Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

স্বদেশের খবরওয়ালাকে হুকুমনামা!

খবরওয়ালাকে পুলিশি সন্ত্রাসের লাঠি উঁচিয়ে বলে দেওয়া হল— স্বাধীনতার পাঁচ পা দেখেছ? ওসব চলবে না। ভুলে যাও স্বাধীনতা। খবর করার মুক্ত-ভাবনা! ক্ষমতা দিয়েছ। নিয়েছি আমরা। এখন ক্ষমতা আমাদের হাতে খেলবে! তোমাদের হাতে কিছুই নেই! মাথা উঁচু করেছ কী লাঠি পড়বে সেখানে। ক্ষমতা এখন আমাদের হাতে চিরজীবী হয়ে থাকবে। আর কোথাও নড়বে না! খবরওয়ালা তাই সাবধান হও এখন থেকে। কোন খবর করবে আমরা বলে দেব। এখন শুনে নাও আপাতত কোন খবর একেবারেই করবে না ‘স্বাধীনতা’ নামক অপদেবতার উপর ভরসা রেখে—

১. দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলে খবর হবে না সে ঘটনা। যেমন, দিল্লিতে ২০২০ সালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা ভুলে যাও।

২. নাগরিকত্ব সংশোধনমূলক আইন (CAA) বিরোধী প্রতিবাদ-আন্দোলন খবরে ঠাঁই পাবে না।

৩. কৃষকদের আন্দোলন সংবাদ-মাধ্যমে যেন স্থান না পায়। পেলে প্রস্তুত হও স্বাধীনতা-র ঠ্যালা বুঝবার জন্য! মত-প্রকাশের স্বাধীনতা! মস্তকের খাঁচা থেকে উড়িয়ে দাও আকাশে!

এইপ্রকার ফরমান জারি করা হয়েছে একটি নিউজ-পোর্টালের উপর। ‘নিউজ ক্লিক’ সেটির নাম। সর্বদিক থেকে তাদের কোণঠাসা করা হয়েছে। তাদের নিদারুণ হেনস্তার শিকার বানিয়ে সব খবরওয়ালাদের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। দেশবাসী হতভম্ব! খবরওয়ালারা স্তম্ভিত!

একটি জটিল প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের হাওয়ায়— এমন হুকুমনামার লক্ষ্য কি কেবল খবরদাতারা? না কি মূল লক্ষ্য অন্য কিছু? সেটি কি বিদ্বেষের বীজ বপন করে বিপুল কাঙ্ক্ষিত ফসল তোলা নামক দুরাকাঙ্ক্ষা!

একটু ব্যাখ্যা করা যাক। বিদ্বেষটি হল ধর্ম-বিদ্বেষ! একটি নির্দিষ্ট ধর্ম-বিদ্বেষ। দেশের সর্বদিক থেকে পিছিয়েপড়া কেবল ধর্ম-বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে থাকা দুর্ভাগা শ্রেণীভুক্ত দেশবাসী এমন ফরমানের প্রকৃত লক্ষ্য।

আপাত বিচারে খবরওয়ালাদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। একটি সংবাদ-মাধ্যম প্রতীকী হয়েছে বলা যায়। সেটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত অথবা যুক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘর, অফিস, ব্যবহার্য প্রযুক্তি-যন্ত্রাদি সবই পুলিশের নির্যাতনপ্রক্রিয়ার লক্ষ্য হয়েছে— দেখা যাচ্ছে।

হুকুমনামাগুলি একটু বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়— প্রথমত, বিদ্বেষ-বিষ ঢোকানো হয়েছে পুলিশ-মগজে। দ্বিতীয়ত, তাদের কাজে লাগিয়ে সেই বিষ ছড়াতে চাওয়া হয়েছে সাধারণ সর্ব-হারা জনমানসে। তৃতীয়ত, খবরওয়ালাদের মগজ-ধোলাই করে সংবাদ-জগৎ থেকে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির চিহ্নমাত্র না থাকুক এমনভাবে মুছে ফেলতে চাওয়া হয়েছে।

দেশবাসীর জাগরণ ঘটা এখন অত্যাবশ্যক। কোনো দেশে পিছিয়েপড়া দেশবাসী কখনও আক্রমণের শিকার হতে পারে মানবাধিকারের নীতি মেনে অথবা মানবতা ধর্মকে সকল ধর্মের উপরে ঠাঁই দিয়ে? এই প্রক্রিয়ায় দেশোন্নয়ন ঘটা সম্ভব? নির্দিষ্ট ধর্মবিশ্বাসী ‘সংখ্যালঘু’ বলে বিশেষিত দেশবাসীরা ‘অপরাধী’ শ্রেণীভুক্ত হল কোন যুক্তিতে? দেশের অঙ্গ থেকে তাদের ছেঁটে ফেলার নানারকম কায়দা-কৌশল অবলম্বন করছে বর্তমান দেশনেতাদের অন্তর্ভুক্ত শাসক-দল। খবরওয়ালার উপর শানিয়ে তোলা আক্রমণ দ্বারা তাঁদের সেই ‘চেতনা’ জাগানোই মূল উদ্দেশ্য। দেশবাসী কি হীন উদ্দেশ্য বুঝবেন না?

এই প্রক্রিয়াতে কি সকল দেশবাসীর ঘরে ঘরে অর্থাভাব, অন্নাভাব, কর্মসংস্থানের অভাব, স্বাস্থ্যপরিষেবার অভাব, শিক্ষাব্যবস্থার হতদ্দশা ইত্যাদি হাঁ-মুখ করা দুরবস্থাগুলি বিলীন হয়ে যাবে? সকল দেশবাসী সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে?

দেশসেবকের ভূমিকায় অবস্থান নিয়ে দেশবাসীর হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে এ কেমন ক্ষমতা প্রয়োগের ভয়াবহ হিংসাত্মক প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা নামক হীন কৌশল অবলম্বন!

দেশবাসী ভাবুন, সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ বা নির্মূলকরণই সংখ্যাগুরুদের সমান মানবাধিকার পেয়ে বাঁচার একমাত্র পন্থা? এই বিদ্বেষ-বিষ মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের প্রতিজ্ঞাগ্রহণ আজ সমগ্র দেশবাসীর জন্য অবশ্যপালনীয়। অন্যথায় দেশ তথা দেশবাসী মাথা তুলে বাঁচতে পারবে না। স্বদেশকে হারাতে হবে— সেই নিশ্চিত ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য প্রতীক্ষায়!

চিত্র: গুগল
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব পাঁচ]

বাংলার মাটি থেকে একদা এই সুদূর দ্বীপপুঞ্জে ভেসে যেত আসত সপ্তডিঙা মধুকর। আর রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যাঁর কথা তিনি কোথাও প্রায় উল্লেখই করেন না, সেই দ্বারকানাথ-ও বাংলার তৎকালীন ব্যবসায়ীকুলের মধ্যে প্রধান ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, একদা তাঁর প্রিয় জ্যোতিদাদাও স্টিমারের ব্যবসা করতে গিয়ে ডুবিয়েছেন ঠাকুর পরিবারের সম্পদ। নিজে রবীন্দ্রনাথ বাণিজ্য সেভাবে না করলেও, জমির সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও একদা বাংলার সাম্রাজ্য বিস্তার, বাণিজ্য-বিস্তার কী তাঁরও মাথার মধ্যে ছাপ ফেলে রেখেছিল? তাই ইউরোপ থেকে আনা বাল্মিকী প্রতিভার ধারাকে প্রতিস্থাপন করলেন জাভা বালির কৌমনৃত্য দিয়ে?

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব চার]

তৎকালীন দেশের বাস্তব সত্যের সঙ্গে মিলছে না বর্ণবাদ, উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদ, মিলছে না পিকেটিং ও বিদেশি দ্রব্য পোড়ানোর আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ দেখতে পাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে গরিব মানুষের খাওয়া নেই, নেই বেশি দাম দিয়ে দেশি ছাপ মারা কাপড় কেনার ক্ষমতা। দেখছেন পিকেটিংয়ের নামে গরিব মুসলমানের কাপড়ের গাঁঠরি পুড়ে যাচ্ছে যা দিয়ে সে তার পরিবার প্রতিপালন করে। রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করছেন তাঁর লেখায়। ‘গোরা’ ও ‘ঘরে বাইরে’ এমনই দু’টি উপন্যাস। গোরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশ ১৯১০ সালে। ঘরে বাইরের প্রকাশকাল ১৯১৬।

Read More »