Search
Generic filters
Search
Generic filters
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp

হাসিমুখের ‘মিম’ তো চিনি, ইয়াও মিংকে কি চিনি

অধিকাংশ ‘মিম’-এ (Meme) সচরাচর হাস্যকর রকমের একটা হাস্যবদনের ছবি থাকে। লক্ষ্য করেছেন? ফেসবুকে ঘোরাফেরা করেন যখন, তখন ‘বত্রিশ পাটি’ দাঁত বের করা ‘সদাহাস্যময়’ এই ‘ফেস’টি আপনার দেখা। কিন্তু কোনও দিন চিন্তা করেছেন, এমন ছবি এল কোথা থেকে? মুখটিই বা কার? আসুন, ইন্টারনেট ‘মিম’-এর সেই হাসিমুখের মালিকের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই।

নাম তাঁর ইয়াও মিং (yao ming)। এমনিতেই বিখ্যাত তিনি। নিজের দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী চিন ছাড়াও ক্রীড়াজগতে, বিশেষ করে পেশাদার বাস্কেটবল খেলার দুনিয়ায় এবং সেই সূত্রে মার্কিন মুলুকে ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। কিন্তু গত কয়েক বছরে তাঁর মুখাবয়বে তৈরি ইন্টারনেট মিম তাঁকে বিশ্বের কোনায় কোনায় পৌঁছে দিয়েছে। মুখের আদলে সাদৃশ্য থাকায় ভারতীয় উপমহাদেশে লাফিং বুদ্ধের জায়গা দখল করেছেন তিনি। নেটদুনিয়ায় রীতিমত ভাইরাল ‘লাফিং ইয়াও মিং’।

আসলে, মিংয়ের হাসিমুখের অনুকরণে বানানো ইমেজটি একটি ছোট কার্টুন স্ট্রিপের অংশ। বেশ কয়েকটি ছবি দিয়ে এই কার্টুন স্ট্রিপ বানিয়ে ২০১০-এর ১১ জুলাই reddit নামের সমাজমাধ্যমে ছাড়েন ডাউনলো নামের জনৈক শিল্পী। তার মধ্যে এই বিশেষ ছবিটি নেটিজেনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তারপর যা হবার, তাই হয়। নানা নামে, নানা আকারে-প্রকারে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। অবশ্য এর অনেক আগে থেকেই বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে নাম করেছেন ইয়াং মিং। বিষয়টিকে ‘স্পোর্টিংলি’ই নিয়েছেন তিনি।

বাস্কেটবলে ‘মিং রাজবংশ’ গড়ে তোলা এই খেলোয়াড়ের ঠিকুজি-কুষ্ঠি জানার আগে দেখে নেওয়া যাক, আমাদের শব্দভাণ্ডারে যোগ হওয়া নবতম সদস্য মিম-এর জন্মবৃত্তান্ত। মিম কী? কোথা থেকে এল শব্দটা? সাধারণত ইন্টারনেট মিম একটি চিত্রিত উপস্থাপনা (স্থির ছবি Image, অস্থির ছবি GIF বা চলমান ছবি Video)। এটি এমন একটি ক্রিয়াকলাপ, কনসেপ্ট, উদ্ধৃতি বা সংবাদমাধ্যমের অংশ, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, প্রায়শই অনুকরণ বা হাস্যকর উদ্দেশ্যে, একজন থেকে অন্যজনের কাছে।

সেই ১৯৭৬ সালে ইংরেজ বিবর্তনবাদ বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞান লেখক ক্লিন্টন রিচার্ড ডকিন্স তাঁর ‘সেলফিশ জিন’ বইতে প্রথম মিম শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। ইন্টারনেট মিমের ধারণাটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন মাইক গডউইন, ১৯৯৩ সালে, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর প্রযুক্তির প্রভাব সম্পর্কিত মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ওয়্যারড’-এর জুন সংখ্যায়। ২০১৩ সালে ডকিন্স নিজেই একটি ইন্টারনেট মিমকে মানবীয় সৃজনশীলতার দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তিত একটি মিম হিসাবে চিহ্নিত করেন।

যা হোক, চৈনিক বাস্কেটবলার ইয়াও মিং জন্মেছেন ১৯৮০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। ২০১১-তে অবসর নিয়েছেন চিনের অন্যতম সেরা এই অ্যাথলিট। এখন সেদেশে বাস্কেটবল কর্তা তিনি। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে খেলেছেন চাইনিজ বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের (সিবিএ) সাংহাই শার্কস এবং ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এনবিএ) হাউস্টন রকেটসের হয়ে। সাড়ে ৭ ফুটের দীর্ঘদেহী মিং আমেরিকার বাইরের একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি এনবিএ-র নেতৃত্ব দিয়েছেন। এনবিএ-তে তুমুল সাফল্য এবং জনপ্রিয়তা তাঁকে নতুন চিনের প্রতীক করে তুলেছিল। তাঁর আত্মজীবনীর নাম ‘এ লাইফ ইন টু ওয়ার্ল্ডস’। জোড়া দুনিয়ায় একটি জীবন-এর রচয়িতা তখন তো জানতেন না, কোনওদিন নেটদুনিয়ায় অমর হয়ে যাবেন তিনি!

চিত্র : গুগল
5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Recent Posts

ড. সোমা দত্ত

জাতীয়তাবাদ এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য

সরকারিভাবে এবং বিত্তশালী অংশের পৃষ্ঠপোষকতায় ভক্তি ও নিবেদনের সংস্কৃতিকেই ভারতীয় সংস্কৃতি বলে উপস্থাপনের উদ্যোগ অনেকটা সফল হলেও এই একমাত্র পরিচয় নয়। সমস্ত যুগেই যেমন নানা ধারা ও সংস্কৃতি তার নিজস্বগতিতে প্রবাহিত হয় তেমনই আধুনিক, উত্তর-আধুনিক যুগেও অন্যান্য ধারাগুলিও প্রচারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলা ও বাঙালি বড় ভূমিকা পালন করেছে। যে যুগে শাস্ত্রীয় নৃত্য গড়ে তোলার কাজ চলছে সে যুগেই শান্তিনিকেতনে বসে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক নৃত্যের ভাষা খুঁজেছেন। নাচের বিষয় হিসেবেও গড়ে নিয়েছেন নতুন কাহিনি, কাব্য। পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়েও তাকে প্রেমাশ্রয়ী করেছেন। নারীকে দেবী বা দাসী না মানুষী রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মের স্থানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগে গড়েছেন নতুন উৎসব।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সোমেন চন্দ: এক বহ্নিময় কথাকার

মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি একটি উপন্যাস রচনায় হাত দিয়েছিলেন, যদিও তা অসমাপ্ত থাকে। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘বন্যা’। পরবর্তীকালে উপন্যাসটি অসমাপ্ত-ই থেকে যায়। আরও দুঃখের বিষয়, এর বৃহদংশ হারিয়েও গেছে। আজ যে সোমেন চন্দের লেখককৃতির জন্য আমরা তাঁকে স্মরণ করি, তা হল তাঁর বেশ কিছু অসামান্য ছোটগল্প। সংখ্যায় খুব বেশি নয়, মাত্র চব্বিশটি। আরও কিছু গল্প লিখলেও তা কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। গল্পের সংখ্যা সামান্য, তবে অসামান্যতা রয়েছে সেগুলির রচনার পারিপাট্যে, বিষয়বস্তু চয়নে, শিল্পিত প্রকাশে ও লেখনীর মুনশিয়ানায়। এছাড়া তিনি দুটি নাটিকাও লেখেন, ‘বিপ্লব’ ও ‘প্রস্তাবনা’। লেখেন কিছু প্রবন্ধ। তাঁর ছোটগল্পগুলি এতটাই শিল্পোত্তীর্ণ ছিল যে, তাঁর জীবিতকালেই একাধিক ভাষায় তা অনূদিত হয়।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

কবি-কিশোর সুকান্ত: মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

শৈশবেই জন্মস্থান কালীঘাট থেকে বেলেঘাটায় চলে আসেন। ওখানকার দেশবন্ধু বিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতেলেখা ‘সপ্তমিকা’ বের করতেন। বরাবর ভাল ফল করতেন বার্ষিক পরীক্ষায়। তবে ম্যাট্রিক পাশ করতে পারেননি, সম্ভবত অঙ্কে কাঁচা ছিলেন বলে। বাংলার তিন বরেণ্য কবি-ই দশম মান উৎরোননি। আর আজ ম্যাট্রিকে এঁদের তিনজনের লেখা-ই পাঠ্যতালিকায় অপরিহার্য! একটি কৌতূহলী তথ্য হল, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণে তাঁকে নিয়ে বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী নজরুল এবং সুকান্ত। তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছিল?

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

বাঙালি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিন্দুমাত্র ভেদাভেদ ছিল না। বিশ্বভারতীতে তিনি বক্তৃতা দিতে উদার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে, কাজী নজরুল ইসলাম, আলাউদ্দীন খাঁ, কাজী আবদুল ওদুদকে। গান শেখাতে আবদুল আহাদকে। বন্দে আলী মিয়া, জসীমউদ্দিন প্রমুখকে তিনি কাহিনির প্লট বলে দেন, যেমন দেন গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বা মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়েন তাঁর-ই বদান্যতায়। লালন শাহ্ তাঁর কল্যাণেই পরিচিতি পান ইংল্যান্ড তথা ইয়োরোপে। বঙ্গভঙ্গকালীন সময়ে কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে তিনি মুসলমানের হাতে রাখী পরিয়ে আসেন। বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, আবুল হোসেনের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ চলে, যেমন চলে হেমন্তবালা দেবী, বুদ্ধদেব বসু বা বনফুলের সঙ্গে। এক অখণ্ড বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি, জাতপাত, বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

গুড ফ্রাইডে

রাজশক্তি যখন কাউকে বিপজ্জনক মনে করে, যেমন অতীতে সক্রেটিসকে মনে করেছে, তখন তাঁকে বিনাশ করতে যাবতীয় তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠিত হয় না। একথা অনস্বীকার্য, বুদ্ধদেব, হজরত মুহাম্মদ বা যিশু মানবজাতির মৌল একটি পরিবর্তন চেয়েছিলেন। যিশু যা চেয়েছিলেন, তার সরলার্থ রবীন্দ্রনাথ ‘মুক্তধারা’ নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর রাজার প্রতি যে উক্তি, তাতে স্পষ্ট করেছিলেন, ‘মানুষের ক্ষুধার অন্ন তোমার নয়, উদ্বৃত্ত অন্ন তোমার’। যেমন রসুলুল্লাহ সুদ বর্জনের নিদান দেন, সমাজে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য ঘোচাতে। এঁরা তাই মানবমুক্তির অগ্রদূত।

Read More »
মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়

সনজীদা খাতুন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাতচল্লিশ-পরবর্তী পূর্ববঙ্গে বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে ওঠে, যাদের মধ‍্যে ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’, ‘ক্রান্তি’, ‘উদীচী’ অন‍্যতম। রাজনৈতিক শোষণ ও পূর্ববঙ্গকে নিপীড়নের প্রতিবাদে কখনও পরোক্ষভাবে কখনও সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল এইসব সংগঠন। ‘ছায়ানট’ এমনি আর এক আগ্নেয় প্রতিষ্ঠান, ১৯৬৭-তে জন্মে আজ পর্যন্ত যার ভূমিকা দেশের সুমহান ঐতিহ‍্যকে বাংলাদেশের গভীর থেকে গভীরতরতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে সুস্থ ও সংস্কৃতিবান নাগরিক গড়ে তোলা। ওয়াহিদুল হক ও সনজীদা খাতুনের মানসসন্তান এই ছায়ানট। মূলত রবীন্দ্রনাথের আদর্শে গড়ে ওঠা সঙ্ঘ, কাজী নজরুলের প্রিয় নামটিকে জয়ধ্বজা করে এগিয়ে চলেছে বহু চড়াই-উৎরাই, উপলব‍্যথিত গতি নিয়ে।

Read More »