঘটি যদি আমি এঁদো পুকুরে না ডোবাই তো আমার নাম বংশী সামন্ত নয়।’’

মোহন সাঁপুইয়ের মেয়ে বীণা কার যেন কুপরামর্শে একটা রাশিয়ান খবরের কাগজের মলাট খেয়ে ফেলেছিল চিবিয়ে, সে তো আর বাংলা বলে না। সারাক্ষণ খালি ‘ইটারস্কি চেকোভিক্স বোজাক্সিন অক্সালিন’ বলে ঘরগুষ্টি সবার কান এঁটো করে দিচ্ছে। পুলিশের লোক এসে ঘরগুষ্টিকে ধরে নিয়ে গেল। রাশিয়ান বিদেশ দপ্তর স্পেশাল টিম পাঠাল তাদের ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বীণার মা তো কেঁদেকেটে অস্থির। অবশেষে বীণাকে নিয়ে আসা হল গণেশের কাছে। গণেশ তার টেবিলে রাখা বোতল হতে কী যেন একটা খাইয়ে দিল বীণাকে। বীণা এখন খাঁটি চিটাগাংয়ের ভাষায় কথা বলে। তা হোকগে, ভাষা তো বোঝা যায়।

একটু জোরাজুরি করতেই আসল কথাটা বলল গণেশ। ওর দিদার মা ছিলেন চিটাগাংয়ের মেয়ে, পান খেতেন খুব। আর এই বোতলটাই ছিল তার পিকদানি। এপারে চলে আসার সময় মায়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বোতলটা এনেছিলেন তিনি। আর তার কাছ থেকেই উত্তরাধিকারক্রমে গণেশের কাছে এসেছে। এ শুনে গোটা সাঁপুই পরিবার এন্তার বমি করেছে। আর গালাগালি দিয়েছে গণেশকে। গণেশ এসব গায়ে মাখে না।

এরকমই আর-একবার বসন্তপুরের মল্লিকদের কালো পাঁঠা হারিয়ে গিয়েছিল। অমাবস্যার ঘুরঘুট্টি রাতে কালো পাঁঠা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গণেশের কাছে আসতেই গণেশ বলল, ‘‘উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেলে পাঁঠা কেন বাঘও খুঁজে এনে দেব।’’

মল্লিকবাড়ির বড়কর্তা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘‘বাঘ নিয়ে কি ধুয়ে খাব? মায়ের বলির সময় পেরিয়ে যায়, পাঁঠাটাই দরকার। টাকাপয়সার চিন্তা মল্লিকেরা করে না।’’

গণেশ বের হল তার শি-গোট ফেরোমন যুক্ত ছাগলের পোশাকটি পরে। সঙ্গে জাল নিয়ে দুটো লোক। লোকদুটো অবশ্য মল্লিকদেরই। বড়কর্তার কথায় মারনে মরনেওয়ালা লোক। পাঁঠা পেলেই তড়িঘড়ি চলে আসার আদেশ আছে।

এদিক-ওদিক খুঁজতে খুঁজতে যেই একটা ঝোপের কাছে হাজির হয়েছে গণেশ অমনি কী একটা ঝাঁপিয়ে পড়ল। নিশ্চয়ই সেই কালো পাঁঠা। লোকদুটো আর দেরি না করে জাল দিয়ে জড়িয়ে ফেলল সেটাকে। নিয়ে চলল মল্লিকদের বাড়ির দিকে।

Advertisement

এর ঠিক মিনিট কুড়ি পরে কালো পাঁঠাখানা কোলে নিয়ে গণেশ যখন হাজির হল তখন গোটা মল্লিকবাড়িতে দক্ষযজ্ঞ চলছে। একটা কেঁদো বাঘ রোঁয়া ফুলিয়ে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে সবাইকে। মল্লিকবাড়ির সকলের কাপড়চোপড়ে অবস্থা।

সে বাঘ অবশ্য গণেশই তাড়িয়েছিল। তবে এর জন্য অতিরিক্ত টাকা দেননি মল্লিককর্তা। গম্ভীর মুখে বলেছিলেন, ‘‘পাঁঠার টোপ দিয়ে বাঘ ধরার কথা তো বলিনি। আমাকে শুদ্ধ চার-চারজন লোক আহত। এদের চিকিৎসার খরচ কে দেবে?’’

এহেন গণেশের কাছে এসেছে বিচিত্র এক সমস্যা। গত একসপ্তাহ হতে রোজ রাতেই ভূতের কেত্তন শোনা যাচ্ছে। কী সব অদ্ভুত ভাষায় গাইছে আর মৃদঙ্গ বাজিয়ে নাচছে।

‘‘ভাষাটা কোনও ব্যাপার নয় কিন্তু ওই কিম্ভূতকিমাকারের দল যদি নাচতে নাচতে জানালার ধারে দাঁড়ায় তবে বুড়ো মানুষের ধড়ে প্রাণ থাকে কেমন করে বলো তো হে!’’ আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বললেন ভজনদাদু।

একখানা পুরোনো রেডিওর সার্কিট বোর্ডে হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড ঘষছিল গণেশ, সেটা থামিয়ে দাদুর দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, ‘‘ভূত বলে কিছু হয় না। সব ভ্রম। রাতের বেলা রুটি আর কুমড়োর ঘণ্ট খেয়ে গ্যাস হয়েছিল। আর সেই গ্যাসের প্রকোপেই ভূতের আবির্ভাব।’’

এবার ভীষণ রেগে গেলেন দাদু, হাতের লাঠিখানা মেঝেতে ঠুকে বললেন, ‘‘গ্যাস তোর চৌদ্দগুষ্টির হয়েছে রে হতচ্ছাড়া! সামান্য মুলো খেয়ে সামলাতে পারিস না আবার এসেছিস আমাকে জ্ঞান দিতে। নিঘ্ঘাত এ তল্লাটে আর কোনও সবজান্তা নেই, তাই তোর কাছে আসা। ভূতের মুখে ঝামা ঘষতে পারবি কি না বল। নাহলে আমি যাই। তিন তিনবার ঘাটকে গিয়েও বেগ আসেনি, এবার মনে হয় আসছে।’’

দাদু আর দাঁড়ালেন না। আর দাঁড়ানো যায়ও না। রাতের কুমড়োর ঘ্যাঁট আর কন্টোলের আটার রুটি যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। সে আঁচ আগেই পেয়েছে গণেশ। কিন্তু তড়িঘড়িতে রুমফ্রেশনার ভেবে ব্যথার স্প্রে-টাই সারাঘরে স্প্রে করে দিয়েছে। উপস্থিত সবাই ক্যাপসেশনের দৌরাত্ম্যে চোখে হাত দিয়ে ‘বাবাগো… মাগো’ শুরু করে দিয়েছে।

দাদু চলে যাওয়ার পর অনেকরকম তির্যক মন্তব্য ভেসে এল গণেশের দিকে। এসব শোনার পাত্র গণেশ নয়, ভূতের শ্রাদ্ধ করেই সে ছাড়বে। উপস্থিত নিন্দুকদের উদ্দেশে বলল, ‘‘ভূতের কেত্তন বন্ধ করার উপায়ও আমার কাছে আছে। আজ রাতেই ব্যবস্থা করে ফেলব ব্যাটাদের।’’

রাত গভীর, সবাই যে যার ঘরে খিল-কপাট দিয়ে শুয়ে পড়েছে। রাতের অন্ধকারে কালো পোশাক গায়ে ঝোলা পিঠে নিয়ে হেঁটে আসছে এক ছায়ামূর্তি। এ আমাদের সবজান্তা গণেশ। ওর ঝোলাতেই আছে ভূত জব্দ করার নানান হাতিয়ার। এ পর্যন্ত কোনও কাজে ব্যর্থ হয়নি সে। আজও সে রেকর্ড অক্ষুন্ন থাকবে।

দাদুর ঘরের কাছে দলবেঁধে গান গাইছে একদল ভূত। উদভট্টি তালে মাদল বাজছে। ধিক-তানা-তাং-তাতিং-নাতা, ছাগলে খেলো খেরোর খাতা। মৃদঙ্গ আর মঞ্জিরাও বাজছে একই তালে। ভূতেরা গাইছে:

কচি কচি দুব্বোঘাসে ছাগল চরে সই লো
সবজান্তা এসেছে ঘরে।
পরাণবঁধূ মরে গেল টুকুসটি করে।
বঁধূর নাকে সদ্দি ছিল বঁধূর বাবা বদ্দি ছিল
সাত কেপনের হাড্ডি ছিল, চাড্ডি ধুতো দুপুরে
সবজান্তা এসেছে ঘরে।
মরে লো সই ভূত হয়েছি সবজান্তার সব খেয়েছি
গান গেয়ে তাই মন কেড়েছি এ রাতদুপুরে।
সবজান্তা এসেছে ঘরে।।

ঝোলা খুলে অমোঘ অস্ত্র বের করল গণেশ, একবার ফুঁ দিয়ে ছড়িয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। কিন্তু গণেশকে সে কাজ করতে হল না, একটা দমকা বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে গেল সেই চূর্ণ। হাওয়াটা ঠিক স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। ঝড়-পাখার হাওয়া কি? গণেশের অভিজ্ঞতা অন্তত সেকথাই বলছে।

মাদলের তালে তালে নাচতে লাগল গণেশ। ঘরের ভেতরে দাদুও নাচতে শুরু করেছেন। কাছাখোলা নৃত্য। ভূতেদের গানে কিন্তু ভাটা পড়েনি। একনাগাড়ে মাদল-মৃদঙ্গ-ঝনঝনি-খঞ্জনি বেজেই চলেছে। গণেশও দমবার পাত্র নয়, সে আর-একটা মোক্ষম অস্ত্র বের করে আনল। একটা মাছধরার জাল। ভূতেরা নাকি জালের প্রান্তে লেগে থাকা লোহার কাঠিকে যথেষ্টই ভয় পায়। দেখা যাক কামাল। ভূতেদের লক্ষ্য করে জাল ছুড়ল গণেশ। কিন্তু ঠিক তখনই একটা প্যাচপ্যাচে কিসে যেন পা হড়কে ‘চিঁ-ধপ্’। আর জাল এসে পড়ল সবজান্তা গণেশেরই ওপর। বিশ্রী একটা গন্ধ, চরম চুলকানি আর জালঢাকা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে গেল গণেশ।

ভোরবেলা জ্ঞান ফিরতেই পাশের পুকুরে স্নান করে এসে সেই যে ঘরে ঢুকে খিল এঁটেছে আর বেরোয়নি গণেশ। বদন ভটচায তার ছেঁড়া জামা, রহিম শেখ তার দাদির আমলের তালাবন্ধ বাক্স, জীবন সর্দার তার পোকাধরা দাঁত এবং আরও বহু লোক বহু সমস্যা নিয়ে ফিরে গেল। শুধু ফিরল না একজন। দাদু। কাল রাতে কী কী হয়েছে তা সব দেখেছেন দাদু। গণেশকে তিনি ছাড়বেন না। চুলকে চুলকে চামড়া উঠে গেল প্রায়!

সবজান্তার এহেন অজ্ঞাতবাসে যাওয়াতে চারধারে শোকের ছায়া নেমে এল। শুধু দুঃখ পেল না বংশী। সে বলল, ‘‘যেমন কর্ম তেমনি ফল। ভালই ছিলিস বাপু! সবজান্তা হয়ে কেন মিছিমিছি লাগতে গেলি বংশী সামন্তর পেছনে? ঝিলিককে না পেলে গণেশ কেন চম্পক চাকলাদারেরও কপালে বিপদ আছে। সাধু সাবধান।’’

চিত্রণ: চিন্ময় মুখোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + 15 =

Recent Posts

শুভ্র মুখোপাধ্যায়

নগর জীবন ছবির মতন হয়তো

আরও উপযুক্ত, আরও আরও সাশ্রয়ী, এসবের টানে প্রযুক্তি গবেষণা এগিয়ে চলে। সময়ের উদ্বর্তনে পুরনো সে-সব আলোর অনেকেই আজ আর নেই। নিয়ন আলো কিন্তু যাই যাই করে আজও পুরোপুরি যেতে পারেনি। এই এলইডি আলোর দাপটের সময়কালেও।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

আমার স্মৃতিতে ঋত্বিককুমার ঘটক

দুটো‌ জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম তাঁর।‌ এক, তিনি কথা বলার সময় আত্মমগ্ন‌ থাকতেন। কারও দিকে‌ তাকিয়ে‌ কথা বলতেন না। তাকাতেন‌ হয় সুদূরে, আর নয়তো‌ চোখ বুজে‌ কথা বলতেন। আর দ্বিতীয় যা, তা হল‌ ঋত্বিকের চোখ। এত উজ্জ্বল আর‌ মরমী, এক-ই সঙ্গে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত আর লুব্ধক নক্ষত্রের মতো দীপ্ত, তা আর কারও মধ্যে দেখিনি। সত্যজিৎ-মৃণালের মধ্যেও না, যদিও ঘটনাচক্রে ওই দু’জনের সঙ্গে আমার মোলাকাত হয়েছিল অনেক বেশি।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঋত্বিক ঘটক ও বাংলাদেশ

ঋত্বিক ঘটকের জীবনের প্রথম বাইশ বছর (১৯২৫-১৯৪৭) কেটেছে মূলত পূর্ব-বাংলায়, যা এখনকার বাংলাদেশ। তাঁর জন্ম ঢাকার ২,ঋষিকেশ দাস রোডের ঝুলন বাড়িতে। ১৯৪৭, অর্থাৎ দেশভাগ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তিনি মূলত পূর্ব-বাংলায় কাটান। আমরা দেখব, পূর্ব-বাংলা যেমন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, সে-দেশ, সে-ভূমির প্রভাব তদনুরূপ ঋত্বিকেরও পড়েছিল তাঁর চলচ্চিত্রে।

Read More »
মণিকর্ণিকা রায়

অনুগল্প: অর্জন

অসহায় বৃদ্ধের খাওয়া হয়ে গেলে মাঝেমাঝে গল্পও করত ওঁর সাথে। আদিত্য লক্ষ্য করেছিল এই ব্যাপারটা যেন তার মনে একটা বদল আনছে— যেন রোজ তার শরীর-মন জুড়ে সঞ্চালিত হচ্ছে এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি। যেন সে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠছে।

Read More »
মো. বাহাউদ্দিন গোলাপ

জীবনানন্দ দাশের সময়চেতনা: পুরাণ, প্রকৃতি ও আধুনিক নিঃসঙ্গতার নন্দনতত্ত্ব

পৌরাণিক, মনস্তাত্ত্বিক ও প্রকৃতিগত সময়চেতনা তাঁকে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে এক স্থায়ী ও ব্যতিক্রমী মহাকবির আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের শেখায়— দ্রুত ধাবমান জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ধীরে চলতে, নীরবতার গভীরে কান পাততে এবং প্রতিটি ক্ষণিকের মাঝে অনন্তের ইশারাকে খুঁজে পেতে। তাঁর সাহিত্য ভবিষ্যতের প্রতিটি সংবেদনশীল পাঠকের জন্য আধুনিকতার এক অমূল্য পাঠ হয়ে থাকবে, যা মানুষের জীবনকে শিল্প ও প্রকৃতির একাত্মতায় আবিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ করে দেয়— কাব্যই চূড়ান্ত আশ্রয়, যখন সমস্ত পথ ফুরিয়ে যায়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

জীবনানন্দ: প্রয়াণদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

হেমন্তকাল ও জীবনানন্দ অভিন্ন, ওতপ্রোত ও পরস্পর পরিপূরক। তাঁর কবিতায় বারবার নানা অনুষঙ্গে, বিভঙ্গে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হেমন্তের বসতি যেন। ‘হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু/ শিশিরের জল’, ‘ধানক্ষেতে, মাঠে,/ জমিছে ধোঁয়াটে/ ধারালো কুয়াশা’! কুয়াশা আর শিশির, এই দুই অচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হেমন্তের, চিনিয়ে দেন তিনি। ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল’, হেমন্তকে বাহন করে এই যে প্রকৃতির অপরূপতা মেলে ধরা, তা অন্য কোন বাঙালি কবির আছে?

Read More »