Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

গুড ফ্রাইডে

গুড ফ্রাইডে মানব ইতিহাসের এক শোকাবহ দিন, খ্রিস্টধর্মের মহান প্রবক্তা যিশুর নির্মমভাবে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিন। দিনটিকে ‘পবিত্র শুক্রবার’, ‘কালো শুক্রবার’, বা ‘মহান শুক্রবার’ নামেও অভিহিত করা হয়। তাঁর তখন মাত্র বত্রিশ বছর বয়স। পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মপ্রবক্তা, জরথ্রুস্ট্র (প্রয়াণ ৭৭ বছর বয়সে), গৌতম বুদ্ধ (৮০ বছর বয়সে), হজরত মুহাম্মদ (সা:) (৬১ বা ৬২ বছর বয়সে)-এর চেয়ে তাঁর জীবিতকাল ছিল নিতান্তই স্বল্প। তাছাড়া অন্য এই তিন ধর্মপ্রবক্তার কাউকে নির্মমভাবে নিহত হতে হয়নি। শিখধর্মের একাধিক গুরুকে অবশ্য হত্যার ইতিহাস আছে।

আজ পৃথিবীতে খ্রিস্টধর্ম সবচেয়ে অধিক সংখ্যক মানুষের আশ্রিত ধর্ম। প্রায় সব দেশেই খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের বাস। গোড়ায় এই ধর্ম যথেষ্ট নিপীড়ন-অবজ্ঞা-প্রতিকূলতার শিকার হয়। এশিয়া এবং ইওরোপে পৌত্তলিক আর প্যাগান ধর্মের সঙ্গে লড়তে হয় খ্রিস্টানদের। শহিদ হতে হয় বহু খ্রিস্টানকে। অবশেষে ইতালিতে রাজপৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে ধীরে ধীরে প্রথমে ইওরোপ, পরে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় তা ব্যাপ্ত হয়।
আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে করুণ মৃত্যু। তাঁর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁর ঐশী শক্তি, অতিজাগতিক কর্মকাণ্ডকেও বিচারের আওতায় আনা হয়। বলা বাহুল্য, রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

কবি ক্রিস্টিনা রোজেটির ‘Rood’ (Cross of Christ)-এর কয়েকটি পঙক্তি দিয়ে শুরু করা যাক যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি: ‘Am l a stone, and not a sheep,/ That l can stand, o Christ beneath thy cross,/ To number drop by drop thy blood’s slow loss/ And yet not weep?’ এখানে ‘sheep’ কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ।
শুভ শুক্রবারের আগের রবিবারে যিশু যেদিন জেরুজালেমে এলেন গাধার পিঠে চড়ে, সেদিনের আবহাওয়ায় বিন্দুমাত্র বিনাশের আভাস ছিল না। জেরুজালেমে বাসরত তাঁর অসংখ্য শিষ্যমণ্ডলী তাঁকে খেজুরপাতা বিছিয়ে অভ্যর্থনা জানাল, তাঁর যাত্রাপথে বিছিয়ে দিল মসৃণ চাদর, যেন ‘মোরা আঁচল বিছায়ে রাখি, তব পথধূলা দিব ঢাকি’! খ্রিস্টানদের কাছে দিনটি ‘পাম রবিবার’ (Palm Sunday) নামে পরিচিত। আজ-ও দিনটি তাঁরা যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকেন।
তাঁর বিরুদ্ধে পুরোহিতকুল এবং শাসকবর্গের ক্ষোভ ছিল, কেননা তিনি এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে প্রভাবিত করছিলেন। পুরোহিত ক্যালাফাসের তা সহ্য হয়নি। প্রাথমিকভাবে তাঁর প্রভাব কার্যকরী ছিল যিশুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার। তার কাছে নিয়ে আসা হয় যিশুকে। অপমানিত যিশুকে ক্যালাফাস ধর্মদ্রোহের অভিযোগ এনে কাউন্সিলে পাঠিয়ে দেন। রোমান গভর্নর পাইলেটের কোর্ট থেকে যিশু আনীত হন হেরোদের কাছে। হেরোদ যিশুকে নিরপরাধ ঘোষণা করলে ফের যিশুকে আনা হয় পাইলেটের কাছে। প্রজাদের মানসিকতা বুঝে পাইলেট যিশুকে ক্রুশবিদ্ধকরণের আদেশ দেন, ‘Jesus of Nazareth, the king of the Jews, to be affixed to Jesus’ cross’. এরপর আদেশনামায় তিনি হিব্রু, ল্যাটিন ও গ্রীক, এই তিন ভাষায় স্বাক্ষর করেন।
প্রসঙ্গত, ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা একটি সুপ্রাচীন প্রথা, যার নিদর্শন গ্রীক ও রোমান ইতিহাসে এর আগেও বহু পাওয়া গেছে। আদেশ বাস্তবায়নের জন্য যিশুকে কালভেরি তথা গলগথে নিয়ে আসা হয়, ‘via Dolorose route’। তাঁর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় কাঁটার মুকুট। বধ্যভূমিতে নেবার পথে তাঁর প্রতি চলে বিদ্রূপবর্ষণ, এমনকি দৈহিক নির্যাতন।
যিশু নীরব ও ক্ষমাশীল হয়ে সবকিছু সহ্য করেন। কাঠুরিয়া পিতা যোসেফের পুত্র যিশুকে নিজের কাষ্ঠনির্মিত ক্রুশ বহন করতে হয়েছিল পর্যন্ত! উপস্থিত জনতা শোকবিহ্বল, মহিলারা ক্রন্দনরত। মহিলাদের কাঁদতে বারণ করেন যিশু। আমাদের উদ্ধৃত রোজেটির কবিতায় সেই অনুষঙ্গটি চমৎকার ব্যবহৃত হয়েছে।

তারপর? তার পরের ঘটনাটির মরমী বর্ণনা রয়েছে অষ্টম শতাব্দীতে লেখা অ্যাংলো স্যাক্সন এই কবিতাটিতে। এটি গুড ফ্রাইডে নিয়ে প্রথম শোকগাথাও বটে: ‘Darkness covered the ruler’s corpse with clouds/ His shining beauty, shadows passed across,/ Black in the darkness, All creations wept./ Bewailed the king’s death; Christ was on the cross–‘ (Dream of the Rood, transl. by Richard Hammer,).

যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু সাহিত্যে, চিত্রকলায়, স্থাপত্যে, সঙ্গীত ও নাটকে যুগযুগ ধরে প্রভাব ফেলেছে। চতুর্থ শতাব্দী থেকেই যিশুর ক্রুশবিদ্ধ ছবির নিদর্শন মেলে। সেসব চিত্রে দর্শকের মধ্যে মেরী ও ফেরেস্তাদের দেখা যায়। বাইজান্টাইন পেইন্টিং-এর এক বিশেষ ধারা ক্রুশবিদ্ধ যিশু। অন্যদিকে রেনেসাঁস ও বারোক যুগে গ্রীসের ক্রীটে যে ছবি আঁকার পরম্পরা, সেখানেও পাই বিষয়টির নিজস্ব বৈচিত্র্য, যা মূলত ইতালি তথা ভেনিসীয় ঐতিহ্যজাত। সেখান থেকে সালভাদর দালির সুররিয়ালিজমে অঙ্কিত চিত্র পর্যন্ত এক বিরাট ব্যাপ্তি রয়েছে ক্রুশবিদ্ধ যিশু-চিত্রের। ১৪৯৫-৯৮ পর্বে আঁকা দ্য ভিঞ্চির অতিবিখ্যাত ম্যুরাল ‘The Last Supper’-এর উল্লেখ এখানে না করলেই নয়। বারো শিষ্য-পরিবৃত যিশুর ছবিটি বিশ্বখ্যাত ও বহু মানুষের দ্বারা অভিনন্দিত।
এই প্রসঙ্গে ‘Passion Play’-র উল্লেখ অবধারিতভাবে এসে পড়ে। যিশুর মৃত্যু নিয়ে পরিকল্পিত এ নাটকের সূত্রপাত মধ্যযুগে। গোড়ায় ল্যাটিনে লেখা হত। এটি এখনও প্রতি দশ বছর অন্তর মাত্র একবার অভিনীত হয়ে আসছে। ব্যাভারিয়ার ওবেরামারগাউতে ১৬৩৩-এ ভয়াবহ প্লেগে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটলে সেখানকার লোক যিশুকে প্রার্থনা জানায়, প্লেগ প্রশমিত হলে তারা একটি নাটকের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে, against ‘Betrayal, injustice, sacrifice and redemption, to bring the message of forgiveness and new opportunities to communion’. শেষবারের মতো এটি অভিনীত হয় ২০২২-এ। একবার নাটকটির অন্যতম দর্শক ছিলেন হিটলার।

‘Passion Play’ সিনেমাও তৈরি হয়েছে, যাতে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত সব অভিনেতা,– মিকি রুরকি, মেগান ফক্স, বিল মারে প্রমুখ। রবীন্দ্রনাথ জার্মানি সফরকালে একবার প্যাশন প্লে দেখেছিলেন। নাটকটি দেখে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ‘The Child’ কবিতাটি লেখেন। পরে ‘শিশুতীর্থ’ নাম দিয়ে একে বাংলায় রূপান্তরিত করেন। দীর্ঘ এই কবিতাটিকে নিয়ে চিত্রনাট্য লেখার অনুরোধ জানানো হয় তাঁকে, চলচ্চিত্রে রূপান্তরের জন্য। জীবনের একমাত্র চিত্রনাট্য এটি কবির, যদিও শেষপর্যন্ত এটি চিত্রায়িত হয়নি। কবিতাটির অন্তিম পঙক্তি ‘জয় হোক মানুষের, ওই চিরজীবিতের, ওই চিরজীবনের’ উদ্ধৃতিরূপে ব্যবহার করেছেন ঋত্বিককুমার ঘটক তাঁর ‘সুবর্ণরেখা’ ছবির অন্তিমে। যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়া কী বিপুল তাৎপর্যবাহী! যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার অনুষঙ্গ রবীন্দ্রনাথের ‘একদিন যারা মেরেছিলো তারে গিয়ে,/ রাজার দোহাই দিয়ে’-তেও আছে।

শ্যুবার্ট, বিখ্যাত কম্পোজার, গুড ফ্রাইডেকে অবলম্বন করে তৈরি করেছেন ‘Ave Maria’ (Hail Mary). গুড ফ্রাইডের যে করুণ ঘটনা, তাকে মূর্ত করে তোলা হয়েছে আটটি অস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘বেনহুর’-এ। লুই লাগের্কভিস্ট এই বেদনার বয়ান তাঁর নোবেলজয়ী উপন্যাস ‘বারাব্বাস’-এ লিপিবদ্ধ করেছেন।
যিশুর জন্মদিন বড়দিনে যেমন ক্যারোল গান, তেমনই গুড ফ্রাইডেকে অবলম্বন করেও বহু গান লেখা হয়েছে। বিখ্যাত সুরকারেরা সঙ্গীত সৃষ্টি করেছেন। সাধারণভাবে ওইদিন গান করা হয় যিশুর আত্মদানকে কেন্দ্র করে, ক্রুশবন্দনা করে।

খ্রিস্টীয় জগতে যিশুর প্রভাব অপরিসীম। শেক্সপিয়র ছিলেন একজন বিশিষ্ট যিশু-অনুসারী, যিনি তাঁর নাটক ‘Measure for Measure’ (১৬০৪) নামটি নিয়েছিলেন যিশুর বাণী থেকে, ‘and with what measure you mete, l shall be measured to you again.’ (Mathew 7.2)। শেক্সপিয়রের উইলেও খ্রিস্টের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ব্যক্ত, ‘–l commend my soul into the hands of God my creator, hoping and assuredly believing through the only merits of Jesus Christ my Saviour’.
আর এক খ্রিস্ট-অনুসারী ছিলেন টলস্টয়। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি ঈশ্বর ও যিশুর মহিমা গভীরতরভাবে অনুভব করেন। তাঁর বেশ কিছু গল্পে তার পরিচয় আছে। তাঁর লেখা উপন্যাস ‘Resurrection’ তো নামকরণেই মালুম, খ্রিস্ট-প্রভাবিত।

একথা বলা বাহুল্য, যিশুর ক্রুশে মৃত্যুবরণ তাঁকে খ্রিস্টান সমাজের বাইরেও মহত্ব দিয়েছে, দিয়েছে যথাযোগ্য শ্রদ্ধার আসন। হজরত মুহাম্মদ (সা:) তাঁকে পরম শ্রদ্ধা করতেন। পবিত্র কোরান গ্রন্থের ১৫টি সুরায় যিশুর প্রসঙ্গ উত্থাপিত। সেখানে তাঁকে ‘মসীহা’ বলা হয়েছে। দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ, যেখানে যিশুর প্রত্যাবর্তন হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, মুসলমানদের কাছে সেটি চতুর্থ পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত হয়। সুফিরাও যিশুর প্রতি সশ্রদ্ধ। এ সব-ই যিশুর অন্তিম উক্তি, ‘প্রভু! এরা জানে না এরা অন্যায় করছে। তুমি এদের ক্ষমা করো’,– এই মহদোক্তির প্রতিফলন।
এজন্যই যিশু-অর্চনায় রবীন্দ্রনাথকে খ্রিস্টান হতে হয়নি। শান্তিনিকেতনে তিনি বড়দিন পালনের সূচনা করে গিয়েছেন, লেখার পর লেখায় তুলে ধরেছেন যিশুমাহাত্ম্য। টি. এস. এলিয়টের ‘The Journey of the Magi’ তিনি অনুবাদ করেন ‘তীর্থযাত্রী’ নামে। দেশেবিদেশে তাঁকে দেখে বহুলোক যিশুর সঙ্গে তাঁর সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছেন। মহাত্মা গান্ধীর কাছেও যিশু এক পরিপূর্ণ বিগ্রহ। যিশুর মধ্যে দিয়েই তাঁর অহিংস নীতির সার আহৃত। আয়রনি এটাই, তিনিও নিহত হন কোনও এক শুক্রবারে!

লেখা শেষ করি মাইকেল এঞ্জেলোর একটি উক্তি দিয়ে, ‘যদি কখনও জীবনে দুঃখ পাও, তাহলে যিশুর ক্রুশ বহনের কথা স্মরণ কোরো’! হ্যাঁ, তার কাছে আমাদের সব কষ্ট-ই নিতান্ত লঘু ও আপাত।

চিত্র: গুগল
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

ঢাকায় বিবেকানন্দ: ১২৫ বছর পূর্তি

ঢাকায় এসে খুব বেশি বক্তৃতা দেননি তিনি। সম্ভবত তাঁর শারীরিক অসুস্থতাই তার কারণ। মার্চের তিরিশ তারিখে রমাকান্ত নন্দীর সভাপতিত্বে ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়) ভাষণ দেন। বিষয় ‘আমি কী দেখেছি’। শ্রোতার সংখ্যা ছিল দু’হাজার। পরদিন অর্থাৎ ৩১.০৩-এ বক্তৃতা দেন পোগোজ স্কুলে, তিন হাজার দর্শকের সামনে। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘আমাদের জন্মপ্রাপ্ত ধর্ম’। দুটি সভাতেই শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ, আপ্লুত ও উদ্বুদ্ধ।

Read More »
সুজিত বসু

সুজিত বসুর গুচ্ছকবিতা

বিলাপ অভিসার জল আনতে চল রে সখী, জল আনতে চল নিভু নিভু আলোর সাজে সূর্য অস্তাচলে শেষবিকেলের রশ্মিমালায় বুকে ব্যথার ঢল লজ্জা আমার আবির হয়ে

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

যত মত তত পথ

বহুদিক দিয়েই একজন স্বতন্ত্র মননের ধর্মীয় সাধক। তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ধারণাতীত, আর তা কেবল তাঁর স্বদেশ বা এই উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী। এবং দিনের পর দিন তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীরামকৃষ্ণ এবং সারদামণি ও স্বামী বিবেকানন্দকে কেন্দ্র করে যে ভাব-আন্দোলন, তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের নিয়ে নিয়ত চর্চা ও গবেষণা হয়ে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী দুশোর ওপর রামকৃষ্ণ মিশনের কার্যাবলি প্রমাণ করে (প্রতিবছর এর সংখ্যা বাড়ছে), আজকের এই অশান্ত বিশ্বে তাঁরা মানুষের কতখানি আশ্রয়।

Read More »
ড. সোমা দত্ত

রবীন্দ্রনৃত্যভাবনা: প্রেক্ষিত ও চলন [পর্ব ছয়]

রবীন্দ্রভাবনায় যে নৃত্যধারা গড়ে উঠল তা দেশিবিদেশি নৃত্যের সমন্বয়ে এক মিশ্র নৃত্যধারা, তৎকালীন শিক্ষিত শহুরে বাঙালির সংস্কৃতিতে যা নতুন মাত্রা যোগ করল। নাচের প্রতি একরকম আগ্রহ তৈরি করল, কিছু প্রাচীন সংস্কার ভাঙল, মেয়েরা খানিক শরীরের ভাষা প্রকাশে সক্ষম হল। এ কম বড় পাওনা নয়। আরও একটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, শিল্পক্ষেত্রে ভাবের সাথে ভাবনার মিল ঘটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির প্রচেষ্টা। গতে বাঁধা প্র্যাক্টিস নয়। নিজের গড়ে নেওয়া নাচ নিজের বোধ অনুযায়ী।

Read More »